প্রাচীন সঙ্গীত

প্রাচীন সঙ্গীত বলতে মেসোপটেমিয়া, ভারত, ইরান, মিশর, চীন, গ্রিসরোমে প্রাচীনকালে উদ্ভূত সঙ্গীত পদ্ধতিকে বোঝানো হয়, যা প্রাগৈতিহাসিক সঙ্গীতকে প্রতিস্থাপন করেছে। এই প্রাচীন সঙ্গীত স্বরলিপিনির্দিষ্ট পরিমাপবদ্ধ বা সাঙ্গীতিক স্কেলবদ্ধ হওয়ায় মৌখিক ও লিখিত পদ্ধতিতে পরবর্তী প্রজন্মে প্রেরিত হত।

উৎপত্তি

[সম্পাদনা]

লিখিত স্বরলিপিই হচ্ছে সাক্ষর মানব সমাজের পরিচায়ক। প্রাগৈতিহাসিক সঙ্গীতের সময়ে, মানুষের প্রাথমিক প্রবণতাই ছিল মৌখিক উপায়ে তাদের সঙ্গীত ও ভাবনাকে জানানো। যাইহোক, সামাজিক শ্রেণী তৈরী হওয়ার পরে, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেক মানবসমাজ স্বাক্ষরতাকে নিরক্ষরতার উচ্চে স্থান দেওয়া শুরু করলে, স্বরলিপি লেখারও প্রচলন হয়। এইভাবেই সঙ্গীত শুধুমাত্র শ্রুতির মাধ্যম থেকে লিখিত মাধ্যমে বিকশিত হল, যেখানে সঙ্গীতকে নথির মাধ্যমে সংরক্ষিত করা বা তার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যাও লিখিত রাখা শুরু হল। (ক্যাম্পবেল ১৯৮৯, ৩১; রানকিন ২০১৮, ৮; (সিপটস ২০১৯)).

মিশরীয় লুটে (এক প্রকার তারযন্ত্র) বাদকবৃন্দ। ১৮তম মিশরীয় রাজত্বকালে নেবামুন নামে এক অভিজাত ব্যক্তির সমাধিস্থলে পাওয়া ফ্রেসকো পেইন্টিং (১৩৫০ খৃ.পূ.)

বহু প্রাচীনকাল থেকেই সঙ্গীত মিশরীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রাচীন মিশরীয়রা বাদুড়রূপী দেবীকে সঙ্গীত শাস্ত্রের প্রবক্তা বলে চিহ্নিত করত যা পরবরতীকালে আর এক দেবী হেথরের সঙ্গে সমন্বিত হয়। তারা মনে করত দেবী ওসাইরিস, দেবী হেথরের সঙ্গীত মাধ্যম গ্রহণ করে পৃথিবীতে সভ্যতা আনেন। সর্বাপেক্ষা প্রাচীন উপস্থাপন যোগ্য মিশরীয় বাদ্যযন্ত্রের প্রমাণ যেটি পাওয়া যায় তা প্রাক মিশরীয় রাজতন্ত্রের পূর্বের, যেগুলি মিশরের পুরাতন রাজতন্ত্রকালীন সময়ের (২৫৭৫-২১৩৪ খৃ.পূ.) সমাধিতে চিত্রায়িত আছে এবং তা খুব যত্নের সঙ্গে দ্বারা প্রত্যায়িত হয়েছে। চিত্রগুলিতে দেখা যায় হার্প, এন্ড-ব্লোন ফ্লুট (যাকে আড়াআড়িভাবে ধরা হয়) এবং এক ও দুই নল যুক্ত বাঁশি যা অনেকটা সানাইয়ের মতো, এক-রীড যুক্ত, বাজানো হত। (অ্যান্ডারসন, কাস্টেলো-ব্রাঙ্কো, ও ডানিয়েলসন ২০০১; অ্যানন. ১৯৯৯; শাবান ২০১৭; পুলভার ১৯২১, [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]). ঘাতবাদ্যলুটে মিশরীয় মধ্যযুগীয় রাজত্বকালে, একতাবাদনে ব্যবহার হত। ব্রোঞ্জের সিম্বাল, যেগুলি খৃ.পূ. ৩০ সাল থেকে ৬৪১ খৃ. পর্যন্ত রোমান সাম্রাজকালে ব্যবহার হত, সেগুলি নক্রাটিসের কাছে একটি সমাধিতে পাওয়া গেছে। (অ্যানন. ২০০৩; ডেভিড ১৯৯৮, [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]). কিছু টিকে থাকা মিশরীয় বাদ্যজন্ত্রের উপর পরীক্ষা চালিয়ে ( যেমন, বাঁশি বা রীড যুক্ত নলের উপর ছিদ্রগুলির ব্যবধান বাড়িয়ে কমিয়ে বা লাইয়ার, হার্প ও লুটের তারের অবস্থানের কিছু পরিবর্তন করে ) দেখা গেছে শুধুমাত্র তুতানখামুন শিঙা ও কিছু ঘাতবাদ্য ছাড়া অন্যগুলি, প্রাচীন মিশরীয় বাদ্যযন্ত্র কেমন আওয়াজ করে সেব্যাপারে তেমন কোনো ধারণা দেয় না।(হাসলাম ১৯৯৫, [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]). বিভিন্ন তত্ব যা সূত্রবদ্ধ আছে, সেগুলির জোরালো কোনো ভিত্তি নেই।(অ্যান্ডারসন, কাস্টেলো-ব্রাঙ্কো, ও ডানিয়েলসন ২০০১; মানিচে ১৯৭৫, [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন])

মেসোপটেমিয়া

[সম্পাদনা]

১৯৮৬ সালে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলির প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় পুরাতত্ব বিষয়ক অধ্যাপক অ্যানি ডাফকর্ন কিমলার কিউনিফর্মের মৃত্তিকা ফলকের পাঠোদ্ধার প্রকাশ করেন, যা খৃ.পূ.২০০০ বছরের প্রাচীন ও সেটি নিপ্পুর নামে একটি প্রাচীন সুমেরীয় নগর থেকে পাওয়া গিয়েছিল। তিনি দাবী করেছেন যে, মৃত্তিকা ফলকটিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কীভাবে ছন্দে বাজাতে বা সঙ্গীত তৈরী করতে হবে, তার কিছু ভগ্নাংশ, এবং তা সপ্তক ব্যবহার করে লেখা হয়েছে। (কিমলার ১৯৮৬). স্বরলিপির প্রথম অংশ ততটা উন্নত নয় যতটা ইউগারিত থেকে পাওয়া হুরিয়ান কিউনিফর্মে লেখা ফলকে পাওয়া গেছে, যা কিমলারের মতে ১২৫০ খৃষ্টপূর্বের। (কিমলার ১৯৬৫). স্বরলিপি পদ্ধতির ব্যাখ্যা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে (অন্তত পাঁচ রকম ব্যাখ্যা এ বিষয়ে প্রকাশ হয়েছে), কিন্তু স্বরলিপিতে আইরের তারগুলির নাম ও কীভাবে তা বাঁধতে হবে ফলকে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ আছে। এই ফলকগুলি আজ পর্যন্ত পাওয়া সারা পৃথিবীর মধ্যে প্রাচীনতম নথিবদ্ধ সুর, যদিও তা ভগ্নাংশে পাওয়া গেছে।(পশ্চিম ১৯৯৪, ১৬১-৬২).

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]