পুণে জেলা | |
---|---|
মহারাষ্ট্রের জেলা | |
মহারাষ্ট্র রাজ্যের মধ্যে পুণে জেলার অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | মহারাষ্ট্র |
বিভাগ | পুনে বিভাগ |
সদর শহর | পুনে |
সরকার | |
• লোকসভা কেন্দ্র |
|
আয়তন | |
• মোট | ১৫,৬৪২ বর্গকিমি (৬,০৩৯ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৯৪,২৯,৪০৮ |
• জনঘনত্ব | ৬০০/বর্গকিমি (১,৬০০/বর্গমাইল) |
জনমিতি | |
• সাক্ষরতা | ৮৭.১৯%[১] |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
প্রধান সড়ক | জাতীয় সড়ক ৪৮, জাতীয় সড়ক ৬৫, জাতীয় সড়ক ৬০ |
ওয়েবসাইট | http://www.pune.nic.in |
পুণে জেলা ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের একটি প্রশাসনিক জেলা। পুণে শহর এই জেলার সদর শহর। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যা ছিল ৯,৪৯৯,৪০৮ জন। জনসংখ্যার বিচারে, এটি ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল জেলা[২]। এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৫৮.০৮ শতাংশ শহরে বসবাস করেন[৩]। এটি ভারতের অন্যতম শিল্পোন্নত জেলা এবং ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম নামী একটি কেন্দ্র।
পুণে শহরসহ সমগ্র জেলাটিরই দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কার্লার বৌদ্ধ গুহাগুলি এবং জুন্নার শহরটিতে প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মনুষ্য বসবাসের চিহ্ন রয়েছে। ১৪০০ বছর আগে, জুন্নার শহরে আগত দর্শনার্থীদের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই অঞ্চলটি ত্রয়োদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামিক শাসনাধীন ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে, ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের নেতৃত্বে মারাঠারা একটি স্বাধীন 'পেশোয়া' রাজত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল এখানে। মারাঠা সাম্রাজ্যের অধিকর্তা পেশোয়ারা তদানীন্তন ছোট শহর পুণেতে তাদের সদর দফতর স্থাপন করেছিলেন; পেশোয়া আমলেই পুণে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হয়। ঊনবিংশ শতকে সমগ্র জেলাটি ব্রিটিশ রাজের অধীনস্থ হয়েছিল। প্রথমযুগের বহু ভারতীয় জাতীয়তাবাদী এবং মারাঠি সমাজ সংস্কারকরা এই জেলাতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে নিজামশাহী রাজধানীটি জুন্নারে স্থানান্তরিত হলে জেলাটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভোঁসলে পরিবার নিজামশাহী থেকে পুণে জেলা জায়গীর রূপে (ভূমি অনুদান) পায় এবং কয়েক শতাব্দী ধরে এই অঞ্চলের শাসনভার ভোঁসলে শাসক, সুলতানি এবং মুঘলদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।জেলাটি শিবাজী মহারাজের দ্বারা মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
আহমেদনগরকে কেন্দ্র করে নিজামশাহী (বা আহমেদনগর সুলতানিয়াত) সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে এই অঞ্চলটি নিজামশাহী সাম্রাজ্যের অধীনস্থ হয় এবং তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। পুণে কে একটি জেলা বা সরকার রূপে গণ্য করা হয়; একটি সরকারের অধীনে ছিল অনেক উপ-বিভাগ বা পরগণা এবং প্রান্ত বা দেশ। নিজামশাহীর অনুগত ব্যক্তিবর্গর উপর এই অঞ্চলের রাজস্ব সংগ্রএর ভার ছিল। ১৬০০ সালে, আহমেদনগর সাম্রাজ্য মুঘলদের দ্বারা পদানত হয়। আহমেদনগর সুলতানিয়াতের প্রধানমন্ত্রী মালিক আম্বার দ্বিতীয় মুর্তজা নিজাম শাহকে সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসান এবং অস্থায়ী রাজধানী হয় জুন্নার[৪]। দীর্ঘদিন ধরে মালিক অম্বর নিজামশাহী রাজ্য পরিচালনা করতে সাহায্য করেন। ১৬২৬ সালে, মালিক অম্বরের মৃত্যুকালেও পুণে অঞ্চলে রাজস্ব ব্যবস্থাটি সুষ্ঠ ও ন্যায্য ছিল।
মালিক অম্বরের সময়কাল থেকেই পুণে অঞ্চলটি মালোজী ভোসলের জায়গীর রূপে অধীনস্থ ছিল এবং সপ্তদশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় মালোজি ভোসলে, তাঁর পুত্র শাহজি এবং পৌত্র শিবাজী দ্বারা এই অঞ্চল পরিচালিত হয়েছিল।১৬৩২ সালে মালিক ম্বারের পুত্র ফাতাহ খান আহমদনগর সিংহাসনে একজন পুতুল শাসক বসিয়ে মুঘলদের সাথে জোট করেন এবং পুরস্কার হিসাবে, মুঘল সম্রাট শাহ জাহান তাকে শাহজীর নামে বরাদ্দকৃত জায়গীরটি প্রদান করেন। স্বাভাবিকভাবেই,শাহজি মুঘলদের ত্যাগ করেন এবং আহমেদনগর সুলতানিতের সনাতন প্রতিদ্বন্দ্বী বিজাপুরের আদিলশাহী শাসকদের সাথে মিত্রতা করেন। আহমেদনগর (নিজামশাহী) সুলতানিয়াতের পতনের পরে নিজামশাহীর অধীনস্থ অঞ্চল বিজাপুরের আদিলশাহী এবং মুঘলদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায় এবং পুনে অঞ্চলটি বিজাপুর শাসকদের অধীনস্থ হয়।বিজাপুর সুলতানিয়াত দ্বারা এই অঞ্চলটি শাহজীর জায়গীর হিসেবে থেকে যায়[৫]।
মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজি ১৬৩০ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি জুন্নারের নিকটে শিবনেরির এক পাহাড়ি দুর্গে জন্মগ্রহণ করেছিলেন[৬][৭][৮]।স্থানীয় দেবতা শিবাই-এর নামানুসারে তাঁর নামকরণ করা হয় শিবাজী।তিনি ছিলেন পিতা শাহজী এবং মাতা জিজাবাঈয়ের দ্বিতীয় পুত্র। জিজাবাঈ ছিলেন সিধখেড়ের একজন সর্দার লাখুজী জাদবরাওয়ের কন্যা[৯][১০]। শাহাজি আদিলশাহ সেনাপতি হিসাবে বেঙ্গালুরুতে স্থানন্তরিত হলে, পুনে জায়গীরের জায়গীরদার রুপে নাবালক শিবাজী এবং প্রশাসকরূপে দাদোজি কোন্ডদেওকে প্রশাসক নিযুক্ত করেন।কোন্ডদেও স্থানীয় মাভাল নেতাদের বেশিরভাগকে পরাভূত করে এই অঞ্চলে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন[১১]।তিনি পুনে শহরের পুনর্নির্মাণ করেন এবং আদিলশাহী সেনাপতি কর্তৃক ১৬৩১ এর ধ্বংসের সময় পুণে থেকে পলাতক পরিবারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন[১২]।কোন্ডদেও জিজাবাঈ এবং বাওক শিবাজীরও দেখাশোনা করতেন এবং পুণেতে ভোঁসলে পরিবারের লালমহল প্রাসাদ নির্মাণেও সহায়তা করেন। কোন্ডদেওর বিভিন্ন সংস্কারগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল জমির ফসলের এক চতুর্থাংশ সমপরিমাণের করব্যবস্থা চালু করাএবং ফসলি ক্যালেন্ডার চালু করা।কথিত আছে যে তিনি পশ্চিম পুনে অঞ্চলে মনোনিবেশ করেছিলেন[১৩][১৪][১৫]।১৬৪৮ সালে কোন্ডদেও মারা গেলে শিবাজি এই অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত হন। শিবাজী ১৬৪৮ সালে পুনে অঞ্চলে তোরনা দুর্গ দখল এবং চাকান ও পুরন্দর দুর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ করে মূল শাসন শুরু করেছিলেন; এ সময়েই জুন্নার তাঁর দখলে আসে। সেই বছরেই তিনি তাঁর রাজধানী সদ্য নির্মিত রাজগড়ে স্থানান্তরিত করেন; এক বছর পরে, যখন বিজাপুরের মুহাম্মদ আদিল শাহ শাহাজিকে জিম্মি করে ফেলে, তিনি বাধ্য হয়ে তাঁর সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনাগুলি বাদ দেন[১৬]। ১৬৪০ এবং ১৬৫০ এর দশকের শেষদিকে, শিবাজি পুনে জেলা এবং সংলগ্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং রাজগড় ১৬৭৪ অবধি তাঁর রাজত্বের রাজধানী ছিল[১৬]। ১৬৬০-এর দশকে, ঔরঙ্গজেবের অধীনে মুঘলরা শিবাজীর দিকে মনোনিবেশ করতে থাকে। মুঘল এবং মারাঠাদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ হতে থাকে; পুনে এবং এই অঞ্চলের দুর্গগুলি প্রায়শই মুঘল এবং শিবাজির মধ্যে হাত বদল হয়[১৭]। মুঘল জেনারেল মির্জা জয়সিংহ এবং শিবাজীর মধ্যে স্বাক্ষরিত পুরন্দর চুক্তির মাধ্যমে (১৬৬৫) শিবাজি মুঘলদের হাতে জেলার বেশ কয়েকটি দুর্গ প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা করেন[১৮]। পরবর্তীকালে শিবাজী এই দুর্গগুলির মধ্যে অনেকগুলি পুনরুদ্ধার করেন। শিবাজীর পরে, ১৬৮০ সালে, মারাঠা সাম্রাজ্যের অধিপতি হন তাঁর পুত্র সম্ভাজী। এর স্বপ্ল সময়ের মধ্যেই ঔরঙ্গজেবের নেতৃত্বাধীন মুঘল সেনা বাহিনী দাক্ষিণাত্যে ঘাঁটি গাড়ে এবং সেখানেই তিন দশক ধরে অবস্থান করে।অবশেষে সম্ভাজী মুঘলদের হাতে বন্দী হন এবং ভীমা নদী ও ইন্দ্রায়ণী নদীর সঙ্গমস্থলে তুলাপুর গ্রামে সম্ভাজীকে হত্যা করা হয়[১৯][২০]। যদিও সম্ভাজীর মৃত্যুর বিষয়ে কিছু ধোঁয়াশা রয়ে গেছে কারণ বিভিন্ন অন্য বিবরণীতে জানা যায় যে সম্ভাজীর দেহাবশেষ কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হয়।[২১] ১৬৮৯ সালে সম্ভাজীর মৃত্যুর পরের সময়টি ছিল দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্যতম রাজনৈতিক উত্তাল সময় এবং এ সময়ে পুনে অঞ্চলের প্রশাসনিক কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পালাবদল ও ওঠানামা ঘটতে থাকে। শিবাজীর ছোট ছেলে প্রথম রাজারাম, দাদার মৃত্যুর পরে সিংহাসনে আরোহণ করেন। মুঘল অবরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেশিরভাগ সময় তিনি জিঞ্জিতে কাটিয়েছিলেন। মুঘলরা জিঞ্জি দখলের আগে রাজারাম মহারাষ্ট্রে ফিরে আসেন এবং ১৭০০ সালে সিংহগড়ে মারা যান[২২]। মারাঠা শাসনের অধীনে এই অঞ্চলে স্থানীয় ঘোড়াদের সাথে আরবীয় ও তুর্কি জাত ঘোড়াদের প্রজনন ঘটিয়ে ভিমথাদি (বা ডেকানি) প্রজাতিটি উদভূত হয়েছিল[২৩][২৪]।
কোঙ্কন উপকূলে শ্রীবর্ধন শহরের এক চিতপাবন ব্রাহ্মণ বালাজী বিশ্বনাথ, জঞ্জিরার মারাঠি সেনাপতি ধনজী যাবের অধীনে হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৬৯৯ থেকে ১৭০২ পর্যন্ত তিনি পুনের সর-সুবেদার বা প্রধান-প্রশাসক এবং ১৭০৪ থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত দৌলতাবাদের সর-রসুবেদার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ধনজী মারা যাওয়ার পূর্বেই বালাজী নিজেকে একজন সৎ ও যোগ্য প্রশাসক রূপে হিসাবে প্রমাণ করেছিলেন। তখন মারাঠা সাম্রাজ্যের সিংহাসনে ছিলেন শিবাজীর পৌত্র প্রথম শাহুজী[২৫]। বালাজী বিশ্বনাথের সামর্থ্য লক্ষ্য করে, ১৭১৪ সালে শাহুজী তাকে তাঁর পেশোয়া বা প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন। ১৪১৮ সালে শাহুজী তাকে সায়দাদের সহায়তার জন্য দিল্লিতে প্রেরণ করেন; এই সহায়তার বিনিময়ে মুহাম্মদ শাহ (দিল্লির মুঘল সম্রাট) শাহুজীকে পুনে, সুপা, বারামতী, ইন্দাপুর এবং জুন্নারের জন্য সরদেশমুখী অধিকার প্রদান করেন। ১৭২০ সালে বালাজীর মৃত্যুর পরে, তাঁর সুযোগ্য পুত্র প্রথম বাজিরাওকে শাহুজী পেশোয়ারূপে নিযুক্ত করেন। প্রথম বাজী রাও সাস্বড় থেকে রাজধানী পুণেতে নিয়ে আসেন এবং পুণেকে একটি ছোট পরগণা থেকে একটি বৃহত্তর শহর রূপে পরিণত করার ভিত্তি স্থাপন করেন[২৬][২৭]।পরবর্তী দশকগুলিতে দাক্ষিণাত্য জুড়ে মারাঠা শাসনব্যবস্থা প্রসারিত হওয়ায় পুনে আকার ও প্রভাবের আকারে বৃদ্ধি পায়। প্রথম বাজি রাওয়ের পুত্র বালাজী বাজী রাওয়ের আমলে, যিনি নানাসাহেব রূপে সমধিক পরিচিত, পুণে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং মারাঠা সাম্রাজ্যের মধ্যে গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৭৬১ সালের প্রথম পাণিপথের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পরে মারাঠা প্রভাব হ্রাস পায় এবং হায়দরাবাদের নিজাম পুণে শহরটি লুট করে নেয়। পেশোয়া মাধবরাওর সংক্ষিপ্ত রাজত্বকালে এটি (এবং সাম্রাজ্য) কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়[২৮]। [২৯]
নানাসাহেব নগরীর উপকণ্ঠে কাত্রাজে একটি হ্রদ তৈরি করেছিলেন এবং এই হ্রদ থেকে শহরের মধ্যস্থিত শনিবারওয়াড়া দুর্গে জল আনয়নের জন্য একটি ভূগর্ভস্থ জলসেচন ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন[৩০]। ১৭৮২ সালে শহরটিতে ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, যা বর্জ্য জলকে নদীতে ক্ষেপণ করত[১২][৩১]। নানাসাহেবের রাজত্বকালে পুনে সমৃদ্ধ হয়েছিল। শহরের দক্ষিণ প্রান্তে তিনি পার্বতী পাহাড়ের উপরে একটি প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন, হীরা বাগ নামে পরিচিত একটি বাগান গড়ে তোলেন এবং পাহাড়ের পাদদেশে একটি হ্রদ খনন করেন যার নাম সারসবাগ; সারসবাগের হ্রদের মধ্যে একটি দ্বীপে গণেশ মন্দির রয়েছে। নানাসাহেব নতুন বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকাগুলিরও বিকাশ করেছিলেন: সদাশিব পেঠ, নারায়ণ পেঠ, রাস্তা পেঠ, নানা পেঠ ইত্যাদি। ১৭৯০ এর দশকে, শহরটির জনসংখ্যা ছিল ৬০০,০০০[৩২]।
পেশোয়াদের পৃষ্ঠপোষকতায়, পুনেতে অনেকগুলি সরকারী উতসব পালিত হত। প্রধান উত্সবগুলি ছিল গণেশোৎসব, দাক্ষিণাত্য হিন্দু নববর্ষ বা গুড়ি পারোয়া, হোলি এবং দশেরা। পেশোয়ার দরবারে হোলি পাঁচ দিন ব্যাপী উদযাপিত হত।হিন্দু শ্রাবণ মাসে দক্ষিণা উতসব পালিত হত যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হত; ভারত জুড়ে ব্রাহ্মণরা এই উতসবের সময় পুণেতে যাত্রা করতেন[৩৩][৩৪]।শহরের অর্থনীতির প্রায় ১৫% নিয়ন্ত্রিত হত এই সমস্ত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উতসবগুলির মাধ্যমে[৩৫][৩৬][৩৭]।
১৭৬১ সালে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে মারাঠা বাহিনীর পরাজয়ের পরে ভারতে পেশোয়া প্রভাব হ্রাস পেয়েছিল, তবে পুনে তখনও শক্তিপীঠ রূপে থেকে যায়।১৭৯৫ সালে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজি রাওয়ের পতনের পরে অবশ্য শহরের ভাগ্য দ্রুত খারাপ হতে থাকে। ১৮০২ সালে পুনের পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও ইন্দোরের যশবন্ত হোলকারের কাছে পরাজিত হন এবং যশবন্ত হোলকার পুনে দখল করে নেন। ১৮০৩-১৮০৫-এর দ্বিতীয় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধের পরে ব্রিটিশ্রাজের সাথে বাজীরাওয়ের শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয় এবং পুনে কার্যত ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ১৮১৫ সালে মাউন্টস্টুয়ার্ট এলফিনস্টনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা দ্বিতীয় বাজি রাওয়ের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পেশোয়া শাসনের অবসান ঘটে।
১৮৫৮ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলা রেলওয়ে (জিআইপিআর) দ্বারা বম্বে থেকে পুণে পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হয়[৩৮][৩৯]। পরের দশকগুলিতে, এই লাইনটি শহরের পূর্ব এবং দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছিল। জিআইপিআর ১৮৭১ সালে এই রেলপথটিকে পূর্বদিকে প্রসারিত করে রায়চূড় অবধি নিয়ে যায়, যেখানে এটি মাদ্রাজ রেলওয়ের সাথে মিলিত হয়ে পুণে শহরটিকে মাদ্রাজের সাথে সংযুক্ত করে[৪০]। ১৮৮৬ সালে পুণে থেকে মিরাজ অবধি মিটার-গেজ লাইনটি স্থাপিত হলে পুনে একটি রেল জংশনে পরিণত হয়। ১৯২০-এর দশকে বোম্বাই-পুুনা লাইনটি বিদ্যুতায়িত হয়েছিল; যার ফলে মাত্র তিন ঘণ্টাতেই বম্বে থেকে পুণে পৌছনো যেত[৪১]। জেলার পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণে অনেকগুলি গ্রাম যেমন লোনাভলা, উরুলি কাঞ্চন এবং দন্ড রেলপথে সংযুক্ত হয়। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশরা পুনেতে একটি টেলিগ্রাফ সিস্টেম স্থাপন করেছিল[৪২]। বম্বে প্রেসিডেন্সির ১৮৫৫ সালের গেজেট অনুসারে: পুুনা এবং জিআইপিআরে টেলিগ্রাফ অফিস ছিল। ১৯২৮ সালে, ইম্পেরিয়াল ওয়্যারলেস চেইনের জন্য টেলিগ্রাফ সিগন্যালগুলি রিলে করতে খডকিতে একটি রিলে স্টেশন তৈরি করা হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে, পুনে শহর জেলার চিঠিপত্র আদানপ্রদানের বা পোস্টাল ব্যবস্থার কেন্দ্র ছিল। শহরে দুটি পোস্ট অফিস ছিল, যেগুলি মানি-অর্ডার এবং সঞ্চয়ের পরিষেবাও শুরু করেছিল[৪৩]। পুনের পূর্ব অঞ্চলগুলি পশ্চিম ঘাট সংলগ্ন শহরের পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত পায়। খরাজনিত ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য, ১৮৭৮ সালে খড়কভাসলাতে মুঠা নদীর উপরে একটি বাঁধ নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় এই বাঁধটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম হিসাবে বিবেচিত হত। শহরের পূর্বে জমি সেচ দিতে এবং শহর ও তার সেনানিবাসে পানীয় জল সরবরাহ করতে প্রতিটি নদীর তীরে দুটি করে খাল খনন করা হয়েছিল[৪৪]। ১৮৯০ সালে পুনে পৌরসভাপরিস্রুত জল পরিশএবা দেওয়ার জন্যে ২০০,০০০ টাকা খরচ করেছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়[৪৫]। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে, পুনে এবং মুম্বাইয়ের মধ্যে পশ্চিম ঘাটে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। মুলশি বাঁধের নিকটবর্তী খোপোলি (ঘাটের মুম্বাইয়ের দিকে) এবং ভিভপুরী প্লান্ট থেকে একটি টাটা সংস্থা পুুনা বৈদ্যুতিক সরবরাহকারী সংস্থা বিদ্যুৎ সংগ্রহ করত[৪৬]। মুম্বই ও পুনের মধ্যে চলমান ট্রেনগুলিকে বিদ্যুতায়িত করার জন্য এবং শিল্প ও গার্হস্থ্য ক্ষেত্রে এই বিদ্যুত ব্যবহার করা হত। ভোরের ভেলভান্দি নদীর তীরে একটি বাঁধ নির্মিত হয়েছিল[৪৭][৪৮]।
জেলাটি উত্তর-পশ্চিমে থানে জেলা, পশ্চিমে রায়গড় জেলা, দক্ষিণে সাতারা জেলা, দক্ষিণ পূর্বে সোলাপুর জেলা এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্বে আহমেদনগর জেলা দ্বারা বেষ্টিত। পশ্চিম ঘাটের পাদদেশ থেকে এটি পূর্বদিকে দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে বিস্তৃত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা ১৮৬৩ ফুট বা ৫৫৯ মিটার। জেলাটি ১৭.৫° থেকে ১৯.২° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৩.২° এবং ৭৫.১° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
জেলার ১৫ টি তালুকের মধ্যে নয়টি তালুককেই খরা-প্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে; খরা-প্রবণ এলাকার মোট আয়তন ১,৫৬২,০০০ হেক্টর (৬,০৩০ বর্গ মাইল) এবং এর মধ্যে ১,০৯৫,০০০ হেক্টর (৪,২৩০ বর্গ মাইল) ফসলি অঞ্চল। [৪৯]
জেলাটির গড় বৃষ্টিপাত ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিমিটার (২৪ থেকে ২৮ ইঞ্চি) , যার বেশিরভাগই বর্ষার মাসগুলিতে (জুলাই থেকে অক্টোবর) পড়ে থাকে। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা সংলগ্ন অঞ্চলটিতে পূর্বের অঞ্চলগুলির চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। দন্ড ও ইন্দাপুর তালুকে বৃষতিপাতের পরিমাণ কম। এখানকার তাপমাত্রার বৈশিষ্ট্য মধ্যম তাপমাত্রা এবং ভারতীয় বর্ষার সাথে তাল মিলিয়ে অনির্দিষ্ট বৃষ্টিপাত। গ্রীষ্ম কাল মানে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত শুষ্ক এবং গরম থাকে। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে এবং ৮২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল চলে। তাপমাত্রা সাধারণত ৭ থেকে ১২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৪৫ থেকে ৫৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর আশেপাশে নামতে পারে, কখনও কখনও ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড যায়।
Pune-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৯.৯ (৮৫.৮) |
৩১.৯ (৮৯.৪) |
৩৫.৪ (৯৫.৭) |
৩৭.৭ (৯৯.৯) |
৩৬.৯ (৯৮.৪) |
৩১.৭ (৮৯.১) |
২৮.৪ (৮৩.১) |
২৭.৪ (৮১.৩) |
২৯.৪ (৮৪.৯) |
৩১.৪ (৮৮.৫) |
৩০.০ (৮৬.০) |
২৮.০ (৮২.৪) |
৩১.৫ (৮৮.৭) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১০.০ (৫০.০) |
১২.০ (৫৩.৬) |
১৫.০ (৫৯.০) |
১৯.৫ (৬৭.১) |
২২.৪ (৭২.৩) |
২২.৭ (৭২.৯) |
২২.০ (৭১.৬) |
২১.৩ (৭০.৩) |
২০.৩ (৬৮.৫) |
১৭.০ (৬২.৬) |
১৪.০ (৫৭.২) |
১০.০ (৫০.০) |
১৭.২ (৬২.৯) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ০ (০) |
৩ (০.১) |
২ (০.১) |
১১ (০.৪) |
৪০ (১.৬) |
১৩৮ (৫.৪) |
১৬৩ (৬.৪) |
১২৯ (৫.১) |
১৫৫ (৬.১) |
৬৮ (২.৭) |
২৮ (১.১) |
৪ (০.২) |
৭৪১ (২৯.২) |
অধঃক্ষেপণ দিনগুলির গড় | ০.১ | ০.৩ | ০.৩ | ১.১ | ৩.৩ | ১০.৯ | ১৭.০ | ১৬.২ | ১০.৯ | ৫.০ | ২.৪ | ০.৩ | ৬৭.৮ |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ২৯১.৪ | ২৮২.৮ | ৩০০.৭ | ৩০৩.০ | ৩১৬.২ | ১৮৬.০ | ১২০.৯ | ১১১.৬ | ১৭৭.০ | ২৪৮.০ | ২৭০.০ | ২৮৮.৩ | ২,৮৯৫.৯ |
উৎস: HKO |
কৃষ্ণা নদীর প্রধান শাখা ভীমা নদী পশ্চিম ঘাট পর্বত থেকে উতপন্ন হয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। পুণে জেলার সমস্ত নদী (পুষ্পবতী, কৃষ্ণবতী, কুকাদি, মীনা, ঘোদ, ভামা, অন্ধ্র, ইন্দ্রায়ণী, পবনা, মুলা, মুথা, আম্বি, মোসি, শিবগঙ্গা, কান্দি, গুঞ্জাবনী, ভেলভান্দি, নীরা, করহা এবং ভেলু) ভীমার উপনদী। কুকাদি, পুষ্পাবতী, ঘোদ, ভীমা, পবনা, ভামা, মুলা ও মুথা (তেমঘর ও খড়কভাসলা বাঁধ) নদীর উপরে জেলার প্রধান প্রধান বাঁধগুলি নির্মিত হয়েছে[৫০]।
জেলায় দুটি পৌরসভা রয়েছে: পুনে পৌর সভা (পিএমসি) এবং পিম্পরি চিঞ্চওয়াড় পৌরসভা(পিসিএমসি)। পিম্পরি চিঞ্চওয়াড় পৌরসভাটি জেলার পশ্চিমাংশে পুনে-মুম্বাই জাতীয় মহাসড়কের পারে অবস্থিত এবং এই পৌরসভার প্রধান অঞ্চলগুলি হল- পিম্প্রি, চিঞ্চওয়াড়, ভোসারি, নিগড়ি ও আকুর্ডি। এই অঞ্চলটি ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে মহারাষ্ট্র রাজ্যসরকার দ্বারা শিল্প বিকাশের জন্য বিশেষ অঞ্চল রূপে গড়ে তোলা হয়েছিল।
পুণে জেলাতে ১৫টি তালুক বা সাবডিভিশন রয়েছে , যথা-
জুন্নার তালুক
আম্বেগাঁও তালুক
খেড় তালুক
মাভাল তালুক
মুলশি তালুক
ভেলহে তালুক
ভোর তালুক
হাভেলি তালুক
পুরন্দর তালুক
পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড় তালুক
পুণে শহর তালুক
ইন্দাপুর তালুক
দন্ড তালুক
বারামতী তালুক
শিরুর তালুক
এছাড়া ১৮৬৬টি গ্রাম সহ ১৩টি পঞ্চায়েতসমিতি রয়েছে এই জেলাতে। জেলাটিতে মোট ২১টি বিধানসভা এবং ৪টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। লোকসভা কেন্দ্রগুলি হল পুণে, বারামতী, শিরুর এবং মাভাল (এই লোকসভার কিছু অংশ রয়েছে রায়গড় জেলাতেও)।
জেলার প্রধান দুটি শহর পুণে এবং পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড়। এছাড়া প্রায় প্রতিটি সাবডিভিশনের সদর শহরগুলি এক একটি পৌরসভা বা নগরপালিকা।
পুণে মহানগরী অঞ্চলের বিস্তৃতির ফলে শহরের নিকটবর্তী নতুন শহরতলীগুলির বিকাশ ঘটেছে (যেমন মগরপাট্টা, আমানোরা এবং নান্দেড় শহর এবং লাভাসার মতো পাহাড়ের শহর).[৫১]
পুনে জেলা ন্যায়ালয়, নাগরিক মামলা বা সিভিল বিষয়গুলিতে মূল বিচার বিভাগের প্রধান ন্যায়ালয় এবং এটি জেলা পর্যায়ে ন্যায়বিচার পরিচালনা করে। ফৌজদারি বিষয়গুলির জন্য এটি একটি দায়রা ন্যায়ালয় রূপে বিবেচিত।জেলা ন্যায়ালয়ের প্রধান বিচারপতিত্ব করেন রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রধান জেলা ও দায়রা বিচারপতি। পুণে জেলা ন্যায়ালয়ের সিদ্ধান্তগুলি বোম্বে উচ্চ ন্যায়ালয়ের অধীনে পুনর্বিবেচনার যোগ্য। পুনে জেলা ন্যায়ালয় বোম্বে উচ্চ ন্যায়ালয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন।
বছর | জন. | ±% |
---|---|---|
১৯০১ | ১০,৯৫,৮৫৮ | — |
১৯১১ | ১১,৭৭,২৩৮ | +৭.৪% |
১৯২১ | ১১,০৫,০১৪ | −৬.১% |
১৯৩১ | ১২,৭৫,৮৮২ | +১৫.৫% |
১৯৪১ | ১৪,৭২,৯৭২ | +১৫.৪% |
১৯৫১ | ১৯,৫০,৯৭৬ | +৩২.৫% |
১৯৬১ | ২৪,৬৬,৮৮০ | +২৬.৪% |
1971 | ৩১,৭৮,০২৯ | +২৮.৮% |
১৯৮১ | ৪১,৬৪,৪৭০ | +৩১% |
১৯৯১ | ৫৫,৩২,৫৩২ | +৩২.৯% |
২০০১ | ৭২,৩২,৫৫৫ | +৩০.৭% |
২০১১ | ৯৪,২৯,৪০৮ | +৩০.৪% |
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী পুণে জেলার জনসংখ্যা ৯,৪২৯,৪০৮ জন [২] যা প্রায় বেনিন[৫২] রাষ্ট্রের জনসংখ্যা অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনা[৫৩] রাজ্যের জনসংখ্যার সমতুল্য। জনসংখ্যার বিচারে ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে পুণের স্থান চতুর্থ। জেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬০৩ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (১,৫৬০ জন/বর্গমাইল). । ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে জেলার জনসংখ্যা-বৃদ্ধির হার ছিল ৩০.৩৪ শতাংশ। জেলার লিঙ্গানুপাত প্রতি ১০০০ জন পুরুষ পিছু ৯১০ জন নারী এবং সাক্ষরতার হার ৮৭.১৯ শতাংশ।
ভারতের ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যার ৭৮.১৭% মারাঠি ভাষা, ১২.৩৪% হিন্দি ভাষা, ১.৮৯% উর্দু ভাষা, ১.৬৯%তেলুগু ভাষা, ১.৪০% কন্নড় ভাষা, ১.১৫% গুজরাটি ভাষা, ০.৫৮% তামিল ভাষা, ০.৫৩% মালায়ালাম ভাষা, ০.৪৬% সিন্ধি ভাষা এবং ০.৪৫% বাংলা ভাষায় কথা বলেন[৫৪]।
ভাষা | সংখ্যা | শতাংশ |
---|---|---|
মারাঠি | ৫,৭৪২,২৯১ | ৭৯.৪০ |
হিন্দি | 5২০,০৮৯ | ৭.১৯ |
উর্দু | ১৭০,৬৫৮ | ২.৩৬ |
কন্নড় | ৪১৮,৬৪৮ | ৫.৬২ |
তেলুগু | ১১৮,২৫৭ | ১.৬৪ |
মাড়ওয়ারী | ৯৯,৮৫০ | ১.৩৮ |
গুজরাটি | ৮২,৪৮৭ | ১.১৪ |
অন্যান্য | ৩৮০,২৭৫ | ৫.২৬ |
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, জেলার ৮৫% জনগণ ধর্মাবলম্বী। এছাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুসলিম, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অবস্থান রয়েছ।
ধর্ম | সংখ্যা | শতাংশ |
---|---|---|
বৌদ্ধ | ৩২১,৯৪৮ | ৪.৪৫ |
খ্রিস্টান | ১১৬,৬৬১ | ১.৬১ |
হিন্দু | ৬১৯৭৩৪৯ | ৮৫.৬৯ |
জৈন | ১০৪০৭৩ | ১.৪৪ |
ইসলাম | 4৫২,৩৯৭ | ৬.২৬ |
শিখ | 2১,৯৩৮ | ০.৩০ |
অন্যান্য | ১১,২৮৩ | ০.১৬ |
জানাতে অস্বীকার করেছেন | ৬,৯০৬ | ০.১০ |
পুনে শহরটিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়।[৫৫] এই শহরটিতে সাবিত্রীবাঈ ফুলে পুণে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সাথে সম্পর্কিত অনেকগুলি কলেজ রয়েছে। জেলায় জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমী সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে- যেমন ভারতীয় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, ইন্ডিয়ান ইন্স্টিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকনোলজি, ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা এবং অনুসন্ধান সংস্থান অত্যাদি। এই জেলায় অনেকগুলি বেসরকারীভাবে পরিচালিত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে (ধর্মীয় এবং বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক প্রতিষ্ঠানগুলি সহ)। ১৯৮২ সালে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী বসন্তদাদা পাতিলের শিক্ষাক্ষেত্রে উদারীকরণের পরে বেশিরভাগ বেসরকারী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল[৫৬]। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য নেতারা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন[৫৭][৫৮]
যদিও জেলাটি একটি শিল্প কেন্দ্র রূপে সমধিক পরিচিত, কৃষিও জেলার অর্থনীতিতে একটি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
১৯৫০ এর দশকে পুনের পার্শ্ববর্তী হডপসর, ভোসারি এবং পিম্পরি সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে শিল্পের বিকাশ শুরু হয়েছিল। সরকার পরিচালিত হিন্দুস্তান অ্যান্টিবায়োটিক ১৯৫৪ সালে পিম্পরিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল[৫৯]। ভোসারীর আশেপাশের অঞ্চলটি ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে সদ্য নির্মিত মহারাষ্ট্র শিল্প উন্নয়ন নিগম (এমআইডিসি) দ্বারা শিল্প বিকাশের জন্য পৃথকভাবে উন্নয়ন করা হয়েছিল এবং পৌরনিগম ব্যবসায়ের অবকাঠামো সরবরাহ করেছিল[৬০]। টেলকো (বর্তমানে টাটা মোটরস) ১৯৬১ সালে মোটরগাড়ি উতপাদন শুরু করে, যা শহরের অটোমোবাইল সেক্টরকে উন্নীত করেছিল। ১৯৭০ সালের দিকে, পুণেতে টেলকো, বাজাজ, কায়েনেটিক, ভারত ফরজ, আলফা লাভাল, আটলাস কোপকো, স্যান্ডভিক এবং থার্মাক্সের বিস্তৃতির মাধ্যমে এটি ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল অঞ্চল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল; এই অঞ্চলটি চেন্নাইয়ের সাথে "ভারতের ডেট্রয়েট" হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল[৬১]। পিম্পরি, চিঞ্চওয়াড় এবং ভোসরি গ্রামগুলি এবং তার আশেপাশের অঞ্চলগুলি সংযুক্ত করে পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড় শহরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০০৮ সালে, জেনারেল মোটরস, ভক্সওয়াগেন এবং ফিয়াট পুনের কাছে প্ল্যান্ট তৈরি করে। নব্বইয়ের দশকে শিরুর ও বারামতীত্ব প্রতিষ্ঠিত এমআইডিসি পার্কগুলি বহু বিদেশী সংস্থাগুলিকে আকর্ষণ করেছে।
ভারতের ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারীকরণের পরে পুনে তথ্য-প্রযুক্তি ও প্রকৌশল শিল্প থেকে বৈদেশিক মূলধন আকর্ষণ করতে শুরু করে। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, অন্ধ এবং হিঞ্জাওয়াড়িতে একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক তৈরি হয়[৬২]। পরবর্তীকালে হডপসার, বানের, মগরপাট্টা, খরাডি, বিমাননগর ইত্যাদি অঞ্চলেও তত্থ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রসার ঘটতে থাকে।
যদিও পুনের আশেপাশের অঞ্চলটি শিল্পায়িত, জেলার অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।যেহেতু বেশিরভাগ আবাদযোগ্য জমি এখনও মৌসূমী বৃষ্টিপাতের উপরে নির্ভরশীল, দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষা ভালো হলে (জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে) জেলার খাদ্য পর্যাপ্ততা এবং জীবনযাত্রার মান বজায় থাকে।জেলার পূর্বাঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে খরাপ্রবণ, তবে বাঁধ, খাল ও কূপ দ্বারা সরবরাহ করা সেচ কৃষিক্ষেত্রকে বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল করে তুলছে। জলাশয়ের অতিরিক্ত খননের ফলে পুরন্দর, বারামতী, দন্ড, ইন্দাপুর এবং শিরুর (জেলার পূর্বাঞ্চল) উপজেলায় জলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে কৃষিক্ষেত্র ও পানীয়জলের সরবরাহকে হুমকির মুখে ফেলেছে[৬৩]। বর্ষার মরশুমি ফসলের মধ্যে রয়েছে চাল, জোয়ার ও বাজরা। অন্যান্য ফসলের মধ্যে রয়েছে গম, ডাল, শাকসবজি এবং পেঁয়াজ।ভোর উপজেলা এবং পশ্চিম ঘাটের নিকটবর্তী অঞ্চলে জন্ম নেওয়া আম্বেমোহর চাল সারা মহারাষ্ট্রে জনপ্রিয়।যদিও আম্বেমোহরের ফলন কম হওয়ায় অঞ্চলটির অনেক কৃষকইন্দ্রায়ণী ধান চাষ করার দিকে ঝুঁকছেন[৬৪]। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে রয়েছে আখ, তুলা এবং তৈলবীজ- বাদাম এবং সূর্যমুখী চাষ। জেলায় উল্লেখযোগ্য ফলের বাগান রয়েছে, বিশেষত আম, আঙ্গুর এবং কমলালেবুর। নারায়ণগাঁয়ের একটি ওয়াইনারি স্থানীয়ভাবে থম্পসন বীজবিহীন আঙ্গুর থেকে স্পার্কলিং ওয়াইন তৈরি করে[৬৫]। জেলার নগদ ফসলের (তুলা সহ) বেশিরভাগ কৃষক কৃষি সমবায়ভুক্ত এবং চিনি স্থানীয় সমবায় সমিতির মালিকানাধীন মিলগুলিতে উৎপাদিত হয়[৬৬]। গত পঞ্চাশ বছরে স্থানীয় চিনি কলগুলি রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিবিদদের পদক্ষেপ হিসাবে রয়েছে[৬৭]।
পুনে জেলায় ১৩,৬৪২ কিলোমিটার (৮৪৭৭ মাইল) রাস্তা রয়েছে।যে সমস্ত জাতীয় ও রাজ্য মহাসড়কগুলি এই জেলার উপর দিয়ে যায়, সেগুলি হল:
Benin 9,325,032
North Carolina 9,535,483