আরব কবি হাম্মাম বিন গালিব আল-ফারজদাক | |
---|---|
জন্ম | ৩৮ হি. / ৬৪১ খ্রি. অজ্ঞাত |
মৃত্যু | ১১৪ হি./ ৭৩২ খ্রি. বসরা |
জাতীয়তা | উমাইয়া |
আল-ফারাজদাক (৩৮ হিজরি / ৬৪১ খ্রি.-১১৪ হি./ ৭৩২ খ্রি.) উমাইয়া যুগের অন্যতম কবি. সময়ের, এবং তার নাম হাম্মাম বিন গালিব বিন সাসায়া বিন আদ-দারিমি আত-তামিমি,ডাক নাম আবু ফিরাস, তার মুখ অধিক মোটা হওয়ার কারণে তিনি ফারাজদাক নামে খ্যাত হন, উল্লেখ্য ফারাজদাক শব্দের (الفرزدق) অর্থ পিণ্ড। তার জন্ম বানি তামিম গোত্রের আবাসস্থল কাজিমা অঞ্চলে, যা বর্তমান কুয়েতে অবস্থিত। এরপর তিনি বসরায় বসবাস করেন। প্রশংসা, গর্ব ও নিন্দাসূচক কবিতার জন্য তিনি বিখ্যাত।[১]
৩৮ হিজরিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফারাজদাক ও যুহায়র বিন আবি সুলমার কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। তারা দু’জনেই প্রথম সারির কবি ছিলেন, যুহায়র জাহেলি যুগের, আর ফারজদাক উমাইয়া যুগের।[২] ফারাজদাক প্রচুর নিন্দামূলক কবিতা লিখতেন, এমনকি তিনি নাকাইদ (পরস্পর সমালোচনা কাব্য) কবিতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন, যা তিনি ও কবি জারির ইব্ন আতিয়াহ্ আল খাত্ফিজারির একে অপরের বিরুদ্ধে লিখতেন।
তার সমসাময়িক কবিতার বিষয়বস্তু অনুসারে তিনি প্রচুর গৌরব, নিন্দা ও প্রশংসাসূচক কবিতা রচনা করেছেন। তিনি সিরিয়ার উমাইয়া খলিফাদের প্রশংসায় অনেক কবিতা রচনা করেন, কিন্তু আহল আল-বাইতের সহযোগিতা করার কারণে উমাইয়াদের সাথে তার সম্পর্ক খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। তিনি কবি জারির ও আল-আখতাল’র সমসাময়িক ছিলেন। জারিরের সাথে তার ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ছিল, যদিও তারা একে অপরের বিরুদ্ধে ‘নাকাইদ’ কবিতা রচনা করার কারণে অনেকে ধারণা করেন তারা একে অপরকে হিংসা ও ঘৃণা করতেন। ফারাজদাকের মৃত্যুতে জারির চমৎকার শোকগাঁথা রচনা করেছিলেন।
আহল আল-বাইতের পক্ষে ফারাজদাকের অবস্থান প্রশংসনীয় ছিল। তিনি খলিফাদের সামনে কবিতা আবৃত্তি করতেন। ভাষা তিনি নিজ গোত্রের পাশাপাশি উমাইয়া এবং আলাওয়ীদের (আলী রা.র সমর্থক গোষ্ঠী) প্রশংসায় কবিতা রচনা করতেন। তার কবিতার রচনাশৈলী চমৎকার ও শক্তিশালী, আরবি কবিতায় তিনি প্রচুর দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় আরবি শব্দ ব্যবহার করতেন। এজন্য বলা হয়ে থাকে:
ফারাজদাকের কবিতা না হলে আরবি ভাষার এক-তৃতীয়াংশ শব্দ বিলুপ্ত হয়ে যেত।
তিনি তার সময়ের প্রধান কবিদের একজন ছিলেন।
হিশাম বিন আব্দুল মালিক একবার হজ্জ করার জন্য সহচরদের নিয়ে মক্কায় গিয়েছিলেন, তার সাথে কবি ফারাজদাকও ছিলেন। সেবছর হারাম শরীফে হাজীদের ভীড় ছিল প্রচুর, তাই হিশাম তাওয়াফ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না, তিনি অপেক্ষা কছিলেন। সে মুহূর্তে আলি ইবনে হুসাইন জয়নুল আবেদিন আগমণ করলেন, জনসাধারণ তার জন্য পথ ছেড়ে দিল, এমনকি তিনি হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌছুতে সক্ষম হলেন। এ অবস্থা দেখে হিশামের দেহরক্ষী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি (জয়নুল আবেদিন) কে? হিশাম তখন বললেন আমি একে চিনি না, যদিও তিনি জয়নুল আবেদিনকে চিনতেন।[৩]
তখন আরব কবি ফারাজদাক কবিতা রচনা করে উত্তর দিলেন। তার কবিতার প্রথম লাইন ছিল:
“তিনি তো সেই ব্যক্তি, যার পদচিহ্ন মরুভূমির বালুকণাও চিনে,
এমনকি তাকে বায়তুল্লাহ, হিল্ল-হারামও চিনতে পারে।”
তিনি ইরাকের বসরা শহরে ১১৪ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন।