প্রতিবাত (ইংরেজি: windward; উচ্চারণ: /ˈwɪndwərd,
প্রতিবাত অঞ্চলের তুলনায় পর্বতের অনুবাত অঞ্চল সাধারণত শুষ্ক থাকে। জাহাজের যে পাশ অনুবাত অংশের দিকে থাকে, ঐ পার্শ্বকে বলা হয় অনুবাত-পার্শ্ব (lee side)। যদি কোন জলযান (vessel) বাতাসের চাপে একদিকে কাত হয়ে থাকে (heeling), ঐ পাশকে বলা হয় "নিম্ন পার্শ্ব"। নৌযাত্রার যুগে, আবহাওয়া (weather) শব্দটি প্রতিবাত এর সমার্থক হিসেবে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত, যেমন- ওয়েদার গেজ এ (weather gage; নৌ-সমরের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ নৌযানের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থান বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত পরিভাষা; বর্তমানে অপ্রচলিত)।
কোন পালতোলা জাহাজের জলযাত্রার ক্ষেত্রে, প্রতিবাত ও অনুবাত এর দিক গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি (জলযাত্রা বিন্দু; point of sail)। অন্যান্য আরও পরিভাষা, যেমন- আপউইন্ড (upwind; বায়ুবিরুদ্ধ) এবং ডাউনউইন্ড (downwind; বায়ুমুখী), ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যাদের বৃহত্তর অর্থ একই।[১]
প্রতিবাত নৌযান সচরাচর পরিচালনা করা তুলনামূলকভাবে সহজতর। এজন্য সমুদ্রে সংঘর্ষ প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক বিধিমালা (International Regulations for Preventing Collisions at Sea)- এর ১২ নম্বর নিয়ম অনুসারে, যা যাত্রারত নৌযানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, দুটি নৌযান বাতাসের সাপেক্ষে একই দিকে যাত্রারত হলে, প্রতিবাত দিকে অবস্থিত নৌযানটি অনুবাত দিকে থাকা নৌযানকে জায়গা ছেড়ে দেবে।[২]
যুদ্ধের সময়, কোন বর্গাকার-রজ্জু রণতরী (square-rigged warship) অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিবাত দিক হতে যুদ্ধে প্রবেশ করতে চেষ্টা করত (বা "ওয়েদার গেজ ধরার চেষ্টা করত")। এতে করে প্রতিপক্ষের রণতরীর ওপর কৌশলগত সুবিধা পাওয়া যেত; কখন সংঘর্ষ হবে আর কখন পিছু হটে যাবে- সেটা প্রতিবাতে থাকা জাহাজের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করত। প্রতিপক্ষ রণতরীর এটা মেনে নেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই করার থাকত না, কেননা অন্যথা আরও বেকায়দাভাবে উন্মুক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকত।[৩]
নৌ-সমরে কামান ব্যবহারের প্রচলন শুরু হওয়ার পর এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জাহাজ বাতাসের বিপরীতে কাত হয়ে পড়ে বলে, অনুবাতে থাকা নৌযান আক্রান্ত হওয়ার জন্য অধিকতর উন্মুক্ত অবস্থায় থাকত।[৪]
শিকারীরা অনুবাত ও প্রতিবাত বোঝাতে যথাক্রমে ডাউনউইন্ড (বায়ুমুখী) ও আপউইন্ড (বায়ুবিমুখী) শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকে।[৫] নাবিকেরা তাদের জাহাজের প্রসঙ্গে এই শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকে। শুধু তাই নয়, কোন দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপগুলোর প্রসঙ্গে এবং কোন একটা নির্দিষ্ট দ্বীপের একেক পার্শ্ব বোঝাতেও এই পরিভাষাগুলো ব্যবহৃত হয়। পরের ক্ষেত্রে, প্রতিবাত পার্শ্ব বলতে নিয়ন্ত্রক বায়ুপ্রবাহের (prevailing wind) পার্শ্বকে বোঝায় এবং এ কারণে সেটা দ্বীপের আর্দ্রতর পার্শ্ব (দেখুন পাহাড়ি বর্ষণ (orographic precipitation))। অনুবাত পার্শ্ব বলতে বোঝায়, দ্বীপের যে পাশ দ্বীপের উচ্চভূমি দ্বারা নিয়ন্ত্রক বায়ুপ্রবাহ হতে সুরক্ষিত; এবং সচরাচর সেটা কোন দ্বীপের শুষ্কতর অংশ হয়ে থাকে। এজন্য, সামুদ্রিক দ্বীপগুলোকে অনুবাত বা প্রতিবাত হিসেবে চিহ্নিতকরণ আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।[৬]
দ্বীপপুঞ্জের (archipelago) ক্ষেত্রে, প্রতিবাত দ্বীপ হচ্ছে আপউইন্ড (upwind; বায়ুবিমুখী) এবং অনুবাত দ্বীপ হচ্ছে ডাউনউইন্ড (downwind; বায়ুমুখী) প্রকৃতির।
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রতিবাত এবং অনুবাত শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয় না:
শিকার: শিকারের ক্ষেত্রে, যে প্রাণি বায়ুমুখী (ডাউনউইন্ডে) থাকে তার একটা সুবিধা আছে। তারা বায়ুবিমুখে (আপউইন্ডে) থাকা প্রাণিদের গন্ধ শুঁকতে পারে, কিন্তু উল্টোটা হয় না। বায়ুবিমুখে (আপউইন্ড) থাকা প্রাণি শিকারের ক্ষেত্রে বায়ুমুখী (ডাউনউইন্ড) থাকা প্রাণিরা একটা বাড়তি সুবিধা পায়।
স্থাপত্য এবং নগর পরিকল্পনা: কখনো কখনো কোন বাড়ি বা সম্প্রদায়ের অংশবিশেষ, কোন ডাউনউইন্ডে থাকা কোন দুর্গন্ধযুক্ত স্থাপনা, যেমন- কোন বহিঃগৃহ (outhouse), আবর্জনাভূমি, গোয়াল ঘর, কারখানা অথবা মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, এর আপউইন্ডে থাকে। আবার কখনো কখনো কোন বাড়ি বা সম্প্রদায়ের অংশবিশেষ, কিংবা পুরোটাই, কোন মনোরম গন্ধের ডাউনউইন্ডে থাকে। এসব সুগন্ধ হয় উদ্ভিদজাত, যেমন- ফুল, ফল বা ফুলের গাছ, বনাঞ্চল থেকে, নয়তো চলন্ত পানির উৎস, যেমন- নদী, ঢেউ বা বৃষ্টি থেকে আসে।