প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা হলো একটি কেন্দ্রীয় সরকারের যোজনা। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালের ২৮শে আগস্ট এই যোজনা শুরু করেছিলেন। ভারতের অধিক সংখ্যক জনগণের কাছে ব্যাঙ্কিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই যোজনা শুরু করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা মাধ্যমে একজন ভারতীয় নাগরিক কোনো টাকা পয়সা জমা দেওয়া ছাড়াই শুধুমাত্র কিছু নথিপত্র জমা দিয়ে ব্যাঙ্কে খাতা খুলতে পারবেন। ব্যাংকে খাতা খোলা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনার মাধ্যমে একজন ভারতীয় নাগরিক বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন। এই যোজনার মাধ্যমে যে খাতা খোলা হয়, তাতে কোনো ব্যালেন্স রাখার প্রয়োজন হয়না। তবে যদি কোনো গ্রাহক নিজের খাতায় ব্যালেন্স রাখতে চান,তাহলে তিনি সেটা অবশ্যই করতে পারবেন।এই প্রকল্প শুরুর দিন থেকে ২০২৩ মে মাস পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার অধীনে ৪৮.৯৩ কোটিরও বেশি অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে।[১][২]
যদি কারো জন- ধন অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে, তাহলে অন্যান্য সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য তাকে অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না। কারণ জন ধন অ্যাকাউন্টেই বেশিরভাগ সরকারি যোজনার সুবিধা পাওয়া যায়। জন-ধন অ্যাকাউন্টে সরকারি পেনশ যোজনা,ফিক্স ডিপোজিট স্কিম, বীমা যোজনায় ব্যবহার করা যায়। সেই সঙ্গে রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে সরকার যে ভর্তুকি দিয়ে থাকে, সেই ভর্তুকির টাকাও এই অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।[৩]
অন্যান্য সাধারণ অ্যাকাউন্ট করলে যেমন এটিএম কার্ড দেওয়া হয়, সেরকম ভাবেই প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা অ্যাকাউন্টেও গ্রাহককে এটিএম কার্ড দেওয়া হয়। সেই এটিএম কার্ড অন্যান্য এটিএম কার্ডের মতোই যেকোনো এটিএম মেশিনে ব্যবহার করা যাবে। জন-ধন যোজনা অ্যাকাউন্টে মোবাইল ব্যাঙ্কিং এর সুবিধা থাকায় প্রত্যেকটি লেনদেনের তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের ফোনে দিয়ে দেওয়া হয়। এতে প্রতিটা লেনদেনের তথ্য অ্যাকাউন্ট ফোল্ডারের জানা থাকে। ফলে কখনো যদি একাউন্ট থেকে বিনা কারণে ব্যালেন্স কেটে নেওয়া হয়,তাহলে একাউন্ট হোল্ডার দ্রুত ব্যাংকে গিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন।[৪]
অন্যান্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মতো প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা অ্যাকাউন্টেও টাকা জমা দিয়ে ভালো সুদ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে এফ.ডি- তেও টাকা রাখা যাবে। প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা অ্যাকাউন্টে জমা টাকায় ৪% হারে সুদ দেওয়া হয়।[৫]
অন্যান্য সাধারণ অ্যাকাউন্টের মতোই জনধন অ্যাকাউন্টেও যেকোনো জায়গায় টাকা যেমন পাঠাতে পাঠানো যাবে, ঠিক তেমনই অ্যাকাউন্ট হোল্ডারও অন্য যেকোনো অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ৪ বার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা যাবে। যদি অ্যাকাউন্ট ৬ মাস পুরোনো হয়ে যায়, তাহলে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা তোলার সুবিধাও দেওয়া হয়। তবে সেই অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা তুলতে হলে কিছু সুদ কেটে নেওয়া হবে। জন-ধন অ্যাকাউন্টে বার্ষিক ১ লক্ষের বেশি জমা করা যাবেনা। এছাড়াও একক সময়ে অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকাই রাখা যাবে।[৬]
প্রধানমন্ত্রী জন ধন অ্যাকাউন্টের সবথেকে বড় সুবিধা হলো- এই অ্যাকাউন্ট খুললে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বীমা দেওয়া হয়। যদি কখনো দুর্ভাগ্যবশত অ্যাকাউন্ট হোল্ডার কোনো দুর্ঘটনাশিকার হন এবং তাতে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের কোনো অঙ্গহানি হয়, তাহলে তাকে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। অপরপক্ষে যদি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের মৃত্যু ঘটে, তাহলে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা দুর্ঘটনা বীমা দেওয়া হয়। তবে জন-ধন অ্যাকাউন্টের দুর্ঘটনা বীমার টাকা তখনই পাওয়া যাবে যদি দুর্ঘটনা ঘটার আগে ৯০ দিনের মধ্যে কোনো আর্থিক ও অ-আর্থিক লেনদেন করা হয়।[৭]
ভারতের যেকোনো ব্যাঙ্কের শাখায় প্রধানমন্ত্রী জন-ধন অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। এক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাঙ্ক না গিয়েও, ব্যবসায়িক সংবাদদাতা দের মাধ্যমেও জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। দেশের বেশিরভাগ জন-ধন অ্যাকাউন্ট তাদের মাধ্যমেই খোলা হয়েছে। ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে, এমন যেকোনো ভারতীয় নাগরিক জন-ধন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।[৮]
প্রধানমন্ত্রী জন-ধন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য শুধুমাত্র আধার কার্ড প্রয়োজন। যদি কারোর আধার কার্ড না থাকে, তাহলে সে প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা এই ধরনের অন্যান্য ডকুমেন্টসের সাহায্যে জন-ধন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।[৯]