প্রবাসী ভারতীয়, যা সরকারিভাবে অনাবাসী ভারতীয় (এনআরআই) ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি (পিআইও) নামে পরিচিত, বলতে ভারতের বাইরে বসবাস বসবাসকারী বা ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণকারী ভারতীয়দের বোঝায়।[৩০][৩১]ভারত সরকারের সংজ্ঞা অনুযায়ী, "অনাবাসী ভারতীয়" বলতে ভারতে বসবাস করছেন না এমন ভারতীয় নাগরিকদের বোঝায় এবং "ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি" বলতে ভারতে জন্ম বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের বোঝায় যাঁরা কিছু ব্যতিক্রম সাপেক্ষে ভারত ব্যতীত অন্যান্য দেশের নাগরিক। ভারতীয় বংশোদ্ভুত এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত না হলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিকে বিবাহ করেছেন এমন ব্যক্তিদের প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকত্ব (ওসিআই) দেওয়া হয়। এমন ব্যক্তিদের প্রবাসী ভারতীয় নাগরিক (ওসিআই) বলা হয়।[৩২] ওসিআই হচ্ছে কোনো বিদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে প্রবেশ করার একধরনের স্থায়ী ভিসা।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের বাইরে ২ কোটি ৯ লাখ এনআরআই ও পিআইও (ওসিআই সহ) রয়েছে, এবং প্রবাসী ভারতীয় হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাসী জনগোষ্ঠী।[১] প্রতি বছর ২৫ লাখ ভারতীয় দেশান্তরে গমন করেন, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।[৩৩]
অনাবাসী ভারতীয় (এনআরআই) বলতে কেবল কোনো ভারতীয় নাগরিকদের কর অবস্থাকে বোঝায় যিনি আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ভাগ ৬ অনুযায়ী কোনো নির্দিষ্ট সময় ধরে ভারতে বসবাস করছেন না।[৩৪] নিবাসী ও অনাবাসী ভারতীয়দের মধ্যে আয়করের হার বিভিন্ন।
যাঁদের পিতা বা মাতা অথবা পিতামহ বা পিতামহী অথবা মাতামহ বা মাতামহী ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫ (মূলত যেরূপ বিধিবদ্ধ)-তে ভারতের যে সংজ্ঞার্থ দেওয়া হয়েছে সেই সংজ্ঞার্থ-নির্দিষ্ট ভারতে জন্মগ্রহণকারী ও স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা পরবর্তীকালে যেসব অঞ্চল ভারতের অংশ হয়েছিল তাদের জন্মগ্রহণকারী ও স্থায়ী বাসিন্দা, এবং যেকোনো সময়ে উপরে উল্লেখিত কোনো দেশের নাগরিক নন, কিংবা
ভারতের রাজনৈতিক মহলের নেতাদের একাধিক প্রচেষ্টার ফলে এক দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রকল্প চালু করা হয়েছিল, যা "প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকত্ব" (ওসিআই) বা "ওসিআই কার্ড" নামে পরিচিত। এই নামটি বিভ্রান্তিকর, কারণ এটি ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয় না। ভারতের সংবিধান সম্পূর্ণ দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান করে না। এই ওসিআই কার্ড কার্যত এক দীর্ঘমেয়াদি ভিসা, এবং এর মাধ্যমে বাসস্থান ও অন্যান্য অধিকার প্রদান করা হলেও ভোটাধিকার ও সরকারি চাকরির অধিকারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।[৩৬]
২৮ সেপটিক ২০১৪-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে পিআইও ও ওসিআই কার্ড একত্রিত করা হবে।[৩৭] ৯ জানুয়ারি ২০১৫-এ ভারত সরকার পিআইও কার্ড বাতিল করে ওসিআই কার্ড প্রকল্পের সাথে একত্রিত করেছিল। পিআইও কার্ড ব্যবহারকারীদের তাঁদের কার্ডকে ওসিআই কার্ডে রূপান্তর করতে হবে। অভিবাসন ব্যুরো বলেছিলেন যে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ অবধি বৈধ ভ্রমণ নথি হিসাবে পুরনো পিআইও কার্ড গৃহীত হবে।[৩৮]
২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর ৯ জানুয়ারি ভারতের উন্নয়নে প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের ভূমিকার কথা স্মরণে রেখে প্রবাসী ভারতীয় মন্ত্রক "প্রবাসী ভারতীয় দিবস" আয়োজন করে। এই দিন মহাত্মা গান্ধীদক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে এসেছিলেন। এই সময়ে প্রবাসী ভারতীয় সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে এক আলোচনাসভা শুরু হয় এবং "প্রবাসী ভারতীয় সম্মান" পুরস্কার প্রদান করা হয়।[৪০]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় মার্কিনী হচ্ছে চীনা মার্কিনী ও ফিলিপিনো মার্কিনীর পর তৃতীয় সবচেয়ে বড় এশীয় মার্কিনী নৃগোষ্ঠী।[৪১][৪২][৪৩] যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় ভারতীয় মার্কিনীরা ধনীতম ও সবচেয়ে শিক্ষিত। ২০১৫ সালে ভারতীয় মার্কিনীদের প্রতি বছর গড় আয় $১০১,৫৯১, যেখানে অন্যান্য অভিবাসী ও স্থানীয় পরিবারের গড় আয় যথাক্রমে $৫১,০০০ ও $৫৬,০০০।[৪৪] এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় ও বিদেশি নৃগোষ্ঠীর মধ্যে ভারতীয় মার্কিনীদের মধ্যে দারিদ্র্যতা সর্বনিম্ন।[৪৫] সামগ্রিকভাবে দেশের অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় ভারতীয়রা আরও বেশি শিক্ষিত এবং ভারতীয় মার্কিনীদের মধ্যে ৩২% ও ৪০% যথাক্রমে ব্যাচেলার ডিগ্রি ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন, যেখানে সমগ্র এশীয় মার্কিনীদের মধ্যে যথাক্রমে ৩০% ও ২১% এবং সমগ্র মার্কিনীদের মধ্যে যথাক্রমে ১৯% ও ১১%।[৪৬] ২০০৬ সালে সিলিকন ভ্যালিরস্টার্টআপ কোম্পানির (সম্ভাবনাময় নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) ১৫.৫ শতাংশের প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় অভিবাসী,[৪৭][৪৮] এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০৫-এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ, চীনা, তাইওয়ানি ও জাপানি মিলিত অভিবাসীদের তুলনায় ভারতীয় অভিবাসীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি কোম্পানির সংখ্যা বেশি।[৪৯]
যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ ভারতীয় দেশের সবচেয়ে বড় জাতিগত সংখ্যালঘু জনসংখ্যা।[৫০] যুক্তরাজ্যের অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় ব্রিটিশ ভারতীয়দের ঘণ্টায় গড় বেতন হার সর্বোচ্চ, দারিদ্র্যতা সর্বনিম্ন[৫১][৫২][৫৩] এবং পেশাদারি ও পরিচালনা সংক্রান্ত চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।[৫৪][৫৫] অক্টোবর ২০২২ থেকে ঋষি সুনক সর্বপ্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
নভেম্বর ২০১৪-এ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরঅস্ট্রেলিয়া সফরের সময় অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় সম্প্রদায় অনলাইনে এক প্রচার চালিয়েছিল, যা প্রবাসী ভারতীয়দের দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন করেছিল। এই আবেদনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের ভারতীয় পাসপোর্ট সহ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং সেই অনুযায়ী দ্বৈত পাসপোর্ট গ্রহণকারী প্রবাসী ভারতীয় ও ভারতীয় পাসপোর্ট গ্রহণকারী প্রবাসী ভারতীয়দের (এনআরআই) উপযুক্ত ভোটাধিকার প্রদান করার দাবি করেছিল।[৫৬][৫৭]
↑"Population by States and Ethnic Group"। penerangan.gov.my। Department of Information, Ministry of Communications and Multimedia, Malaysia। ২০১৫। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৩।
↑"POPULATION AND HOUSING CENSUS DEMOGRAPHIC REPORT"(পিডিএফ)। cso.gov.tt। Central Statistics Office, Trinidad & Tobago। ২০১২। পৃষ্ঠা 94। ২ মে ২০১৩ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৩। NON-INSTITUTIONAL POPULATION BY SEX, AGE GROUP, ETHNIC GROUP AND MUNICIPALITY
↑"Bevolking; geslacht, lft, generatie en migr.achtergrond, 1 jan; 1996-2022" [জনসংখ্যা; লিঙ্গ, বয়স, প্রজন্ম ও অভিবাসনের ভূমিকা, ১ জানু; ১৯৯৬-২০২২]। cbs.nl (ওলন্দাজ ভাষায়)। Centraal Bureau voor de Statistiek (কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো)। মে ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৩। Migratieachtergrond [অভিবাসনের ভূমিকা] | India
↑Vapattanawong, Patama (২০১০)। "ชาวต่างชาติในเมืองไทยเป็นใครบ้าง?" [থাইল্যান্ডে কারা বিদেশি?] (পিডিএফ)। mahidol.ac.th (থাই ভাষায়)। পৃষ্ঠা 8। ১৮ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৩। ตาราง 2 จานวน ร้อยละ และร้อยละสะสม ของชาวต่างชาติ10 ลาดับแรก ที่อาศัยอยู่ในประเทศไทย ณ วันสามะโน [সারণী ২: জনগণনার তারিখের হিসাব অনুযায়ী থাইল্যান্ডে বসবাসকারী প্রধান ১০টি বিদেশি গোষ্ঠীর সংখ্যা, শতাংশ ও মোট শতাংশ] | อินเดีย [ভারত]
↑"Indian Diaspora Abroad"। Press Information Bureau, Government of India, Ministry of Overseas Indian Affairs। ৯ জুলাই ২০১৪। ২০২৩-০৩-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০২৩।
↑"Population of Overseas Indians"(পিডিএফ)। Minister of External Affairs India। ২০২০-০৭-২০ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০২৩।
↑Income Tax Act, ১৮ ডিসেম্বর ২০১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Indians in the U.S. Fact Sheet"। POewsocialtrends.org। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭। ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৮।
↑Saxenian, AnnaLee (১৯৯৯)। "Silicon Valley's New Immigrant Entrepreneurs"(পিডিএফ)। Public Policy Institute of California। ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৯।
↑Platt, Lucinda (মে ২০১১)। "Inequality within ethnic groups"(পিডিএফ)। JRF programme paper: Poverty and ethnicity। Joseph Rowntree Foundation। ২১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১২।