ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ফজল মাহমুদ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | লাহোর, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পাকিস্তান) | ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৩০ মে ২০০৫ গুলবার্গ, লাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান | (বয়স ৭৮)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | ১৯৫২ - ১৯৬২ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মিটার) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার, অধিনায়ক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | ইয়ার সাঈদ (শ্যালক), মোহাম্মদ সাঈদ (শ্বশুর) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৩) | ১৬ অক্টোবর ১৯৫২ বনাম ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১৬ আগস্ট ১৯৬২ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৫৮ – ১৯৫৯ | লাহোর | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৪৭ – ১৯৫৭ | পাঞ্জাব (পাকিস্তান) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৪৪ – ১৯৪৭ | উত্তর ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৪ অক্টোবর ২০১৭ |
ফজল মাহমুদ (উর্দু: فضل محمود; জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭ - মৃত্যু: ৩০ মে, ২০০৫) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত পাকিস্তানি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। পাকিস্তানি ক্রিকেটের ঊষালগ্নে অন্যতম সেরা পেস বোলাররূপে তাকে বিবেচনা করা হতো। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৩৪ টেস্টে অংশ নিয়ে ২৪.৭০ গড়ে ১৩৯ উইকেট পান। এরফলে প্রথম পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ অর্জনের জন্য তাকে ২২ টেস্টে অংশ নিতে হয়েছিল।
রঞ্জী ট্রফিতে উত্তর ভারতের পক্ষে শুরুর দিককার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন ফজল। চমকপ্রদ ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনার দরুণ ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে ভারতের প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। তবে, সফরের পূর্বেই পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের প্রেক্ষিতে মুসলিম হিসেবে নাম প্রত্যাহার করে নেন ও পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন। নতুন দেশের টেস্ট মর্যাদা লাভে তিনি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন। চারবার টেস্টে দশ উইকেট পান। ভারত, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার এ অর্জনগুলো সম্পৃক্ত ছিল ও পাকিস্তান জয়লাভ করে। ১৯৫৪ সালে ইংল্যান্ড সফরে সেরা ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। ওভালে পাকিস্তানের জয়ে স্মরণীয় ভূমিকা পালন করে দলকে সিরিজে সমতা আনয়ণ করেন। খেলায় তিনি ১২/৯৯ পান। তন্মধ্যে, জয়ের জন্য ১৬৮ রানের লক্ষ্যমাত্রায় ইংল্যান্ড দলের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৬/৪৬ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।
আবদুল কারদারের পরিবর্তে তাকে জাতীয় দলের অধিনায়করূপে মনোনয়ন দেয়া হয়। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সময়কালে দলকে ১০ টেস্টে নেতৃত্ব দেন ফজল মাহমুদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সফলতা পেলেও অস্ট্রেলিয়া ও চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে হেরে যাবার পর অধিনায়কের পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তার নেতৃত্বে পাকিস্তান দুই টেস্টে জয় ও দুই টেস্টে পরাজিত হয়েছিল। বাদ-বাকী টেস্টগুলো ড্রয়ে পরিণত হয়। ১৯৬২ সালে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর টেস্ট ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তবে, আঘাতপ্রাপ্ত উদ্বোধনী বোলারের পরিবর্তে তাকে আবারও দলের সদস্য মনোনীত করা হয়েছিল।
লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ফজল মাহমুদ ১৩ বছর বয়সে ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়ন করেন। তার বাবা গুলাম হোসেন ঐ কলেজেরই অর্থনীতি বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন।[১] পাশাপাশি কলেজের ক্রিকেট ক্লাবেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন।[২] তিনি ফজলকে কঠোরভাবে প্রশিক্ষণ দিতেন যা শুরু হতো ভোর ৪:৩০-এ। তাকে প্রত্যেহ পাঁচ মাইল হাঁটাতেন ও পাঁচ মাইল দৌঁড়াতেন। পরবর্তী সাত বছর এ সময়সূচীর অন্যথা ঘটতো না।[২][৩]
দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালে কলেজের প্রথম একাদশে অন্তর্ভুক্ত হন। আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ১৫ বছর বয়সে অংশগ্রহণ করেন। ঐ খেলায় ৫/১৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান[৪] যা প্রতিযোগিতার রেকর্ডস্বরূপ।[৩]
১৭ বছর বয়সে মার্চ, ১৯৪৪ সালে কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় উত্তর ভারতের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। রঞ্জী ট্রফিতে দক্ষিণ পাঞ্জাবের বিপক্ষে এগারো নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে অপরাজিত ৩৮ রান তুলেন ও তিন উইকেট লাভ করেন। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট তারকা ও অল-রাউন্ডার লালা অমরনাথ তার প্রথম শিকারে পরিণত হন।[৫] দ্বিতীয় খেলায় পশ্চিম ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে অংশ নেন। খেলায় তিনি আট উইকেট পান। তন্মধ্যে প্রথম ইনিংসে তার বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ৬/৬৫।[৬]
১৯৪৪-৪৫ মৌসুম শেষে ফজল পাঁচ উইকেট পান ১৮.২০ গড়ে। এরফলে, পরবর্তী মৌসুমে ইংল্যান্ড সফরের জন্য তার স্থান নিশ্চিত হয়। আঞ্চলিক চতুর্দেশীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এ প্রতিযোগিতাটি মূলতঃ সফরের অনুশীলনীমূলক খেলারূপে বিবেচিত ছিল। উত্তর অঞ্চলের পক্ষে অমরনাথের সঙ্গে বোলিং উদ্বোধনে নামেন। খেলায় তিনি ৯/৮৩ পান।[৭] ভারতীয় অধিনায়ক পতৌদি'র নবাব ফজলকে দলে নিতে চাইলেন। তবে, অন্যান্য দল নির্বাচক বয়সে খুবই কম বিধায় তাকে দলের বাইরে রাখেন।[৮]
সফরকারী দল বাদ-বাকী ভারতীয় একাদশের বিপক্ষে দুই খেলায় অংশ নেয়। প্রথম খেলায় ফজল সাত উইকেট নিলে বাদ-বাকী একাদশ জয় পায়। পরের খেলায় তারা হারে।[৯] ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে তার ব্যাটিংয়ে সক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়। এ মৌসুমে তিনি তার একমাত্র প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরির সন্ধান পান। উত্তর অঞ্চলের সদস্যরূপে আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলেন। গোগুমল কিষেনচাঁদের সাথে সপ্তম উইকেট জুটিতে ২০৭ রান তুলেছিলেন। বল হাতে ছয় উইকেট নিয়ে উত্তর অঞ্চলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি।[১০] চূড়ান্ত খেলায় পাঁচ উইকেট পেলেও উত্তর অঞ্চল ইনিংস ব্যবধানে পরাভূত হয়।[১১]
১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় উদ্বোধনী সফরে যায় ভারত দল। এরপূর্বে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবারো ফজল দলের সদস্য মনোনীত হন ও প্রশিক্ষণ শিবিরে তাকে রাখা হয়।[১২] এ সফরের পূর্বেই ভারত বিভাজন হয়। ফলশ্রুতিতে ধর্মভীরু মুসলমান ফজল মাহমুদ দল থেকে নিজ নাম প্রত্যাহার করে নেন।
নবপ্রতিষ্ঠিত দেশে প্রথম-শ্রেণীর প্রথম খেলাটি ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে পাঞ্জাব ও সিন্ধুর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। ফজল পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেন। ছয় উইকেট ও ৬০ রান তুলে দলের ইনিংস বিজয়ে সবিশেষ অবদান রাখেন।[১৩] এ খেলায় প্রথমবারের মতো খান মোহাম্মদের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নামেন। নভেম্বর, ১৯৪৮ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাকিস্তান সফরে আসে। তিনটি নির্ধারিত খেলায় প্রতিনিধিত্বকারী দলের পক্ষে অংশ নেন ফজল। তবে ড্র হওয়া খেলায় কোন উইকেট লাভে ব্যর্থ হন।[১৪] ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমের শেষদিকে পাকিস্তান দল চার খেলায় অংশ নিতে সিলন গমন করে। ২০ উইকেট নিয়ে সফরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন তিনি। এক বছর পর ফিরতি সফরে দুই খেলায় তিনি ১৬ উইকেট দখল করেন।
১৯৫১-৫২ মৌসুমে এমসিসি দল উপমহাদেশ সফরে আসে। পাকিস্তানে দলটি কয়েকটি খেলায় অংশ নেয়। পাঞ্জাবের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত প্রথম খেলায় ফজলের ৫/৫৮ বোলিং পরিসংখ্যানের ফলে দলটি কোন রকমে ফলো-অন এড়াতে সক্ষম হয়। পঞ্চম ও চূড়ান্ত খেলাটি করাচীর ম্যাটিং উইকেটে অনুষ্ঠিত হয়। এমসিসির প্রথম ইনিংসে ৬/৪০ নিয়ে তিনি পূর্বেকার সাফল্যকে ছাপিয়ে যান।[১৫] খেলায় স্বাগতিক দল চার উইকেটে জয় তুলে নেয়। এ বিজয়ের ফলে পাকিস্তান দল তাদের টেস্ট মর্যাদা লাভে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখে।
দেশ স্বাধীনতা লাভের পাঁচ বছরেরও কম সময়ে ২৮ জুলাই, ১৯৫২ তারিখে পাকিস্তান দল টেস্টখেলুড়ে দেশের মর্যাদা পায়।[১৬]
অক্টোবর, ১৯৫২ সালে পাকিস্তান তাদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম খেলায় ভারতের বিপক্ষে অংশগ্রহণ করে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ফজলের টেস্ট অভিষেক ঘটে। ভারতের প্রথম ইনিংসে তিনি ২/৯২ লাভ করেন। ভারতীয় অধিনায়ক লালা অমরনাথকে আউট করে নিজের প্রথম উইকেটের সন্ধান পান। দুবারই অল্প রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান ইনিংস ব্যবধানে পরাভূত হয়। কেবলমাত্র ফজলই একমাত্র পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে দুইবারই দুই অঙ্কের কোঠায় পৌঁছুতে সক্ষম হয়েছিলেন।[১৭]
লক্ষ্ণৌতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তান খেলার ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসে। পাটের ম্যাটিং পিচে ফজল ৫/৫২ ও ৭/৪২ লাভ করলে দ্বিতীয় টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে নিজেদের প্রথম টেস্টের জয় পায়।[১৮] বিদেশের মাটিতে তার সংগৃহীত ১২/৯৪ যে-কোন পাকিস্তানি বোলারের সেরা বোলিং পরিসংখ্যানরূপে বিবেচ্য।[১৯] ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে সেরা বোলিং ছিল এটি।[২০]
বোম্বের তৃতীয় টেস্টেে ফজল উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ছাড়েন। ঐ টেস্টে পাকিস্তান দশ উইকেটে পরাজিত হয়। তবে প্রথম ইনিংসে আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি ৩৩ রান তুলে ৬০/৬ থাকা অবস্থায় দলকে ১৪৩/৭-এ নিয়ে যান।[২১] সিরিজের শেষ দুই টেস্ট ড্র হয়। আরও ছয় উইকেট নিয়ে অভিষেক সিরিজেই ২৫.৬০ গড়ে ২০ উইকেট লাভ করে দলের শীর্ষ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। এছাড়াও নিচেরসারিতে ২৮.৮৩ গড়ে ১৭৩ রান নিয়ে সিরিজে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।[২২]
পাকিস্তান ঈগলেটস দলের সদস্যরূপে ফজল ১৯৫৩ সালে ইংল্যান্ড সফরে যান। পরবর্তী বছরে পাকিস্তান দলের ইংল্যান্ড সফরের অংশ হিসেবে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এ সফরটি আয়োজন করা হয়েছিল। ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ও সারের ফাস্ট বোলার আল্ফ গোভারের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
১৯৫৪ সালে আবদুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলে ফজল সহঃ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। উপমহাদেশের বাইরে প্রথমবারের মতো ঐ সফরে বেশ সফলতা লাভ করে পাকিস্তান দল।
সফরের শুরুতেই ফজলের সাফল্যগাঁথা শুরু হয়। প্রথম খেলায় ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ১১/১০২ ও ৬৭ রান তুলেন।[২৩] টেস্ট সিরিজেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন তিনি।[২৪] অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে দীর্ঘক্ষণ ধরে মিতব্যয়ী বোলিং করেন। ৬৮ ওভারের ৩৭টিতেই মেইডেন ছিল ও ৭/৯৫ পান।[২৫]
লর্ডসে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টটি ব্যাপকভাবে বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয় ও অবশেষে ড্রয়ে পরিণত হয়। খেলা অনুপযোগী পিচে পাকিস্তান তাদের প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে ইংল্যান্ড দল সম্পূর্ণ ইনিংসটিতে ফজল ও খান মোহাম্মদের তোপে পড়ে ১১৭/৯ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ফজল ৪/৫৪ পান।[২৬] দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর পূর্বে সফরকারী দল ট্রেন্ট ব্রিজে নটিংহ্যামশায়ারের মুখোমুখি হয়। দল আট উইকেটে জয় পায় যাতে ফজল প্রথম ইনিংসে ঐ সময়ে তার সেরা বোলিং ৮/৬৬ সহ খেলায় ১১ উইকেট তুলে নেন।[২৭] একই মাঠে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হয়। ঐ টেস্টে পাকিস্তান দল ইনিংসের বিরাট ব্যবধানে হেরে যায়। ফজল টেস্টে তার জঘন্যতম বোলিং করেন ০/১৪৮।[২৮] পায়ের আঘাতের কারণে তাকে স্বল্প দূরত্ব নিয়ে বোলিং করতে হয়েছিল।[২৯]
তিনদিন পর তৃতীয় টেস্টেও আরেকটি ইনিংস পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদনের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান দল। তবে এ যাত্রায় বৃষ্টি তাদের জন্য সৌভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ও টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়। শেষ দুইদিন খেলা বৃষ্টির জন্য বন্ধ থাকে। ৪২ ওভার বোলিং করে ৪/১০৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ফজল মাহমুদ।[৩০]
ওভালে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেয় পাকিস্তান দল। ১-০ পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে বড় ধরনের অঘটন ঘটায় তারা। ইংল্যান্ডে উদ্বোধনী সফরে কোন দল প্রথমবারের মতো টেস্টে জয়লাভে সমর্থ হয়।[৩১] ফজল খেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করনে। খেলায় তিনি ১২/৯৯ লাভ করেন। প্রথম ইনিংসে ৩০ ওভারে ৬/৫৩ পান ফজল মাহমুদ। উইজডেন মন্তব্য করে যে, এ পরিসংখ্যানটি আরও সমৃদ্ধ হতো যদি ক্যাচ নষ্ট না হতো।[৩২]
নিম্নমূখী রানের খেলায় দ্বিতীয় ইনিংসে খেলে ১৬৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয় ইংল্যান্ড দল। শুরুতেই তারা লেন হাটনের উইকেট হারায়। খেলায় হাটন দ্বিতীয়বারের মতো ফজলের কট বিহাইন্ডের শিকার হন। এক পর্যায়ে ১০৯/২ তুলে চতুর্থ দিন পার করে। তবে, দিন শেষ হবার পূর্বে পিটার মে, গডফ্রে ইভান্স ও ডেনিস কম্পটনের উইকটে তুলে নেন ফজল মাহমুদ। পরদিন তিনি আরও দুই উইকেট নিয়ে দলকে ২৪ রানের জয় এনে দেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ফজল ৩০ ওভার বোলিং করে ৬/৪৬ পান।[৩৩]
ঐ সিরিজে ফজল ২০.৪০ গড়ে ২০ উইকেট পান যা তার নিকটতম পাকিস্তানি বোলারের চেয়ে ১২টি বেশি ছিল।[৩৪] ছয়টি প্রথম-শ্রেণীর খেলার মধ্যে মাত্র একটিতে খেলেন। তাস্বত্ত্বেও সফর শেষে ১৭.৫৩ গড়ে ৭৭ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আরোহণ করেন।[৩৫] তার এ অনন্য সাধারণ খেলার দরুণ ১৯৫৫ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। এটিই যে-কোন পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম সম্মাননা ছিল।[৩৬]
১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে ভারত দল পাকিস্তানে উদ্বোধনী সফরে আসে। পাঁচ টেস্টে গড়া ঐ সিরিজটি রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় শেষ হয়। প্রত্যেকটি খেলাই ড্রয়ে পরিণত হয় যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ঘটনারূপে স্বীকৃত।[৩৭] ফজল চার খেলায় অংশ নিয়ে ২১.৯৩ গড়ে ১৫ উইকেট পান।[৩৮] করাচীর পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে ৫/৪৮ লাভ করেন।[২৮]
এরপর ১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সফরে আসে। ঐ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয় করে পাকিস্তান।[৩৯] তিন টেস্টের সিরিজটিতে ফজল দুই টেস্টে অংশ নিয়ে ১৮.৪০ গড়ে পাঁচ উইকেট দখল করেন।
ইংল্যান্ড সফর শেষে ভারত সফর করে অক্টোবর, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানে অস্ট্রেলিয়া দল একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করে। করাচীতে পাকিস্তান ঐতিহাসিক জয় পায়। ফজল এ টেস্টে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। খেলায় ১৩/১১৪ নিয়ে নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের প্রথম ছয় উইকেট তুলে নিয়ে ৫২/৬-এ নিয়ে যান। পরবর্তীতে দলটি আর ইনিংস গোছাতে পারেনি ও ৮০ রানে গুটিয়ে যায়।
দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রথম চার উইকেট পান ও ৭/৮০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।[৪০] উইজডেন তার কৌশল সম্পর্কে মন্তব্য করে যে, নিখুঁত নিশানা ও লেগ-কাটার এবং ব্রেকবেকস প্রয়োগের মিশ্রণ ঘটিয়ে এ সাফল্য পেয়েছেন।[৪১] ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, ফজল কখনো নিশানা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বোলিং করেননি। তিনি বলকে উইকেটের উভয়দিকে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে সফলকাম হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ফজল একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এমনকি কিংবদন্তীতুল্য কিথ মিলারও এর কূল-কিনারা খুঁজে পাননি।[৪২]
১৯৫৮ সালে পাকিস্তান দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায়। এ সিরিজটি বিশাল রানে পরিপূর্ণ ছিল। ফজলের উপর বেশ চাপ পড়ে। পাঁচ টেস্টের ঐ সিরিজে তাকে ৩২০ ওভারেরও বেশি বোলিং করতে হয়। তন্মধ্যে পরপর দুই টেস্টেই তাকে করতে হয়েছে ১৮৬ ওভার। পাকিস্তান ৩-১ ব্যবধানে সিরিজে পরাজয় বরণ করে। তবে, হানিফ মোহাম্মদের ১৬ ঘণ্টায় সংগৃহীত ৩৩৭ রানের কল্যাণে প্রথম টেস্টে পরাজিত হবার হাত থেকে রক্ষা পায়।
ত্রিনিদাদে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ফজল পাকিস্তানের সর্বাপেক্ষা মিতব্যয়ী বোলার ছিলেন। এ সময় তিনি ছয় উইকেট পান। ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ নম্বরে মাঠে নেমে ৬০ রান তুলেন। এটিই টেস্টে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাত্র পঞ্চম ছিল।[৪৩]
কিংস্টনের তৃতীয় টেস্টে গ্যারি সোবার্স অপরাজিত ৩৬৫ রান তুলে ইতিহাস গড়েন। এরফলে তিনি তার নিজেরই গড়া সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভঙ্গ করেন। উদ্বোধনী বোলার মাহমুদ হোসেন ও স্পিনার নাসিম-উল-গণি’র আঘাতজনিত অনুপস্থিতিতে তাকে ৮৫.২ ওভার বোলিং করতে হয়।
একই পেস নিয়ে অনেকগুলো ওভার বোলিং করাকে আশ্চর্যরূপে আখ্যায়িত করে উইজডেন কর্তৃপক্ষ।[৪৪] তবে ঐ ইনিংসে ২৪৭ রান খরচ করে মাত্র দুই উইকেটের পতন করতে সহায়তা করেন তিনি।[৪৫]
ফজলের ঐ বোলিং পরিসংখ্যান তাকে টেস্টের ইতিহাসে বোলিংয়ের দিক দিয়ে পঞ্চম ও সর্বাপেক্ষা খরুচে বোলিংরূপে অনাকাঙ্খিত রেকর্ড গড়ে।[৪৬][৪৭] ঐ টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয় তার দল ও গায়ানার পরবর্তী টেস্টে হেরে সিরিজ খোঁয়ায়।[৪৮] পঞ্চম টেস্টে স্বান্তনাসূচক জয়ের সন্ধান পায় পাকিস্তান।
প্রথম ইনিংসে ৬/৮৩ পান। উল্লেখযোগ্য দিক ছিল খেলার প্রথম বলেই কনরাড হান্টকে আউট করা।[৪৯] গড়ের দিক দিয়ে মন্দ সময় পার করা স্বত্ত্বেও তিনি এ সিরিজে ৩৮.২০ গড়ে ২০ উইকেট পান।[৩৮] এছাড়াও সিরিজে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ছিলেন তিনি।[৫০]
পরের বছর ফিরতি সফরে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অধিনায়ক আবদুল কারদারের অবসর গ্রহণের প্রেক্ষিতে দেশের সেরা বোলার ফজলকে অধিনায়কের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়।
প্রথম টেস্টে টস জয় করে বোলিংয়ে নামে তার দল। বোলিং উদ্বোধনে নেমে উপর্যুপরী দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ওভারেই কনরাড হান্টকে বিদায় করেন। ইনিংসে তিনি ৪/৩২ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। তন্মধ্যে,গ্যারি সোবার্সকে শূন্য রানে আউট করেন তিনি।
দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি তিনটি উইকেট পান যাতে হান্ট ও সোবার্সের উইকেট ছিল। সোবার্সকে আউট করার মাধ্যমে ফজল তার শততম টেস্ট উইকেট লাভ করেন যা প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে এ মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। পাকিস্তান দশ উইকেটে জয় পায় নতুন অধিনায়কের সাহচর্য্যে।[৫১]
ঢাকায় অনুষ্ঠিত পরবর্তী টেস্টে জয় পেয়ে তিন খেলার রাবার জয় করে। নিম্নমূখী রানের খেলায় ফজল স্মারকসূচক ভূমিকা অবলম্বন করেন। চতুর্থবারের মতো খেলায় দশ উইকেট পান তিনি। ব্যাট হাতে ২২/৫ থাকা অবস্থায় দলকে ১৪৫-এ নিয়ে যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও করুণ পরিণতি ঘটে। ৭৬ রানে অল-আউট হয়। তন্মধ্যে এক পর্যায়ে ১১ রানে ছয় উইকেটের পতন ঘটেছিল। ফজল একাধারে বোলিং করে ৬/৩৪ পান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৪ করে ৪১ রানে পরাজিত হয়। ফজল প্রথম সাত উইকেটের ছয়টিতেই ভাগ বসান। অন্য ডিসমিসালে মাহমুদ হোসেন সোবার্সকে ফজলের তালুবন্দী করান। মাহমুদ নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদেরকে আউট করে চার উইকেট দখল করেন। ফলশ্রুতিতে ফজলের বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড়ায় ৬/৬৬ ও খেলায় ১২/১০০।[৫২] তার এ রেকর্ডটুকু পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে ওয়াকার ইউনুস কর্তৃক ভেঙ্গে যায়।[৫৩]
রাবার খোয়ানো অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় পায়। ফজল উদ্বোধনী বোলারদেরকে বিদায় করলেও ৪০ ওভারেই তা সীমাবদ্ধ থাকে।[৫৪] এ সিরিজে ১৫.৮৫ গড়ে ২১ উইকেট নিয়ে শীর্ষস্থানে থাকেন।[৫৫]
১৯৫৯ সালের শেষদিকে তিন টেস্টের সিরিজ খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়া দল পাকিস্তান সফরে আসে। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে অস্ট্রেলিয়া যা পাকিস্তানের নিজ মাটিতে প্রথম সিরিজ পরাজয় ছিল। ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে সফরকারীরা আট উইকেটে জয় তুলে নেয়। খেলায় ফজল ছয় উইকেট পান। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে ৫/৭১ ছিল।[৫৬] নিজ শহর লাহোরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নিতে পারেননি তিনি। ফলশ্রুতিতে উইকেট-রক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ দলের অধিনায়কত্ব করেন। তবে, অস্ট্রেলিয়া সাত উইকেটে বিজয়ী হয়।[৫৭]
করাচীতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে ফজলের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত তিন উইকেটের পতন ঘটলে খেলাটি ড্রয়ের দিকে চলে যায়।[৫৮] এক খেলায় অংশ না নিয়েও তিনি ১৯.৩৬ গড়ে ১১ উইকেট লাভ করেন।[৫৯] এর স্বীকৃতিস্বরূপ আইসিসি প্রণীত রাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর বোলারে পরিণত হন ফজল মাহমুদ।
১৯৬০-৬১ মৌসুমে পাকিস্তান ভারত সফরে যায়। সফরে ১৫ খেলার মধ্যে পাঁচটি টেস্টও অন্তর্ভুক্ত ছিল যার সবকটিই ড্রয়ে পরিণত হয়। সাত বছর পূর্বেকার সিরিজটিও রক্ষণাত্মক ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তিতে জয়ের সাড়া পাওয়া যায়নি।[৬০]
প্রথম চার টেস্টে টসে জয়লাভে সক্ষম হন ফজল। কেবলমাত্র ইডেন গার্ডেন্সের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে এগিয়ে ছিল তারা। খেলায় ২৫.৩ ওভার বোলিং করে ৫/২৬ পান। দ্বিতীয় ইনিংসে সময় পেয়ে নিশ্চিত মন নিয়ে ব্যাটিং করে ভারত দল ও তিনি কোন উইকেট পাননি।[৬১] তার ত্রয়োদশ ও সর্বশেষ পাঁচ-উইকেট অর্জনের পর সিরিজের বাদ-বাকী খেলায় তিনি আর মাত্র চার উইকেট পেয়েছিলেন।
ফজলের অধিনায়কত্বের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয় ও চূড়ান্ত টেস্টের পর তার অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয়া হয়।[৬২]
নিজ দেশে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফজলকে মনোনীত করা হয়নি। তবে চূড়ান্ত টেস্টে তার অন্তর্ভুক্তি ঘটে। ৬৩ ওভার বোলিং করে ৯৩ রান দিয়ে সর্বাপেক্ষা মিতব্যয়ী বোলার হলেও কোন উইকেট তুলে নিতে ব্যর্থ হন।
১৯৬২ সালে ইংল্যান্ড সফরেও তাকে নেয়া হয়নি। তবে, মাহমুদ হোসেন ও মোহাম্মদ ফারুকের আঘাতের প্রেক্ষিতে তাকে দলে নেয়া হয়।[৬৩] পাঁচ খেলার সিরিজটি ইতোমধ্যে হেরে যায়।
ট্রেন্ট ব্রিজের চতুর্থ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে তার। সারাদিনই বোলিং করেন। দ্বিতীয় দিন মাত্র ত্রিশ মিনিট এর ব্যতিক্রম ছিল। তৃতীয় দিনে ইনিংস ঘোষণার পূর্ব-পর্যন্ত এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। ৬০ ওভার বোলিং করে ৩/১৩০ পান।[৬৪][৬৫]
ওভালের পঞ্চম টেস্টে ৪৭ ওভার বোলিং করে ২/১৯২ পান। এ দুই উইকেটপ্রাপ্তির মাধ্যমে তিনি তার সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। কলিন কাউড্রে ১৮২ ও টেড ডেক্সটার ১৭২ রান তুলে তার হাতে ধরা দেন।[৬৬]
১৯৫৭, ১৯৫৮ ও ১৯৫৯ সালে ইস্ট ল্যাঙ্কাশায়ার ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে পেশাদারী পর্যায়ে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে তিন মৌসুম খেলেন। শৌখিন ক্রিকেটারদের বিপক্ষে খেলে বিধ্বংসী বোলিং করেন। এ তিন মৌসুমে চারবার হ্যাট্রিক কার্য সসম্পাদন করেন। দুইবার আট উইকেট ও ছয়বার সাত উইকেট পান। ১৯৫৯ সালে ৭/৯ ও ১৯৫৭ সালে ৭/২৬ পান।[৬৭]
অর্থনীতি বিষয়ে ইসলামিয়া কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সার্ভিসেসে পুলিশ ইন্সপেক্টর, ১৯৫২ সালে ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও ১৯৭৬ সালে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক মোহাম্মদ সাঈদের কন্যার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে ফজল মাহমুদ।লাহোরে নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩০ মে, ২০০৫ তারিখে ফজলের দেহাবসান ঘটে। তার বন্ধু ও সাবেক দলীয় সঙ্গী হানিফ মোহাম্মদ ফজলকে বিরাট মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ও দেশের উৎপত্তিকালীন বছরগুলোয় পাকিস্তানি বোলারদের প্রধান রূপকাররূপে চিত্রিত করেন।[৬৮]
ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ - পৃথক এ চারটি দেশের বিপক্ষে প্রথম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১২ বা ততোধিক উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন ফজল।[৬৯] ২২ টেস্টেই ১০০ টেস্ট উইকেট লাভ করেন। পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে কেবলমাত্র ওয়াকার ইউনুস ও মোহাম্মদ আসিফ তারচেয়ে দ্রুততম সময়ে এ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।[৭০]
১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সরকার ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যে তাকে প্রাইড অব পারফরম্যান্স পুরস্কার প্রদান করে।
পূর্বসূরী আবদুল হাফিজ কারদার |
পাকিস্তানি ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৫৯–১৯৬১ |
উত্তরসূরী ইমতিয়াজ আহমেদ |