প্যারাগ্লাইডিং হচ্ছে মজার উদ্দেশ্যে কিংবা প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে উড়ার স্পোর্টস বা খেলা। প্যারাগ্লাইডার হচ্ছে হালকা, অবাধে উড়া, পা ব্যবহার করে চালু করা একধরনের গ্লাইডার এয়ারক্রাফট। যেহেতু গ্লাইডার হচ্ছে ইঞ্জিনবিহীন বিমান, তাই প্যারাগ্লাইডারে কোনো ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয় না।
১৯৫২ সালে ডোমিনা সি. জালবার্ট বহু সেলবিশিষ্ট নিয়ন্ত্রিত গ্লাইডিং প্যারাশুট এবং পার্শ্বিক উড্ডয়নের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উন্নয়ন করেন।[১]
১৯৫৪ সালে ওয়াল্টার নিওমার্ক ধারণা করেছিলেন(ফ্লাইট ম্যাগাজিন এর একটি লেখায়)এমন একটা সময় আসবে যখন একজন গ্লাইডার পাইলট পাহাড়ের উপর হতে কিংবা ঢালের মাথা হতে গ্লাইডার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে আকাশে উড্ডয়ন করবে।
কানাডিয়ান ডোমিনা জালবার্ট প্যারাফয়েল আবিষ্কার করেন, যা এরোফয়েল আকৃতির সেল সংযোগে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি ১৯৬৩ সালের ১০ জানুয়ারি ইউএস পেটেন্ট নং ৩১৩১৮৯৪ জমা করেন।[২]
প্রায় একই সময়ে ডেভিড বারিশ নাসা স্পেস ক্যাপসুল এর উন্নয়নের জন্য “সেইল উইং”(সিঙ্গেল-সারফেস উইং)এর উন্নতিকরণের কাজ করছিলেন-“এই সেইল উইং কেমন কাজ করবে তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ঢাল হতে তা উড্ডয়নের পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।”[৩] ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের হান্টার মাউন্টেন এর উপর পরীক্ষা করে দেখার পর তিনি স্কি রিসোর্টগুলোর জন্য গ্রীষ্মকালীন স্পোর্টস হিসাবে স্লপ সোয়ারিং বা ঢাল হতে উড্ডয়ন এর প্রচারণা শুরু করেন।
প্যারাগ্লাইডার এর ডানা দুস্তরের ফ্যাব্রিক কাপড় এর সাহায্যে বিশেষভাবে তৈরি। উড্ডয়নের জন্য প্যারাগ্লাইডার এর ডানা অপরিহার্য একটি অংশ।
ডানার নিচের দিকে সংযুক্ত হারনেস একজন প্যারগ্লাইডার চালনাকারীকে বসে বা দাড়িয়ে থেকে প্যারাগ্লাইডার নিয়ন্ত্রণের সুবিধা প্রদান করে থাকে।
অধিকাংশ পাইলটই উড়ার সময় ভেরিয়োমিটার, রেডিও এবং জিপিএস ইউনিট ব্যবহার করে থাকেন।
ভেরিয়োমিটার ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হল পাইলট বা গ্লাইডার চালনাকারীকে অপেক্ষাকৃত অধিক উষ্ণ স্থানের মাঝামাঝি থাকতে সাহায্য করা, যেন সে সম্ভাব্য সর্বাধিক উচ্চতা লাভ করতে পারে, বিপরীতভাবে পাইলট বাতাসের তাপমাত্রার কারণে উচ্চতা হারাচ্ছে কিনা এবং তা হারালে উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য অধিক উষ্ণ বাতাস খুঁজে বের করতে সহায়তা করা।
ট্রেনিং বা প্রশিক্ষনের সময় অন্যান্য পাইলটের সাথে যোগাযোগের জন্য এবং একজন প্যারাগ্লাইডার পাইলট কোথায় অবতরণ করতে যাচ্ছে তা জানানোর জন্য রেডিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই রেডিওগুলো বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে- কিছু কিছু অনুমোদিত,[৪][৫] আবার কিছু কিছু অনুমোদনবিহীন, তবে স্থানীয়ভাবে তা ব্যবহারে তেমন একটা সমস্যা হয় না।
প্যারাগ্লাইডিং প্রতিযোগিতার সময় জিপিএস(গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এর মাধ্যমে একজন পাইলট বুঝতে পারে যে সে তার যাত্রাপথের সবগুলো পয়েন্ট অতিক্রম করেছে কিনা। একটি উড্ডয়নের রেকর্ডকৃত জিপিএস ট্র্যাক হতে প্রতিযোগীর উড্ডয়নের কৌশল সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
ব্রেক: ডানার দুই মাথা হতে সংযুক্ত হয়ে পাইলটের হাতে নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রেক এর ব্যবস্থা থাকে।
ওজন পরিবর্তন: প্যারাগ্লাইডার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য অথবা পরিচালনার জন্য পাইলটকে তার শরীরের ভর বা ওজন ডানার উপর সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হয়।
স্পিড বার: এটি হারনেস এর সাথে যুক্ত একধরনের ব্যবস্থা, যা পা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে একজন পাইলট তার গতি বৃদ্ধি করতে পারে।
অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ স্পোর্টসের মতই প্যারাগ্লাইডিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ স্পোর্টস। ২০১০ সালে আমেরিকাতে একজন প্যারাগ্লাইডার পাইলট মৃত্যুবরণ করেন।[৬] এ সংখ্যাটি ১০,০০০ জন পাইলটের মধ্যে ২ জন এর সংখ্যা নির্দেশ করে।
সম্ভাব্য দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি যথাযথ ট্রেনিং এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এর সাহায্যে কমানো সম্ভব। এছাড়া উপকরণ এর যথাযথ ব্যবহার যেমন পাইলটের আকৃতি এবং ওজন অনুযায়ী যথাযথ আকারের ডানা ব্যবহার, হেলমেট, রিজার্ভ প্যারাশুট[৭] এবং গদিযুক্ত হারনেস [৮] এর ব্যবহার ইত্যাদি সতর্কতা এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।