স্থানাঙ্ক জ্যামিতিতে প্যারাবলোইড (ইংরেজি: Paraboloid) একটি দ্বিঘাত বিশিষ্ঠ তল। ইহার কেবলমাত্র একটি প্রতিসাম্য অক্ষ আছে; এছাড়া আর কোনো প্রকার কেন্দ্রীয় প্রতিসাম্য নেই। প্যারাবলোইড শব্দটি প্যারোবলা (ইংরেজি: Parabola) শব্দ থেকে এসেছে, যা একটি শঙ্কুচ্ছেদের অংশ এবং প্যারোবলাও এই একই রকম প্রতিসাম্য নিয়ম মেনে চলে।
সমতলিক অংশাচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে প্যারাবলোইডকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- উপবৃত্তাকার ও পরাবৃত্তাকার। যদি সকল অংশাচ্ছেদ উপবৃত্তাকার হয় তবে তাকে উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইড বলা হয়। একই ভাবে যদি সকল অংশাচ্ছেদ পরাবৃত্তাকার হয় তখন তাকে পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইড বলা হয়।
অনুরূপভাবে, প্যারাবলোইড চোঙাকৃতি না হওয়ার কারণে দ্বিঘাত বিশিষ্ঠতল হিসাবে সজ্ঞায়িত করা যায় এবং এর একটি দ্বিঘাত বিশিষ্ঠ অন্তর্নিহিত সমীকরণ আছে যাকে আবার দুটি সরলরৈখিক জটিলরাশির উৎপাদক বীজ হিসাবে প্রকাশ করা যায়। যদি প্যারাবলোইডের উৎপাদক বীজগুলি বাস্তব সংখ্যা হয় তবে তাকে পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইড বলা হয় এবং যদি প্যারাবলোইডের উৎপাদক বীজ গুলি জটিল রাশি হয় তবে তাকে উপবৃত্তাকার প্যারাব বলা হয়।
উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইড অনেকটা উপবৃত্তাকার বাটির মতো এবং যখন এর প্রধান অক্ষটি উলম্ব ভাবে থাকে তখন এর মান সর্ব নিম্ন হয়। কার্টেসিয়ান কো-অর্ডিনেট পদ্ধতিতে তিনটি অক্ষ হলো x, y, এবং z, এই পদ্ধতিতে সমীকরণটি হলো [১]:৮৯২
যেখানে a এবং b ধ্রূবক রাশি, এবং ইহা বক্রতার পরিমাপক যা যথাক্রমে xz ও yz তলকে বোঝায়। এক্ষেত্রে উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইডের উপরিভাগ উন্মুক্ত।
পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইড (হাইপার্বলয়েড সাথে বিভ্রান্তি না) একটি ডাবলি রুলড সারফেস এবং দেখতে অনেকটা সাডেলএর মতো, উপযুক্ত কো-অর্ডিনেট পদ্ধতিতেপরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইডর সমীকরণ হলো[২][৩]:৮৯৬
পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইডের x-অক্ষ সাপেক্ষে নিম্নাগ্শ উন্মুক্ত এবং y-অক্ষ সাপেক্ষে (অর্থাৎ, অধিবৃত্তটি x = 0 উর্ধাংশ উন্মুক্ত এবং y = 0 তল সাপেক্ষে নিম্নাগ্শ উন্মুক্ত।
তবে অবশ্যই প্যারাবলোইড অনেকগুলি প্যারাবোলার সমষ্ঠি। তবে একটি বিশেষ পার্থক্য় আছে। পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইড অনেক পরাবৃত্তের সমষ্ঠি এবং উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইড অনেক উপবৃত্তের সমষ্ঠি।
যখন a = b হয় তখন, একটি অধিবৃত্তকে তার অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরালে উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইড তৈরী হয়। নানা ধরনের অধিগোলাকার আয়না বা এন্টেনা দেখতে অনেকটা অধিগোলাকের মতো। বদ্ধ জলভূমির উপরিভাগও অধিগোলাকার, এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে লিকুইড মিরর টেলিস্কোপ তৈরী করা হয়। এই ধরনের প্যারাবলোইডকে অনেক সময় বৃত্তাকার প্যারাবলোইড ও বলা হয়।
প্যারাবলোইডের উপরিস্থ কোনো বিন্দু থেকে যদি একটি একক নিঃসারী বিন্দু থাকে এবং সেখান থেকে নিঃসৃত রশ্মি প্রতিফলনের পর সমান্তরাল হয় তবে সেই বিন্দু টিকে ফোকাস বলা হয়। বিপরীত ভাবে, যদি সমান্তরাল রশ্মি অধিগোলাকার প্রতিফলকে আপতিত হয় তবে সেটি একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয় এবং সেই বিন্দুটিই হলো ফোকাস। (বিস্তারিত জানতে ইংরেজি: উইকিপিডিয়ার প্যারাবোলা নিবন্ধ দেখুন)
পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইড একটি ডাবলি রুল্ড সারফেস: এটি দুটি গোত্রের স্কিউ লাইন নিয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি গোত্রের সরলরেখাগুলি একটি সাধারণ তলের সমান্তরাল, কিন্তু একে অপরের সাথে সমান্তরাল না, সেই কারণে পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইড একটি কোনইড।
এই ধর্মগুলি পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইডের সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য: একটি পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইড একটি সরলরেখার সমান্তরাল সরলরেখা গুচ্ছ দ্বারা তৈরী হতে পারে যেখানে সব কটি সরলরেখা একটি সাধারণ তলের সমান্তরাল এবং একটি তলের সাথে দুটি নির্দিষ্ট স্কিউ লাইনকে ছেদ করে। পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইডের এই বিশেষ ধর্মটি একটি ঢালাই বুঝতে সাহায্য করে এবং আধুনিক স্থাপত্যয় এর ব্যবহার প্রচুর।
বহুল বিক্রিত মুখরোচক প্রিঙ্গেলস নামক আলুভাজা পরাবৃত্তাকার প্যারাবলোইডের কর্তিত অংশ।[৪] এই বিশেষ আকারটি আলুভাজা গুলোকে চোঙাকার পাত্রে রাখতে সাহায্য করে, এবং এই আকারের ফলে ভেঙ্গে যায়ও কম।[৫]
উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইডের সামতলিক অংশাচ্ছেদের সমীকরণ হলো -
এই সমীকরণ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ক্ষেত্র:
অবশ্যই, অনেকগুলি বৃত্তের ঘূর্ণিনই যেকোনো একটি উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইড তৈরি করে। এই কথাটি সত্য হলেও সাধারণত ক্ষেত্রে এটি অবিশ্যিক নয়। (আরও জানতে বৃত্তাকার অংশাচ্ছেদ দেখুন)
দ্রষ্টব্যঃ একটি উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইডই প্রক্ষিপ্ত ভাবে একটি গোলকের সমতুল্য।
পরাবৃত্তাকর প্যারাবলোইডের সামতলিক অংশাচ্ছেদের সমীকরণ হলো -
এই সমীকরণ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ক্ষেত্র:
,
,
দ্রষ্টব্যঃ
১. যেকোনো পরাবৃত্তাকর প্যারাবলোইড হলো একটি রুলড সারফেস (সরলরেখা সমন্বিত) কিন্তু পরিমার্জনশীল তল। (এই ক্ষেত্রে ইহা চোঙ বা শঙ্কুর সাথে তুলনীয়)
২. যেকোনো বিন্দুতে গাউসের বক্রতা ঋণাত্মক। তাই এটি একটি সাডেল তল।
৩. একটি একক পরাবৃত্তাকর প্যারাবলোইডের সমীকরণ হলো- ইহাকে z-অক্ষ বরাবর ৪৫° কোনে ঘূর্ণন দিলে পাওয়া যায় এবং সমীকরণ হলো-
৪. কোনো একটি পরাবৃত্তাকর প্যারাবলোইড প্রক্ষিপ্ত ভাবে একটি হাইপারবোলয়েড সমতুল্য।
উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইডের পেন্সিল
এবং পরাবৃত্তাকর প্যারাবলোইডের পেন্সিল
উভয়ই অবশেষে একই তলে গিয়ে পৌঁছয়, এর সমীকরণ হলো-
ইটা কেবলমাত্র যা একটি অধিগোলাকার চোঙ (চিত্র দেখুন)
উপবৃত্তাকার প্যারাবলোইডের প্যারামেট্রিক সমীকরণ হলো -
এর গাউসীয় বক্রতা হলো
এবং গড় বক্রতা
গাউসীয় বক্রতা এবং গড় বক্রতা সর্বদা ধনাত্মক, মুলবিন্দুতে এদের সর্বোচ্চ মান আছে এবং মুলবিন্দু থেকে দূরবর্তী যেকোনো বিন্দুতে গেলে এর মান কমতে থাকে। তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়, অসীম দূরত্বে এদের মান শূন্য।
পরাবৃত্তাকর প্যারাবলোইডের প্যারামেট্রিক সমীকরণ হলো -[২]
এর গাউসীয় বক্রতা হলো
এবং গড় বক্রতা
পরাবৃত্তাকর প্যারাবলোইডের অপেক্ষকটি হলো
যদি পরাবৃত্তাকর প্যারাবলোইডটি +z বরাবর +π/৪ কোনে আবর্তিত হয় (দক্ষিণ হস্ত নিয়মানুসারে),তবে প্রাপ্ত তলের সমীকরণ হলো
এবং যদি a = b হয় তবে সমীকরণটি সরলীকৃত হয়ে হবে -
পরিশেষে, ধরা যাক :, তাহলে আমরা দেখতে পাবো
ইহা
তলের অনুবন্ধী তল। ইহাকেই গুণন পদ্ধতির জ্যামিতিক উপস্থাপন (ত্রিমাত্রিক নমোগ্রাফ) হিসাবে মনে করা যেতে পারে।
দুটি অধিবৃত্তীয় ℝ2 → ℝ অপেক্ষক-
এবং
পরস্পর তারঙ্গিক অনুবন্ধী যুগল এবং একত্রে একটি বৈশ্লেষিক অপেক্ষক তৈরী করে।
যা f(x) = +x২/২ অধিবৃত্তীয় অপেক্ষক ℝ → ℝ এর একটি বিশ্লেষণী ধারাবাহিকতা।
প্রতিসম অধিবৃত্তাকার প্রতিফলকের সমীকরণ হলো
যেখানে F হলো ফোকাস দৈর্ঘ্য, D হলো প্রতিফলোকের গভীরতা এবং R হলো ব্যাসার্ধ। এরা প্রত্যেকেই একই এককে পরিমাপ করা হয়। যেকোনো দুটির মান জানা থাকলে তৃতীয়টি সমীকরণ থেকে বের করে নেওয়া যায়।
প্রতিফলক তলের সাথে ব্যাস পরিমাপের পদ্ধতিটি আরও জটিল। অনেক সময় একে সরলরৈখিক ব্যাস বলা হয়, এবং এটি সমতল বৃত্তাকার তলের ব্যাসের সমান। যাকে সঠিক আকারে কেটে বেঁকিয়ে প্রতিফলক তৈরী করা হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাপ হলো P = 2F ( যা P = +R২/২D এর সমতুল্য) এবং Q = (P2 + R2),
যেখানে F, D, and R আগের মতই অর্থ বহন করছে। ক্ষেত্রের মাপের সাথে ব্যাসের সমীকরণটি হলো :
যেখানে ln x সাধারণ লগারিদম বোঝাচ্ছে। অর্থাৎ লগারিদমের বেস হলো e।
ডিক্সের আয়তন অর্থাৎ যত পরিমান তরল ডিক্সে রাখা যাবে যদি ডিক্সটিকে পাতিয়ে রাখা হয়, তা হলে :
চিহ্ন গুলির অর্থ আগেই বলা হয়েহে। সূত্রটি চোঙা (πR2D), অর্ধ গোলক (+২π/৩R2D, যেখানে D = R) শঙ্কুর (+π/৩R2D) আয়তনের সাথে তুলনীয়। πR2 হলো ডিক্সের মুক্ত অংশের ক্ষেত্রফল। যা আপতিত সূর্যরশ্মির আপতন তলের সমানুপাতিক। প্যারাবলোইড তলের ক্ষেত্রফল নিম্নোক্ত সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় :
বাংলা | ইংরেজি |
---|---|
স্থানাঙ্ক জ্যামিতি | Co-ordinate Geometry |
দ্বিঘাত বিশিষ্ঠ তল | Quadric surface |
কেন্দ্রীয় প্রতিসাম্য | Central symmetry |
প্রতিসাম্য অক্ষ | axis of symmetry |
শঙ্কুচ্ছেদ | Conic Section |
অংশাচ্ছেদ | Cross Section |
সমতলিক অংশাচ্ছেদ | planar cross sections |
উপবৃত্তাকার | Elliptical |
অধিবৃত্ত | Parabola |
উপবৃত্ত | Ellipse |
পরাবৃত্তাকার | Hyperbolic |
পরাবৃত্ত | hyperbola |
অংশাচ্ছেদ | Cross Section |
চোঙাকৃতি | Cylindrical |
দ্বিঘাত বিশিষ্ঠতল | Quadric surface |
সজ্ঞায়িত | defined |
অন্তর্নিহিত সমীকরণ | implicit equation |
জটিলরাশি | Complex Number |
উৎপাদক | Factor |
বীজ | Root |
বাস্তব সংখ্যা | Real Number |
সরলরৈখিক | Liner |
বাংলা | ইংরেজি |
---|---|
ডাবলি রুল্ড সারফেস | doubly ruled surface |
স্কিউ লাইন | skew lines |
কোনইড | conoid |
প্রিঙ্গেলস | Pringles |