প্রতিরক্ষা দিবস یومِ دفاع | |
---|---|
অন্য নাম | ইউম-ই-দিফা |
পালনকারী | পাকিস্তান |
ধরন | জাতীয় |
উদযাপন | পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, সামরিক প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, দেশাত্মবোধক গান গাওয়া, বিনোদন এবং সামরিক অনুষ্ঠান, বক্তৃতা, আতশবাজি ইত্যাদি। |
তারিখ | ৬ সেপ্টেম্বর |
সংঘটন | বার্ষিক |
প্রতিরক্ষা দিবসটি(উর্দু: یومِ دفاع এএলএ-এলসি : ইউম-ই দিফাʿ) পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষায় পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মত্যাগের স্মরণে জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।[১][২] ১৯৬৫ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর তারিখটি সেই দিনটিকে চিহ্নিত করে যেদিন ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তানি পাঞ্জাব আক্রমণ করতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করেছিল, তাদের উদ্দেশ্য ছিল জম্মুকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের অপারেশন গ্র্যাণ্ড স্লামের প্রতিশোধ নেওয়া।[৩] যদিও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বিনা প্ররোচনায় আকস্মিক আক্রমণ হিসাবে স্মরণ করা হয়, কিন্তু ছোট আকারের বাহিনী নিয়ে কম অস্ত্রশস্ত্র থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই আক্রমণ প্রতিহত করে।[২][৪] এই বর্ণনাকে ভারতীয় ব্যাখ্যাকারেরা মিথ্যা ইতিহাস বলে সমালোচনা করেছেন।[২]
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের সাথে। ভারত কাশ্মীরে আগ্রাসন বাড়ানোর পরে, পাকিস্তান মুজাহিদদের কাশ্মীর উপত্যকায় প্রেরণ করে এবং জনগণকে বিদ্রোহে উস্কে দেয়। তারা স্থানীয় স্থাপনাগুলি ভাঙচুর করে।[৫][ক] দ্বিতীয় পর্যায়ে, ১লা সেপ্টেম্বর, তারা জম্মু বিভাগের আখনুর সেতুর দিকে, অপারেশন গ্র্যান্ড স্লাম নামে অভিহিত একটি ট্যাঙ্ক আক্রমণ শুরু করে। এটির উদ্দেশ্যে ছিল একটি "সংক্ষিপ্ত এবং দ্রুত, মোটামুটি সম্পন্ন সক্রিয়তা"।[৫] পণ্ডিত সুজা নওয়াজের মতে, পাকিস্তানি জেনারেল কাশ্মীর উপত্যকার সাথে ভারতের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আখনুর ব্রিজ দখল করে জম্মুর দিকে ঝুঁকতে চেয়েছিলেন।[৭] ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ) হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে কাশ্মীরে হামলা হলে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। পাকিস্তানিরা এই হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেছিল[৫]
৬ই সেপ্টেম্বর, "প্রাক-ঘোষিত কৌশল"[৫] এর প্রতিক্রিয়া অনুসারে,[৭][খ] ভারতীয় সেনাবাহিনী লাহোরের কাছে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডটি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে। ভারতীয়দের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল লাহোর সেনানিবাস দখল করা। পাকিস্তানি কমাণ্ডারদের কাছে এই হামলাটি ছিল আকস্মিক।[৫][৯] এয়ার মার্শাল নুর খানের মতে, সেনাপ্রধান জেনারেল মুসা খান যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ আইয়ুব খানকে বলেছিলেন যে সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেছে। যাইহোক, এয়ার মার্শাল নুর খানের দেওয়া বিবৃতির প্রতি ভারতীয় কমাণ্ডারেরা আপত্তি জানিয়েছিলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরবন্ত সিং নিজেই বলেছিলেন যে যুদ্ধবিরতির পরেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী সবচেয়ে বেশি গুলি চালানো শুরু করেছিল।[১০] তিনি বলেছিলেন যে যুদ্ধে সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।[৯] ২৩শে সেপ্টেম্বর, পাকিস্তান জাতিসংঘের বাধ্যতামূলক যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়।[গ]
ভারতীয় বাহিনী যেদিন পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল সেই দিনটিকে স্মরণ করে পাকিস্তানে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা দিবসের শুরু হয়েছিল। পাকিস্তানের সরকারী বিবরণে বলা হয়েছে যে "ভারতীয় বাহিনী ওয়াঘা সীমান্তে ঢুকে পড়ে [এটি এইভাবেই লেখা ছিল, ইংরেজি: sic]। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে অবহিত করা হলে তারা মাতৃভূমির রক্ষায় বীরত্বপূর্ণভাবে প্রতিরক্ষা স্থাপন করে এবং তাদের ফিরিয়ে দেয়, এইভাবে এটির নাম হয় পাকিস্তান প্রতিরক্ষা দিবস।"[১২] এয়ার মার্শাল নুর খান মন্তব্য করেন, "এটি একটি ভুল যুদ্ধ ছিল এবং তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করেছিল একটি বড় মিথ্যা দিয়ে যে পাকিস্তানের পরিবর্তে ভারত যুদ্ধে উসকানি দিয়েছে এবং আমরা (পাকিস্তানিরা) ভারতীয় আগ্রাসনের শিকার হয়েছি।"[৯]
এই উদযাপনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক, বন্দুক প্রদর্শন করে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী হেলিকপ্টার প্রদর্শন করে, প্রকৌশলী, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কর্পস এবং আর্মি এয়ার ডিফেন্স তাদের দ্বারা ব্যবহৃত অস্ত্র প্রদর্শন করে এবং আর্মি সার্ভিস কর্পস ও আর্মি মেডিকেল সেনাবাহিনী সিগন্যাল প্রদর্শন করে।[১৩] প্রত্যেককে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠান সরাসরি দেখার অনুমতি দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানগুলি জাতীয় টিভি চ্যানেলেও প্রদর্শিত হয়। ১৯৬৫ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সম্পর্কে বিশেষ তথ্যচিত্র, জাতীয় সঙ্গীত এবং সেদিন যুদ্ধে নিহত মানুষের কাহিনী টিভিতে প্রদর্শিত হয়।
এই দিনে, করাচির মাজার-ই-কায়েদ-এ গার্ড পরিবর্তনের অনুষ্ঠান হয়, যেখানে পাকিস্তান এয়ার ফোর্স একাডেমির তরুণ শিক্ষাণবিশরা গার্ড অফ অনার বা সালামি কুচকাওয়াজ উপস্থাপন করে এবং দায়িত্ব গ্রহণ করে।[১৪]