প্যারানথ্রোপাস রোবাস্টাস সময়গত পরিসীমা: প্লায়োসিন, .২–.১২কোটি | |
---|---|
![]() | |
ট্রান্সভাল জাদুঘরে প্যারানথ্রোপাস রোবাস্টাস এর আসল মাথার খুলি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | অ্যানিমালিয়া |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | ম্যামালিয়া |
বর্গ: | প্রাইমেট |
উপবর্গ: | Haplorhini |
অধোবর্গ: | Simiiformes |
পরিবার: | Hominidae |
উপপরিবার: | Homininae |
গোত্র: | হোমিনিনি |
গণ: | প্যারানথ্রোপাস |
প্রজাতি: | রোবাস্টাস |
প্রতিশব্দ | |
অস্ট্রালোপিথেকাস রোবস্টাস (ডার্ট, ১৯৩৮) |
প্যারানথ্রোপাস রোবাস্টাস (অথবা অস্ট্রালোপিথেকাস রোবস্টাস) হচ্ছে ১৯৩৮ সালে উত্তর আফ্রিকায় প্রাপ্ত প্রাক-হোমিনিনের প্রজাতি। এই প্রজাতির খুলির বৈশিষ্ট্যকে বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে; তাদের চোয়াল বেশ ভারী অর্থাৎ, তাদের মাথার উপরে হাড়ের আইল, বড় চোয়াল, প্রকট ভুরু ও চিবুকের হাড় সহ সমস্ত হাড় পুরু। যেহেতু তাদের মুখের অবস্থা বেশ গাট্টাগোট্টা বা স্থুলকায় (রোবাস্টাস) তাই তাদের নামকরণ করা হয় প্যারানথ্রোপাস রোবাস্টাস বা স্থুলকায় মানব।
অনুমান করা হয় আজ থেকে ২০ থেকে ১২ লক্ষ বছর পূর্বে প্যারানথ্রোপাস রোবাস্টাস বসবাস করত। এর বড় চোয়াল এবং চোয়ালের হাড় আছে। তাদের বড় চোয়াল এর উপর করা গবেষণা থেকে অনুমেয় হয় হয়তো তাদের দাঁত এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যাতে করে তা শুষ্ক পরিবেশে বেচে থাকতে সহায়ক হয়।
রেয়মণ্ড ডার্ট অস্ট্রালোপিথেকাস আফ্রিকানাস আবিষ্কারের পরে দাবী করেন অঃ আফ্রিকানাস; হোমো স্যাপিয়েন্স এর পুর্বপুরুষ। রবার্ট ব্রুন তার এ দাবীকে সমর্থন করেন। একাডেমিক কমিউনিটিতে তার এই দাবীর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে কারণ অনেকের মতে ডার্ট এই দাবী করেছেন টং শিশুর মত একটি শিশু জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে, এত অর্বাচীন জীবাশ্মের উপর না করে এই দাবী প্রাপ্তবয়স্ক জীবাশ্মের উপর করাটাই শ্রেয় বলে অনেকে মত দেন।
ব্রুম একজন স্কটিশ চিকিৎসক; যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় তার খননকাজ শুরু করেন। তার কাজের আগ্রহ ছিল আরো অঃ আফ্রিকানাস এর প্রাপ্তবয়স্ক জীবাশ্ম খুঁজে বের করে ডার্টের দাবী (অঃ আফ্রিকানাস মানুষের পূর্বপুরুষ) একটা শক্ত ভিত্তি এনে দেওয়া। ১৯৩৮ সালে ৭০ বছর বয়সী ব্রুম উত্তর আফ্রিকার ক্রোমদ্রাইতে কিছু খুলি ও দাঁত খুঁজে পান যা অঃ আফ্রিকানাস এর সমরুপ বলে প্রতীয়মান হলেও এর করোটির কিছু বৈশিষ্ট্য অন্যান্য অস্ট্রালোপিথেকাসের তুলনায় "স্থুলকায়" ধরনের বৈশিষ্ট্য ছিল।
যে জীবাশ্মটি পাওয়া গিয়েছিল তার বয়স ২০ লক্ষ বছরের পুরনো। প্যা রোবাস্টাস খুঁজে পাওয়া গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রোমদ্রাইতে, সোয়ার্টক্রান্সে, দ্রিমোলেন, গন্ডোলিন গুহায় ও কুপার্সে। সোয়ার্টক্রান্স গুহায় ১৩০ জন ব্যক্তির জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। তাদের দন্তবিন্যাসের উপর করা গবেষণায় দেখা যায় প্যাঃ রোবাস্টাস এর গড় আয়ু ১৭ বছর ছিল।
প্যারান্থ্রোপাস রোবাস্টাস হোমিনিনের রোবাস্টা প্রজাতির মধ্যে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত প্রজাতিম এই রোবাস্টাস দলে আরো আছে; যা পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হয়; তা হলোঃ প্যাঃ বৈয়েজী ও প্যাঃ এথিওপিকাস। এরা স্থুলকায় (মুখের গড়নে) বিধায় এদের রোবাস্ট বলা হয়, তবে তাদেরকে অস্ট্রালোপিথেকাস গণে স্থান দেওয়া হয়েছে তাদেরকে প্যারানথ্রোপাসও বলা হয়। অস্ট্রালোপিথেকাসের অন্যান্য সদস্য যেমন অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেন্সিস, অস্ট্রালোপিথেকাস এনামেন্সিস এদেরকে গ্রাসাইল বা ক্ষীণকায় অস্ট্রালোপিথেকাস বলা হয়।
প্যাঃ রোবাস্টাস এর দাঁতের আকার হোমো বংশবৃক্ষের সদস্যদের তুলনায় গরিলার সাথে বেশি সাদৃশ্যপুর্ণ। ওদের মুখমণ্ডল বিরাট, চ্যাপ্টা আর অবতল ছিল। কিন্তু মুখ কিছুটা সুচালো ছিল। শ্বদন্তের পিছনে বিশাল পেষণ দাঁতগুলোর তুলনায় সামনের দাঁতগুলো আকারে ছোট ছিল। পেষণদাঁতগুলোতে পুরু এনামেলের আবরণ ছিল। মাথার উপরে হাড়ের আল ছিল, সেখানে বিশাল চিবানোর পেশীগুলো নোঙর করত। [১]"ইউরিডাইস", নামক প্যাঃ রোবাস্টাস[২] ১৯৯৪ সালে উত্তর আফ্রিকায় এন্দ্রে কেয়সার দ্রিমোলেন গুহায় আবিষ্কার করে, সম্ভবত এটা একটা নারীর জীবাশ্ম; যার বয়স ২৩ লক্ষ বছরের প্রাচীন।
এই প্রাইমেটের দাঁত অন্য গ্রাসাইল অস্ট্রালোপিথেসিনের চেয়ে মোটা এবং বড়। প্যাঃ রোবাস্টাস পুরুষ উচ্চতায় ১.২ মিটার (৪ ফুট) লম্বা এবং ৫৪ কেজি ওজনে হত এবং নারী প্যাঃ রোবাস্টাস ১ মিটারের নিচে (৩ ফুট ২ ইঞ্চি) উচ্চতা ও ৪০ কেজি ওজনে হত। তাদের লিঙ্গভেদ প্রকট আকারে ছিল। প্যাঃ রোবাস্টাস এর দাঁত প্যাঃ বৌসাই এর ন্যায় বড় ছিল।
ব্রুম তার গবেষণাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তিনি দেখেন প্যাঃ রোবাস্টাস এর ছেদন দাঁত মানুষের চেয়ে বেশি গরিলাতে সমরুপ। উত্তর আফ্রিকায় অন্যান্য প্যাঃ রোবাস্টাস এর জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। প্যাঃ রোবাস্টাস এর মস্তিষ্কের গড়পরতা আকার ৪১০ থেকে ৫৩০ সিসি; যা শিম্পাঞ্জির' ন্যায় বড়। কারো কারো মতে প্যাঃ রোবাস্টাস যখন থেকে তৃণভূমিতে বাস করা শুরু করে; তবে থেকে বাদাম, মুলের মত শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা মতে তাদের খাদ্যতালিকায় এধরনের খাবার নিয়মিত হয়ে গিয়েছিল[৩] এবং কারো কারো মতে; যখন তাদের পুষ্টির বেশি প্রয়োজন হত তখনি তারা এই জাতীয় খাবার খেত।[৪] তবে যাই হোক, এ গবেষণা থেকে এটাই অনুমেয় হয় যে, তারা সর্বভুক ছিল; কারণ তাদের স্ট্রোন্টিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মাত্রার অনুপাত নিচু; যা তৃণভোজী মাংস খেলে এমন হয়।[১]
২০১১ সালের গবেষণায় স্ট্রোন্টিয়াম আইসোটপের অনুপাত হিসাব করে প্রস্তাবনা করা হয়েছে, উত্তর আফ্রিকার অস্ট্রালোপিথেকাস আফ্রিকানাস ও প্যাঃ রোবাস্টাস এর মধ্যে বিশেষ ধরনের সামাজিকতা দেখা যাওয়া শুরু করে। নারীরা পুরুষের তুলনায় অধিক নিজ জন্মস্থান ছেড়ে দূরে গিয়ে ঘর বাধত; এমনটাই দাবী করা হয়েছে।[৫][৬]
প্যাঃ রোবাস্টাস যে সময়ে পৃথিবীতে বিচরণ করছে, সেসময় অন্য প্রাক হোমিনিনরা পাথরের হাতিয়ার তৈরী বা ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু প্যাঃ রোবাস্টাস এর জীবাশ্মের সাথে এরকম কোনো হাতিয়ার পাওয়া যায় নি। তবে পশুর হাড়কে সম্ভবত তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত।[১]
![]() |
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)।