পেক্টাস এক্সকেভাটাম হল বক্ষ প্রাচীরের এক ধরনের জন্মগত বিকলাঙ্গতা যাতে বক্ষ পিঞ্জর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে। এটি বুকে এক ধরনের বসে যাওয়া বা গর্তের মত আকার প্রদান করে। এই বিকৃতি আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে জন্ম থেকেই অথবা বয়ঃসন্ধিকালে দৃশ্যমান হতে পারে।
পেক্টাস এক্সকেভাটামকে কখনো কখনো শুধুমাত্র বাহ্যিক অঙ্গবিকৃতি বলে ধরা হয়, কিন্তু তীব্রতার উপর নির্ভর করে এটি হৃৎপিণ্ড এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়ার ক্ষতিসাধন করতে পারে যা সর্বোপরি বুক এবং পিঠের ব্যাথার উদ্রেক করে।
যেসকল মানুষ এই অবস্থায় পতিত হন তাদের উপর নেতিবাচক মানসিক প্রভাব পড়তে পারে এবং তারা ঐসকল কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেন যাতে তাদের বুক দৃশ্যমান হয়।[১] যদিও অলিম্পিক সাতারু কডি মিলার ও মডেল মিলস ম্যাকমিলানের মত উল্লেখ্যযোগ্য সমসাময়িক মার্কিন উদাহরণ বিদ্যমান যা সম্পূর্ণ বিপরীত দিক প্রকাশ করে।
বুকের হাড়ের ভেতরের দিকে বসে যাওয়াই হল এই রোগের বৈশিষ্ট্য। সাধারণত এই অবস্থায় বক্ষাস্থির নিচের প্রান্ত কাপের মত অবতল আকার ধারণ করে; এছাড়া ঊর্ধ্বতর প্রান্তের তরুণাস্থির সমন্বয়ে আরোর বড় আকারের অবতলতাও দেখা যেতে পারে।[২] বক্ষপিঞ্জরের সকল নিচের হাড়গুলোর বাইরের দিকে প্রসারণ ঘটতে পারে("ফ্লেয়ার্ড রিবস")।[৩] পেক্টাস এক্সকেভাটামের বিকৃতি প্রতিসম এবং অপ্রতিসম দুই-ই হতে পারে।
রোগাক্রান্ত ব্যক্তি বুক ও পিঠে ব্যাথা অনুভব করতে পারেন, যা মুলত মাস্কুলো-স্কেলেটাল শ্রেণির।[৪]
মাঝারি পর্যায়ের ক্ষেত্রে, হৃৎপিণ্ডের শ্বসনতন্ত্রের(cardiorespiratory) ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে, যদিও হৃৎপিণ্ড স্থানচ্যুত এবং/অথবা ঘুরে যেতে পারে।[৫] তীব্র পর্যায়ে mitral valve prolapse ঘটতে পারে এবং ফুসফুসের ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় শারীরিক সক্ষমতা সীমিত হয়ে যেতে পারে।[৬]
মানসিক লক্ষণসমুহ বিব্রতভাব,
সামাজিক দুশ্চিন্তা, অপমানিতবোধ, কাজকর্ম ও যোগাযোগের ক্ষমতা সীমিত হওয়া,
নেতিবাচক মনোভাব, অসহিষ্ণুতা, নৈরাশ্যবোধ করা, এমনকি বিষন্নতার সাথে প্রকটভাবে দেখা যায়।[৭]
পেক্টাস এক্সকেভাটাম আনুমানিক '১৫০ জনের মধ্যে ১ জন' থেকে '১০০০ জনের মধ্যে ১ জনের' মধ্যে দেখা যায়। যার অধিকাংশই পুরুষ হয়ে থাকেন (পুরুষ ও মহিলার মধ্যে ৩ঃ১ অনুপাতে)।[৮][৯]
গবেষকগণ পেক্টাস এক্সকেভাটামের কারণ সম্মন্ধে অনিশ্চিত থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পেছনে জীনগত প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন।[১০] অবশ্য ২০১২ সাল নাগাদ, পেক্টাস এক্সকেভাটামের কতকগুলো ডিএনএ আবিষ্কার করা হয়েছে যার ধারা এই রোগের উপর জীনগত প্রভাব প্রমাণ করা সম্ভব।[১১]
পেক্টাস এক্সকেভাটামে আক্রান্ত একটি বুকের প্রস্থচ্ছেদের স্ক্যান
কোনো ব্যক্তি পেক্টাস এক্সকেভাটামে আক্রান্ত কিনা তা প্রথমত বুকের সম্মুখভাগ দেখার মাধ্যমে ধারণা করা যায়। তখন স্টেথোস্কোপের সাহায্যে পরীক্ষা করলে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন অনুধাবন করা যাবে। তাছাড়া বক্ষপিঞ্জরের সাথে ফুসফুসীয় ধমনীর অবস্থান কাছাকাছি হয়ে পড়ার ফলে হৃৎপিন্ডের সংকোচনের সময় ক্ষীণ শব্দ শোনা যেতে পারে।[১২] ফুসফুসের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় ফুসফুসের শব্দ সাধারণত স্পষ্ট তবে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।[৮]
পেক্টাস এক্সকেভাটাম মধ্যম পর্যায়ে থাকলে তা সংশোধন করার কোনো প্রয়োজন হয় না।[১৩] তীব্র পর্যায়ে চলে গেলে রক্ষণশীল উপায়ে বা সার্জারির মাধ্যমে উভয়ভাবে তার চিকিৎসা করা যায়। অস্ত্রোপচার করার পূর্বে বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষার মধ্যদিয়ে যেতে হয়। যার মধ্যে সিটি স্ক্যান, ইসিজি অন্যতম।[১৪] সিটি স্ক্যান করার পর তা থেকে হলার ইনডেক্স পরিমাপ করা হয়। বক্ষপিঞ্জরের ভেতরের দিকের আনুভুমিক দুরত্ব এবং মেরুদন্ড হতে বক্ষপিঞ্জরের ক্ষুদ্রতম দুরত্বের অনুপাত দ্বারা হলার নিরূপণ করা হয়।[১৫] হলার ইনডেক্স ২.৫ হলে তা স্বাভাবিক ও ৩.২৫ এর বেশি হলে তা সাধারণত তীব্র ধরা হয়।[১৬][১৭][১৮]
বক্ষপ্রাচীর স্থিতিস্থাপক হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি দৃঢ় হতে থাকে।[১৯] বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতির সৃষ্টি করা হয়েছে যা সার্জারি ছাড়াই ধীরে ধীরে আক্রান্ত অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারে।
শরীরচর্চা পেক্টাস এক্সকেভাটামে আক্রান্ত বুকের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে যদিও তা একান্তভাবে বিকৃতিটিকে নিরাময় করতে পারে না। এটি মধ্যম পর্যায় হতে অবস্থার অবনমন আটকে রাখার উপায় হিসেবে সাধারণত ব্যবহার করা হয়।[২০][২১] তাছাড়া চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে বুকের পরিবর্তিত অবস্থা অটুট রাখতেও শরীরচর্চাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।[২২]
পেক্টাস এক্সকেভাটাম শব্দটি ল্যাটিন ভাষা থেকে আগত, যার অর্থ হল অবতল বা গর্ত হওয়া বুক। এটাকে
নিমজ্জিত বক্ষ, cobbler's chest বা চুঙ্গী বক্ষ বলেও অভিহিত করা হয়।
পেক্টাস এক্সকেভাটাম পশুপাখির দেহেও পরিলক্ষিত হয় বলে জানা যায়, যেমন "মাঞ্চকিন" জাতের বিড়াল।[২৩] পশুপাখির উপর প্রয়োগকৃত বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি মানুষের উপর ব্যবহার করা হয় না, যেমন: সেলাই করা ছাচকে বুকের চারপাশে পেঁচিয়ে ব্যবহার এবং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বন্ধফলকের ব্যবহার।[২৪][২৫] এইসব কৌশল সাধারণত অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রাণিদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, যাদের বক্ষাস্থি স্থিতিস্থাপক হয়ে থাকে।[২৬]
↑See for example Bosgraaf RP, Aronson DC (২০১০)। "Treatment of flaring of the costal arch after the minimally invasive pectus excavatum repair (Nuss procedure) in children"। Journal of Pediatric Surgery। 45 (9): 1904–6। ডিওআই:10.1016/j.jpedsurg.2010.05.037। পিএমআইডি20850643।
↑Fokin AA, Steuerwald NM, Ahrens WA, Allen KE (২০০৯)। "Anatomical, histologic, and genetic characteristics of congenital chest wall deformities"। Seminars in Thoracic and Cardiovascular Surgery (Review)। 21 (1): 44–57। ডিওআই:10.1053/j.semtcvs.2009.03.001। পিএমআইডি19632563।
↑Brandon, Mike (২০১৬-০২-০৪)। "Orthopedic approach to pectus deformities: 32 years of studies"। Pectus Excavatum Info। Pediatric Orthopedist and Physiatrist, Orthopectus Clinical Center and Asa Norte Regional Hospital. 2Doctor in Orthopedics, School of Medicine, University de Sāo Paulo, Ribeirāo Preto, SP. Pediatric Orthopedist, Orthopectus Clinical Center. Preceptor, Adult Foot and Pediatric Orthopedics, Federal District Hospital, Brasilia, DF। ২০১৬-০৫-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-০৪।
↑Fossum, TW; Boudrieau RJ; Hobson HP; Rudy RL (১৯৮৯)। "Surgical correction of pectus excavatum, using external splintage in two dogs and a cat"। Journal of the American Veterinary Medical Association। 195 (1): 91–7। পিএমআইডি2759902।
↑McAnulty JF, Harvey CE (১৯৮৯)। "Repair of pectus excavatum by percutaneous suturing and temporary external coaptation in a kitten"। Journal of the American Veterinary Medical Association। 194 (8): 1065–7। পিএমআইডি2651373।