প্রেত (সংস্কৃত: प्रेत, প্রমিত তিব্বতীয়: ཡི་དྭགས་ য়ি দাগস) পূর্ব এশিয়ায় যা "ক্ষুধার্ত ভূত" বলেও পরিচিত, হল হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, তাওবাদ এবং চীনা ও ভিয়েতনামীয় লোকধর্মে এক প্রকার এমন অতিপ্রাকৃত সত্তা যা মানুষের চেয়ে অধিক পীড়াভোগ করছে, বিশেষত চরম ক্ষুধা ও তৃষ্ণায়।[১] এর উদ্ভব ভারতীয় ধর্মসমূহে হলেও বৌদ্ধধর্মের বিস্তৃতির মাধ্যমে পূর্ব এশীয় ধর্মসমূহেও এটি গৃহীত হয়। পালি গ্রন্থ পেতবত্থুতে এদের বিবিধ রূপে পাওয়া যায়।
পূর্ব জীবনে মিথ্যুক, ভ্রষ্ট, বলপ্রয়োগী, ধূর্ত-প্রতারক, হিংসুক বা লোভী ব্যক্তিরাই এ জীবনে প্রেত বলে বিশ্বাস করা হয়। নিজেদের কর্ম ফলের কারণেই তারা একটি নির্দিষ্ট দ্রব্য বা বস্তুর জন্যে অতোষণীয় ক্ষুধায় আক্রান্ত। ঐতিহ্যগতভাবে এই দ্রব্য বা বস্তুটি কোন অপ্রীতিকর বা অপমানকর জিনিস হয়ে থাকে, যেমন লাশ বা মল, যদিও সাম্প্রতিক কাহিনীগুলিতে এটি যেকোনো কিছু হতে পারে তা যতটাই উদ্ভট হোক না কেন।[২]
এশিয়ার অধিকাংশে হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের বিশ্বাস ও প্রভাবের ফলে "প্রেত" বিষয়টি ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, তিব্বত, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারের সংস্কৃতিতে প্রকাশ পায়।
সংস্কৃত শব্দ প্রেত অর্থ "গত, মৃত, মৃত ব্যক্তি"। ধ্রুপদী সংস্কৃতে শব্দটি একজন মৃত ব্যক্তির আত্মাকে বুঝাত, তবে বিশেষকরে অন্তিম সংস্কার অর্থাৎ শেষকৃত্যের পূর্বে, তবে সংকীর্ণভাবে এটি কোন ভূত বা দুষ্ট সত্তাকেও বুঝাত।[৩] এই সংস্কৃত শব্দটি বৌদ্ধধর্মে গৃহীত হয়েছিল (পালি: পেত) পুনর্জন্মের ছয়টি সম্ভাব্য স্তিতির একটির হিসেবে। চীনা শব্দ ওকুয়ে (餓鬼), যার আক্ষরিক অর্থ "অনাহারী বা ক্ষুধার্ত ভূত", দ্বারা তাওবাদ কিংবা চীনা লোকধর্মে প্রেতকে বুঝানো হয় যদিও তা মূল শব্দটির আক্ষরিক অনুবাদ নয়।
হিন্দুধর্মে প্রেত একটি বাস্তব সত্তা। প্রেত একটি রূপ-আকৃতি - একটি শরীর যা শুধু বায়ূ ও আকাশের (ধ্রুপদী মৌলিক পদার্থ) সমন্বয়ে গঠিত। হিন্দু ধর্মমতে সাধারণ পার্থিব শরীর এ দুটি ছাড়াও আরও তিনটি পদার্থ (জল/পানি, অগ্নি ও পৃথ্বী বা মাটি) দিয়ে সৃষ্ট। বিশ্বাস করা হয় পূর্বজীবনের কর্মফল অনুযায়ী এরকম আরও অনেক শরীর আছে (একটি থেকে তিনটি পদার্থের অনুপস্থিতিতে) যাতে জিবাত্মা পুনর্জন্মগ্রহণ করে। একটি আত্মা পুনর্জন্ম ও পুনর্মৃত্যুর বন্ধনে আবদ্ধ। অনিত্য রূপে আত্মা শুদ্ধ এবং এর অস্তিত্ব দেবতুল্য তবে তা কায়িক জন্মের শেষরূপে। এই পদার্থের অনুপস্থিতির কারণেই প্রেতরা কিছুই হজম করতে পারে না আর তাই ক্ষুধার্ত রয়ে যায়। প্রেতরা মানুষের কাছে অদৃশ্য যদিও কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে নির্দিষ্ট কিছু মানসিক অবস্থায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। তারা অনেকটা মানুষের মত দেখতে তবে সঙ্কুচিত ত্বক, সরু অঙ্গ, অতিশয় ফোলা পেট ও লম্বা গলা বিশিষ্ট। প্রেতরা স্বভাবতই আবর্জনাময় ও পরিত্যাক্ত স্থানে বাস করে এবং নিজেদের পূর্বজন্মের কর্ম অনুযায়ী বিবিধ অবস্থায় থাকে। ক্ষুধার সাথে সাথে অসহনীয় উষ্ণতা ও শীতের পীড়াভোগ করে।
জাপানে প্রেতকে "গাকি" বলা হয়। শব্দটি আধুনিক চীনা ভাষার "ওকুয়ে" (餓鬼) শব্দের মধ্য চীনা ভাষা-গত উচ্চারণ "ঙ্গাক্যু" থেকে এসেছে। ৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দ হতে জাপানী বৌদ্ধরা চান্দ্রমাসের আশ্বিনের পূর্ণিমাকালে (চীনা পঞ্জিকার সপ্তম মাসের মাঝদিকে) একটি বিশেষ দিবস পালন করে আসছে গাকিদের স্মরণ করতে। বিশ্বাস করা হয় যে এই অর্পণ (উৎসর্গ) ও স্মরণের মাধ্যমে ক্ষুধার্ত ভূতরা পীড়ামুক্ত হবে। জাপানী শিল্পকর্মে (বিশেষত হেইয়ান যুগের শিল্পে) প্রেতদেরকে স্ফীত উদর ও অমানবিক ক্ষুদ্র মুখ ও গলাবিশিষ্ট কৃশকায় মানুষ রূপে বর্ণা করা হত। তাদেরকে ঘন ঘন দেখানো হত মন্দিরের উচ্ছিষ্ট পানি চাটতে বা নিজেদের পিশাচরূপী ব্যক্তিগত কষ্টের সঙ্গে। অন্যথা তাদেরকে ধূম্র- বা অগ্নিগোলক (হিতোদামা) রূপেও দেখানো হত।
থাইল্যান্ডে প্রেত (থাই: เปรต) থাই লোককথার অন্যতম একটি অংশ এবং সেখানে তাদের অস্বাভাবিকভাবে লম্বা হিসেবে বর্ণনা করা হয়।[৪]
অন্যান্য এশীয় সংস্কৃতির মতই শ্রীলঙ্কান সংস্কৃতিতে মানুষ প্রেত ("পেরেত্থয়") রূপে পুনর্জন্মগ্রহণ করে যদি তারা জীবনে অত্যাদিক কামনা করে থাকে এবং প্রেত রূপে ছোট মুখ থাকার কারণে তাদের বড় পেট কখনই পূর্ণ হয় না।[৫]
মানুষের কাছে প্রেতদেরকে উপদ্রবের বেশি কিছু ধরা হয় না যদি না তাদের কামনার বস্তু হয় রক্ত জাতীয় কোন জীবন্ত কিছু। তাসত্ত্বেও কোন কোন মত অনুযায়ী প্রেতরা জাদুটোনা, ভ্রম সৃষ্টি বা বেশধারণ ধরে অন্যদেরকে কামনা পূরণ করতে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে। তারা অদৃশ্য হয়ে বা নিজেদের চেহারা বিকৃত করে মানুষদের ভয় দেখাতে পারে।
তাসত্ত্বেও সাধারণত প্রেতদের করুণা দেখাবার জিনিস হিসেবেই দেখা হয় বিশেষ করে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। তাই কিছু বৌদ্ধ মঠে দেখা যায় ভিক্ষুগণ আহারের পূর্বে তাদের উদ্দেশ্যে খাদ্য, অর্থ বা ফুল রেখে দেন।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |