পিয়ের আগোস্তিনি | |
---|---|
জন্ম | |
মাতৃশিক্ষায়তন | এক্স-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয় (বিএড, ডিইএ, পিএইচডি) |
পরিচিতির কারণ | আরম্ভসীমা-ঊর্ধ্ব আয়নায়ন দুই-ফোটন রূপান্তরের ব্যতিচারের মাধ্যমে অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দনের পুনর্নির্মাণ |
পুরস্কার | গে-ল্যুসাক-হুমবোল্ট পুরস্কার (২০০৩) বর্ণালীবীক্ষণে উইলিয়াম এফ. মেগার্স পুরস্কার (২০০৭) পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (২০২৩) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | অ্যাটোসেকেন্ড পদার্থবিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | সঁত্র কোমিসারিয়া আ এনের্জি আতমিক দ্য সাক্লে ওহাইও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় |
অভিসন্দর্ভের শিরোনাম | আপারেইয়াজ পেরমেতঁ লা রেয়ালিজাসিওঁ দ্য ফিলত্র ম্যুলতিদিয়েলেকত্রিক উ্যভে: এত্যুদ দে কুশ Sb2O3 ক্রিয়োলিত (Appareillage permettant la réalisation de filtres multidiélectriques UV: Étude des couches Sb2O3 cryolithe) (১৯৬৭) |
ওয়েবসাইট | physics |
পিয়ের আগোস্তিনি (ফরাসি: Pierre Agostini, জন্ম ২৩শে জুলাই ১৯৪১) একজন ফরাসি পরীক্ষাভিত্তিক পদার্থবিজ্ঞানী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরোত্তর সাম্মানিক (ইমেরিটাস) অধ্যাপক। তিনি শক্তিশালী-ক্ষেত্রবিশিষ্ট লেজার পদার্থবিজ্ঞান ও অ্যাটোসেকেন্ড পদার্থবিজ্ঞান ক্ষেত্রগুলিতে অগ্রদূতসুলভ গবেষণাকর্মের জন্য পরিচিত।[১] আরম্ভসীমা-ঊর্ধ্ব আয়নায়ন পর্যবেক্ষণ ও অ্যাটোসেকেন্ড আলোক স্পন্দন চরিত্রায়নের জন্য দুই-ফোটন রূপান্তরের ব্যতিচারের মাধ্যমে অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দনের পুনর্নির্মাণ (র্যাবিট) কৌশলটি উদ্ভাবনের জন্য তাঁর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তিনি ২০২৩ সালে ফেরেনৎস ক্রাউস ও আন লুইলিয়ে-র সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[২]
পিয়ের আগোস্তিনি ১৯৪১ সালের ২৩শে জুলাই ফরাসি আশ্রিত তিউনিসিয়া রাজ্যের (বর্তমান স্বাধীন তিউনিসিয়া) তিউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তিনি ফ্রান্সের লা ফ্লেশ শহরে ১৯৫৯ সালে প্রিতানে নাসিওনাল মিলিত্যার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ফরাসি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনী সনদ "বাকালোরেয়া" লাভ করেন।[৪] এরপর আগোস্তিনি দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের এক্স-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পাদন করেন। ১৯৬১ সালে সেখান থেকে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপনা করার জন্য শিক্ষায় স্নাতক (licence d'enseignement, লিসঁস দঁসেইনমঁ) উপাধি, ১৯৬২ সালে উচ্চতর শিক্ষায় স্নাতকোত্তর উপাধি (diplôme d'études approfondies, দিপ্লম দেত্যুদ আপ্রোফোঁদি) এবং ১৯৬৮ সালে আলোকবিজ্ঞানে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। ডক্টরেট লাভের পরে ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পারি-সাক্লে বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক শক্তি কমিশন কোমিসারিয়া দ্য লেনের্জি আতমিকের একজন গবেষক হিসেবে ২০০২ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।[৫] এই সময়ে তিনি জেরার মাঁফ্রে ও ক্লোদ মান্যুর গবেষণাগারে শক্তিশালী লেজার যন্ত্র নিয়ে কাজ করেন। তাঁরাই ১৯৭৯ সালে জেনন গ্যাসে প্রথমবারের মত আরম্ভসীমা-ঊর্ধ্ব আয়নায়ন ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন।[৬][৭][৮]
২০০১ সালে আগোস্তিনি ও তাঁর দল এবং পদার্থ বিষয়ক মৌলিক গবেষণার জন্য ওলন্দাজ ফাউন্ডেশনের হার্ম গের্ট মুলার একত্রে এমন কতগুলি স্পন্দনের ধারা তৈরি করতে সক্ষম হন, যেগুলির স্থায়িত্বকাল ছিল ২৫০ অ্যাটোসেকেন্ড। অতিহ্রস্ব অতিবেগুলি স্পন্দনের সাথে আদি অবলোহিত রশ্মিকে পুনর্যোজিত করে তারা এমন একটি ব্যতিচার ক্রিয়া সৃষ্টি করেন, যার মাধ্যমে তিনি স্পন্দনগুলির দৈর্ঘ্য ও পুনরাবৃত্তি হার চরিত্রায়ন করতে সক্ষম হন।[৯][১০]
২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আগোস্তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ব্রুকহেভেন জাতীয় পরীক্ষাগারে অতিথি বিজ্ঞানী হিসেবে লুই এফ ডিমাউরো-র দলে কাজ করেন।[১১] ডিমাউরোকে অনুসরণ করে ২০০৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন।[১২] ২০১৮ সালে আগোস্তিনি অবসর গ্রহণের পর অবসরোত্তর সাম্মানিক (ইমেরিটাস) অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাথে সংযুক্ত থাকেন।[১৩]
আগোস্তিনি আরম্ভসীমা-ঊর্ধ্ব আয়নায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য ১৯৯৫ সালে ফরাসি বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে গ্যুস্তাভ রিবো পুরস্কার লাভ করেন।[১৪] ২০০৩ সালে তিনি গে-লুসাক-হুমবোল্ট পুরস্কার গ্রহণ করেন।[১৫] তিনি এরপর পদার্থ বিষয়ক মৌলিক গবেষণার জন্য ওলন্দাজ ফাউন্ডেশনের ইয়োপ লোস গবেষক বৃত্তি (ফেলোশিপ) লাভ করেন।[১৬] এছাড়া তাকে মার্কিন আলোকবিজ্ঞান সমাজ ২০০৭ সালে বর্ণালীবীক্ষণে উইলিয়াম এফ মেগার্স পুরস্কার প্রদান করে। তিনি আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্ট ফাউন্ডেশনের একজন বিশিষ্ট সভ্য। ২০০৮ সালে তাঁকে মার্কিন আলোকবিজ্ঞান সমাজের বিশিষ্ট সভ্য (ফেলো) হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। "শক্তিশালী অবলোহিত লেজার স্পন্দনের নিয়ন্ত্রণাধীন পরমাণু ও অণুসমূহের অরৈখিক প্রতিক্রিয়ার গতিবিধি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদানকারী অভিনব পরীক্ষাসমূহের বিকাশে নেতৃত্বদানের জন্য" তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।[১৬]
২০২৩ সালে আগোস্তিনি আন লুইলিয়ে ও ফেরেনৎস ক্রাউসের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন॥ "পদার্থে ইলেকট্রনের গতিবিধি অধ্যয়নের জন্য আলোর অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দন উৎপাদনকারী পরীক্ষভিত্তিক পদ্ধতিগুলির" জন্য তাদেরকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।[১৭] ফেরেনৎস ক্রাউস জার্মানির কোয়ান্টাম আলোকবিজ্ঞান বিষয়ে মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের পরিচালক। আন লুইলিয়ে সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা। আগোস্তিনি, লুইলিয়ে ও ক্রাউসের পরীক্ষাগুলি এত হ্রস্ব দৈর্ঘ্যের আলোক স্পন্দন সৃষ্টি করতে পেরেছে, যে এই স্পন্দনগুলি ব্যবহার করে পরমাণু ও অণুর অভ্যন্তরের অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলমান ইলেকট্রনগুলির চটজলদি চিত্র (snapshot) তুলে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াগুলি উদ্ঘাটন করা সম্ভব।[১৮]
অণু-পরমাণুর মাপনীতে ইলেকট্রনের গতিবেগ এত দ্রুত যে এক অ্যাটোসেকেন্ডের কয়েক দশমাংশের মধ্যে ইলেকট্রনের গতি বা শক্তির পরিবর্তন ঘটতে পারে। এক অ্যাটোসেকেন্ড হল এক সেকেন্ডের দশ লক্ষ লক্ষ কোটি ভাগের একভাগ। অন্য ভাষায় বললে আজ থেকে প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের জন্ম থেকে অদ্যাবধি যত সেকেন্ড অতিবাহিত হয়েছে, এক সেকেন্ডের মধ্যে প্রায় ততগুলি অ্যাটোসেকেন্ড আছে।[১৮]
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে আন লুইলিয়ে একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মধ্য দিয়ে অবলোহিত লেজার রশ্মি চালনা করার সময় আবিষ্কার করেন যে আলোকরশ্মিটির কম্পাঙ্ক বর্ণালীতে বহু বিভিন্ন "অধিস্বরের" (overtone) উদয় হয়। প্রতিটি অধিস্বর লেজার আলোকরশ্মির প্রতিটি চক্রের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক চক্রবিশিষ্ট একটি আলোকরশ্মির প্রতিনিধিত্ব করে। গ্যাসের ভেতরের পরমাণুগুলির সাথে লেজার আলোকরশ্মির আন্তঃক্রিয়ার কারণে এগুলির সৃষ্টি হয়। লেজার আলোকরশ্মিটি কিছু ইলেকট্রনকে অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করে, যা পরবর্তীতে আলোকরশ্মি আকারে নিঃসৃত হয়। আন লুইলিয়ে এই ঘটনাটি নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখেন। ২০০১ সালে পিয়ের আগোস্তিনি পরপর-ঘটমান আলোক স্পন্দনের একটি ধারা উৎপাদন করতে ও সেগুলির উপর অনুসন্ধান চালাতে সক্ষম হন। প্রতিটি স্পন্দন মাত্র ২৫০ অ্যাটোসেকেন্ড স্থায়ী ছিল। একই সময়ে ফেরেনৎস ক্রাউস আরেক ধরনের পরীক্ষা নিয়ে কাজ করছিলেন, যার ফলে ৬৫০ অ্যাটোসেকেন্ড স্থায়ী একটি মাত্র আলোক স্পন্দনকে পৃথক করা সম্ভব হয়।[১৮]
এই তিন বিজ্ঞানীর অবদানের ফলে এমন সব অত্যন্ত দ্রুত প্রক্রিয়া নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো সম্ভবপর হয়েছে, যা অতীতে অসম্ভব ছিল। তাদের গবেষণার কারণে মানবজাতির সম্মুখে ইলেকট্রনদের বিশ্বের দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে। অ্যাটোসেকেন্ড পদার্থবিজ্ঞানের সুবাদে বিজ্ঞানীর আজ ইলেকট্রন-শাসিত কর্মপদ্ধতিগুলি অনুধাবনের সুযোগ পেয়েছেন। এই গবেষণার সম্ভাব্য প্রয়োগের মধ্যে আছে ইলেকট্রনবিজ্ঞানে (ইলেকট্রনিক্স) কীভাবে উপাদান পদার্থের মধ্যে ইলেকট্রনগুলি আচরণ করে ও কীভাবে সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দন ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন অণু শনাক্ত করা যেতে পারে, যেগুলি চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক রোগনির্ণয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।[১৮]
|s2cid=
value (সাহায্য)। ডিওআই:10.1088/0034-4885/67/6/R01। বিবকোড:2004RPPh...67..813A।
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; :0
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |