প্রাচীন গ্রিসে কৃষিকাজ

জলপাই সংগ্রহ। ব্রিটিশ মিউজিয়াম

কৃষি ছিল প্রাচীন গ্রিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি। জনসংখ্যার প্রায় ৮০% মানুষ এই কাজে নিযুক্ত ছিল।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

অধিকাংশ গ্রিক ভাষার কৃষি সংক্রান্ত পাঠ্য নিখোঁজ হয়ে গেছে, তবে থিওফ্রাস্টাস-এর দুটি উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ এবং হেসিওড-এর একটি কবিতা সংরক্ষিত রয়েছে। মূল পাঠ্যগুলোর অধিকাংশই রোমান কৃষি বিশেষজ্ঞদের রচনাগ্রন্থ, যেমন: কাটো দ্য এল্ডার-এর De agri cultura, কলুমেলা-এর De re rustica, মার্কাস টেরেনশিয়াস ভ্যারো এবং রুটিলিয়াস টরাস এমিলিয়ানাস পাল্লাদিয়াস-এর লেখা। ভ্যারো অন্তত পঞ্চাশজন গ্রিক লেখকের নাম উল্লেখ করেছেন, যাদের রচনাগুলো এখন বিলুপ্ত। কার্থেজীয় মাগো-এর রুস্টিকাশিও (Rusticatio) নামে একটি কৃষি সংক্রান্ত গ্রন্থ ছিল, যা মূলত পুনিকে লেখা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়, তবে সেটিও হারিয়ে গেছে।

প্রাচীন গ্রিক কৃষিবিদ্যায় মেসোপটেমিয়ার কৃষিরও প্রভাব ছিল। বিশেষত ৪র্থ শতকের লেখক ভিনডোনিয়াস আনাতোলিয়াস এবং ৭ম শতকের লেখক ক্যাসিয়ানাস বাসস এই প্রভাব ছড়িয়ে দেন। বাসসের Eclogae de re rustica গ্রন্থটি কনস্টান্টিন সপ্তমের শাসনামলে সংকলিত জিওপোনিকা (Geoponika) গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়, যা পরবর্তীতে আরবি, সিরিয়াক এবং আর্মেনীয় ভাষায় অনূদিত হয়।

কৃষিজাত পণ্য

[সম্পাদনা]

খামার

[সম্পাদনা]
যবের শীষ, যা ম্যাগনা গ্রিসিয়ার মেতাপোন্টাম শহরে সম্পদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি একটি স্টাটার মুদ্রায় খোদাই করা হয়েছে, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৩০৫১০ সালের মধ্যে।

প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসের প্রাথমিক সময়ে, যেমনটি ওডিসি-তে দেখা যায়, গ্রিক কৃষি এবং খাদ্যাভ্যাস মূলত শস্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। সিটোস (σῖτος), যা সাধারণত গম হিসেবে অনূদিত হয়, প্রকৃতপক্ষে যেকোনো ধরনের শস্য বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। যদিও গ্রিকরা গমের উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানত, তবে যব চাষ করা তুলনামূলক সহজ এবং বেশি ফলনশীল ছিল।

শীঘ্রই শস্যের চাহিদা স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়, কারণ আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ সীমিত ছিল। জমির এই সংকীর্ণতা (στενοχωρία / stenokhôría) গ্রিক উপনিবেশ স্থাপনের একটি প্রধান কারণ ছিল এবং এথেন্সীয় সাম্রাজ্যের জন্য আনাতোলিয়ার ক্লেরুচিগুলো শস্য সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে, গ্রিসের ভূমি জলপাই গাছের জন্য বেশ উপযুক্ত ছিল, যা থেকে জলপাই তেল উৎপাদন করা হতো। জলপাই চাষের প্রচলন গ্রিসের আদিম ইতিহাস থেকেই বিদ্যমান। জলপাই বাগান একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ ছিল, কারণ একে ফল দিতে কমপক্ষে বিশ বছর সময় লাগত এবং এটি প্রতি বছর ফল দিত না, বরং এক বছর অন্তর ফলন হতো। আঙ্গুরও পাথুরে মাটিতে ভালো জন্মাত, তবে এর জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন ছিল। ব্রোঞ্জ যুগ থেকে গ্রিসে আঙ্গুর চাষ চলে আসছে।

শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি ও মসলার চাষ করা হতো, যেমন: বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শিম, অভিষেক লতা, পুদিনা, থাইম, ওরেগানো। এছাড়া, ডুমুর, বাদাম, আপেলনাশপাতির বাগান ছিল। তেলবীজ জাতীয় গাছ, যেমন লিনসিড, তিল, খেসারিও চাষ করা হতো।

পশুপালন

[সম্পাদনা]
কেফিসিয়া থেকে পাওয়া ব্রোঞ্জের ছাগল, ৫ম শতক খ্রিস্টপূর্ব, লুভর

পশুপালন, যা হোমার-এর রচনায় ক্ষমতা ও সম্পদের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, তা প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন গ্রিসে খুব উন্নত ছিল না। মাইসিনীয় যুগে গবাদি পশু পালন প্রচলিত ছিল, তবে পরবর্তী সময়ে পার্বত্য অঞ্চলে সম্প্রসারণের ফলে এটি সীমিত হয়ে পড়ে। ছাগলভেড়া দ্রুত সর্বাধিক প্রচলিত গৃহপালিত প্রাণী হয়ে ওঠে, কারণ এগুলো পালন করা সহজ ছিল এবং এগুলো থেকে মাংস, উল এবং দুধ (মূলত ছাগলের পনির) পাওয়া যেত।

অন্যান্য পণ্য

[সম্পাদনা]

কাঠ প্রাথমিকভাবে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত হতো, যেমন ঘরবাড়ি, গাড়ি এবং লাঙ্গল তৈরি করা। গ্রিসের পাহাড়ি বনভূমি ছাগলকাঠকয়লা উৎপাদনের জন্য ব্যাপকভাবে নিঃশেষিত হয়ে পড়ে।

মৌমাছি পালন থেকে মধু পাওয়া যেত, যা গ্রিকদের কাছে একমাত্র চিনির উৎস ছিল। এটি ঔষধ এবং মধুর মদ তৈরিতেও ব্যবহৃত হতো।

স্যাটায়াররা ওয়াইন তৈরি করছে, ডায়োনিসিয়ান বাস-রিলিফ, জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর, এথেন্স

কৃষি শ্রম

[সম্পাদনা]

ওইকোনোমিকাস-এ জেনোফনওয়ার্কস অ্যান্ড ডেজ-এ হেসিওড প্রাচীন গ্রিসের কৃষিশ্রম সম্পর্কে বিশদ তথ্য প্রদান করেছেন।

কৃষি জমির মালিকানা

[সম্পাদনা]

৫ম শতকের পূর্বে, অধিকাংশ জমি এথেন্সের ইউপাত্রিদেস নামক বড় ভূমিমালিকদের হাতে ছিল। তবে, জমির মালিকানা অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হতো। ৪র্থ শতকের পর থেকে ভূমি অল্প কিছু বিত্তশালী ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। অ্যারিস্টটল লিখেছেন, "ভূমি কয়েকজনের হাতে চলে গেছে" (পলিটিক্স, II, 1270a)।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]