প্রাচীন যুগে হেরোডোটাস,[১] প্লেটো,[২] জেনোফোন,[৩] অ্যাথেনেউস,[৪] ও অন্যান্য লেখকদের রচনা থেকে প্রাচীন গ্রিসে সমকামিতা প্রসঙ্গে নানা তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিসে বহুল প্রচলিত ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সমকামী যৌনসম্পর্কটি ছিল পেডেরাস্টি বা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও সদ্যকিশোর বা পূর্ণকিশোর বালকদের মধ্যেকার যৌনসম্পর্ক (প্রাচীন গ্রিসের বিবাহপ্রথাও ছিল বয়সভিত্তিক; তিরিশ বছর পার করা পুরুষেরা সদ্যকিশোরীদের বিয়ে করত।)। পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের মধ্যেও যৌনসম্পর্ক স্থাপিত হত। অনন্তপক্ষে এই জাতীয় সম্পর্কের একজনকে সামাজিক অনুষ্ঠানে যৌনসম্পর্কে গ্রহীতার ভূমিকা নেওয়ার জন্য উপহাস করা হত। নারী-সমকামিতার বিষয়টি প্রাচীন গ্রিসে ঠিক কী চোখে দেখা হত, তা স্পষ্ট নয়। তবে নারী-সমকামিতাও যে স্যাফোর যুগ থেকে গ্রিসে প্রচলিত ছিল, তা জানা যায়।[৫]
বিগত শতাব্দীতে পাশ্চাত্য সমাজে যৌনপ্রবৃত্তিকে যেমন সামাজিক পরিচিতির মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়েছে, প্রাচীন গ্রিসে তা হত না। গ্রিক সমাজে যৌন কামনা বা আচরণকে সংগমকারীদের লিঙ্গ অনুযায়ী ভাগ করে দেখা হত না; দেখা হত যৌনক্রিয়ার সময় সংগমকারীরা কে নিজের পুরুষাঙ্গ সঙ্গীর দেহে প্রবেশ করাচ্ছে, বা সঙ্গীর পুরুষাঙ্গ নিজের শরীরে গ্রহণ করছে, তার ভিত্তিতে।[৫] এই দাতা/গ্রহীতা বিভেদটি সামাজিক ক্ষেত্রে কর্তৃত্বকারী ও শাসিতের ভূমিকা নিত: অপরের শরীরে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করানো পৌরুষ, উচ্চ সামাজিক মর্যাদা ও প্রাপ্তবয়স্কতার প্রতীক ছিল। অন্যদিকে অপরের পুরুষাঙ্গ নিজের শরীরে গ্রহণ করা ছিল নারীত্ব, নিম্ন সামাজিক মর্যাদা ও অপ্রাপ্তবয়স্কতার প্রতীক।[৫]
গ্রিসে সর্বাধিক প্রচলিত পুরুষ-সমকামী সম্পর্কটি ছিল "পেইডেরাস্টিয়া" বা "বালক-প্রীতি"। এটি হল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও কিশোরের মধ্যেকার সম্পর্ক। যতক্ষণ না একজন পুরুষের পুরোপুরি দাড়ি গজায়, ততক্ষণ তাকে "বালক" মনে করার রীতি ছিল। এথেন্সে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের বলা হত "এরাস্টেস"। তাঁকে তার "এরোমেনোস"-কে শিক্ষা দিতে, রক্ষা করতে, ভালবাসতে এবং তার সামনে রোল মডেলের কাজ করতে হত। এই এরোমেনোস তার সৌন্দর্য, তারুণ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতার মাধ্যমে নিজের এরাস্টেসকে ধন্যবাদ জানাতো।
গ্রিক পেডেরাস্টির মূল নিহিত আছে গ্রিসের প্রাচীন আদিবাসী ইতিহাসে। রাজনৈতিক সংগঠন রূপে নগররাষ্ট্রগুলির উদ্ভবের আগে ওই সব আদিবাসী গোষ্ঠীগুলিকে বয়সের ভিত্তিতে সংগঠিত করা হত। একজন বালকের যখন প্রাপ্তবয়স্কদের বয়সগোষ্ঠীতে প্রবেশের এবং "পুরুষ হওয়ার" সময় আসত, সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাহচর্যে এই গোষ্ঠী-পরিবর্তন সংক্রান্ত অনুষ্ঠান পালনের জন্য পুরনো গোষ্ঠী ত্যাগ করত। এই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষটি তাকে গ্রিকদের জীবন ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দায়দায়িত্ব শিক্ষা দিতেন।
গ্রিসের প্রাগৈতিহাসিক আদিবাসী সমাজে বালকদের যে গোষ্ঠী-পরিবর্তনের অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে যেতে হত, সেটিই নগররাষ্ট্র বা "পোলিস"-এর উদ্ভবের পর পেডেরাস্টির আকারে প্রচলিত রইল। বালকেরা আর গোষ্ঠীর সীমানায় আবদ্ধ থাকত না; বরং একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের সাহচর্যে শহরের সীমানায় বদ্ধ থাকত। এই পুরুষেরা আগের মতোই তাদের বালকসঙ্গীর শিক্ষার দায়িত্ব নিত। এবং আগের মতোই বালকদের সঙ্গে তারা যৌন সম্পর্কও রাখত। গ্রহীতার ভূমিকাগ্রহণকারী সঙ্গীর পক্ষে সংগমকারী যৌনসম্পর্কে যাওয়া চরিত্রহীনতার লক্ষণ বলে ধরা হয়। কারণ, সেটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না।[৬]
গ্রিক পেডেরাস্টির পরিচালকের ভূমিকায় থাকত একটি বিস্তারিত সামাজিক বিধি। যে বালকটিকে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষটির পছন্দ হবে, তাকে সাহচর্য দেওয়া পুরুষটির কর্তব্য ছিল। প্রাপ্তবয়স্ক সঙ্গীর কামনাবাসনার কাছে বালকের নতিস্বীকার করাটা সামাজিকভাবে নৈতিক মনে করা হত। এই পর্বে বালককে দেখতে হত তার সঙ্গী যেন তার প্রতি শুধু শারীরিক আকর্ষণই বোধ না করে সত্যিকারের স্নেহও অনুভব করেন এবং পেডেরাস্টিক পরিমণ্ডলের মধ্যেও যেন পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার কর্তব্য পালন করে যান।
প্রাচীন গ্রিসে পেডেরাস্টির বয়সসীমা সাধারণত সর্বনিম্ন ছিল বারো বছর। বারো বছরের নিচের কোনো বালকের সঙ্গে প্রেম সম্পর্ক স্থাপন করা ছিল অনৈতিক। তবে তা করলে যে শাস্তি পেতে হত, তারও কোনো প্রমাণ নেই। সাধারণত বালকটির শরীরে লোম গজানো পর্যন্ত এই সম্পর্ক চলত। তারপর তাকে পুরুষ বলে গণ্য করা হত। পেডেরাস্টিক সম্পর্কে বালকের বয়সসীমা সাধারণত হত বারো থেকে সতেরোর মধ্যে।
পেডেরাস্টিক নগররাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাচীন গ্রিকরাই প্রথম পেডেরাস্টিকে একটি সামাজিক ও শিক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করে। তা নিয়ে চর্চা করে তাকে সংগঠিত করে। এটি নগরজীবন, সামরিক বাহিনী ও শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।[৭] তবে পেডেরাস্টি সমাজের সকল স্তরে প্রচলিত ছিল, নাকি শুধুমাত্র বিত্তশালী অংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতান্তর আছে।
থিবসের পবিত্র ব্যান্ড নামে পুরুষ ও তাদের প্রিয় বালকদের একটি আলাদা সামরিক ইউনিট ছিল। এই ইউনিটের অস্তিত্বই প্রমাণ করে প্রাচীন গ্রিকরা সৈনিকদের মধ্যেকার প্রেমকে কীভাবে তাদের যোদ্ধাসত্ত্বার প্রস্ফুরণ ঘটানোর জন্য ব্যবহার করত। থিবিয়ানদের এই বিষয়টি তাদের পতনের আগে পর্যন্ত বহু প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। ম্যাসিডোনিয়ার দ্বিতীয় ফিলিপ যুদ্ধক্ষেত্রে এদের বীরত্বে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি তাদের সমাধিস্থানের পাশে একটি স্মারক তৈরি করিয়েছিলেন। এই স্মারকটি এখনও আছে।[৮]
প্লুটার্কের মতে পামেনেসে বলেছিলেন: "হোমারের নেস্টর গ্রিকদের উপজাতিগুলির স্থান ঠিক করতে বলার সময় সেনাবাহিনীকে দক্ষভাবে পরিচালনা করতে পারেননি... প্রেমিকদের সঙ্গে তার যোগ দেওয়া উচিত ছিল। একই উপজাতির পুরুষেরা বিপদের সময় অন্যদের গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু ভালবাসার ভিত্তির উপর যে বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়, তা কখনও ভাঙে না।"
এই ব্যান্ডগুলির নিদর্শন আছে গ্রিক পুরাণের নানা অধ্যায়ে। ইলিয়াড মহাকাব্যে অ্যাকিলিস ও প্যট্রোক্ল্যাসের সম্পর্ক এর একটি উদাহরণ। যুদ্ধের সময় প্রেমিককে রক্ষা করতে তারা যে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন, তা এই নীতিকেই অনুপ্রাণিত করেছে। এগুলি একটু ইগালেটারিয়ান ধাঁচের পেডেরাস্টির নিদর্শন। একাধিক গ্রিক ঐতিহাসিক এই জাতীয় সম্পর্কের উল্লেখ করেছেন। এগুলির উল্লেখ আছে দার্শনিক আলাপচারিতাগুলির মধ্যেও। প্লুটার্ক ম্যাসিডোনিয়ার দ্বিতীয় ফিলিপের যে বক্তব্য নথিবদ্ধ করেছেন, তাতে আছে: "শুধুমাত্র বোয়েটিয়ান, স্পার্টান ও ক্রিটিয়ানদেরই এই জাতীয় বলে সন্দেহ করা হয় না; মেলেয়েগার, অ্যাকিলিস, অ্যারিসয়োমেনেস, সিমোন ও এপামিনোনডাসের মতো মহাবীরও এই রকমই ছিলেন।"
এরেট্রিয়ান ও ক্যালকিডিয়ানদের মধ্যে লেলানটাইন যুদ্ধের সময়, ক্যালকিডিয়ানরা ক্লেওম্যাচাস নামে এক যোদ্ধার সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি নিজের প্রেমিককে এনে সেই অনুরোধের উত্তর দিয়েছিলেন। এরেট্রিয়ানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে তিনি ক্যালকিডিয়ানদের জিতিয়ে দেন। কিন্তু নিজে নিহত হন। ক্যালকিডিয়ানরা কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বাজারে তার সমাধিমন্দির নির্মাণ করেন। বলা হয়, প্রেমিকের জীবন রক্ষা করতে গিয়েই মানুষ মহান কীর্তি স্থাপন করে। তবে লেলানটাইন যুদ্ধের সময় তা ঘটেনি। তবে এই যুদ্ধে নিজের প্রেমিকের কাছে নিজের স্বার্থশূন্য চরিত্রটি তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন ক্লেওম্যাচাস।
প্রাচীন গ্রিসের সমাজে পৌরুষ চর্চার প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ এবং যৌনসম্পর্কে গ্রহীতার স্থান গ্রহণকারীর প্রতি নারীত্ব আরোপের ফলে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারটি সমস্যাবহুল ছিল। সামাজিকভাবেও তা গ্রহণীয় ছিল না। তবে এই সামাজিক বিরূপতাও গ্রহীতার স্থান গ্রহণকারীর প্রতিই ছিল। সমসাময়িকদের মতে, যেসব গ্রিকরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য দাতার স্থান না নিয়ে এই গ্রহীতার স্থান নিত, তাদের নারী হিসেবে উপহাস করা হত। অ্যারিস্টোফেনিসের নাটকে অনেক জায়গায় এই গ্রহীতাদের উপহাস করা হয়েছে এবং তাদের সমাজ কীভাবে লজ্জা দিত তার উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাচীন গ্রিসের সংস্কৃতিতে প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে গভীর প্রণয় সম্পর্কের উল্লেখ পাওয়া যায় ইলিয়াড (খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দ) মহাকাব্যে। হোমার অ্যাকিলিস ও প্যাট্রোক্ল্যাসের সম্পর্কটিকে যৌনসম্পর্ক বলেননি। প্রাচীন গ্রিকরা দুই জনের উপর এক ধরনের বয়সের পার্থক্য আরোপ করত। চিত্রকলা ও পাত্রচিত্রে প্যাট্রোক্লাসের দাড়ি আঁকা হত। অন্যদিকে গ্রিক সমাজে অ্যাকিলিসের স্থান দেবতুল্য হলেও তাঁকে উলঙ্গ অবস্থায় আঁকা হত। এর ফলে কে "এরাস্টেস" ও কে "এরোমেনোস" ছিলেন, তাই নিয়ে মতানৈক্য দেখা যায়। হোমারীয় ঐতিহ্যে প্যাট্রোক্ল্যাস ছিলেন বয়সে বড়ো; কিন্তু অ্যাকিলিস ছিলেন বেশি শক্তিশালী। অন্যান্য প্রাচীন গল্পের মতে, অ্যাকিলিস ও প্যাট্রোক্ল্যাস ছিলেন নিছক বন্ধু।
মিরমিডনস ট্র্যাজেডিতে অ্যাকিলিসকে রক্ষাকারীর ভূমিকায় দেখানো হয়েছে। দেবতাদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে তিনি তার প্রেমিকের মৃত্যুর প্রতিশোধ তুলেছিলেন। যদিও প্লেটোর সিমপোসিয়ামে ফেদ্রুস চরিত্রটি দেখে মনে হয়, অ্যাকিলিসের সৌন্দর্যের জন্য তিনিই "এরোমেনোস"-এর স্থান নিয়েছিলেন।[৯]
ঐতিহাসিক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ প্রণয়ীযুগলের মধ্যে এথেন্সের পাউসানিয়াস ও ট্র্যাজিক কবি আগাথন বিখ্যাত। আগাথনের বয়স ছিল ত্রিশের বেশি। মহামতি আলেকজান্ডার ও তার বাল্যবন্ধু হেফাস্টনের সম্পর্কও একই ধরনের ছিল বলে মনে করা হয়।
লেসবোস দ্বীপের স্যাফো নারী ও বালিকাদের উদ্দেশ্য করে অনেকগুলি কবিতা লিখেছিলেন। কোনো কোনো কবিতার প্রত্যুত্তর দেখা যায় না, আবার কোনো কোনো কবিতার প্রত্যুত্তর দেখা যায় না। স্যাফো সম্ভবত ১২,০০০ লাইনের কবিতা লিখেছিলেন নারীজাতির উদ্দেশ্যে। তবে এর মধ্যে মাত্র ৬০০ লাইনই পাওয়া যায়। তাই তিনি প্রাচীন কালের নারী-সমকামী কবি হিসেবে পরিচিত।
স্যাফো গ্রিক সমাজে "থিয়াসোস" বা অল্পশিক্ষিতা নারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেযুগের সমাজে নারীজাতির মধ্যেও সমকামিতার প্রচলন ছিল। কোথাও কোথাও মালকিনের সঙ্গে (স্যাফো তার ছাত্রীদের উদ্দেশ্যেও কবিতা লিখেছিলেন), আবার কোথাও কোথাও সাধারণ নারীদের মধ্যে এই জাতীয় সম্পর্ক ছিল। নগররাষ্ট্রের উদ্ভবের পর বিবাহপ্রথা সমাজ ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে ওঠে। মেয়েরা গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। "থিয়াসোস"রা হারিয়ে যায়। ছোটোবেলা থেকেই মেয়েদের দায়িত্বজ্ঞান ও ভাবী স্বামীকে কীভাবে ভালবাসতে হবে তা শিক্ষা দেওয়া হত। সামাজিকভাবে নারী-সমকামিতার কোনো স্থান থাকেনি।
স্পার্টার ইতিহাসে শিক্ষিকা-ছাত্রীর মধ্যে যৌনসম্পর্কের তথ্য আছে। ক্রীড়াক্ষেত্রে মেয়েরা নগ্ন অবস্থায় অংশ নিত বলেও জানা যায়। প্লেটোর সিমপোসিয়াম-এ এমন মেয়েদের উল্লেখ আছে, যারা "পুরুষদের ধার ধরত না, কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত।"[১০] তবে সাধারণ ভাবে নারী-সমকামিতার ঐতিহাসিক প্রামাণ্য তথ্য বেশি নেই।[৫]
সমকামী বিষয়বস্তু সম্পর্কে দীর্ঘকাল নীরব থাকার পর[১১] ঐতিহাসিকরা এই নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এরিক বেথে ১৯০৭ সালে এই আলোচনা শুরু করেছিলেন। পরে কে. জি. ডোভার ও অন্যান্য গবেষণা চালিয়ে যান। এঁরা দেখিয়েছেন যে, প্রাচীন গ্রিসে সমকামিতার খোলামেলা প্রচলন ছিল। তাতে সরকারি অনুমোদনও ছিল। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী থেকে রোমান যুগ পর্যন্ত এই অবস্থা চলেছিল।
কোনো কোনো গবেষকদের মতে সমকামী সম্পর্ক, বিশেষত পেডেরাস্টির প্রচলন ছিল উচ্চবিত্ত সমাজে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন খুব একটা ছিল না। ব্রুস থর্নটনের মতে, অ্যারিস্টোফেনিসের কৌতুক নাটকগুলিতে গ্রহীতার স্থান গ্রহণকারী সমকামীদের প্রতি উপহাস করার প্রবণতা থেকে বোঝা যায়, পুরুষ সমকামিতাকে সাধারণ মানুষ ভাল চোখে দেখত না।[১২] ভিক্টোরিয়া ওল প্রমুখ অন্যান্য ঐতিহাসিকেরা বলেছেন, এথেন্সে সমকামী সম্পর্ক ছিল "গণতন্ত্রের যৌন আদর্শ"। এটি উচবিত্ত ও "ডেমো" (সাধারণ মানুষ) উভয় সমাজেই সমাজভাবে প্রলিত ছিল। হার্মোডিয়াস ও অ্যারিস্টোগেইটন নামে দুই চক্রান্তী-হত্যাকারীর ঘটনা থেকে তা প্রমাণিত হয়।[১৩] এমনকি যাঁরা বলেন যে, পেডেরাস্টি উচ্চবিত্ত সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল, তারাও মনে করেন যে এটি ছিল "নগররাষ্ট্রের সামাজিক কাঠামোর অঙ্গ"।[১২]
আধুনিক গ্রিসে এই বিষয়ে বিতর্ক হয়েছে। ২০০২ সালে মহামতি আলেকজান্ডার সম্পর্কিত এক সম্মেলনে তার সমকামিতা নিয়ে বিতর্ক হয়। ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলেকজান্ডার চলচ্চিত্রে আলেকজান্ডারকে উভকামী হিসেবে দেখানোর জন্য ২৫ জন গ্রিক আইনজীবী চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন।[১৪] তবে ছবির এক আগাম প্রদর্শনীর পর তারা আর মামলা করেননি।[১৫]