প্যারানথ্রোপাস এথিওপিকাস সময়গত পরিসীমা: Pleistocene, ২৭ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে | |
---|---|
প্যারানথ্রোপাস এথিওপিকাস এর খুলি ("কৃষ্ণকায় খুলির") রেপ্লিকা | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | অ্যানিমালিয়া |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | ম্যামালিয়া |
বর্গ: | প্রাইমেট |
উপবর্গ: | Haplorhini |
অধোবর্গ: | Simiiformes |
পরিবার: | Hominidae |
উপপরিবার: | Homininae |
গোত্র: | হোমিনিনি |
গণ: | Paranthropus |
প্রজাতি: | aethiopicus |
দ্বিপদী নাম | |
প্যারানথ্রোপাস এথিওপিকাস | |
প্রতিশব্দ | |
|
প্যারেন্থ্রোপাস এথিওপিকাস অথবা অস্ট্রালোপিথেকাস এথিওপিকাস হচ্ছে হোমিনিনের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি, এটি রোবাস্ট অস্ট্রালোপিথেকাসেরই একটি প্রকরণ।
অস্ট্রালোপিথেকাস এথিওপিকাস এর প্রথম নমুনার নামকরণ করা হয়েছে ওমো ১৮। ওমো ১৮ কে প্যারেন্থ্রোপাস এথিওপিকাস ও বলা হয়, এটিকে ১৯৬৭ সালে ফরাসি নৃবিজ্ঞানী কারমাইল আরামবোর্গ ও ইয়ুভেন্স কুপেন্স উত্তর ইথিওপিয়ায় আবিষ্কার করেন। ওমো ১৮ কে এলান ওয়াকার কর্তৃক আবিষ্কৃত কেএনএম ডব্লিওটি ১৭০০০ এর পুর্বপুরুষ বলে ভাবা হয়। এলান ওয়াকার ১৯৮৫ সালে কেনিয়ার তুকার্না হ্রদের পশ্চিম পাড়ে, কেএনএম ডব্লিওটি ১৭০০০ আবিষ্কার করেন। এই জীবাশ্মটি "কৃষ্ণকায় খুলি" হিসেবেও পরিচিত। এটি কৃষ্ণ বা কালো বর্ণের কারণ এর হাড়ে ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণ অত্যধিক। এটি রোবাস্ট প্লায়োসিন হোমিনিডের প্রথম দিককরা জীবাশ্মের উদাহরণ।[১] অন্যান্য অস্ট্রালোপিথেকাসে দেখা যায় না, এরকম একটি বৈশিষ্ট্য ওমো ১৮ তে আছে। আর তা হলো এর চোয়াল ভি আকৃতির। কেএনএম ডব্লিওটি ১৭০০০ আবিষ্কৃত হওয়ার পরে ওমো ১৮ কে বিজ্ঞানীরা পুনঃশ্রেণিবিন্যাস করেন।
অস্ট্রালোপিথেকাস এথিওপিকাস রোবাস্ট অস্ট্রালোপিথেসিনের অন্তর্ভুক্ত। রোবাস্ট অস্ট্রালোপিথেসিন ৩ ভাগে বিভক্ত যথাঃ অস্ট্রালোপিথেলাস এথিওপিকাস, অস্ট্রালোপিথেকাস রোবাস্টাস, ও অস্ট্রালোপিথেকাস বয়েজী। প্রতিটি প্রজাতির বাস্তবিক জাতিজনী বৃক্ষ নিয়ে এ বিতর্ক অদ্যাবধি চলমান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বিবর্তনীয় ক্রমবিকাশেরকারণে রবাস্ট অস্ট্রালোপিথেসিনের প্রতিটা সদস্যে করোটি ও ম্যাণ্ডিবুলে মিল দেখা যায়। তবে অস্ট্রালোপিথেকাস এথিওপিকাস এ কিছু বৈশিষ্ট্য রবাস্ট অস্ট্রালোপিথেসিনের চেয়ে ভিন্ন। যেমনঃ তাদের চোখের নিচের গাল বেশ বড়; মুখ সামনের দিকে অধিকহারে বিস্তৃত ছিল। এই পার্থক্য বিবর্তনীয় কারণে হতে পারে, তবে কারো কারো মতে অঃ বয়েজী ও অঃ রোবাস্টাস এর চেয়ে ভিন্ন জাতিজনী ইতিহাস (বিবর্তনীয় বৃক্ষে একই পুর্বপুরুষ না হওয়া) থাকার দরুণই অঃ এথিওপিকাস এর বৈশিষ্ট্যে এরুপ ভিন্নতা দেখা গিয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এই করোটি ২৫ লক্ষ বছরের পুরাতন; যার বয়স রোবাস্ট অস্ট্রালোপিথেসিনের চেয়ে বেশি। নৃবিজ্ঞানীরা মনে করেন প্যাঃ এথিওপিকাস ২৭ থেকে ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে বাস করে।[১] এই বৈশিষ্ট্যগুলো অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেন্সিস এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; যা দেখে মনে হয়, এটি অঃ আফারেন্সিসের সরাসরি উত্তরাধিকার। অঃ আফারেন্সিসের সাথে অঃ এথিওপিকাসের মুখমণ্ডল সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও এর এথিওপিকাসের মস্তিষ্ক আকারে অনেক ছোট। প্রায় ৪১০ সিসির ন্যায়।[২]
১৯৬৭ সালে ইথিওপিয়াতে ফরাসি প্রত্ননৃবিজ্ঞানী কর্তৃক প্রাপ্ত দন্তবিহীন ম্যান্ডিবলকে (ওমো ১৮) প্যাঃ এথিওপিকাস বলে প্রস্তাব করা হয়।[১][২] প্যাঃ এথিওপিকাস এর নিচের দিকের চোয়াল গবেষণা করে দেখা গিয়েছে এর বিশাল সাইজের হাড়ের আইল ও বিশাল চোখের নিচের গাল ( গরিলার খুলির মত) রয়েছে। এটি বিবর্তিত হয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাবার চাবানোর জন্য।[২] এই প্রজাতির "কৃষ্ণকায় খুলি" থেকে যা পাওয়া গিয়েছে তার চেয়ে বেশি কিছু জানা যায় নি। জানা যায় নি, তারা কতটা লম্বা ছিল; তবে সম্ভবত তারা অঃ আফারেন্সিস এর সমান লম্বায় ছিল।[১]
জীবাশ্মের উপর ও নিচে ছাইয়ের যে স্তর পরেছে; তা দেখে অনুমিত হয় এর বয়স ২৩ থেকে ২৫ লক্ষ বছরের পুরনো। এই প্রজাতির শুধুমাত্র একটাই পুর্ণাঙ্গ খুলি আছে; তা থেকে এর শারীরিক অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের হদিস পাওয়া দুষ্কর। তবে তার খুলির সাথে প্যাঃ বয়েজী এর বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য আছে। যদিও সে খুলির ছেদন দাঁত তুলনামুলক বড়।
সকল নৃতত্ত্ববিদ মনে করেন না, প্যাঃ এথিওপিকাস বিবর্তিত হয়ে প্যঃ বয়েজী ও প্যাঃ রোবাস্টাস, এ পরিণত হয়েছে। কারণ এথিওপিকাসের খুলি অঃ আফারেন্সিস এর সাথে অনেক বেশি সাযুজ্যপুর্ণ। [২] যে কারণে প্যাঃ বয়েজী ও প্যাঃ রোবাস্টাস এর পুর্বপুরুষ হিসাবে প্যাঃ এথিওপিকাস কে মনে করা হয়; তা হলো এথিওপিকাসের চোয়ালের আকার আর উক্ত দুই প্রজাতির চোয়ালের আকার প্রায় একইরুপ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্যাঃ এথিওপিকাস মিশ্র তৃণভুমি ও অরণ্য অঞ্চলে বাস করত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অনেক প্রমাণ একত্রিত করা প্রয়োজন প্যাঃ এথিওপিকাস এর শারীরবিদ্যা ব্যাখ্যা করার জন্য। এই প্রজাতির "কালো খুলি" ব্যাখ্যা করে যে, প্যাঃ এথিওপিকাস এবং অন্যান্য অস্ট্রালোপিথেসিন হোমিনিড বৃক্ষে বিবর্তনীয় ধারারই অংশ, যা হোমো জাতিজনি বৃক্ষে ছিটকে পার্শ্বশাখায় চলে গেছে।।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কিছু বিজ্ঞানী কৃষ্ণকায় খুলির শ্রেণিবিন্যাসকে অঃ আফারেন্সিস এর শ্রেণিবিন্যাসে স্থান দেওয়াতে অসম্মত হয়েছেন। তাদের মতে এই কৃষ্ণকায় খুলির মালিক অঃ আফারেন্সিস এর সময়কার মানেই তো এই নয়; তারা একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] হোমিনিড বৃক্ষে কৃষ্ণকায় খুলি কোথায় থাকবে; তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহল ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে নি। কারো কারো মতে এই প্যাঃ এথিওপিকাস; প্যাঃ আফ্রিকানাস ও প্যাঃ বয়েজী এর মধ্যকার সংযোগ। আবার কারো কারো মতে প্যাঃ আফ্রিকানাস ও কেএনএম ডব্লিওটি-১৭০০০ হোমিনিড বংশবৃক্ষে একপ্রকার পার্শ্বশাখা। আর এই আফ্রিকানাস পার্শ্বশাখা থেকেই আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্যারানথ্রোপাস এথিওপিকাস এর মগজের আয়তন ছোট ছিল। প্রায় ৪১০ সিসির মত। মোটের উপর খুলি ছিল কিছুটা গরিলার মত। কপাল বলতে গেলে ছিল না। মুখমণ্ডল সহ সামনের দিকটা খুব বেশি গাঁট্টাগোট্টা দেখালেও, খুলির উপর ও পিছনের দিকটা ছিমছাম অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেন্সিস এর মত ছিল। এদের মুখ ছিল ছুচালো, খুলির উপর হাড়ের আল ছিল। চিবুকের হাড় প্রকট ছিল। প্রাকমাড়ি ও মাড়ির দাঁত ছিল বিরাট। এনামেল ছিল পুরু। ঘাড়ের পেশীগুলো জবরদস্ত ছিল। মুখের তালু বড় পুরু ছিল, ৪র্থ প্রাকমাড়ি ছিল, মোটামুটি সমতল খুলির তলায় মহাবিবরের অবস্থান কিছুটা পিছনে ছিল। চোয়াল গাঁট্টাগোট্টা হওয়ায় এটা বলা যায়, ওদের খাদ্য তালিকায় উদ্ভিজ্জ আশঁ ও শক্ত দানাযুক্ত খাবার বেশি ছিল।[৩]
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)