শিয়া ইসলাম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
ইসলাম প্রবেশদ্বার |
ফাতিমা বিনতে আসাদ (৫৭৫ খ্রি - ৬২৬ খ্রি ) (আরবি: فاطمة بنت أسد, ইংরেজি Fāṭimah bint ʾAsad) ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জামাতা হযরত আলী (রাঃ) এর মাতা। তিনি আসাদ ইবনে হাশিম এর কন্যা ছিলেন। ফাতিমার স্বামী আবু তালিব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন মুহাম্মদ (সা.) এর চাচা। মুহাম্মদ (সা.) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব এর মৃত্যুর পর এতিম মুহাম্মদ (সা.) তার শৈশবের বেশকিছু বছর আবু তালিব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এর ঘরে ফাতিমার নিকট অতিবাহিত করেন।
ফাতিমার পিতার নাম আসাদ ইবনে হাশিম,পিতামহ হাশিম ইবনে আবদ মানাফ এবং প্রপিতামহ আবদ মানাফ ইবনে কুসাই । ফাতিমা কুরাইশ গোত্রের হাশিমী শাখার কন্যা। পিতামহ হাশিম ইবনে আবদ মানাফ গিয়ে তার বংশধারা মুহাম্মাদ বংশধারার সাথে মিলিত হয়েছে। মুহাম্মাদ এর দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন তার শ্বশুর এবং চাচা।
ফাতিমার ছয়টি সন্তান ছিল। তারা হলঃ
তার দুই কন্যা হল
মুহাম্মাদ এর দাদা আবদুল মুত্তালিব মৃত্যুর সময় মুহাম্মাদের দায়িত্ব আবু তালিব ও ফাতিমার উপর অর্পণ করে যান। তখন থেকেই মুহাম্মাদ ফাতিমার সংসারে বেড়ে উঠতে থাকেন। আবু তালিব ও ফাতিমা মুহাম্মাদ অত্যন্ত যত্ন ও স্নেহ করে লালন পালন করতে থাকেন। সবসময় নিজের অনন্য শিশুদের সাথে খাবার খেতে দিতেন। ছোটবেলায় চারিদিকে সবাই মুহাম্মাদ এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকার কারণে ফাতিমা তাকে অতিরিক্ত আদর করতেন।[৩][৪] মুহাম্মাদ ছোট বেলা থেকেই পরিপাটি থাকতেন এজন্য ফাতিমা তাকে পছন্দ করতেন।[৫] ফাতিমা আলীকে সর্বদা মুহাম্মাদ এর সাথে থাকার নির্দেশ দেন,যাতে মুহাম্মাদ এর কোন বিপদ আপদ না হয়।[৬] মুহাম্মাদ ২৫ বছর বয়সে খাদিজাকে বিয়ে করার আগ পর্যন্ত এই পরিবারেই বেড়ে উঠেন। এজন্য মুহাম্মাদ তাকে দ্বিতীয় মা বলে মনে করতেন।
মুহাম্মাদ ইসলাম প্রচার[৭] শুরু করলে, প্রথম দিকেই ফাতিমা ও তার পুত্র আলী ইসলাম গ্রহণ করেন। ৬২২ খিস্ট্রাব্দে মুহাম্মাদ মদিনায় হিজরতকালে তার সফর সঙ্গীদের মধ্যে ফাতিমাও ছিলেন।
ফাতিমা ও তার পুত্ররা ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই বনু হাশিম গোত্র তাদের বিরোধিতা ও অত্যাচার করতে লাগলো। একসময় অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে মুহাম্মাদ আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে অনুমতি দান করলেন। আবিসিনিয়ায় ফাতিমা নিজে হিজরত না করলেও তার পুত্র জাফর ইবনে আবি তালিব ও তার স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস হিজরত করেন।[৮]
কুরাইশরা যখন দেখলো মুহাম্মাদ এর অনুসারীরা বৃদ্ধি পাচ্ছে ধীরে ধীরে তখন কুরাইশ তাদের সাথে সমস্ত লেনদেন বন্ধ করে দিলে তারা শিবে আবি তালিব পাহাড়ে বন্ধী হয়ে পরেন। এই তিনটি বছর ফাতিমা বিনতে আসাদ সহ বনু হাশিম গোত্রের সবাই ক্ষুধা অনাহারে গাছের পাতা খেয়ে কোন রকম কাটিয়ে দেন।[৯][৯] অবশেষে তিন বছর পর নবুওয়াতের দশম বছরে তারা অবরোধ তুলে নেয়। অন্য মুসলমানদের সাথে ফাতিমা বিনতে আসাদ সহ সবাই মুক্ত জীবনে ফিরে আসেন।
শিবে আবি তালিবে বন্ধী আবু তালিব ও মুহাম্মাদ স্ত্রী মারা গেলে কুরাইশরা অত্যাচার আরো বাড়িয়ে দেন। তখন মক্কার মুসলমানরা বাধ্য হয়ে মদিনায় হিজরত করেন। ফাতিমা বিনতে আসাদও অন্যদের সাথে মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় চলে গেলেন।[১০]
ইবনে সাদ বলেন, ফাতিমা বিনতে আসাদ একজন সৎকর্মশীলা মহিলা ছিলেন। মুহাম্মাদ তাকে দেখতে যেতেন এবং তার গৃহে দুপুরে বিশ্রাম নিতেন।[১১][১২][১৩] মুহাম্মাদ এর কন্যা ফাতিমা এর সাথে তার পুত্র আলী বিবাহ বন্ধন এ আবদ্ধ হন। মুহাম্মাদ(সাঃ)চাচী ফাতিমার জন্য মাঝে মাঝে উপকৌঠন পাঠাতেন।
ফাতিমার মৃত্যুর পর মুহাম্মাদ নিজের জামা দিয়ে তাকে কাফন দিয়েছেন।[১৪][১৫] তার কবরে নেমে তার পাশে শুয়েছেন।[১৬] আস সামহুদী উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মাদ মাত্র পাঁচজনের কবরে নেমেছিলেন তার মধ্যে ফাতিমা বিনতে আসাদ অন্যতম।[১৭][১৮]
কবি আল হাজ্জাজ ইবনে ইলাত আস সুলামী উহুদ যুদ্ধে হযরত আলীর বীরত্ব ও সাহসিকতার প্রশংসা করতে গিয়ে তার মায়েরও প্রশংসা করেন।[১৯][২০]
সাহাবাগণ ফাতিমাকে সম্মান করতেন। জাফর ইবনে আবি তালিব মুতার যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর কবি আহসান ইবনে সাবিত কবিতায় আলী ও তার মায়ের প্রশংসা করেন।[২১]
আরব সমাজে তখন ফাতিমা খুব জনপ্রিয় নাম ছিলো। মুহাম্মাদ এর যুগেই ফাতিমা নামে ২৪ জন মহিলা সাহাবী ছিলেন।[২২][২৩] এর মধ্যে ফাতিমা বিনতে আসাদও মুহাম্মাদ থেকে ৪৬ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি মুত্তাফাক আলাইহি।[২৪]
ইমাম আস সামহুদী তার আল ওয়াফা বি আখবারি দারিল মুস্তাফা গ্রন্থে বলেন যে, ফাতিমা মদিনায় মারা যান এবং তাকে আর রাওহা গোরস্তানে দাফন করা হয়।[১৩] তবে কেও কেও বলেছেন তাকে জান্নাতুল বাকিতে সমাধিস্থ করা হয়। তার দাফন করা হয়েছিলো মুহাম্মাদ এর পরিহিত জামা দিয়ে। তার করবে নেমেছিলো মুহাম্মাদ,আবু বকর ও আব্বাস।[২৫] ফাতিমার মৃত্যুর পর মুহাম্মাদ তার জন্য দোয়া করেন,
“ | এ আমার মা ও প্রতিপালনকারিণী! আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আপনি ছিলেন আমার একজন চমৎকার মা ও চমৎকার প্রতিপালনকারিণী। | ” |
মাহমুদ আহমদ ঘাদানফার। Great Women of Islam. Translated by Jamila Muhammad Qawi. Darussalam Publishers & Distributors, Riyadh. Online at kalamullah.com. pp. 163–167. Retrieved 2013-06-22.