অন্যান্য নাম | ফালাফেল |
---|---|
প্রকার | স্ট্রিট ফুড |
অঞ্চল বা রাজ্য | লেভ্যান্টের উত্তরে বিস্তৃতির পূর্বে মিশরে তৈরি করা হতো বলে বিশ্বাস করা হয়। |
পরিবেশন | গরম |
প্রধান উপকরণ | ফ্যাবা বিন্স বা ছোলা |
ফালাফেল (/fəˈlɑːfəl/; আরবি: فلافل, [fæˈlæːfɪl] () হল একটি )ডুবো তেলে ভাজা ফ্রাইবল বা পেটি যা তৈরী হয় ছোলা কিংবা মটরশুটি (কিংবা দুটোই) দিয়ে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার, সাধারণত পিঠার ভিতরে পুরে দেওয়া হয় কিংবা লাফা নামের একপ্রকার রুটি দিয়ে মোড়ানো থাকে। আবার এভাবে বানানো একপ্রকার স্যান্ডইচকেও ফালাফেল বলা হয়। ভাজা বলগুলোর উপরে সালাদ, সব্জি বা পিকল, হট সস বা তিলের সস দিয়ে টপিং দেওয়া হয়। ফালাফেল বলগুলোকে এমনিতেও খাওয়া যায় আবার ঐতিহ্যবাহী জর্ডানি ডিসের সাথেও একটা আইটেম হিসেবে পরিবেশিত হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্রই ফালাফেল একটা খুব প্রচলিত খাবার। এই ভাজাপোড়া আইটেমটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন যায়গায় স্ট্রিট ফুড হিসেবে মাংসের বিকল্প হিসেবে পাওয়া যায়। সাইপ্রাসে এই জনপ্রিয় খাবারটি φελάφελ নামে পরিচিত। .[১]
আরবিতে ফিলফিল মানে হল মরিচ, আর ফালাফেল শব্দটি হল ফিলফিলেরই বহুবচন। এই শব্দটিই আশেপাশের সব এলাকায় ছড়িয়ে গেছে যেমন পার্সিয়ান পিলপিল। শব্দটি সংস্কৃত "পিপ্পালি" (पिप्पली) থেকে এসেছে যার মানে "লম্বা মরিচ"। অথবা সিরীয় ফিলফাল (পূর্বের পিলপাল) যার মানে "ছোট গোল বস্তু" থেকেও আসতে পারে। এভাবেই ফালাফেল শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ দাড়ালো "গোলাকার ছোট বল"।
একটা মিশরীয়-খৃষ্টীয় উৎপত্তি মতবাদ অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে প্রস্তাবিত হয়েছে যাতে মনে করা হয় "ফা লা ফেল" অর্থ "অনেকগুলো মটরশুটির"। [২]
যেটাই হোক, আরবি শব্দ ফালাফেল একটা খাবারের নাম হিসেবেই আরও অন্যান্য ভাষায় ঢুকে যায় এবং পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪১ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রথম একে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[৩][৪]
ফালাফেল অবশ্য মিশরে তা'আমিয়া (মিশরীয় আরবি: طعمية) নামে পরিচিত যা কিনা খাবারের আরবি প্রতিশব্দ তা'ম এর একটি সংক্ষেপিত রুপ যা কিনা অর্থ করলে দাড়ায় "একটুকরা ছোট খাবার" অথবা "ছোট সুস্বাদু বস্তু"।[৫][৬][৭]
যাইহোক, ফালাফেল বলতে বুঝায় সবজির চপটি কিংবা ফালাফেল দেয়া স্যান্ডুইচ উভয়ই।[৮]
ফালাফেল আসলো কোথা থেকে এটা অজ্ঞাত এবং বিতর্কিত। প্রচলিত ভাষ্যমতে এই খাবারের উৎপত্তি হয়েছিল মিশরে। মিশরীয় খৃষ্টানদের দ্বারা খাওয়া হত লেন্ট চলাকালে, কারণ এই সময় মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। আর যেহেতু আলেকজান্দ্রিয়া ছিল বন্দর নগরী তাই এটাই খুব স্বাভাবিক যে এই খাবারটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অন্চলে ছড়িয়ে গেল। পরবর্তীতে এই খাবারটা লেভ্যান্ট অন্চলে ছড়িয়ে গেল এবং মটরশুটির যায়গা করে নিল ছোলা। তবে এটা অনুমেয় যে এই ইতিহাস ফারাওনিক মিশরের সময়েও বিবর্ধিত হবে। .[৯]
ইতিমধ্যে ফালাফেল সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে একটি অতি সাধারণ স্ট্রীট ফুড বা ফাস্ট ফুড হিসেবে যায়গা করে নিয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় অন্চলে এই বিশেষ চপটি নিয়মিতই খাওয়া হত। রোজার মাসে ইফতার হিসেবেও ফালাফেল খাওয়া হয়, সারাদিন রোজা রাখার পর সূর্যাস্তের মুহুর্তে উপবাস ভাঙার সময়। একসময় ফালাফেল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠল যে ম্যাকডোনাল্ড’সও কয়েকটি দেশে "ম্যাকফালাফেল" বিক্রি করতে শুরু করল। এখনও ফালাফেল মিশরীয় খ্রিস্টানদের মধ্যে এত জনপ্রিয় যে ধর্মীয় উৎসবগুলোর সময় বিশাল আকারে ফালাফেল বানানো হয়। ফালাফেলের উৎপত্তি নিয়ে এমনও বিতর্ক আছে যা কিনা মাঝেমাঝেই আরব এবং ইসরায়েলিদের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়েও রাজনৈতিক আলোচলায় গড়ায়। আধুনিক সময়ে ফালাফেলকে মিশর, প্যালেস্টাইন এবং ইসরাইলের জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্যালেস্টাইনিরা প্রায়ই ইসরাইলিদের ফালাফেল নিয়ে অতি আগ্রহের কারণে বিরক্তিবোধ করে। আরও উল্লেখ্য যে, লেবানীজ ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস এসোসিয়েশন ফালাফেল নিয়ে ইসরাইলিদের হস্তক্ষেপকে কপিরাইট লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করে জনমত গড়ে তুলেছে।[১০][১১][১২]
ইসরায়েলিয় খাবারে ফালাফেল একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং দেশটির জাতীয় খাবার হিসেবেও ব্যাপক স্বীকৃতি রয়েছে। যদিও ফালাফেল ইহুদীদের খাবার নয় তারপরও এটা মিজরাহী ইহুদীদের দ্বারা তাদের দেশে খাওয়া হত। তারপর এটা প্রথমদিককার প্যালেস্টাইনে আসা ইহুদীদের অভ্যাসের ভিতর রয়ে গেল। যেহেতু খাবারটা সম্পূর্ণ গাছের উপাদানসমূহ থেকেই আসে, ইহুদীদের খাদ্যাভ্যাস হিসেবে এটা পারেভ বিবেচিত হল যেহেতু এটা মাংসজাত বা দুগ্ধজাত খাবারের সাথেও খাওয়া যায়।[১৩]
২০১২ সালে, ইসরায়েলিদের খাবারটির উৎপত্তি সমন্ধে বক্তব্য ভাংতে এবং এর আরবীয় উৎপত্তি সমন্ধে সবাইকে জানাতে জর্ডানের রাজধানী আম্মানের একটি হোটেলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফালাফেলটি বানায় যার ওজন ছিল আনুমানিক ৭৫ কেজি। যা পূর্ববর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ইহূদীদের খাবারের ফেস্টিভালে প্রদর্শিত সবচেয়ে বড় ফালাফেলের রেকর্ডটিকে ভেঙে ফেলে।[১৪][১৫]
১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফালাফেল কেবল মধ্যপ্রাচ্যীয় এবং ইহুদী জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতেই এবং সেখানকার খাবারের দোকানে পাওয়া যেত।[১৩][১৬][১৭][১৮] এখন এই খাবারটি খুবই সহজলভ্য এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে স্ট্রীট ফুড হিসেবে জনপ্রিয়। [১৯][২০][২১]
ফালাফেল নিরামিষাশী এবংভেগ্যানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাংশবহুল স্ট্রীট ফুডের বিকল্প হিসেবে এবং ইতোমধ্যে এটা "হেলথ ফুড" এর দোকানগুলোতেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে মনে করা হচ্ছিল এটা কেবল ভেগি-বার্গারেই ব্যবহার করা হবে, সেখানে এটা বর্তমানে অনেক মানুষের আমিষের চাহিদা পূরন করতে অন্যতম পছন্দ। যুক্তরাষ্ট্রে ফালাফেলের পরিবর্ধিত রুপ, মিটলোফ, স্লপি জো, স্প্যাজেটি এবং মিটবল হিসেবে ভেজিটেবল ডিসে ব্যবহার করা হচ্ছে। [২২][২৩]
ফালাফেল বানানো হয় মটরশুটি থেকে অথবা ছোলা থেকে অথবা এই দুইটা মিক্স করে। মটরশুটি থেকে বানানোই প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যে বেশি দেখা যায়। সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, ইসরাইল আর প্যালেস্টাইনে সাধারণত মটরশুটি দিয়েই বানানো হয়। এটাই পশ্চিমা দেশ গুলোতে সর্বাধিক জনপ্রিয়। মিশরীয়রা অবশ্য ছোলা ব্যবহার করে, এতেই নাকি খেতে বেশি মজা লাগে বলে ওদের বিশ্বাস। ওরা আরও দাবি করে ফালাফেল নাকি প্রথমে এভাবেই বানানো হত।[২৪]
মটরশুটির ক্ষেত্রে, বানানোর আগে মটরশুটিগুলো ভাজা হত না, ভাজা হলে ফালাফেল ভেঙে যেত, তখন আবার খানিকটা ময়দা মেশাতে হত ধরে রাখার জন্যে। তাই সেটার পরিবর্তে সেগুলো প্রথমে সারারাত ধরে (কখনো বেকিং সোডাসহ) পানিতে ভিজিয়ে রাখা হত। তারপর নানারকম উপাদানের সাথে মিশানো হত যেমন ধনেপাতা, পিঁঁয়াজের কলি এবং রসুন। ফ্লেভারের জন্যে প্রায়ই বিভিন্ন রকম মসলা যেমন ধনিয়া আর জিরা ব্যবহার করা হত। ছোলা ব্যবহারের ক্ষেত্র ছোলা প্রথমে শুকানো হত। তারপর আবার আগের নিয়মে ভিজিয়ে রেখে পিঁয়াজ, ধনেপাতা, কাঁচা ধনে, জিরা এবং শুকনা ধনের সাথে বেঁটে মিশানো হত। পরে পুরো জিনিসটা একটা বলের আকার ধারণ করত। একাজটা হাতে করা যেত কিংবা আলেব ফালাফেল ব্যবহার করা হত। এই মিক্সচারটিকেই ডুবো তেলে ভাজা হত বা এখন অবশ্য ওভেনে বেকও করা যায়।
যদি এমনি এমনি পরিবেশন করা না হয় তাহলে ফালাফেলকে লাফা নামক একপ্রকার না ফুলা রুটিতে মুড়িয়ে অথবা ফাপা পিঠার ভিতরে ভরে পরিবেশন করা হয়। টমেটো, লেটুস, শসা ইত্যাদি দিয়ে ফালাফেলকে সাজানো হয় এবং পরিশেষে তাহিনি বা একপ্রকার তিলের সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। [২৫]
ফালাফেল সচরাচর বলের আকৃতির হলেও একে অন্য যে কোন আকৃতি (যেমন ডোনাটের মত) দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভিতরের অংশটা ধনেপাতা বা সবুজ পেঁঁয়াজ বা অন্য যেকোন সবুজ সবজি দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া যায়।
মটরশুটি দিয়ে বানানো হলে ফালাফেলে প্রচুর পরিমানে আমিষ, জটিল শর্করা আর আঁশ থাকে। মূল পুষ্টিকর উপকরন গুলো হল: ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, প্যানতোথেনিক এসিড, ভিটামিন বি আর ফলেট। কাইটোকেমিক্যালের মধ্যে আছে বিটা ক্যারোটিন। ফালাফেলে আছে প্রচুর পরিমানে দ্রবনীয় আঁশ যা কিনা রক্তের কোলেস্টোরেল কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। [২৬][২৭]
মটরশুটিতে ফ্যাট খুম কম থাকে, আর কোলেস্টোরেল তো থাকেই না কিন্তু তেলে ভাজার সময় এগুলো কিছুটা ঢুকে পড়ে। যদি সত্যিই এই পুষ্টিমানের বিষয়টা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে তেলে ভাজার পরিবর্তে উনুনে বেক করলেই এই অতিরিক্ত কোলেস্টোরেল আর ফ্যাটের ব্যপারটা এড়িয়ে যাওয়া যাবে।[১৭][২৮] আর সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাদে এবং গাঠনিক আকারে পরিবর্তন আসবে। এটা কেবল তখনই করা উচিত যখন এর ভোক্তা ডায়বেটিস বা এরকম কোন জটিল রোগে আক্রান্ত। [২৯]
বর্তমান রেকর্ডটি আছে জর্ডানের আম্মামের দখলে যেখানে ফালাফেল বলটির ওজন ৭৪.৭৫ কেজি (১৬৪.৪ পাউন্ড)। অতীতের রেকর্ডটি ছিল ২৩.৯৪ কেজির, (১.১৭ মিটার পরিধি এবং .৩ মিটার উচ্চতার) ২০১১ সালের ১৫ মে তারিখে যুক্তরাষ্টের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যালেনসিয়াতে কলেজ অফ দ্য ক্যানিয়নের মাঠে অনুষ্ঠিত সান্তা ক্লারিতা ভ্যালি জিউয়ীশ ফুড এ্যান্ড কালচারাল ফেস্টিভালে।[৩০]
২০১০ সালের মে মাসের ৯ তারিখে বৈরুতের (লেবানন) আল কাফাত ইউনিভার্সিটির শেফ আর তার ছাত্রবৃন্দের পরিবেশিত ফালাফেল যার সর্বমোট ওজন ছিল ৫১৭৩ কেজি বা ১১,৪০৪ পাউন্ড ৮ আউন্স।[৩১]
ফালাফেল সংক্রান্ত একটা উপন্যাস আছে ( হি ডাইড উইথ এ ফালাফেল ইন হিস হ্যান্ড) এবং অন্তঃত দুটো ছায়াছবি আছে ( ফালাফেল এবং হি ডাইড উইথ এ ফালাফেল ইন হিস হ্যান্ড)
Φαλαφελ (fåˈlåfālˈ) m. Falafel. (lit. that which has lots of beans). See Φα, Λα, Φελ.