পৃথিবীতে পানির উৎস অথবা, এই সৌরজগতের অন্যান্য পাথুরে গ্রহের বিপরীতে পৃথিবীতে এতো তরল পানির উপস্থিতির কারণ সম্পর্কে এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। যথেষ্ট পরিমাণ মহাসাগর গঠনের জন্য বিগত ৪.৫ বিলিয়ন বছরের বেশি সময় ধরে পৃথিবী পৃষ্ঠে কীভাবে পানি জমা হতে পারে সেটি নিয়ে অনেকগুলো মোটামুটি সামঞ্জস্যপূর্ণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
গ্রহাণু বেল্টের বাইরের কোনো ধূমকেতু, ট্রান্স নেপচুনিয়ান বস্তু অথবা পানি সমৃদ্ধ গ্রহাণু (গ্রহ সদৃশ) পৃথিবীর সাথে ধাক্কা লাগার মাধ্যমে পৃথিবীর সমুদ্রে পানি নিয়ে আসতে পারে। হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম এবং প্রোটিয়াম গ্রহাণুর দিকেই ইঙ্গিত করে। যদিও সমান অনুপাতের কার্বন সমৃদ্ধ কনড্রাইট সাগরের পানিতে পাওয়া গেছে, আইসোটোপের আগের হিসাবগুলো ধূমকেতু এবং ট্রান্স নেপচুনিয়ান বস্তু পৃথিবীর পানির সাথে কিছুটা মিলে যায়।[২] ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে গবেষকরা পৃথিবীতে ৪.৫ বিলিয়ন বছরের পুরনো দুটি উল্কার সন্ধান পান যাতে ডিউটেরিয়ামের ঘাটতি যুক্ত জৈব পদার্থের সাথে তরল পানি উপস্থিত ছিল।[৩]
প্রচুর পরিমাণে প্লানেটেসিমাল ক্ষয়প্রাপ্ত অ্যালুমিনিয়ামের আইসোটোপ দ্বারা উত্তপ্ত হয়েছিলো। এটি ভূপৃষ্ঠে পানি উঠে আসার একটি কারণ হতে পারে।[৪] সমসাময়িক গবেষণায় পাওয়া যায় যে পৃথিবী সৃষ্টির সময়ই ডিউটেরিয়াম-টু-হাইড্রোজেনের অনুপাতের পানি উপস্থিত ছিল এটি প্রমাণ করে যে প্রাচীন ইউক্রিট উল্কাপিণ্ডগুলো গ্রহাণু থেকেই উদ্ভূত হয়েছিলো।[৫]
ডেভিড জুইটের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, চারটি ধূমকেতু হ্যালি, হ্যাকুটাকে, হ্যালি-বপ এবং ৬৭পি/চুরিয়মভ-গিরাসিম্যাঙ্কোতে আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম থেকে প্রটিয়ামের (ডি/এইচ অনুপাত) অনুপাত, সাগরের পানির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ থেকে বলা যায় যে পৃথিবীতে পানি পানির উৎপত্তি উল্কা থেকে হওয়া অসম্ভব। এই ধূমকেতুগুলো কুইপার বেল্টের মতই কিনা এটি এখনো পরিষ্কার নয়। আলেসান্দ্রো মরবিদেল্লির মতে [৬], বর্তমানে প্রাপ্ত পানির সবচেয়ে বড় অংশ এসেছিলো গ্রহাণু বেল্টের বাইরে উৎপন্ন হওয়া উপগ্রহ থেকে যা পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিলো। কার্বন সমৃদ্ধ পাথরে ডি/এইচ অনুপাত এটি নির্দেশ করে। কার্বন সমৃদ্ধ কনড্রাইট থেকে পাওয়া পানিতে সাগরের পানির মতই ডি/এইচ অনুপাত দেখতে পাওয়া যায়| তবুও এই দাবি করা হয় যে[৭], সাগরের পানির ডি/এইচ অনুপাত পৃথিবীর ইতিহাসে বৃদ্ধি পেয়েছে| সঙ্গত কারণেই এই প্রস্তাব ও উঠে এসেছে যে, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই পৃথিবীতে উপস্থিত ছিলো|
চাঁদের পাথরের সাম্প্রতিক রাসায়নিক বিশ্লেষণ এটিই নির্দেশ করে যে পৃথিবীতে তার সূচনালগ্ন থেকেই পানির উপস্থিতি ছিলো| এপোলো ১৫ এবং ১৭ মিশন চাঁদের যেসব নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলো সেগুলোতে পাওয়া ডিউটেরিয়াম-টু-হাইড্রোজেনের অনুপাত কয়লার কনড্রাইট থেকে প্রাপ্ত আইসোটোপিক অনুপাতের সাথে মিলে যায়| এই অনুপাত পৃথিবীতে প্রাপ্ত পানির অনুপাতের সাথেও মিলে যায়| এসব অনুসন্ধান উভয় পদার্থে একই পানির উৎসের কথা নির্দেশ করে| এটি সমর্থন করে যে, বৃহস্পতিগ্রহ সাময়িকভাবে সৌরমণ্ডলের ভেতরে অভিযোজিত হোয়েছিলো| এতে পানি সমৃদ্ধ কয়লাসদৃশ কনড্রাইটগুলোর কক্ষপথ অস্থিতিশীল হয়ে পরে| এর ফলে কিছু কিছু কন্দ্রাইট ভেতরের দিকে পরে যায় এবং পৃথিবী এবং এর প্রতিবেশী গ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়| [৮] জলীয় বাষ্পের সেরেস থেকে বের হয়ে যাওয়া আবিষ্কার গ্রহাণু বেল্টের সাথে পানি এবং বরফের সম্পর্কের তথ্য প্রদান করে| [৯]