ফিলিপ সিমোর হফম্যান (২৩ জুলাই ১৯৬৭ - ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪) ছিলেন একজন মার্কিন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। তিনি পার্শ্ব ও চরিত্র অভিনেতা হিসেবে তার বিচিত্রধর্মী কাজের জন্য সুপরিচিত। তিনি ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে ২০১৪ সাল তার মৃত্যু পর্যন্ত অসংখ্য চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রে তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একটি করে একাডেমি পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, বাফটা পুরস্কার ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার অর্জন করেন।
কিশোর বয়সেই মঞ্চনাটকে আকৃষ্ট হয়ে হফম্যান নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিশ স্কুল অব দ্য আর্টসে অভিনয় বিষয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি ১৯৯১ সালে ল অ্যান্ড অর্ডার টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পর্দায় কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৯২ সাল থেকে চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করেন। তিনি বুগি নাইটস (১৯৯৭), হ্যাপিনেস (১৯৯৮), প্যাচ অ্যাডামস (১৯৯৮), দ্য বিগ লেবভ্স্কি (১৯৯৮), ম্যাগনোলিয়া (১৯৯৯), দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপলি (১৯৯৯), অলমোস্ট ফেমাস (২০০০), পাংক-ড্রাংক লাভ (২০০২), ও অ্যালং কেম পলি (২০০৪) ছবিতে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি মাঝে মাঝে কেন্দ্রীয় চরিত্রেও কাজ করেন। ক্যাপোটি (২০০৫) ছবিতে লেখক ট্রুম্যান ক্যাপোটি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন।[১] তার কর্মজীবনের ব্যপ্তি বিস্তৃত হতে থাকে এবং তিনি চার্লি উইলসন্স ওয়ার (২০০৭) ছবিতে সিআইএ অফিসার, ডাউট (২০০৮) ছবিতে পেডোফিলিয়ার জন্য অভিযুক্ত যাজক, ও দ্য মাস্টার (২০১২) ছবিতে সায়েন্টোলজি-ধরনের আন্দোলনের নেতা চরিত্রে অভিনয় করে আরও তিনটি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
১৯৯৫ সালে তিনি অফ-ব্রডওয়ে লাবাইরিন্থ থিয়েটার কোম্পানিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি মঞ্চনাটক পরিচালনা ও প্রযোজনার পাশাপাশি অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন। ব্রডওয়েতে ট্রু ওয়েস্ট (২০০০), লং ডেস জার্নি ইনটু নাইট (২০০৩) ও ডেথ অব আ সেলসম্যান (২০১২) মঞ্চনাটকে অভিনয় করে তিনি তিনবার টনি পুরস্কারে মনোনীত হন।
২০০৯ সালে মঞ্চে হফম্যান পিটার সেলার্সের ভবিষ্যতব্য মঞ্চনাটক ওথেলো-এ আইয়াগো চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জন অর্টিজ। এই কাজটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে।[২] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মঞ্চ সমালোচক বেন ব্র্যান্টলি "ধৈর্যচ্যুতি ঘটানো ভুল বুঝানো নির্মাণ" বলে অভিহিত করে বলেন যখন হফম্যান অন্যদের আত্মবিনাশের দিকে ধাবমান করছিলেন, তিনি অকৃত্রিম ও অগ্নিশর্মা হয়ে সবকিছু বিনষ্ট করার নিকটে চলে আসার প্রচেষ্টা করছিলেন।[৩] হফম্যান প্রথমবারের মত ক্লেমেশন চলচ্চিত্র ম্যারি অ্যান্ড ম্যাক্স-এ কণ্ঠ দেন, তবে চলচ্চিত্রটি শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি দেওয়া হয়নি।[৪] তিনি নাম চরিত্র অ্যাসপারগারের লক্ষণে আক্রান্ত নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা ম্যাক্সের ভূমিকায় কণ্ঠ দেন, অন্যদিকে অপর নাম চরিত্র তার কলম বন্ধু অস্ট্রেলীয় তরুণী ম্যারির ভূমিকায় কণ্ঠ দেন টনি কোলেট। হফম্যান এরপর অ্যানিমেশনে আবার কাজ করেন, এইবার তিনি শিশুতোষ অনুষ্ঠান আর্থার-এর একটি পর্বে কণ্ঠ দেন এবং অ্যানিমেটেড অনুষ্ঠানে সেরা অভিনয় বিভাগে একটি ডেটাইম এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৫] এই বছরে এরপর তিনি রিচার্ড কার্টিসের ব্রিটিশ হাস্যরসাত্মক দ্য বোট দ্যাট রকড (পাইরেট রেডিও নামেও পরিচিত) চলচ্চিত্রে একজন ব্রাস মার্কিন ডিস্ক জকি চরিত্রে বিল নাইয়ি ও রিস ইফান্সের সাথে অভিনয় করেন।[৬] এছাড়া তিনি রিকি জারভেজের দি ইনভেনশন অব লাইং-এ বারটেন্ডার চরিত্রে ক্ষণিক চরিত্রে অভিনয় করেন।[৭]