ফটোডিসিন্টিগ্রেশন (ফটোট্রান্সমিটেশন হিসেবেও পরিচিত) একটি পারমাণবিক প্রক্রিয়া যেখানে একটি আণবিক নিউক্লিয়াস একটি উচ্চ-শক্তির গামা রশ্মি গ্রহণ করে উত্তেজিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে একটি অতিপারমানবিক কণা নির্গত করার মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। আগত গামা রশ্মি, নিউক্লিয়াসের বাইরে এক বা একাধিক নিউট্রন, প্রোটন বা একটি আলফা কণাকে কার্যকরভাবে আঘাত করে।[১] প্রতিক্রিয়াগুলিকে যথাক্রমে, (γ, n), (γ, p) এবং (γ, α) বলা হয়।
পারমাণবিক নিউক্লিয়াস লোহার চেয়ে হালকা হলে ফটোডিজিনগ্রেশন এন্ডোথারমিক (শক্তি শোষক) এবং কখনও কখনও লোহার চেয়ে ভারী হলে তা এক্সোথারমিক (শক্তি মোচক) হয়। সুপারনোভায় পি-প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন, অন্তত:পক্ষে কিছু ভারী, প্রোটন সমৃদ্ধ উপাদানের কেন্দ্রীন সংশ্লেষের জন্য ফটোডিসিন্টিগ্রেশনই দায়ী। এর ফলে লোহা আরো ভারী উপাদানে সংশ্লেষীত হয়।
২.২২ বা আরও বেশি শক্তি বাহি একটি ফোটন ডিউটিরিয়ামের একটি পরমাণুকে ফটোডিসিন্টিগ্রেট করতে পারে:
প্রোটন-নিউট্রন ভর পার্থক্য পরিমাপ করতে জেমস চ্যাডউইক এবং মরিস গোল্ডহবার এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করেন।[২] এই পরীক্ষাটি প্রমাণ করে যে নিউট্রন কোনও প্রোটন এবং ইলেকট্রনের নিবদ্ধ দ্বশা নয়, যেমনটি আর্নেস্ট রাদারফোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত হয়।[৩]
১.৬৭ বা আরও বেশি শক্তি বাহি একটি ফোটন বেরিলিয়াম-৯ (প্রাকৃতিক বেরিলিয়ামের ১০০%, এর একমাত্র স্থিতিশীল আইসোটোপ) এর একটি পরমাণুকে ফটোডিসিন্টিগ্রেট করতে পারে:
অ্যান্টিমনি-১২৪, বেরিলিয়ামের সাথে একজোট হয়ে পরীক্ষাগার নিউট্রনের এবং প্রারম্ভিক নিউট্রনের উৎস তৈরী করে। অ্যান্টিমনি-১২৪ (অর্ধায়ু ৬০.২০ দিন) β− এবং ১.৬৯০ গামা রশ্মি (এছাড়াও ০.৬০২ এবং ০.৬৪৫ থেকে ২.০৯০ পর্যন্ত ৯ টি ক্ষীণ নির্গমন) নির্গত করে স্থিতিশীল টেলুরিয়াম-১২৪ এ পরিণত হয়। অ্যান্টিমনি-১২৪ কর্তৃক নির্গত গামা রশ্মি, বেরিলিয়াম-৯ কে দুটি আলফা কণা এবং গড়ে ২৪ গতিশক্তি সম্পন্ন একটি নিউট্রনে নিউট্রনের শক্তি মধ্যবর্তী নিউট্রন বিভক্ত করে থাকে।[৪][৫]
অন্যান্য আইসোটোপগুলিতে ফটোনিউট্রন উৎপাদনের জন্য ১৮.৭২ (কার্বন-১২ এর জন্য) পর্যন্ত প্রান্তিক মান বিদ্যমান।[৬]
খুব বড় তারার বিস্ফোরণে (২৫০ বা ততোধিক সৌর ভর), ফটোডিসিন্টিগ্রেশন সুপারনোভার একটি প্রধান কারণ। নক্ষত্রটি যখন তার জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন এটি এমন তাপ ও চাপ সম্পন্ন হয় যেখানে ফটোডিসিন্টিগ্রেশনের শক্তি-শোষণকারী প্রভাব অস্থায়ীভাবে তারার কেন্দ্রের চাপ এবং তাপ হ্রাস করে। এর ফলে কেন্দ্রটির পতন শুরু হয় কেননা এখানে ফটোডিসিন্টিগ্রেশন শক্তি শোষণ করে নেয় এবং এই সঙ্কুচিত কেন্দ্রটি একটি ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে থাকে। ভরের একটি অংশ আপেক্ষিক জেট আকারে বেরিয়ে যায়, যা সম্ভবত মহাবিশ্বে প্রথম ধাতুগুলিকে "সিঁচন (স্প্রে)" করেছিল।[৭][৮]
ফটোফিশন একটি অনুরূপ তবে স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া যেখানে একটি নিউক্লিয়াস, গামা রশ্মি শোষণ করে নিউক্লীয় বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে যায় (প্রায় সমান ভর বিশিষ্ট দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়)।