ফুজি (যুদ্ধজাহাজ)

১৯০৮ সালে বন্দরে নোঙ্গররত অবস্থায় ফুজি
ইতিহাস
জাপানী সম্রাজ্য
নাম: ফুজি
নামকরণ: ফুজি পর্বত
নির্মাণাদেশ: ১৮৯৪
নির্মাতা: টেমস আয়রন ওয়ার্কস, ব্ল্যাকওয়াল, লন্ডন
নির্মাণের সময়: ১লা আগস্ট ১৮৯৪
অভিষেক: ৩১শে মার্চ ১৮৯৬
কমিশন লাভ: ৮ই আগস্ট ১৮৯৭
ডিকমিশন: ১৯২৩
Reclassified: ১ সেপ্টেম্বর ১৯২২
নিমজ্জনের সময়: ১ সেপ্টেম্বর ১৯২২
নিয়তি: ১৯৪৮ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার ও শ্রেণী: ফুজি-ক্লাস প্রাক-ড্রেডনট যুদ্ধজাহাজ
ওজন: ১২৮৩০ টন (সাধারণ অবস্থায়)
দৈর্ঘ্য: ১২৫.৬ মিটার (৪১২ ফুট)
প্রস্থ: ২২.২৫ মিটার (৭৩ ফুট)
ড্রাফট: ৮ মিটার (২৬ ফুট ৩ ইঞ্চি)
ইনস্টল ক্ষমতা:
  • ১৩,৫০০ অশ্বশক্তি (১০,১০০ কিলোওয়াট)
  • ১০ সিলিন্ডারের বয়লার
প্রচালনশক্তি: ২টি শ্যাফট ও ২টি উল্লম্ব ত্রিপল এক্সপ্যানসন স্টিম ইঞ্জিন
গতিবেগ: ১৮ নট
সীমা: ৪০০০ নটিক্যাল মাইল ( ১০ নট গতিতে)
লোকবল: ৬৫০
রণসজ্জা:
  • ২ × ২ – ১২ ইঞ্চি (৩০৫ মি.মি.) কামান
  • ১০ × ১ – ৬ ইঞ্চি (১৫২ মি.মি.) কামান
  • ২০ × ১ – ৩ পাউন্ডার কামান
  • ৪ × ১ – ২.৫ পাউন্ডার কামান
  • ৫ × ১ – ১৮ ইঞ্চি টর্পেডো টিউব
যুদ্ধোপকরণ:

ফুজি (富士) ছিল ১৮৯০ এর দশকের শেষের দিকে জাপানী সম্রাজ্যের জন্য ব্রিটিশ টেমস আয়রন ওয়ার্কসের তৈরী ফুজি ক্লাসের প্রথম যুদ্ধজাহাজ। এই জাহাজটি ১৯০৪-১৯০৫ সালে অনুষ্ঠিত রুশ-জাপান যুদ্ধের আর্থার বন্দরের যুদ্ধ-এ অংশ গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও হলুদ সাগরের (ইয়োলো সী) যুদ্ধ ও শুশিমা স্ট্রেইটের যুদ্ধেও এটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যুদ্ধে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে একে মেরামত করে ১৯১০ সালে সমুদ্রতট রক্ষা ও অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজে নিয়োজিত করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯২২ সালে এটি সমুদ্রে যাওয়ার অনুপযোগী হয়ে গেলে সৈন্যদের ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। পরে ১৯৪৮ সালে একে একেবারে ভেঙ্গে ফেলা হয়।

নকশা ও বিবরণ

[সম্পাদনা]
ফুজির নীল নকশার অনুলিপি

ফুজি ছিল ৪১২ ফুট লম্বা, ৭৩.৫ ফুট বিম ও ২৬ ফুট ড্রাফট বিশিষ্ট। সাধারণত খালি অবস্থায় এটি ১২,৭০০ টন ওয়াটার ডিসপ্লেসমেন্ট করত এবং সমুদ্রে সচল রাখতে প্রায় ৬৫০ জন নাবিকের প্রয়োজন পড়ত। এটি চালানোর জন্য দুটি উলম্ব ত্রিপল এক্সপ্যানসন স্টিম ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল যাদের প্রত্যেকটি ১০টি করে স্টিম বয়লারের সাহায্যে শক্তি উৎপাদন করত। সম্মিলিত ভাবে এরা প্রায় ১৩,৫০০ অশ্বশক্তি উৎপাদন করত যা এই প্রায় ১২৭০০ টনের জাহাজটিকে সর্বোচ্চ ১৮.৫ নট গতিতে চালাতে সক্ষম ছিল। এতে জ্বালানী হিসেবে স্বভাবতই কয়লা ব্যবহৃত হত এবং জাহাজে প্রায় ১২০০ টন কয়লা রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল। এই পরিমাণ কয়লা দ্বারা এই জাহাজটি ১০ নট গতিতে ৪০০০ নটিক্যাল মাইল বা ৭,৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম ছিল।[]

নির্মাণ ও কর্মজীবন

[সম্পাদনা]
ফুজি যুদ্ধজাহাজের সামনের বুরুজের ১২ ইঞ্চি কামান (১৯০৮)

১৮৯০ এর দশকে জাপানীরা তাদের নৌবাহিনীর ব্যাপক আধুনিকীকরণ শুরু করে কিন্তু সেসময় তাদের আধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরীর অভিজ্ঞতা প্রায় ছিল না বললেই চলে। তাই এই ফুজিকে তৈরীর দায়িত্ব দেয়া হয় লন্ডনের টেমস আয়রন ওয়ার্কসকে। ১লা আগস্ট ১৮৯৪ সালে টেমস আয়রন ওয়ার্কসের অধীনে তাদের লন্ডনের ব্ল্যাকওয়ালে অবস্থিত শিপইয়ার্ডে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়[] এবং ১৮৯৭ এর আগস্টে এটি নির্মাণ শেষে নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়।[] এটির নির্মাতা টেমস আয়রন ওয়ার্কস হলেও এটি প্রায় ২৪০ জন জাপানি ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধায়নে তৈরী হয় যাতে তারা আধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরী সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে ও পরবর্তীকালে নিজেদের দেশেই তৈরী করতে পারে।

যখন রুশ-জাপান যুদ্ধ শুরু হয় তখন এই জাহাজের কমান্ডার ছিল ক্যাপ্টেন মাৎসুমোটো কাযু[] এবং তার অধীনেই এটি ৯ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবাহিনীকে আর্থার বন্দরে আক্রমণ করে রুশদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এরপরে এটি আবার ১০ই মার্চ আর্থার বন্দরে গোলাবর্ষণ করে যদিও এবার এটি রুশদের খুব একটা ক্ষতি সাধন করতে পারেনি[]। পরে ২২শে মার্চ তারিখে এটি আবার আর্থার বন্দরে আক্রমণ করে কিন্তু এবার রুশরা প্রস্তুত ছিল এবং তাদের আক্রমণে ফুজির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। পরবর্তীতে পীতসাগরের যুদ্ধে এর কোন ক্ষতি না হলেও শুশিমা স্ট্রেইটের যুদ্ধে এটির গায়ে প্রায় ১২টির বেশি কামানের গোলা লাগে।

১৯১০ সালে এর স্টিম বয়লারগুলোকে পাল্টিয়ে অধিক শক্তিশালী বয়লার লাগানো হয় এবং প্রধান কামানগুলোকে জাপানে তৈরী কামান দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। তখন এটিকে জাপানের সমুদ্রতট রক্ষার কাজে ও একই সাথে অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজে নিয়োজিত করা হয় এবং ১৯২২ সালে এর অস্ত্র সরিয়ে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি এই কাজেই নিয়োজিত ছিল[]। যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তখন এটিকে কুরে শহর রক্ষার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছিল[]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটিতে যুদ্ধাস্ত্র না থাকায় স্বভাবতই এটি সরাসরি যুদ্ধে ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল; তখন এটিকে জাপানের ইয়োকোসুকায় সৈন্যদের ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়[]। যুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে ১৮ই জুলাই ১৯৪৫ সালে যখন ইয়োকোসুকায় যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করে[] তখন এটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে একে ভেঙে ফেলা হয়[]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. Jentschura, Jung & Mickel, p. 16
  2. Silverstone, p. 327
  3. Jentschura, Jung & Mickel, p. 17
  4. Kowner, Historical Dictionary of the Russo-Japanese War, p. 223-224.
  5. Brook, p. 269
  6. Jentschura, Jung & Mickel, pp. 16–17
  7. Preston, p. 184
  8. Tully

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  • ব্রক, পিটার (১৯৮৫)। "Armstrong Battleships for Japan"। ওয়ার্সশিপ ইন্টারন্যাশনাল (ইংরেজি ভাষায়)। তোলেদো, ওহাইও: আন্তর্জাতিক নৌ গবেষণা সংস্থা। XXII (৩): ২৬৮–৮২। আইএসএসএন 0043-0374 
  • Chesneau, Roger; Kolesnik, Eugene M., সম্পাদকগণ (১৯৭৯)। Conway's All the World's Fighting Ships 1860–1905 (ইংরেজি ভাষায়)। গ্রীনিচ, যুক্তরাজ্য: কনওয়ে মেরিটাইম প্রেস। আইএসবিএন 0-8317-0302-4 
  • Forczyk, Robert (২০০৯)। Russian Battleship vs Japanese Battleship, Yellow Sea 1904–05 (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য: অস্প্রি। আইএসবিএন 978 1-84603-330-8 
  • Fukui, Shizuo (১৯৯১)। Japanese Naval Vessels at the End of World War II (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: গ্রিনহিল বুকস। আইএসবিএন 1-85367-125-8 
  • Hoare, J.E. (১৯৯৯)। Britain and Japan, Biographical Portraits, volume = III। RoutledgeCurzon। আইএসবিএন 1-873410-89-1 
  • Jane, Fred T. (১৯০৪)। The Imperial Japanese Navy। লন্ডন, কলকাতা: Thacker, Spink & Co। ওসিএলসি 1261639 
  • Jentschura, Hansgeorg; Jung, Dieter; Mickel, Peter (১৯৭৭)। Warships of the Imperial Japanese Navy, 1869–1945 (ইংরেজি ভাষায়)। অ্যানাপোলিস, মেরিল্যান্ড: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৌ ইনস্টিটিউট। আইএসবিএন 0-87021-893-X 
  • Kowner, Rotem (২০০৬)। Historical Dictionary of the Russo-Japanese War (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow। আইএসবিএন 0-8108-4927-5 
  • Preston, Antony (১৯৭২)। Battleships of World War I: An Illustrated Encyclopedia of the Battleships of All Nations 1914–1918 (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: গালাহ্যাড বুকস। আইএসবিএন 0-88365-300-1 
  • Silverstone, Paul H. (১৯৮৪)। Directory of the World's Capital Ships (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: হিপপোক্রেন বুকস। আইএসবিএন 0-88254-979-0 
  • Tully, A.P. (২০০৩)। "Nagato's Last Year: July 1945 – July 1946"Mysteries/Untold Sagas of the Imperial Japanese Navy (ইংরেজি ভাষায়)। Combinedfleet.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১১ 
  • Warner, Denis; Warner, Peggy (২০০২)। The Tide at Sunrise: A History of the Russo-Japanese War, 1904–1905 (ইংরেজি ভাষায়) (২য় সংস্করণ)। লন্ডন: ফ্রাঙ্ক ক্যাস। আইএসবিএন 0-7146-5256-3 

অন্যান্য প্রবেশদ্বার

[সম্পাদনা]