ফাদেলা আমারা | |
---|---|
জন্ম | ২৫ এপ্রিল ১৯৬৪ প্যুঁই দে দোম, ফ্রান্স |
জাতীয়তা | ফ্রান্স |
মাতৃশিক্ষায়তন | ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটান বিশ্ববিদ্যালয় |
রাজনৈতিক দল | সমাজতান্ত্রিক দল |
ফাদেলা আমারা (জন্ম ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪) একজন ফরাসি নারীবাদী এবং রাজনীতিবিদ, যিনি তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন ব্যালিউয়ের দরিদ্র নারীদের একজন প্রতিনিধি হিসেবে। তিনি ফরাসি রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন ফর এ পপুলার মুভমেন্ট (ইউএমপি) সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া ফিলনের নগর উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।[১] তিনি নি প্যুঁত নি সম্যুসেস সংগঠন এর সাবেক সভাপতি।
আমারা ফ্রান্সের প্যুই-দে-দোম দেপার্ত্যমঁ জেলার ক্লের্মোঁ-ফেরঁ শহরে অবস্থিত আলজেরিয়ান বারবার কাবিল উপজাতিদের জরুরি আবাসন এ বসবাসকারী পিতা-মাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। এই শহরকে পরবর্তীতে তিনি বস্তির শহর বলে বর্ণনা করেন। তার শৈশবের এই এলাকাটি মাগরেব থেকে আসা অভিবাসীদের দ্বারা জনবহুল ছিল। তিনি এগারো সন্তানের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তার চার বোন এবং ছয় ভাই ছিল। তার মা ছিলেন একজন গৃহিণী এবং বাবা ছিলেন একজন শ্রমিক, যিনি সপ্তাহের ছুটির দিন সহ সকল কার্যদিবসেই বাজারে কাজ করতেন। নিজের আর্থিক অস্বচ্ছলতা সত্ত্বেও আমরার বাবা আলজেরিয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাতেন এবং জেলার দরিদ্রদের জন্যও কিছু সরিয়ে রাখতেন। সেখানকার নারীদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, "কন্যা, বোন, চাচাতো বোন, মহিলা প্রতিবেশীদের অবশ্যই হয় আজ্ঞাবহ কিন্তু সৎ ক্রীতদাসে মতো আচরণ করতে হবে, অথবা সস্তা বেশ্যার মত আচরণ করতে হবে।স্বাধীনতা বা নারীত্বের যে কোন চিহ্নকে আপত্তিকর এবং উস্কানি হিসেবে দেখা হয়।" [২] যদিও তিনি সাহিত্য পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন, অবশেষে তিনি অফিসের কর্মচারী হিসাবে যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
১৯৭৮ সালে, যখন আমারার বয়স ১৪ বছর ছিল, তখন এক মাতাল ড্রাইভার তার ভাই মালিক এর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়া দেয়। এই দূর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর আঘাতের কারণে মালিক মারা যান। ঘটনাস্থলে চালকের পাশে পুলিশকে দেখে আমারা হতবাক হয়ে যান।[৩]
ক্লারমন্ট-ফেরান্ডের তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী নিবন্ধনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আমারা প্রথম সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন।যখন তার বয়স ১৬ বছর, তখন তিনি যে জেলায় বসবাস করতেন পৌর কর্তৃপক্ষ তা ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি এটি রক্ষার সমর্থন আদায়ের জন্য ঘরে ঘরে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।১৮ বছর বয়সে, প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের মধ্যে মিটিংয়ের মাধ্যমে তিনি নারীর স্বায়ত্তশাসন এবং স্বতন্ত্র চিন্তার বিকাশের লক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশন ডেস ফেমেস পোল ল'ইঞ্চেজ ইন্টারকমিউনোটায়ার (উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন ফর ইন্টারকমিউনাল এক্সচেঞ্জ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা ইসলামী নারীবাদের একটি নতুন উদাহরণ।
১৯৮৩ সালে তিনি বুরস (উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফরাসি) এর একটি গণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, এবং ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি নাগরিক অধিকার সংগঠন এসওএস রেসিস্মের একজন কর্মী ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি ফেডারেশন ন্যাশনাল ডেস মাইসন্স ডেস পোটেস (এফএনএমপি) এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি মহিলা কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শহরাঞ্চল এবং শহরতলিতে মহিলাদের অবস্থান অনুসন্ধান করা এবং সেই সম্প্রদায়ের দাবিগুলি নথিভুক্ত করা।
২০০১ সালের মার্চে তিনি ক্লারমন্ট-ফেরান্ডের পৌর পরিষদে সমাজতান্ত্রিক দলের তালিকায় নির্বাচিত হন।
২০০২ সালে ১৭ বছর বয়সী সোহানে বেনজিয়ানের হত্যাকাণ্ডের পর, নি প্যুঁত নি সম্যুসেস (নারী নয় বেশ্যা, না আজ্ঞাবহ) ব্যানারের তিনি হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে একটি মিছিলের আয়োজন করেন। নীতিবাক্যটি কার্যকর হয় এবং ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠানের নাম হয়ে যায়, যার সভাপতি হন আমারা।
২০০২ সালে তিনি ২৫০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে সোরবনে একটি "মহিলা সংসদ" সংগঠিত করেন, একটি পিটিশন তৈরি করেন যা প্রায় ২০,০০০ স্বাক্ষর অর্জন করে, এবং নি প্যুঁত নি সম্যুসেস দেশব্যাপী সফরের আয়োজন করেন, যা ২০০৩ সালের ৮ মার্চ প্যারিসে গিয়ে শেষ হয়।
সমাজতান্ত্রিক দলের একজন সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর থাকা অবস্থাতেই ২০০৭ সালের ১৯ জুন তিনি ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া ফিলনের দ্বিতীয় ইউএমপি সরকারের নগর উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ২০১০ সালে সরকার ত্যাগ করেন এবং ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের সামাজিক বিষয়ের মহাপরিদর্শক হিসেবে মনোনীত হন।[৪]
বোরকা অধ্যয়ন কমিশনের প্রধান আন্দ্রে জেরিন দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "আমরা এটা মেনে নেব না যে একটি বিশেষ ধর্ম: ইসলাম বা অন্য কিছু, জনসাধারণের জায়গা দখল করে এবং নাগরিক সমাজের উপর তার নিয়মগুলি নির্ধারণ করে। মৌলবাদীদের সাথে এটাই হচ্ছে ... এটা পশ্চিমা সভ্যতার পুরো ইতিহাসের বিরুদ্ধে যায়।"[৫]