একটি টেট্রাপেপটাইড (যেমন ভ্যালিন-গ্লাইসিন-সেরিন-অ্যালানিন) হলো চারটি অ্যামিনো এসিড দ্বারা গঠিত একটি ছোট প্রোটিন। এই ক্ষেত্রে, সবুজ চিহ্নিত অ্যামিনো অগ্রভাগ (N-টার্মিনাল) হলো L-ভ্যালিন এবং নীল চিহ্নিত কার্বক্সিল প্রান্ত (C-টার্মিনাল) হলো L-অ্যালানিন।
পেপটাইড গঠনের সময় অ্যামিনো এসিডগুলোকে অবশিষ্টাংশ (residues) বলা হয়। পেপটাইড বা অ্যামাইড বন্ধন গঠনের সময় অ্যামিনো এসিডগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত হয় এবং সেই যুক্ত হওয়ার সময় একটি ছোট্ট পানির অণু বেরিয়ে যায়।[৬] এই যুক্তকরণ দুই প্রান্তে দুটি বিশেষ গ্রুপ তৈরি করে, যা N-টার্মিনাল এবং C-টার্মিনাল নামে পরিচিত। সাইক্লিক পেপটাইড ছাড়া সকল পেপটাইডের শেষে একটি N-টার্মিনাল (অ্যামিন গ্রুপ) এবং একটি C-টার্মিনাল (কার্বক্সিল গ্রুপ) অবশিষ্টা থাকে (ছবির টেট্রাপেপটাইডে দেখানো হয়েছে)।
বহু ধরনের পেপটাইড রয়েছে, যাদের উৎস এবং কাজের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। Handbook of Biologically Active Peptides বইটি অনুযায়ী, পেপটাইডের উৎস এবং কাজের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পেপটাইড রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রুপ হলো:[৭]
উদ্ভিদ পেপটাইড: উদ্ভিদ থেকে উৎপাদিত হয়।
ব্যাকটেরিয়া/অ্যান্টিবায়োটিক পেপটাইড: ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং সাধারণত অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।
ছত্রাকীয় পেপটাইড: ছত্রাক থেকে উৎপাদিত হয়।
অমেরুদ্বী পেপটাইড: অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়।
উভচর/ত্বক পেপটাইড: উভচর প্রাণীদের ত্বকে পাওয়া যায়।
বিষাক্ত পেপটাইড: বিষাক্ত প্রাণীদের বিষে পাওয়া যায়।
ক্যান্সার/ক্যান্সার-বিরোধী পেপটাইড: ক্যান্সারের বৃদ্ধি বা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
টিকা পেপটাইড: টিকার একটি উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
রোগ প্রতিরোধক/প্রদাহজনক পেপটাইড: রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বা প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়ায় জড়িত।
রক্ত-মস্তিষ্ক পেপটাইড: রক্ত-মস্তিষ্ক বাধার মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে।
কিছু রাইবোজোমাল পেপটাইড প্রোটিওলাইসিস নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে যায়। সাধারণত উচ্চতর জীবদেহে, এই পেপটাইডগুলো হরমোন এবং সংকেত অণু হিসাবে কাজ করে। কিছু সূক্ষ্মজীব অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে পেপটাইড উৎপাদন করে, যেমন মাইক্রোসিন এবং ব্যাকটেরিওসিন।[৮]
নন-রাইবোজোমাল পেপটাইড সাধারণ রাইবোজোমের মাধ্যমে নয়, বিশেষ এনজাইমের মাধ্যমে তৈরি হয়। এই ধরনের পেপটাইডের একটি সাধারণ উদাহরণ হলো গ্লুটাথায়োন, যা অধিকাংশ এ্যারোবিক জীবের জারণরোধক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।[১১] অন্যান্য নন-রাইবোজোমাল পেপটাইডগুলো সাধারণত এককোষী জীব, উদ্ভিদ এবং ছত্রাক-এ পাওয়া যায় এবং মডুলার এনজাইম কমপ্লেক্স নামক এনজাইমের জটিল গঠনের মাধ্যমে সংশ্লেষিত হয়। এই এনজাইম কমপ্লেক্সকে নন-রাইবোজোমাল পেপটাইড সিন্থেটেস বলা হয়।[১২]
এই জটিল এনজাইম গঠনগুলো প্রায়শই একই রকমভাবে সাজানো থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের মডিউল থাকতে পারে, যা তৈরি হওয়া পেপটাইডের উপর বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন সাধন করে।[১৩] এই পেপটাইডগুলো প্রায়শই চক্রাকার হয় এবং খুব জটিল চক্রাকার গঠন থাকতে পারে, তবে সরল, রৈখিক নন-রাইবোজোমাল পেপটাইডও সাধারণ। যেহেতু এই ব্যবস্থাটি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পলিশেটিড গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত, তাই এই পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া যৌগগুলো প্রায়শই মিশ্র প্রকৃতির হয়। যদি কোনো যৌগে অক্সাজোল বা থিয়াজোল পাওয়া যায়, তাহলে সাধারণত ধরে নেওয়া হয় সেটি এই পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে।[১৪]
পেপটোন হলো প্রাণিজ দুধ বা মাংসকে প্রোটিওলাইসিস নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে তৈরি করা হয় এমন একধরনের জৈবিক পদার্থ।[১৫] ছোট পেপটাইড থাকার পাশাপাশি, এতে চর্বি, ধাতু, লবণ, ভিটামিন এবং অন্যান্য অনেক জৈবিক যৌগও থাকে।[১৬]
পেপটাইড ফ্রাগমেন্ট হলো প্রোটিনের ছোট টুকরা যা একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের উৎস নির্ধারণ বা তার পরিমাণ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।[১৭] সাধারণত এগুলো গবেষণারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এনজাইমের মাধ্যমে প্রোটিন ভেঙে পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফরেনসিক বা প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা থেকেও পাওয়া যেতে পারে।[১৮][১৯]
রিংক অ্যামাইড রজন ব্যবহার করে এবং Fmoc-α-অ্যামিন-সংরক্ষিত অ্যামিনো অ্যাসিড ব্যবহার করে কঠিন-আবস্থায় পেপটাইড সংশ্লেষণ হলো একটি ল্যাবরেটরি কৌশল যা কৃত্রিম পেপটাইড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এখানে, পেপটাইডটি ধাপে ধাপে একটি কঠিন রজনের উপরে নির্মিত হয়।
প্রোটিন (কমলা) এবং পেপটাইড (সবুজ) এর মিথস্ক্রিয়ার উদাহরণ। প্রোপেডিয়া থেকে পাওয়া: একটি পেপটাইড-প্রোটিন মিথস্ক্রিয়া ডাটাবেস।[২০]
পেপটাইড প্রোটিন এবং অন্যান্য ম্যাক্রোমলিকিউলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে। এগুলো মানব কোষে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য দায়ী, যেমন কোষ সংকেত, এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে।[২১] গবেষণায় দেখা গেছে, মানব কোষে প্রোটিন-প্রোটিন মিথস্ক্রিয়ার ১৫-৪০% পেপ্টাইডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।[২২] এছাড়াও, অনুমান করা হয় যে ঔষধ বাজারের কমপক্ষে ১০% পেপ্টাইড পণ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি।[২১]
এই অংশে উল্লিখিত পেপটাইড গোত্রগুলো প্রধানত হরমোনের কার্যকলাপ সম্পন্ন করা রাইবোজোমাল পেপটাইড। এই সব পেপটাইডগুলো কোষে দীর্ঘ "প্রোপেপটাইড" বা "প্রোপ্রোটিন" হিসাবে সংশ্লেষিত হয় এবং কোষ থেকে বের হওয়ার আগে কাটা হয়। এরপর সেগুলো রক্তপ্রবাহে মুক্তি পায় এবং সেখানে সংকেত বহনের কাজ করে।
পলিপেপটাইড, প্রোটিন এবং অলিগোপেপটাইড - এই তিনটি শব্দই অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত, তবে তাদের মধ্যে দৈর্ঘ্যের ভিন্নতা রয়েছে।
পলিপেপটাইড: এটি অসংখ্য অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি সরল শৃঙ্খল। এর কোনো নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের সীমাবদ্ধতা নেই, তবে সাধারণত এটিতে ৫০ টিরও বেশি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে।
প্রোটিন: এটি একটি বা একাধিক পলিপেপটাইড নিয়ে গঠিত। প্রোটিনের দৈর্ঘ্য ৫০ টিরও বেশি অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে শুরু করে হাজার হাজার অ্যামিনো অ্যাসিড পর্যন্ত হতে পারে।
অলিগোপেপটাইড: এটি কেবল কয়েকটি অ্যামিনো অ্যাসিড (দুই থেকে বিশ) নিয়ে গঠিত।
একটি ট্রাইপেপটাইড (উদাহরণস্বরূপ ভ্যালিন-গ্লাইসিন-অ্যালানিন) যেখানে সবুজ রঙে চিহ্নিত অ্যামিনো অগ্রভাগ (L-ভ্যালিন) এবং নীল রঙে চিহ্নিত কার্বক্সিল অগ্রভাগ (L-অ্যালানিন) রয়েছে।
পেপটাইড এবং প্রোটিন সাধারণত তাদের শৃঙ্খলে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডের সংখ্যা দ্বারা বর্ণনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৫৮টি অ্যামিনো অ্যাসিড দীর্ঘ একটি প্রোটিনকে "১৫৮ অ্যামিনো অ্যাসিড দীর্ঘ প্রোটিন" হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট সংখ্যক অ্যামিনো অ্যাসিডযুক্ত পেপটাইডগুলোকে আইইউপিএসি সংখ্যাসূচক গুণক উপসর্গ ব্যবহার করে নামকরণ করা হয়:
প্রোটিওজ: এটি প্রোটিনের হাইড্রোলাইসিসের ফলে উৎপাদিত পেপটাইডের মিশ্রণ। এই শব্দটি কিছুটা পুরনো ধাঁচের।
পেপটাইডার্জিক এজেন্ট (বা ঔষধ): এমন একটি রাসায়নিক যা শরীর বা মস্তিষ্কে পেপটাইড সিস্টেমকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। এর একটি উদাহরণ হল ওপিওইডার্জিক, যা নিউরোপেপটাইডার্জিকের একটি ধরন।
কোষ-ভেদকারী পেপটাইড: এমন একটি পেপটাইড যা কোষের ঝিল্লি ভেদ করে প্রবেশ করতে পারে।
↑নেলসন, ডেভিড এল.; কক্স, মাইকেল এম. (২০০৫), Principles of Biochemistry (৪র্থ সংস্করণ), নিউ ইয়র্ক: ডব্লিউ. এইচ. ফ্রিম্যান, আইএসবিএন0-7167-4339-6উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Saladin, K. (১৩ জানুয়ারি ২০১১)। Anatomy & physiology: the unity of form and function (6th সংস্করণ)। McGraw-Hill। পৃষ্ঠা 67। আইএসবিএন978-0-07-337825-1।
↑Torres AM, Menz I, Alewood PF, ও অন্যান্য (জুলাই ২০০২)। "D-Amino acid residue in the C-type natriuretic peptide from the venom of the mammal, Ornithorhynchus anatinus, the Australian platypus"। FEBS Letters। 524 (1–3): 172–6। এসটুসিআইডি3015474। ডিওআই:10.1016/S0014-5793(02)03050-8। পিএমআইডি12135762।
↑Tao, Kai; Levin, Aviad; Adler-Abramovich, Lihi; Gazit, Ehud (২৬ এপ্রিল ২০১৬)। "Fmoc-modified amino acids and short peptides: simple bio-inspired building blocks for the fabrication of functional materials"। Chem. Soc. Rev.। 45 (14): 3935–3953। ডিওআই:10.1039/C5CS00889A। পিএমআইডি27115033।
↑Tao, Kai; Wang, Jiqian; Zhou, Peng; Wang, Chengdong; Xu, Hai; Zhao, Xiubo; Lu, Jian R. (ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১১)। "Self-Assembly of Short Aβ(16−22) Peptides: Effect of Terminal Capping and the Role of Electrostatic Interaction"। Langmuir। 27 (6): 2723–2730। ডিওআই:10.1021/la1034273। পিএমআইডি21309606।
↑Kai Tao; Guy Jacoby; Luba Burlaka; Roy Beck; Ehud Gazit (জুলাই ২৬, ২০১৬)। "Design of Controllable Bio-Inspired Chiroptic Self-Assemblies"। Biomacromolecules। 17 (9): 2937–2945। ডিওআই:10.1021/acs.biomac.6b00752। পিএমআইডি27461453।
↑Kai Tao; Aviad Levin; Guy Jacoby; Roy Beck; Ehud Gazit (২৩ আগস্ট ২০১৬)। "Entropic Phase Transitions with Stable Twisted Intermediates of Bio‐Inspired Self‐Assembly"। Chem. Eur. J.। 22 (43): 15237–15241। ডিওআই:10.1002/chem.201603882। পিএমআইডি27550381।
↑Donghui Jia; Kai Tao; Jiqian Wang; Chengdong Wang; Xiubo Zhao; Mohammed Yaseen; Hai Xu; Guohe Que; John R. P. Webster; Jian R. Lu (জুন ১৬, ২০১১)। "Dynamic Adsorption and Structure of Interfacial Bilayers Adsorbed from Lipopeptide Surfactants at the Hydrophilic Silicon/Water Interface: Effect of the Headgroup Length"। Langmuir। 27 (14): 8798–8809। ডিওআই:10.1021/la105129m। পিএমআইডি21675796।
↑Boelsma E, Kloek J; Kloek (মার্চ ২০০৯)। "Lactotripeptides and antihypertensive effects: a critical review"। The British Journal of Nutrition। 101 (6): 776–86। ডিওআই:10.1017/S0007114508137722। পিএমআইডি19061526।
↑Xu JY, Qin LQ, Wang PY, Li W, Chang C (অক্টোবর ২০০৮)। "Effect of milk tripeptides on blood pressure: a meta-analysis of randomized controlled trials"। Nutrition। 24 (10): 933–40। ডিওআই:10.1016/j.nut.2008.04.004। পিএমআইডি18562172।