প্রথম নাগবর্মা | |
---|---|
জন্ম | ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ [১] |
মৃত্যু | ১০১৫ খ্রিস্টাব্দ [১] |
পেশা | কন্নড় কবি, লেখক ও বৈয়াকরণ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | ছন্দোম্বুধি, কর্ণাটক কাদম্বরী |
প্রথম নাগবর্মা (আনুমানিক ৯৯০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ছিলেন দশম শতাব্দীর শেষভাগের এক বিশিষ্ট জৈন লেখক ও কন্নড় কবি। তাঁর লেখা যে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ এখনও পাইয়া যায় সেগুলি হল কর্ণাটক কাদম্বরী ও ছন্দোম্বুধি। গদ্য-পদ্য মিশ্রিত ‘চম্পু’ ছন্দে লিখিত কর্ণাটক কাদম্বরী একটি প্রণয়োপন্যাস এবং বাণভট্ট রচিত সংস্কৃত কাদম্বরী গ্রন্থের অভিযোজনা। অন্যদিকে ছন্দোম্বুধি গ্রন্থটি হল কন্নড় ছন্দশাস্ত্র-সংক্রান্ত প্রাচীনতম অধুনা বিদ্যমান গ্রন্থ।[২][৩][৪] গবেষক কে. এ. নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী ও আর. নরসিংহাচার্যের মতে, প্রথম নাগবর্মা ছিলেন এক অভিবাসী ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান, যে পরিবারের আদি নিবাস ছিল বেঙ্গি (অধুনা উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ) অঞ্চলে।[৫] আধুনিক কন্নড় কবি ও গবেষক গোবিন্দ পাইয়ের মতে, নাগবর্মার জন্ম ও মৃত্যু যথাক্রমে ৯৫০ ও ১০১৫ খ্রিস্টাব্দে।[১] প্রথম নাগবর্মার কবিকৃতি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে মধ্য ভারতের মালব রাজ্যের রাজা ভোজ কবিকে ঘোড়া উপহার দিয়েছিলেন।[৬]
পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশের রাজা রক্কস গঙ্গ (অপর নাম পঞ্চম রচমল্ল, ৯৮৬-৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন প্রথম নাগবর্মার পৃষ্ঠপোষক। গবেষক শেলডন পোলকের মতে, প্রথম নাগবর্মা ছিলেন ধ্রুপদি কন্নড় সাহিত্যের পাঁচ জন নাগবর্মার মধ্যে প্রথম ব্যক্তি।[৭] কন্নড় সাহিত্যের ধ্রুপদি যুগে প্রথম নাগবর্মা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এই যুগে (খ্রিস্টীয় নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী) কন্নড় ভাষার ধ্রুপদি গ্রন্থগুলি সচরাচর ভারতের মহান সংস্কৃত মহাকাব্যগুলি অবলম্বনে অথবা নীতিকথামূলক কাহিনি অথবা জৈন লোককথা ও কিংবদন্তি অবলম্বনে লেখা হত। ‘লৌকিক’ (ধর্মনিরপেক্ষ ও ঐতিহাসিক) ও ‘আগমিক’ (ধর্মীয় ও কিংবদন্তিমূলক) ধারায় সাহিত্য রচনা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।[৮]
প্রথম নাগবর্মার কর্ণাটক কাদম্বরী গ্রন্থটিকে মূল সংস্কৃত গ্রন্থের সরাসরি অনুবাদ মনে করা হয় না। মসৃণ ঝরঝরে ভাষায় লেখা এই গ্রন্থটির মৌলিকতা সুবিদিত।[৯] ছন্দোম্বুধি গ্রন্থটি হল কন্নড় ভাষায় লেখা ছন্দশাস্ত্র-সংক্রান্ত (‘ছন্দানুশাসন’) প্রথম গ্রন্থ। মধ্যযুগীয় কর্ণাটকের সাংস্কৃতিক জগতে প্রাধান্যকারী সংস্কৃত ধারার সঙ্গে লৌকিক (‘দেশি’) কন্নড় ছন্দগুলির সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল এই গ্রন্থে। গ্রন্থটি যে সময়ে লেখা হয়েছিল সেই সময় সংস্কৃত গ্রন্থরচনাই মূলধারার সাহিত্যকর্ম হিসেবে স্বীকৃত ছিল এবং সংস্কৃত পণ্ডিতেরা অধিকতর মর্যাদায় আসীন ছিলেন। এই গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, একটি কন্নড় রচনার জনপ্রিয়তা নির্ভর করে স্থানীয় কোন ধারায় তা লেখা হয়েছে তার উপর। সামগ্রিকভাবে গ্রন্থটিতে স্থানীয় সাহিত্য ঐতিহ্যের সঙ্গে মূলধারার সংস্কৃত বিশ্বজনীন সাহিত্যের একটি মেলবন্ধনের প্রয়াস দেখা যায়।[৪]
ছন্দোম্বুধি গ্রন্থের একটি সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে প্রথম নাগবর্মা স্থানীয় কন্নড় ছন্দগুলিকে নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই অংশটির নামকরণ করেন কন্নড়বিসজয়তী।[১০] ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে হৈসল কবি রাঘবাঙ্ক ‘ষটপদী’ ছন্দটিকে জনপ্রিয় করে তোলার দুই শতাব্দীরও বেশি আগে প্রথম নাগবর্মা এই ছন্দটির নাম উল্লেখ করেছিলেন।[১১] সংস্কৃত ও কন্নড় ভাষায় ব্যবহৃত সাধারণ ছন্দগুলির দৈর্ঘ্য নিয়েও তিনি আলোচনা করেন। এই অংশটির নাম সম্বৃত্ত। উল্লেখ্য, সংস্কৃত থেকে আগত ‘বৃত্ত’ অর্থাৎ ছন্দগুলি কন্নড় ভাষার ধ্রুপদি কবিদের মধ্যে সুপ্রচলিত ছিল।[১০] প্রথম নাগবর্মার মতে, পরবর্তীকালে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘রাগালে’ ও ‘দণ্ডক’-এর মতো কয়েকটি স্থানীয় ছন্দের সঙ্গে প্রাকৃত ভাষার ছন্দের মিল রয়েছে।[১০]