ফিরিঙ্গি হলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত একটি শব্দ। ইউরোপীয় জাতি বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[১] ফারসি শব্দ "ফিরাঙ্গি" (ফার্সি: فرنگى) থেকে এটি উৎপত্তি লাভ করে।[১] এছাড়াও ইউরোপীয় ও ভারতীয় মিশ্রণে জাত বর্ণসংকর জাতি বোঝাতেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[২]
ইউরোপীয়দের মধ্যে পর্তুগিজরাই প্রথম বাংলায় আসে। এ অঞ্চলে পর্তুগিজদেরই ফিরিঙ্গি বলা হয়।[৩]
ফিরিঙ্গি শব্দের উদ্ভব পর্তুগিজ শব্দ ফ্রান্সেস (Frances) থেকে, যা দিয়ে যেকোনো ইউরোপীয় জাতি বুঝানো হত। ইংরেজিতে ফিরিঙ্গি শব্দের চারটি বানান দেখা যায়- Feringi, Firingi, Feringee, Feringhee। বাংলা ভাষায় ফিরিঙ্গি শব্দের তিনটি মূল অর্থ রয়েছে। যথা: পর্তুগিজ ও ভারতীয় মিশ্রণজাত জাতি, ইউরেশীয় ও বিদেশি খ্রিস্টান। বঙ্গদেশে এক সময়, বিশেষত ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে, ফিরিঙ্গি শব্দটি সম্মানার্থে ব্যবহার করা হত। যেমন অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'প্রবর্ত্তক' পত্রিকার ১৩২৮ সংখ্যায় লেখা হয়: "সকল মঙ্গলালয় গাছপার কোরর্ণের (Gasper Gornet) ফিরিঙ্গী সুচরিতেষু"। [৪]
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের মতে, ফরাসি franc হতে Feringi, Firingi, Feringee, Feringhee শব্দ চারটির উৎপত্তি। তিনি তার অভিধানে লিখেছেন,
"আরব ও পারসিকদিগের সহিত প্যালেষ্টাইন লইয়া ধর্মযুদ্ধের (crusade) সময় সমস্ত য়ুরোপের খ্রিস্টানগণ ফ্রাঙ্ক নামে অভিহিত হইতেন। ঐ সময়ে সকলের বোধগম্য যে এক নতুন ভাষার সৃষ্টি হয়, তাহার নাম Lingua Franca বা ফ্রাঙ্ক ভাষা। পারসীক বা আরবীয়েরা উহা ফেরঙ্গ এইরূপ উচ্চারণ করিত। উহারই অপভ্রংশ ফিরিঙ্গি। পাশ্চাত্য দেশ অর্থে ফিরঙ্গ দেশ, তদ্দেশবাসী ফিরিঙ্গি। এ ফেরঙ্গ শব্দের অপভ্রংশ ফিরিঙ্গি।"[৪]
আবুল ফজলের 'আইন-ই-আকবরি' ও ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের 'অন্নদামঙ্গল'-এ ফার্সি 'ফিরঙ্গ' (فرنگى) বলতে শুধু পর্তুগিজদের বোঝানো হয়েছে।
"ফিরিঙ্গি", "ফিরঙ্গ", "ফেরঙ্গ" বা "ফিরিঙ্গী" রূপে ইউরোপীয় জাতি অথবা ইন্দো-ইউরোপীয় বর্ণ সংকর জাতিকে বোঝাতে বাংলা ভাষায় এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কখনো কখনো শব্দটি "ফরাসি জাতি"কে নির্দেশ করে।[১] "ফিরঙ্গি" বা "ফিরঙ্গিন" শব্দটি বিদেশি পুরুষ অর্থ পরিগ্রহ করে। এছাড়াও সিফিলিস নামক যৌন রোগকে অনেক সময় "ফিরিঙ্গি রোগ" নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।[১]
চাঁটগাঁইয়া ভাষায় শব্দটি এক সময় পর্তুগিজদের ইঙ্গিত করতে ব্যবহার করা হতো। পর্তুগিজরা ছিল বিদেশি। স্থানীয় চাঁটগাঁইয়ারা পর্তুগিজ শাসন আমলে এই পর্তুগিজদের "ফিরিঙ্গি" বলে ডাকতো।
বর্তমানে শব্দটি শুধুমাত্র বিদেশি অর্থে ব্যবহার করা হয়।
শব্দটি হিন্দি ও নেপালি ভাষায়ও ব্যবহার করা হয়। সেখানে শব্দটির উচ্চারণ অনেকটা "ফিরাঙ্গী" বা "ফিরঙ্গী"।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]