দর্শনে, নেচারালিজম বা প্রকৃতিবাদ বা স্বাভাবিকতা হল "একটি ধারণা বা মতবাদ যা অনুসারে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক নিয়ম এবং বলই (অতিপ্রাকৃতিক অথবা আধ্যাত্মিক নয়) জগৎকে পরিচালিত করতে পারে।"[১] প্রকৃতিবাদকে ধারণকারী অর্থাৎ নেচারালিস্ট বা প্রকৃতিবাদীগণ বলেন, প্রাকৃতিক নিয়মগুলো হল সেই নিয়ম যা প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের গঠন ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরিবর্তিত মহাবিশ্বের প্রতিটি ধাপই এই নিয়মগুলোর ফলাফল হয়ে থাকে।[২]
"প্রকৃতিবাদকে সজ্ঞানগতভাবেই একটি অন্টোলজিভিত্তিক উপাদান এবং একটি পদ্ধতিগত উপাদানে ভাগ করা যেতে পারে।"[৩] অন্টোলজি বলতে সেই দার্শনিক শাখাকে বোঝায় যা বাস্তবতার প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে। কিছু দার্শনিক প্রকৃতিবাদকে বস্তুবাদের সমার্থক দাবী করেন। যেমন, দার্শনিক পল কার্টজ বলেন, প্রকৃতিকে বস্তুর নীতি দিয়েই সবচেয়ে ভালভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এই নীতিগুলোর মধ্যে আছে ভর, শক্তি এবং সায়েন্স কমিউনিটি দ্বারা স্বীকৃত ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মগুলো। আবার, প্রকৃতিবাদের এই ধারণাটি বলে, আত্মা, ডেইটি এবং ভূতরা সত্য নয় এবং প্রকৃতিতে এসবের কোণ "উদ্দেশ্য" নেই। এরকম প্রকৃতিবাদের প্রতি চূড়ান্ত বিশ্বাসকে সাধারণভাবে মেটাফিজিকাল নেচারালিজম বা অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদ বলা হয়।[৪]
প্রকৃতিবাদকে বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি কার্যপদ্ধতি হিসেবে ধরে নেয়া হয়, এখানে এটিকে কোন দার্শনিক নিহিতার্থ প্রদানপূর্বক চূড়ান্ত সত্য বলে মেনে নেবার বিবেচনাটি উপস্থিত থাকে। একে মেথোডোলজিকাল নেচারালিজম বা পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ বলা হয়।[৫] এখানকার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে একটি পূর্ব-অনুমিত দৃষ্টান্তের উপর ভিত্তি করে জ্ঞানার্জনের দর্শন।
সর্বেশ্বরবাদীগণ (যেখানে প্রকৃতি ও ঈশ্বরকে একই জিনিস বলে মনে করা হয়) ছাড়া অন্যান্য আস্তিক্যবাদীগণ মনে করেন, প্রকৃতিতেই সকল বাস্তবতা নিহিত থাকে না। কোন কোন আস্তিক্যবাদীর মতে প্রাকৃতিক নিয়মকে ঈশ্বর বা দেবতাদের আনুসঙ্গিক কারণ হতে পারে।
বিংশ শতকে, উইলার্ড ভ্যান অরমান কুইন, জর্জ সান্তায়ানা এবং অন্যান্য দার্শনিকগণ যুক্তি দেখান, বিজ্ঞান প্রকৃতিবাদের স্বার্থকতা নির্দেশ করছে, দর্শনেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগ করা উচিত। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বিজ্ঞান ও দর্শন পারষ্পরিক সম্পর্কযুক্ত হয়ে একটি কন্টিন্যুয়াম বা অবিচ্ছিন্নতা গঠন করে।
দার্শনিক প্রকৃতিবাদের প্রথম ধারণাটি পাওয়া যায় প্রাকসক্রেটীয় আয়োনীয় দার্শনিক গোষ্ঠী থেকে। এই গোষ্ঠীর একজন ছিলেন থেলিস, যাকে বিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ তিনিই প্রথম কোন অতিপ্রাকৃতিক ধারণাকে ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ঘটনাসমূহের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এই প্রাথমিক দার্শনিকগণ এমন সব এম্পিরিকাল বা গবেষণামূলক তদন্তের নীতি আনয়ন করেন যেগুলো লক্ষণীয়ভাবেই প্রকৃতিবাদের ভবিষ্যদ্বাণী করে।[৬]
ভারতীয় দর্শনে প্রকৃতিবাদ ছয়টি আস্তিক ধারার দর্শনের মধ্যে দুইটির (বৈশেষিক, ন্যায়) এবং একটি নাস্তিক ধারার দর্শনের (চার্বাক) মূল ভিত্তি ছিল।[৭][৮] বৈশেষিক দর্শন খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে পাওয়া যায়।[৯][১০]
পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের ক্ষেত্রে আধুনিক চিন্তাধারার প্রাথমিক উৎপত্তি দেখা যায় রেনেসাঁর দ্বাদশ শতকের মধ্যযুগের স্কলাস্টিক চিন্তাবিদদের রচনায়।
এনলাইটেনমেন্ট এর যুগে বা আলোকিত যুগে, অনেক দার্শনিক যেমন ফ্রান্সিস বেকন, ভলতেয়ার প্রাকৃতিক জগতের তদন্তের বেলায় অতিপ্রাকৃতের আশ্রয় ত্যাগ করার ক্ষেত্রে দার্শনিক ন্যায্যতা প্রতিপাদন করেন। পরবর্তী বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ফলে জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, পদার্থবিজ্ঞান ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা অন্তর্নিহিতভাবেই আর আস্তিক্যবাদী ছিল না।
পিয়ের সিমোঁ লাপ্লাসকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় তার সেলেস্টিয়াল মেকানিক্স এর কাজগুলোতে কোথাও ঈশ্বরের উল্লেখ নেই কেন, তখন তিনি উত্তর দেন, "আমার সেই প্রকল্পটির কোন প্রয়োজন হয় নি।"[১২]
টেক্সাস সিটিজেন্স ফর সায়েন্সের প্রেসিডেন্ট স্টিভেন শেফারসম্যানের মতে, প্রথমে পাবলিক স্কুলে সৃষ্টিবাদের বিরুদ্ধে প্রচার,[১৩] এরপর প্রগতিশীলতার মাধ্যমে পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের ধারণ ও সবশেষে অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদের মাধ্যমেই বিজ্ঞানের অগ্রসর ঘটে এবং এর ব্যাখ্যামূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।[১৪] এই অগ্রসরতার ফলে অস্তিত্ববাদ বা এক্সিস্টেনশিয়ালিজমের মত অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত অবস্থানগুলোও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।[১৫]
প্রকৃতিবাদ শব্দটির বর্তমান ব্যবহার আসে গত শতকের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া বিতর্ক থেকে। সেই সময়ের স্বঘোষিত প্রকৃতিবাদীদের মধ্যে ছিলেন জন ডুয়ি, আর্নেস্ট নাগেল, সিডনি হুক এবং রয় উড সেলারস। তাদের কাছে প্রকৃতিই একমাত্র বাস্তবতা, অতিপ্রাকৃত বলতে কিছুই নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে সকল বাস্তবতার তদন্ত করতে হয়, যার মধ্যে মানবাত্মাও একটি: "সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, 'প্রকৃতিবাদ' কেবলই একটি তথ্যমূলক শব্দ নয়... সমসাময়িক দার্শনিকদের বেশিরভাগই আনন্দের সাথে...'অতিপ্রাকৃতিক' সত্তাকে বর্জন করেন, এবং বিজ্ঞানকেই মানবাত্মার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সত্যের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকেই সাম্ভাব্য পথ (যদি আবশ্যিকভাবেই একমাত্র পথ না হয়) হিসেবে ধরে থাকেন।"[১৬]
পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ হচ্ছে "মেথোডলজিকাল নেচারালিজম" এর পারিভাষিক শব্দ যার ব্যবহার খুব সাম্প্রতিক কালে শুরু হয়েছে। রোনাল্ড নাম্বারের মতে, হুইটন কলেজের দার্শনিক পল ডে ভ্রিয়েস প্রথম ১৯৮৩ সালে মেথডোলজিকাল নেচারালিজম এবং মেটাফিজিকাল নেচারালিজম বা অধিবিদ্যীয় নেচারালিজমের মধ্যে পার্থক্য টানেন। এখানে পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ একটি পদ্ধতিকে নির্দেশ করে যা ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু বলে না, অন্যদিকে অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।[১৭] মেথোডোলজিকাল নেচারালিজম শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৩৭ সালে এডগার এস. ব্রাইটম্যানের একটি প্রবন্ধ দ্য ফিলোসফিকাল রিভিউ -তে। এখানে সাধারণ প্রকৃতিবাদের সাথে পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের মধ্যে পার্থক্য টানা হয়। কিন্তু সেই পার্থক্যের ধারণাটি এখনকার মত এতটা উন্নত ছিল না।[১৮]
অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদকে অন্টোলজিকাল প্রকৃতিবাদ বা দার্শনিক প্রকৃতিবাদও বলা হয়। এটি একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও জগৎ যা অনুসারে, প্রকৃতি বিষয়ক পাঠে উল্লিখিত প্রাকৃতিক বস্তু, নীতি এবং সম্পর্ক ছাড়া আর কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ কেবল সেসব বিষয়েরই অস্তিত্ব রয়েছে যা গাণিতিক মডেলের সাহায্যে আমাদের ভৌত পরিবেশ বুঝতে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ কেবল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকেই নির্দেশ করে, যার জন্য অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদ কেবলমাত্র সাম্ভাব্য একটি অন্টোলজিকাল ভিত্তিই দান করে।
অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদ বলে, সচেতনতা এবং মনের সকল বৈশিষ্ট্যকে প্রকৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। বিস্তৃতভাবে বললে, এর সাথে সম্পর্কিত ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিটির নাম হল ধর্মীয় প্রকৃতিবাদ অথবা আধ্যাত্মিক প্রকৃতিবাদ। বিশেষভাবে বলতে গেলে, অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদ অতিপ্রাকৃতিক ধারণাকে এবং ধর্মের অনেক ব্যাখ্যাকেই বর্জন করে।
পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ কারও অস্তিত্ব আছে কি নেই এসম্পর্কে চিন্তা করে না, কিন্তু প্রকৃতিকে জানার পদ্ধতি সম্পর্কে এটা ভাবে। এটি প্রাকৃতিক কারণ ও ঘটনার দ্বারা বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা, অনুকল্প ও ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার একটি প্রয়াস নেয়। এই শব্দের দ্বিতীয় অর্থ অনুযায়ী, প্রকৃতিবাদ একটি কাঠামো দান করে যেখানে প্রকৃতির নিয়ম সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করা হয়। পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ জ্ঞান অর্জনের একটি উপায়। এটি চিন্তার একটি বিশেষ ব্যবস্থা যা বাস্তবতা সম্পর্কে জানার জ্ঞানীয় দিকটিকে বিবেচনা করে, আর তাই এটি একটি জ্ঞানের দর্শন বা জ্ঞানতত্ত্ব। সমাজতাত্ত্বিক ইলেইন একলান্ড বলেন, ধার্মিক বিজ্ঞানীরাও পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের চর্চা করেন। তাদের বিশ্বাস তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রয়োগের ব্যাপারে ও তাদের কার্যের নৈতিকতা নিয়ে তাদের চিন্তার পদ্ধতিতে প্রভাবিত করে, কিন্তু তাদের বিজ্ঞানচর্চায় ধর্ম কোন প্রভাব ফেলে না।[১৯][২০]
রবার্ট টি. পেনক ১৯৯৬ এর পর তার ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে পরিষ্কার করে বোঝাতে "পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ" শব্দটিকে বারবার ব্যবহার করেছেন। এর কারণ ছিল তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিজেকে কোন অতিপ্রাকৃতিক সত্তার উপস্থিতি, অনুপস্থিতিকে অনুমান না করেই প্রকৃতির ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে, এক্ষেত্রে কোন ধরনের অধিবিদ্যীয় প্রকৃতিবাদেরও আশ্রয় নেয়া হয় না (যেমনটা সৃষ্টিবাদীগণ এবং ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বা বুদ্ধিদীপ্ত অনুকল্পের প্রবক্তাগণ, বিশেষ করে ফিলিপ ই. জনসন দাবী করে থাকেন)। কিজমিলার বনাম ডোভার এরিয়া স্কুল ডিসট্রিক্ট বিচারে একজন বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য বা এক্সপার্ট উইটনেস হিসেবে পেনকের সাক্ষ্য[২১] শুনে বিচারক তার মেমোরেন্ডাম ওপিনিয়নে মন্তব্য করেছিলেন, "আজকের দিনে 'পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ' হল বিজ্ঞানের মৌলিক নীতি"।[২২]
"বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য হতে প্রতীয়মান হয় যে, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব থেকে বিজ্ঞান প্রাকৃতিক ঘটনাবলিকে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রাকৃতিক কারণগুলোকে খুঁজে আসছে... অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যাগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং বুদ্ধিদীপ্ত হলেও সেগুলো বিজ্ঞানের অংশ নয়।" পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ "বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত"। এটা একটি "মৌলিক নীতি" যেখানে "আমরা যা পর্যবেক্ষণ করি, পরীক্ষা করি, প্রতিলিপি তৈরি করি এবং যাচাই করি তার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীদেরকে আমাদের চারপাশের জগৎ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে হয়।"[২৩]
নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের প্রফেসর এমিরেটাস[২৪] এবং একজন খ্রিস্টান আলভিন প্লাটিঙ্গা প্রকৃতিবাদের একজন সুপরিচিত সমালোচক।[২৫] তিনি তার ইভোল্যুশনারি আর্গুমেন্ট এগেইনস্ট নেচারালিজম গ্রন্থে লেখেন, বিবর্তনের মাধ্যমে সত্য বিশ্বাসের প্রতি আস্থা নিয়ে মানুষের তৈরি হওয়াটা নিম্ন এবং পরীক্ষার অসাধ্য, যদি না এই বিবর্তন কারও দ্বারা পরিচালিত হয় (যেমন ঈশ্বর)। ইউনিভারসিটি অব গ্লাসগোর ডেভিড কাহানের মতে, কীভাবে বিশ্বাসগুলো নিশ্চয়তা লাভ করে তা বোঝার জন্য, অতিপ্রাকৃতিক আস্তিক্যবাদের আলোকে অবশ্যই এর ন্যায্যতা প্রতিপাদন করতে হবে, যেমনটা প্লাটিঙ্গার জ্ঞানতত্ত্বে বলা হয়েছে।[২৬][২৭][২৮]
প্লাটিঙ্গা বলেন, প্রকৃতিবাদ ও বিবর্তন মিলে একটি অনতিক্রম্য পরাজয় নিয়ে এসেছে যেখানে বিশ্বাস করা হয় আমাদের জ্ঞানীয় দক্ষতা বিশ্বাসযোগ্য। এই সংশয়বাদী যুক্তি ডেকার্তের ইভিল ডিমন, ব্রেইন ইন দ্য ভ্যাটের মত ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।[২৯]
উদাহরণস্বরূপ "দার্শনিক প্রকৃতিবাদ"কে একটি বিশ্বাস হিসেবে নিন যেখানে কোন অতিপ্রাকৃতিক সত্তার প্রতি বিশ্বাস করা হয় না, ঈশ্বরের কোন ধারণা সেখান নেই। আমার দাবীটি হল, প্রকৃতিবাদ ও সমসাময়িক বিবর্তনবাদ একে অপরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় - যদিও বিবর্তনবাদ একটি সাধারণ চিন্তা যা প্রকৃতিবাদ নামক অট্টালিকার একটি প্রধান খুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। (অবশ্যই আমি বিবর্তনবাদ বা এর আশপাশের কোন তত্ত্বকে আক্রমণ করছি না। আমি কেবল প্রকৃতিবাদের সাথে মানব বিবর্তনের পদ্ধতির মধ্যকার সম্পর্ককে আক্রমণ করছি। আমি আস্তিক্যবাদের সাথে সমসাময়িক বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানের প্রস্তাবিত বিবর্তনের মাঝে সংযোগের ক্ষেত্রে এরকম কোন সমস্যা দেখি না।) আরও বিশেষভাবে বললে, আমি যুক্তি দিয়েছি যে, বর্তমান বিবর্তনগত নীতিতে মানুষের যেভাবে বিবর্তন ঘটেছে তার সাথে প্রকৃতিবাদের মধ্যকার সম্পর্কটি... নিশ্চিতভাবেই স্ববিরোধী এবং অসঙ্গতিপূর্ণ।
— আলভিন প্লাটিঙ্গা, নেচারালিজম ডিফিটেড?: এসেস অন প্লাটিঙ্গাস ইভোল্যুশনারি আর্গুমেন্ট এগেইন্স্ট নেচারালিজম, "ভূমিকা"[৩০]
রবার্ট টি. পেনক বলেন,[৩১] অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা ও শক্তি প্রাকৃতিক ঘটনা ও শক্তির ঊর্ধ্বে, এগুলো প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং যৌক্তিক অসম্ভবতা দ্বারাই বোঝা যায় অতিপ্রাকৃতিক সত্তা কি করতে পারে না। তিনি বলেন, "আমরা যদি আমাদের প্রাকৃতিক জ্ঞানকে অতিপ্রাকৃতিক বিষয়াবলিকে বোঝার জন্য ব্যবহার করতেই পারতাম তাহলে সংজ্ঞা হতেই বলা যায় যে, এরা আর অতিপ্রাকৃতিক থাকে না। যেহেতু আমাদের কাছে অতিপ্রাকৃতিক বিষয় রহস্যে ঘেরা, তাই এটি বৈজ্ঞানিক মডেলের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব রাখতে পারে না। তিনি বলেন, "পরীক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষণ এবং ভেরিয়েবলগুলোর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়... কিন্তু সংজ্ঞা অনুযায়ী আমাদের অতিপ্রাকৃতিক সত্তা বা শক্তির উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।" বিজ্ঞান অর্থের সাথে কাজ করে না; বৈজ্ঞানিক যুক্তির বদ্ধ ব্যবস্থা এর নিজেকে সংজ্ঞায়িত করতে ব্যবহৃত হয় না। বিজ্ঞান অপরীক্ষিত অতিপ্রাকৃতিক শক্তির আশ্রয় নিলে বিজ্ঞানীদের সমস্ত কাজ অর্থহীন হয়ে পড়ে, যে নীতি বিজ্ঞানকে উন্নতি করতে বলে তাকে হেও করা হয়, আর এটি "প্রাচীন গ্রীক নাট্যলেখকদের নায়ককে কঠিন অবস্থা থেকে বাঁচাতে ডিউস এক্স মেশিনা এর আশ্রয় নেবার মতই প্রচণ্ডভাবে অসন্তোষজনক হয়ে যায়।"
এধরনের প্রকৃতিবাদ অতিপ্রাকৃতের অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব সম্পর্কে কিছুই বলে না, যা এই সংজ্ঞা অনুসারে পরীক্ষার ঊর্ধ্বে। বাস্তব বিবেচনা অনুসারে, অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করা নিছকই প্রায়োগিক, এভাবে একজন অন্টোলজিকাল অতিপ্রাকৃতিকতাবাদীর পক্ষেও পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ চর্চা করা সম্ভব হতে পারে। যেমন, বিজ্ঞানীগণ ঈশ্বরে বিশ্বাস করেও তাদের বৈজ্ঞানিক কার্যে পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের চর্চা করতে পারেন। এই অবস্থান এটা বলে না যে তার বৈজ্ঞানিক কার্য কোনভাবে অতিপ্রাকৃতিক কার্যের সাথে যুক্ত। কিন্তু, সংজ্ঞা হতেই বলা যায়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে তা অতিপ্রাকৃতিক হতে পারে না।
ডব্লিউ. ভি. ও. কোয়াইন প্রকৃতিবাদকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি অবস্থান হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, সত্যের জন্য যার চেয়ে কোন উচ্চ বিচারসভা হতে পারে না। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, বিজ্ঞানের দাবীগুলোকে বিচার করার জন্য এর চেয়ে ভাল কোন পদ্ধতি থাকতে পারে না, এবং (বিমূর্ত) অধিবিদ্যা বা জ্ঞানতত্ত্বের মত কোন "প্রথম দর্শন" এর প্রয়োজন নেই যা বিজ্ঞান অথবা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ন্যায্যতা দিতে পারে।
তাই, দর্শনকে তার নিজের লক্ষ্যের জন্যই বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলোকে ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা উচিত, সেই সাথে কোন বিজ্ঞানীর দাবী যদি প্রকৃতিবাদ অনুসারেই ভিত্তিহীন হয় তাহলে দর্শনকে তার সমালোচনা করতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা উচিত। কোয়াইনের দৃষ্টিতে, দর্শন বিজ্ঞানের সাথে অবিচ্ছিন্ন এবং উভয়ই এম্পিরিকাল বা গবেষণামূলক।[৩২] প্রকৃতিবাদ কোন প্রশ্নাতীত বিশ্বাস নয় যেখানে ধরে নেয়া হবে যে, বিজ্ঞানের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিই সঠিক। বরং, এটা কেবলই বলে যে বিজ্ঞান হল মহাবিশ্বের প্রক্রিয়াগুলো উদ্ঘাটন করার সর্বোত্তম উপায়, এবং সেই প্রক্রিয়াগুলোকেই আধুনিক বিজ্ঞান জানবার চেষ্টা করে। যাইহোক, এই কুইনিয়ান রিপ্লেসমেন্ট নেচারালিজমকে খুব বেশি দার্শনিকগণ গ্রহণ করেন নি।[৩৩][৩৪][৩৫][৩৬][৩৭]
কার্ল পপার প্রকৃতিবাদকে বিজ্ঞানের ইনডাক্টিভ থিওরি বা আরোহী তত্ত্বের সাথে সমীকৃত করেছেন। তিনি আরোহণের উপর তার সাধারণ সমালোচনার উপর ভিত্তি করে প্রকৃতিবাদকে প্রত্যাখ্যান করেন, যদিও তিনি নতুন বিষয় আবিষ্কারের উপায় হিসেবে প্রকৃতিবাদের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করেন।
একটি প্রকৃতিবাদী পদ্ধতির (কখনও একে বিজ্ঞানের আরোহী তত্ত্বও বলা হয়) নিজস্ব কিছু মূল্য থাকে, এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই... প্রকৃতিবাদ যে সমালোচনার ঊর্ধ্বে আমি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করি। প্রকৃতিবাদের সমর্থকগণ লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হন যে, যখনই তারা একটি সত্যকে আবিষ্কার করেছেন বলে বিশ্বাস করেন, তখন তারা কেবলই একটি নীতিকে প্রস্তাব করেন। আর তাই সেই নীতিটি ডগমা বা প্রশ্নাতীত মতবাদে পরিণত হয়ে যেতে পারে। প্রকৃতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উপর করা এই সমালোচনাটি কেবল এর অর্থের মানদণ্ডের উপরই প্রযুক্ত হয় না, একই সাথে এর বিজ্ঞানের ধারণার উপর এবং এর ফলে এমপিরিকাল মেথড বা গবেষণাপদ্ধতিতেও প্রযুক্ত হয়।
— কার্ল আর. পপার, দ্য লজিক অব সাইন্টিফিক ডিসকভারি, (Routledge, 2002), pp. 52–53, আইএসবিএন ০-৪১৫-২৭৮৪৪-৯.
এর বদলে পপার প্রস্তাব করেন, বিজ্ঞানীদেরকে ফলসিফায়াবিলিটি বা মিথ্যায়নের উপর ভিত্তি করে তৈরি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত, কারণ তার মতে যত বেশিই গবেষণাই করা হোক না কেন সেগুলো একটি তত্ত্বকে প্রমাণ করতে পারে না, কিন্তু একটিমাত্র পরীক্ষাই আরেকটি তত্ত্বের বিরুদ্ধে যেতে পারে। পপার বলেন যে, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো ফলসিফায়াবিলিটি বা মিথ্যায়নের মাধ্যমেই সমালোচিত হয়।
থমাস ডব্লিউ. (টম) ক্লার্ক ১৯৯৮ সালে naturalism.org নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলেন।[৩৮] এর উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতিবাদের এবং এর ইতিবাচক বিষয়ের উপর বৈশ্বিক সচেতনতা তৈরি করা, এবং আমাদের নিজেদের মাঝে প্রকৃতিবাদী জ্ঞান বৃদ্ধি করার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নীতিগুলোকে বাস্তবায়ন করা।"[৩৯] হেলার স্কুল ফর সোশ্যাল পলিসি এন্ড ম্যানেজমেন্ট এর একজন রিসার্চ এসোসিয়েট হিসেবে ক্লার্ক[৪০] নাস্তিক্যবাদীদের হয়ে যুক্তি দেন, "এই বিশ্বের পূর্ণাঙ্গ কার্যকারণ সম্পর্ককে বুঝতে পারলে আমাদের মধ্যে সহানুভূতির জন্ম হবে এবং এটি আমাদেরকে আরও উন্নত বাস্তব নিয়ন্ত্রণ দান করবে। তাই পারষ্পরিক মনোভাব এবং সামাজিক নীতি তৈরির বেলায় আমাদের মাঝে প্রকৃতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী ভূমিকা রয়েছে।"[৩৪][৩৫][৩৬][৩৭][৪১]
Naturalism is not so much a special system as a point of view or tendency common to a number of philosophical and religious systems; not so much a well-defined set of positive and negative doctrines as an attitude or spirit pervading and influencing many doctrines. As the name implies, this tendency consists essentially in looking upon nature as the one original and fundamental source of all that exists, and in attempting to explain everything in terms of nature. Either the limits of nature are also the limits of existing reality, or at least the first cause, if its existence is found necessary, has nothing to do with the working of natural agencies. All events, therefore, find their adequate explanation within nature itself. But, as the terms nature and natural are themselves used in more than one sense, the term naturalism is also far from having one fixed meaning.
Methodological naturalism is the adoption or assumption of naturalism in scientific belief and practice without really believing in naturalism.
Naturalism did not exist as a philosophy before the nineteenth century, but only as an occasionally adopted and non-rigorous method among natural philosophers. It is a unique philosophy in that it is not ancient or prior to science, and that it developed largely due to the influence of science.
Naturalism is almost unique in that it would not exist as a philosophy without the prior existence of science. It shares this status, in my view, with the philosophy of existentialism.
...I do indeed think that evolution functions as a contemporary shibboleth by which to distinguish the ignorant fundamentalist goats from the informed and scientifically literate sheep.
According to Richard Dawkins, 'It is absolutely safe to say that, if you meet somebody who claims not to believe in evolution, that person is ignorant, stupid, or insane (or wicked, but I'd rather not consider that).' Daniel Dennett goes Dawkins one (or two) further: 'Anyone today who doubts that the variety of life on this planet was produced by a process of evolution is simply ignorant—inexcusably ignorant.' You wake up in the middle of the night; you think, can that whole Darwinian story really be true? Wham! You are inexcusably ignorant.
I do think that evolution has become a modern idol of the tribe. But of course it doesn't even begin to follow that I think the scientific theory of evolution is false. And I don't.
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Beilby2002
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নিQuinean Replacement Naturalism finds relatively few supporters.