প্রবঞ্চনা হলো এমন বিবৃতি বা আচরণ সত্যকে গোপন করে এবং এমন বিশ্বাস, ধারণা বা চিন্তা প্রকাশ করে যা সত্য নয়। এটি সাধারণত ব্যক্তিগত লাভ বা সুবিধার জন্য করা হয়।[১][২] প্রবঞ্চনায় কপটতা, প্রজ্ঞাপন, ভাবভঙ্গি, বিক্ষেপ, ছদ্মবেশ বা প্রচ্ছন্নতা অন্তর্ভুক্ত থাকে। ভ্রান্ত বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এতি আত্মপ্রবঞ্চনা নামে পরিচিত। প্রভাবগতভাবে এটিকে প্রবচনা, প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা, অতীন্দ্রিকরণ, চতুরি বা কৌশল বলা যায়। প্রবঞ্চনা সম্বন্ধযুক্ত অন্যায়ের প্রতিনিধি যা সম্বন্ধযুক্ত সঙ্গীদের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতার মনোভাব এবং অবিশ্বাস তৈরি করে। প্রবঞ্চনা সম্বন্ধের নিয়মাবলীকে ভঙ্গ করে এবং এটিকে প্রত্যাশার নেতীবাচক লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অধিকাংশ মানুষই বন্ধু, সম্বন্ধযুক্ত সঙ্গী এমনকি অপরিচিত ব্যক্তিদের বেশিরভাগ সময়ে সত্যবাদী হিসেবে প্রত্যাশা করেন। যদি মানুষেরা বেশিরভাগ কথোপোকথনকেই অসত্য হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সংগ্রহের জন্য আলাপ-আলোচনা ও যোগাযোগে বিক্ষেপ ঘটানো প্রয়োজন। প্রবঞ্চনার একটি গুরুতবপূর্ণ অংশ প্রেম বা সম্পর্কযুক্ত সঙ্গীদের মধ্যে ঘটে থাকে।[৩]
প্রতারনা এবং অসাধুতা সামরিক মামলায় অন্যায় কিংবা কন্ট্যাক্ট নীতি জায়গা করে নেয় বা প্রতারণায় অভিযুক্ত অনেক মানুষ দ্বারা অপরাধমূলক পরিচালনার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। এটি অস্বীকার এবং প্রবঞ্চনায় মানসিক যুদ্ধক্ষেত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রবঞ্চনার মধ্যে কয়েক ধরনের যোগাযোগ বা ভ্রান্তি থাকে যা সম্পূর্ণ সত্যকে বিকৃত বা বাতিল করতে সাহায্য করে। প্রবঞ্চনার উদাহরণ হিসেবে মিথ্যা উক্তি থেকে শুরু করে বিভ্রান্তিকর মতামত থাকে যেথায় প্রাসঙ্গিক তথ্য নির্গত করা হয়, ফল গ্রাহক মিথ্যা সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। যেমন, "সূর্যমুখী ফুলের তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড উপস্থিত আছে বলে এটি মানসিক স্বাস্থের জন্য উপকারী।" এই দাবিটি দ্বারা গ্রাহক বুঝতে পারেন যে সূর্যমুখী ফুলের তেল অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকারী। কিন্তু আসলে সূর্যমুখীর তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে কম এবং এটি মানসিক স্বাস্থের জন্য তেমনটা উপকারী নয়। এতে দাবিটি যুক্তিগতভাবে সত্য হলেও এটি গ্রাহককে ভুল অনুমানের জন্য প্রভাবিত করে। প্রবঞ্চনা হলো ইচ্ছাকৃত ভাবে মৌখিক বা লিখিত বার্তা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাতে বার্তাটির গ্রাহক এমন একটি তথ্য বিশ্বাস করবে যা বার্তার প্রেরক জানেন যে মিথ্যা। প্রবঞ্চনার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রয়োজনীয় হতে পারে। উদ্দেশ্যই প্রবঞ্চনা এবং একটি সৎ ভুলের মধ্যে পার্থক্য করে দিতে পারে। আন্তঃব্যক্তিক প্রতারণা তত্ত্ব দ্বারা প্রবঞ্চনামূলক আদান প্রদানে যোগাযোগের প্রসঙ্গ এবং প্রেরক ও প্রাপক এর চিন্তাশক্তি এবং আচরণের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবন করে।
কিছু প্রকার প্রবঞ্চনার মধ্যে অন্তর্গত আছেঃ
অনেক মানুষ মনে করেন যে তারা প্রবঞ্চনার ক্ষেত্রে দক্ষ, যদিও তাদের আত্মবিশ্বাস প্রায়সই ভুল প্রমাণিত হয়।[৫]
আন্তঃব্যক্তিক প্রতারণা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে বুলার এবং বুর্গুন (১৯৯৬) প্রবঞ্চনার উদ্দেশ্য পৃথকীকরনে তিনটি শাখার প্রস্তাব করেন:
সম্পর্যুক্ত সঙ্গীদের মধ্যে প্রবঞ্চনা সনাক্তকরণ অতীব কঠিন যদিনা সঙ্গী স্পষ্ট মিথ্যা কথা বলে কিংবা এমন কথা বলে যা অপর সঙ্গীর জানা সত্যের বিপরীত নির্দেশ করে। একজন সঙ্গীকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রবঞ্চনা করা জটিল হলেও, সম্পর্যুক্ত সঙ্গীদের মধ্যকার দৈনন্দিন কথাকোপনে প্রায়শই প্রবঞ্চনা থাকে। প্রবঞ্চনা সনাক্তকরণ অত্যন্ত কঠিন কেননা প্রবঞ্চনা কোনো সম্পূর্ণ নির্ভরশীল প্রদর্শক নেই এবং আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে মানুষ সাধারনত প্রায়শই ডিফল্এ সত্য অবস্থায় উত্তর দেয়। যদিও প্রবঞ্চনা প্রবচকের উপর গুরুতর মানসিক বোঝা চাপিয়ে দেয়। তাকে অবশ্যই পূর্ববর্তী উক্তিগুলো মনে করতে হয় যাতে তার গল্প সামঞ্জস্যপর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়। এর ফলে প্রবচকরা মৌখিক ভাবে বা অমৌখিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করে দেয়।
প্রবঞ্চনা এবং তার সনাক্তকরণ একটি দুরুহ, অঘনিভূত এবং চিন্তন প্রক্রিয়া যা বার্তা আদান প্রদানের প্রসঙ্গের উপর নির্ভরশীল। আন্তঃব্যক্তিক প্রতারণা তত্ত্বের দাবি অনুযায়ী আন্তঃব্যক্তিক প্রতারণা প্রেরকের, যারা তথ্যকে বিকৃত করে সত্য পৃথক করে দেয় এবং প্রাপকের, যারা বার্তার নায্যতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করে, মধ্যকার পারস্পরিক প্রভাবের একটি প্রগতিশীল এবং পুনরাবৃত্তমূলক প্রক্রিয়া। একজন প্রবচকের কার্যকলাপ বার্তার প্রাপকের কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই বিনিময়ের সময়ই প্রবচক প্রবঞ্চনা সম্পর্কীয় মৌখিক বা অমৌখিক তথ্য ব্যক্ত করবে। কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, প্রবঞ্চনা মূলক যোগাযোগের সাথে কিছু ইঙ্গিত সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু পন্ডিতগণ বারংবার নির্ভরশীল প্রদর্শক হিসেবে এই ইঙ্গিত গুলোর কার্যকারিতা নিয়ে অসম্মতি প্রকাশ করেছেন। বিখ্যাত প্রবঞ্চনার গবেষক আল্ডারট ব্রিজ এটাও বলেছেন যে এমন কোনো নির্দিষ্ট ইঙ্গিত নেই যেটি কেবলমাত্র প্রবঞ্চনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। পূর্বের উক্তি অনুযায়ী, প্রবঞ্চনার একটি নির্দিষ্ট আচরণগত প্রদর্শকের অস্তিত্ব নেই। তবুও, প্রবঞ্চনার সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু অমৌখিক আচরণ পাওয়া গেছে যা প্রবঞ্চনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ব্রিজ উদ্বোধন করেন যে এসকল ইঙ্গিতের একটি গুচ্ছ পর্যবেক্ষণ করা কোনো নির্দিষ্ট ইঙ্গিত পর্যবেক্ষণের তুলনায় প্রবঞ্চনার একটি বেশি নির্ভরযোগ্য প্রদর্শক।
মার্ক ফ্রাঙ্ক প্রস্তাব করেছেন যে মিথ্যা কথা বলতে সেচ্ছাকৃত সচেতন ব্যবহারের প্রয়োজন[৭], আবার কথা শোনা এবং শরীরের অঙ্গভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করা মিথ্যা শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ গুননীয়ক। যদি কোনো প্রশ্নের উত্তরে বিশৃঙ্খলা, কথ্য সময়ের সল্প তা, শব্দের পুনরাবৃত্ত, এবং ত্রুটিপূর্ণ যৌক্তিক গঠন থাকে, তবে মানুষটির বক্তব্য মিথ্যা হাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মৌখিক ইঙ্গিত যেমন কম্পাঙ্কের উচ্চতা ও ভিন্নতা প্রবঞ্চনার অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।[৮]
আশঙ্কা বিশেষভাবে মিথ্যাবাদীদের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হয়, যা ঘন ঘন পলক ফেলা, প্রসারিত তারারন্দ্র, উক্তির বিশৃঙ্খলা, এবং উচ্চ কম্পাঙ্কের কন্ঠস্বর দ্বারা প্রকাশিত হয়। যেসকল মিথ্যাবাদীরা দোষী অনুভব করে তারা নিজেদেরকে প্রতারণামূলক যোগাযোগ থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা করে, যা "কপটতার ইঙ্গিত" তৈরি করে। এগুলো মৌখিক কিংবা শারীরিক হতে পারে, যার মধ্যে অপ্রত্যক্ষ ভাবে কথা বলা এবং তাদের বর্তালাপের সঙ্গীর চোখে চোখ রাখার অক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত। প্রবঞ্চনা মূলক কথাবার্তার আরেকটি ইঙ্গিত হলো বাকভঙ্গী নিজেই।[৯] স্ট্রিটার,ক্রাউস,গেল্লার,অলসন এবং আ্যপেল(১৯৭৭) এটি মূল্যায়ন করেছেন যে, ভীতি এবং ক্রোধ, প্রবঞ্চনার সাথে ব্যাপকভাবে সম্পর্কিত দুটি অনুভূতি, হতাশা ও তুলনায় অনেক বেশি উত্তেজনার কারণ এবং এটি উল্লেখ্য যে একজনের অনুভূত মানসিক চাপের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত।[১০]
একটি ভৌত বস্তুর দর্শনের সীমানা ভঙ্গ করলে প্রায়শই প্রচ্ছনতা তৈরি হয়। এটি করতে সাধারণত যে পটভূমির সাথে বস্তুটি ছদ্মবেশে থাকবে, বস্তুটিকে সেই পটভূমির অনুরূপ রং করা হয়। প্রবঞ্চনামূলক অর্ধসত্যের ক্ষেত্রে, কিছু সত্যকে "লুকিয়ে" প্রচ্ছনতা তৈরি করা হয়।
সামরিক প্রচ্ছন্নতা এক প্রকার দর্শনের ছদ্মবেশ যা সামরিক প্রবঞ্চনার অন্তর্ভুক্ত।
ছদ্মবেশ হলো এমন এক প্রকার প্রাদুর্ভাব যা অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পরিচয়ের প্রভাব তৈরি করে; একটি সুপরিচিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি প্রচ্ছন্ত নামেও পরিচিত। পাসিং এর জন্য কেবলমাত্র পোশাক এবং প্রকৃত বাকভঙ্গী গোপন করার তুলনায় আরো বেশ কিছু অন্তর্ভুক্ত।
উদাহরণ:
আরো ভাববাচক দিক থেকে, 'ছদ্মবেশ'
উদাহরণ:
সরকার দ্বারা ব্যবহৃত "প্রবঞ্চনা" শব্দটিকে সামরিক কার্যকলাপ ব্যতীত অন্য কোনো প্রেক্ষাপটে অসমর্থন করা হয়। যে সকল অর্থে সরকার প্রবঞ্চনা শব্দটি ব্যবহার করে সেটি হলো:
সিমুলেশন ভ্রান্টিকর তথ্য প্রকাশ নিয়ে গঠিত। সিমুলেশন এর তিনটি উপায় আছে: অনুকরণ (অন্য প্রতিমান বা উদাহরণ নকল করা, যেমন, কিছু বিষহীন সাপের দেহে বিষাক্ত সাপের অনুরূপ রং ও চিহ্ন আছে), উদ্ভাবন(নতুন প্রতিমান তৈরি করা), এবং বিক্ষেপ (বিকল্প প্রতিমান অর্পণ করা)
জীবতত্তিক পৃথিবীতে, অনুকরণের মধ্যে অন্য জীব বা প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে সাদৃশ্যতার মাধ্যমে অজ্ঞাত প্রবঞ্চনা অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, প্রাণীরা চক্ষু, শ্রবণ এবং অন্যান্য মাধ্যমে শিকারী বা শিকারকে প্রতারণা করে।
এটি হলো এমন কিছু যা অন্য কিছুর মত মনে হলেও সেটা নয়। এটি সাধারণত একটি প্রতিদ্বন্দ্বীকে তার নিজস্ব সম্পদ প্রকাশন, বিপন্ন বা বিমুখ করতে উৎসাহ প্রদানের জন্য করা হয় (যেমন, একটি ফাঁদ)। উদাহরণস্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে , Allies সাধারণত কাঠের তৈরি ফাঁপা ট্যাংক ব্যবহার করে জার্মান পরিদর্শনকারী বিমানগুলোকে ভ্রান্তির ছলে মনে করতো যে বিশাল অস্ত্রের একক এক স্থানে যাচ্ছে যখন আসল ট্যাঙ্ক গুলো গুপ্তভাবে উদ্ভাবিত "কৃত্রিম" ট্যাঙ্ক গুলো থেকে দূরের কোনো স্থানে চলে যেত। নকল বিমান এবং বিমানাঙ্গও তৈরি করা হযেছিল।
প্রলোভন দেখিয়ে বা অন্য কোনো লোভনীয় কিছু প্রস্তাব করে সত্য থেকে কারো লক্ষ্য সরানো যাতে গোপনীয় বস্তু থেকে মনোযোগ সরানো যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি নিরাপত্তা কোম্পানি প্রকাশ্যে ঘোষণা করে যে এটি সোনার বিশাল সংগ্রহ একটি নির্দিষ্ট পথে নিয়ে যাবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অন্য পথে নিয়ে যাওয়া হলো। একটি সামরিক একক কোনো বিপদজনক অবস্থান থেকে বের হওয়ার প্রচেষ্টায় নকল হামলা বা প্রস্থানের ভান করতে পারে, যদিও প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে।
১৭ শতাব্দীর একটি গল্পের সংগ্রহ, "দ্য বুক অফ সুইন্ডলস" রচনাটি তে ঝ্যাং ইঙ্গু চীনের উদ্ভাবনকে নিয়ে বেশ কয়েক প্রকার প্রলোভন ও পরিবর্তন এবং প্রতারণার উপায় আছে।[১১]
রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতারণা খুবই সাধারণ এবং ৯০ শতাংশের বেশি মানুষই অন্তত একবার নিজের সঙ্গীর কাছে মিথ্যা কথা বলার বা সত্য লুকায়িত করার শিকার করেছে।[১২]
মূলত তিনটি প্রাথমিক কারণে সম্পর্কে প্রবঞ্চনা দেখা যায়:
সামাজিক বিজ্ঞানের কিছু পদ্ধতিতে, বিশেষ করে মনোবিজ্ঞানে, প্রবঞ্চনা রয়েছে। গবেষকরা ইচ্ছাকৃত ভাবে অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষণের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ত্রুটিপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। স্ট্যানলি মিলগ্রম ১৯৬৩ সালে পরিচালিত পরীক্ষায় গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদের বলেন যে তারা স্মৃতিশক্তি ও শিক্ষা সম্পর্কিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু আসলে গবেষণাটি অংশগ্রহণকারীদের আদেশ অনুসরণের আগ্রহ পর্যবেক্ষণ করছিল, এমনকি যখন অন্যকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষণের সমাপ্তি হলে অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষণের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত করা হয়, এবং এটি নিশ্চিত করা হয় যাতে অংশগ্রহণকারীরা ভালো অবস্থায় গমন করে।[১৬] প্রবঞ্চনার ব্যবহার গবেষণার নৈতিকতা সম্পর্কে বেশ কিছু সমস্যা উত্থাপন করে এবং এটি আমেরিকান মানবিক সংস্থার মতো পেশাগত সংস্থা দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মনোবিজ্ঞান গবেষণায় প্রায়শই প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের প্রতারণা করা হয়। এটি যৌক্তিক কেননা মানুষ নিজেস্ব উপস্থাপন নিয়ে অন্যদের কাছে (এবং নিজের কাছে) সংবেদনশীল এবং এই আত্মচেতনা কোনো গবেষণার বহির্গত পরিবেশে (যেখানে তাদেরকে যাচাই করার কোনো অনুভূতি থাকে না) তাদের প্রকৃত আচরণের প্রকৃতিকে হস্তক্ষেপ বা বিকৃতি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো মনোবিদ শিক্ষার্থীদের নকল করার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়, সরাসরি "কত ঘন ঘন তুমি নকল করো?" প্রশ্নটি করলে উচ্চ শতাংশই "সমাজের কাম্য" উত্তর দিবে এবং গবেষক কোনোভাবেই উত্তরগুলো সঠিকতা যাচাই করতে পারতো না। সাধারণত, তখন, মানুষকে শুধু প্রত্যক্ষভাবে জিজ্ঞেস করা তারা কি কাজ কত বেশি করে অপ্রযোজ্য এবং অতি সরল হয়ে উঠে। এজন্য গবেষকেরা প্রবঞ্চনা ব্যবহার করে আগ্রহের আসল ক্ষেত্র থেকে অংশগ্রহণকারীদের বিক্ষেপ করেন। এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীরা নিজের উত্তরপত্র জমা দেওয়ার পূর্বে অন্য অংশগ্রহণকারীর উত্তরপত্র (সম্ভবত সজ্ঞানমূলক ভাবে অতি সঠিক) দেখার (তাদের মতে গোপনীয়ভাবে) সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে। এই এবং অন্যান্য প্রবঞ্চনা নির্ভর গবেষণায় পরিশেষে অংশগ্রহণকারীদের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে এবং প্রবঞ্চনার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে।(এটি ডিব্রিফিং নামে পরিচিত) এছাড়াও গবেষণার শেষে অংশগ্রহণকারীদের উপসংহার এবং ফলাফল সম্পর্কে অবগত করা বাধ্যতামূলক ।
যদিও আমেরিকান মনোবিজ্ঞান সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত এবং সাধারণত ভাবে ব্যবহৃত, মনোবিজ্ঞান গবেষণার পরিক্ষণে প্রবঞ্চনার ব্যবহার হাওয়া উচিত নাকি না সেটি একটি বিতর্কের বিষয়। প্রবঞ্চনার বিপক্ষে এটি ব্যবহারের নৈতিকতা এবং পদ্ধতিগত সমস্যাকে যুক্তি হিসেবে প্রকাশ করা হয়। ড্রেসার (১৯৮১) উল্লেখ করেন যে, নৈতিকতার দিক থেকে, গবেষকরা পাত্রকে গবেষণায় ব্যবহার করতে পারবে যদি সে জ্ঞাত সম্মতি প্রদান করে। কিন্তু বৈশিষ্ট্যগত কারণে, একজন গবেষক প্রবঞ্চনা পরীক্ষণ করলে পরীক্ষণের প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে না পারায় অংশগ্রহণকারীর সম্মতি অজ্ঞাত রয়ে যায়। মিলগ্রম (১৯৬৩) আনুগত্যের পরিক্ষণে প্রবঞ্চনার ব্যবহারকে বাউমৃণ্ড (১৯৬৪) সমালোচনা করে বলেন যে, প্রবঞ্চনা অন্তর্গত বিশ্বাস এবং পাত্রের সেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আনুগত্যের যথাযথ সুবিধা গ্রহণ করা হয়।
ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে, প্রবঞ্চনার কিছু পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে। অর্টমান এবং হার্ত্বিগ (১৯৯৮) উল্লেখ করেন, " প্রবঞ্চনা সতন্ত্র ল্যাব এবং পেশার মর্যাদায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে, যা অংশগ্রহণকারীর সমারহকে কুলষিত করে দেয়। যদি পরিক্ষণে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা গবেষকের প্রতি সন্দেহভাজন হলে, তারা সাধারণ পরিস্থিতির তুলনায় ভিন্ন আচরণ করবে, যা পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণকে কুলষিত করে। যারা প্রবঞ্চনা সমর্থন করে তারা উল্লেখ করেন যে, " সামাজিক সমস্যা সমাধানে পরীক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং পরীক্ষণের অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তা"- এর মধ্যে প্রতিনিয়ত বিবাদ চলছে। তারা এটাও উল্লেখ করেন যে, কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রবঞ্চনা একমাত্র উপায় এবং পরীক্ষণে প্রবঞ্চনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলে এটি "গবেষকদের গুরুতর গবেষণার বিস্তারিত ক্ষেত্র পরিচালনা থেকে বিরত রেখে মর্মান্তিক পরিণাম তৈরি করবে"।
এছাড়াও, এটি পাওয়া গেছে যে, প্রবঞ্চনা পাত্রদের জন্য ক্ষতিকর নয়। ক্রিস্টেনসেনের (১৯৮৮) সাহিত্যের সমালোচনায় পাওয়া গেছে যে, " পরীক্ষণের অংশগ্রহণকারীরা এটিকে তাদের ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করে না এবং ভ্রান্টিকর পরিচালনায় কিছু মনে করে না।" এমনকি, যারা প্রবঞ্চনা নির্ভর পরিক্ষণে অংশগ্রহণ করে তারা প্রবঞ্চনা বিহীন পরীক্ষায় অংশ্রহণকারী দের তুলনায় "অভিজ্ঞতাটি উপভোগ করেছে বলে দাবি করেছে এবং শিক্ষামূলক উন্নতি মনে করে।" পরিশেষে, এটাও প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রবঞ্চনার প্রকৃতির তুলনায় প্রবঞ্চনা কে অনৈতিক মনে করার মূল কারণ হিসেবে প্রবঞ্চনা নির্ভর পরীক্ষায় অপ্রীতিকর আচরণ বা প্রবঞ্চনা নির্ভর পরীক্ষার অপ্রীতিকর ফলাফলকে ধরা হয়।
আধুনিক দর্শনে প্রবঞ্চনা একটি আবৃত বিষয়। ১৬৪১ সালে দেকার্তেসের রচিত মেডিটেশন স প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি ডিউস ডিসপ্তর ধারণার পরিচিতি দেন, এমন এক সত্ত্বা যে চিন্তাশক্তি সম্পন্নদের সত্যতা সম্পর্কে প্রতারিত করার ক্ষমতা ধারণ করে। এই ধারণাটি তার অতিশয়োক্ত সন্দেহের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে একজন সন্দেহের সম্ভাব্য সকল কিছুকেই সন্দেহ করার সিদ্ধান্ত নেয়।ডিউস ডিসপ্তর হলো তথাকথিত সন্দেহপ্রবণ যুক্তির একটি প্রধান অবলম্বন, যার তাৎপর্য হলো আমাদের বাস্তবতার জ্ঞানকে প্রশ্ন করা। এই যুক্তির মুলবিন্দু হলো, আমাদেরকে প্রতারণা করা সম্ভব বিধায় আমাদের জানা সকল কিছুই ভুল হতে পারে। স্ট্যানলি ক্যাভেল যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, সকল সন্দেহের মূল এই প্রতারণার ভয়ের মধ্যে রয়েছে।
ধার্মিক আলোচনায় প্রবঞ্চনা একটি সাধারণ বিষয়। কিছু উৎস প্রবঞ্চনার সাথে ধার্মিক লেখনীর আচরণের উপর মনোযোগী। কিন্তু, অন্য উৎসগুলো ধর্ম দ্বারা তৈরি প্রবঞ্চনার উপর মনোযোগী। উদাহরণস্বরূপ, রায়ান মাকনাইট হলো ফাইথলিকস নামক একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেছেন যে এই সংস্থার "উদ্দেশ্য হলো ধর্মের কিছু ক্ষেত্রে উপস্থিত প্রবঞ্চনা ও মিথ্যা এবং অনৈতিক আচরণের পরিমাণ হ্রাস করা।"
পুরো বিশুদ্ধ দিক থেকে, খ্রিস্ট ধর্ম সত্যের সন্ধানে উৎসাহিত করে। কিন্তু, বাস্তবিকভাবে, অধিকাংশ খ্রিস্টানই হয়ত প্রবঞ্চনামূলক নয়ত সমস্যাযুক্ত হিসেবে পরিচিত। একজন সুপরিচিত রাজনৈতিক বক্তৃতা লেখক মাইকেল গ্রেসন বলেছিলেন যে ধর্মপ্রচারকরা "ধর্ম প্রচারণাকে ধর্মান্ধতা, স্বার্থপরতা ও প্রবঞ্চনার সাথে সম্পর্ক যুক্ত মনে করেন।" তার উক্তিগুলো এমন ধর্ম প্রচারকদের উদ্দেশ্য করা বলা হয়েছিল যারা ট্রাম্পকে সমর্থন করে।
ইসলাম ধর্মে স্রষ্টাভীতি ধারণাকে প্রায়শই অনুমোদিত প্রবঞ্চনা হিসেবে অনুধাবন করা হয়।[১৭] নিউ জার্সিতে বাস্কিং ব্রিজ নামক একটি শহরে তাইয়্যার ধারণা ব্যবহার করে একটি মসজিদ তৈরি হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।[১৮] এই কলহ বছরের পর বছর ধরে দীর্ঘস্থায়ী থাকে। আরেকটি সংশ্লিষ্ট গল্পে, নিউজউইক-এর একজন সাংবাদিক ইয়ান উইলকি ব্যাক্ত করেছেন যে তাকিভ্যা একটি প্রমাণ যে আসাদ সিরিয়ার মানুষদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।
আইনগত কারণে, প্রবঞ্চনা এক প্রকার অন্যায় যেটি তথ্যের ভ্রান্টিকর বর্ণনা করা, এমনকি তথ্য টি ভুল হিসেবে জানা সত্ত্বেও(বা সত্যে বিশ্বাস না করা এবং বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে উদাসীন থাকা) এবং প্রাপককে এটির উপর নির্ভরশীলতা তৈরি করা এবং এটির উপর নির্ভর করে ক্ষতির প্রতিক্রিয়া তৈরি করা। চুক্তির আইনের ক্ষেত্রে(ভ্রান্তিকর বর্ণনা হিসেবে পরিচিত, বা সতর্কভাবে, প্রতারণামূলক ভ্রান্তিকর বর্ণনা), বা প্রতারণার উপর ভিত্তি করে অপরাধীর শাস্তির ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থায় প্রবঞ্চনার স্থান রয়েছে।