পোস্তা | |
---|---|
কলকাতার অঞ্চল | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৮′ উত্তর ৮৮°১৫′ পূর্ব / ২৩.৮° উত্তর ৮৮.২৫° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
শহর | কলকাতা |
লোকসভা কেন্দ্র | কলকাতা উত্তর |
বিধানসভা কেন্দ্র | জোড়াসাঁকো |
কলকাতা পৌরসংস্থার ওয়ার্ড | ২২, ২৩ |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (২০০৯-বর্তমান) |
• বিধায়ক | স্মিতা বক্সী (২০১১-বর্তমান) |
• পৌর-প্রতিনিধি | মীনা দেবী পুরোহিত (২২ নং ওয়ার্ড , ২০০৫-) বিজেপি বিজয় ওঝা (২৩ নং ওয়ার্ড , ২০১০-) বিজেপি |
উচ্চতা | ১১ মিটার (৩৬ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ৪২,৩৪৯ |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন কোড | ৭০০ ০০৭ |
এলাকা কোড | +৯১ ৩৩ |
পোস্তা বা পোস্তাবাজার হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের মধ্যাংশের একটি অঞ্চল। অতীতে এই অঞ্চলে বাঙালি ব্যবসায়ীদের বসতি এলাকা ছিল। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী বড়বাজার এলাকার সঙ্গে এটিও মাড়োয়ারি অধ্যুষিত অঞ্চল।এখানে বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য তেল, নুন, খাদ্যশস্য, মশলা, চিনি ও বনস্পতির পাইকারি বাজার রয়েছে।[১]
পোস্তা অঞ্চলের নামকরণ করা হয় হুগলি নদীর পোস্তা ঘাটের নামানুসারে। সেকালে এই অঞ্চলটি বাঙালি ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের বসতি অঞ্চল ছিল। এঁদের ঐশ্বর্য ও সম্পদ ছিল বাংলার ইতিহাসে কিংবদন্তি। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত ধর ওরফে নুকু ধর। তিনি হুগলি জনপদের পতনের পর সেখান থেকে সুতানুটিতে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। কথিত আছে, তিনি ইংরেজ শাসকদের মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নয় লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন। তিনি রবার্ট ক্লাইভকে নিয়মিত টাকা ধার দিতেন। জানা যায়, নবকৃষ্ণ দেব তাঁর কাছে চাকুরিপ্রার্থী হয়ে এলে, তিনিই নবকৃষ্ণ দেবের সঙ্গে ইংরেজদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তারা তাঁকে চাকুরি দেন।[২]
নুকু ধরের দৌহিত্র সুখময় রায় (?-১৮১১) তাঁর দাদামশায়ের সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন। কারণ, তাঁর মা ছিলেন নুকু ধরের একমাত্র সন্তান এবং তিনি ছিলেন তাঁর দাদামশায়ের একমাত্র দৌহিত্র। ইংরেজরা নুকু ধরকে ‘রাজা’ উপাধি দিতে গেলে, নুকু ধর তাঁর দৌহিত্রকে সেই উপাধি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সুখময় রায় রাজা উপাধি পান এবং পোস্তা রাজবাড়ি স্থাপন করেন। যদিও বর্তমানে শহরের উন্নয়ন ও রাস্তা নির্মাণের জন্য এই রাজবাড়ির কিয়দংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনটি প্রাচীন বাড়ি এখনও এখানে রয়েছে। এগুলি হল: রাজবাড়ি, লালবাড়ি ও ঠাকুরবাড়ি।[২]
পোস্তা রাজবাড়ি এক সময় কটক থেকে পুরী পর্যন্ত একটি রাস্তা তৈরি করেছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে। কোনো কোনো মতে, সুখময় রায়ের অর্থসাহায্যে উলুবেড়িয়া থেকে পুরী পর্যন্ত এই রাস্তাটি নির্মিত হয়। তিনি সমাজসেবামূলক কাজেও প্রচুর অর্থ দান করেছিলেন। তিনি ব্যাংক অফ বেঙ্গলের একজন পরিচালক এবং এলিজা ইম্পের দেওয়ান ছিলেন। এরপর তাঁকে ‘মহারাজা’ উপাধি দেওয়া হয়। যে সময় পোস্তা রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই সময় সাধারণ মানুষ জোড়াসাঁকো অঞ্চলের বাইরে গিয়ে বসবাস করতে ভয় পেত। এমনকি আশেপাশের এলাকাতেও মগ জলদস্যু, চোর ও ডাকাতদের ভয় ছিল। পোস্তা রাজবাড়ির সদস্যরা তাঁদের নিজস্ব শক্তি ও জনবলের সাহায্যে সেই সব ভয় অতিক্রম করে পোস্তা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন।[২][৩]
পোস্তা অঞ্চলটি আগে আমপোস্তা নামে পরিচিত ছিল। কারণ, এটি ছিল আমের পাইকারি বাজার। এই বাজারটি আজ আর নেই। এখানকার আমপোস্তা যেমন আমের পাইকারি বাজার ছিল, তেমনই ডালপোস্তা ছিল ডালের পাইকারি বাজার ও আলুপোস্তা ছিল আলুর পাইকারি বাজার।[২]
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাল বোঝাই ট্রাক এখানে এসে খালাস হয়। এখানে প্রবেশের আগে ২০ কিমি পশ্চিমে সাঁকরাইলের ধূলাগড় ট্রাক টার্মিনালে অবস্থান করতে হয়। পরে শহরের ট্রাফিক নিয়ম অনুযায়ী , নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে এই পাইকারি বাজারে প্রবেশ করতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার পোস্তা-বড়বাজার পাইকারি বাজারটি কোনা অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ীরা ওই অঞ্চলে পরিকাঠামোগত অসুবিধার কারণে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। ভিশন ২০২৫ নামে একটি ২০ বছরের পরিকল্পনা অনুসারে কলকাতা মহানগর অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে পোস্তা বাজারটিকে রাজারহাট নিউটাউনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সেই অঞ্চলে এই স্থানান্তরনের জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।[৪]
পোস্তা একটি বাণিজ্যিক এলাকা ও কলকাতা পুলিশের অন্তর্গত একটি থানা। [৫] এই অঞ্চলে অপরাধ প্রবণতা বেশি।[৬]
বাঙালি কবি ও শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় তাঁর আবোলতাবোল গ্রন্থের একটি জনপ্রিয় কবিতায় পোস্তার উল্লেখ করেছেন: