ফুলরেণু গুহ | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ফুলরেণু দত্ত ১৩ আগস্ট ১৯১১ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ |
মৃত্যু | ২৮শে অগস্ট ২০০৬ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ |
জাতীয়তা | ভারত |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
অন্যান্য রাজনৈতিক দল | যুগান্তর পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | ডঃ বীরেশচন্দ্র গুহ |
মাতা | অবলাবালা দত্ত |
পিতা | সুরেন্দ্রনাথ দত্ত |
আত্মীয়স্বজন | শ্রেয়স সরকার |
বাসস্থান | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়(এমএ), সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়(পিএইচডি) |
পেশা | সমাজ-সংস্কারক, রাজনীতিবিদ, অধ্যাপনা |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ |
ফুলরেণু গুহ (১৩ আগস্ট ১৯১১ - ২০০৬) একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্তর্ভুক্ত রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭০ সাল অবধি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন । তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রণালয়ে সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের কনটাই আসনে ভারতীয় সংসদের লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রাপ্ত হন। তিনি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করেছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কয়েকটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭][৮]
ফুলরেণু গুহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯১১ সালের ১৩ই আগস্ট, কলকাতায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং সামাজিক কর্মী অবলাবালা দত্তের নিকট। ফুলরেণু গুহ কয়েক বছর কলকাতার গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল এবং ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে অধ্যাবসা করেছিলেন। পরে তিনি আসামের একটি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন।[৯] পরবর্তীকালে, তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএ এবং অবশেষে বিখ্যাত ভারতীয় দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের অধীনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে এমএ করেন [৯]
বরিশালে থাকাকালীন তিনি জঙ্গিবাদ জাতীয়তাবাদে জড়িত, যুগান্তর পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন [৯] । সেখানেই দেখা হয় ডঃ বীরেশচন্দ্র গুহর সঙ্গে যিনি আরও কম বয়সে যুগান্তর পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং যিনি ১৯২৫ সালে জৈব রসায়নে এম.এস.সি. শেষ করে কাজ শুরু করেছিলেন বিখ্যাত রসায়নবিদ-উদ্যোক্তা প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের কাছে । পরবর্তীকালে, সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে তার বাবা-মা তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য লন্ডনের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ-এ প্রেরণ করেছিলেন। [১০][৯]
লন্ডনে থাকাকালীন, ফুলরেণু গুহ কমিউনিজমের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং গ্রেট ব্রিটেনের তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা বেন ব্র্যাডলির সাথে দেখা করার পরে, ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যান্ড সিলোন শিক্ষার্থীদের প্রাগ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন।[১০][৯]
১৯২৮ সালে বীরেশ ইংল্যান্ডে চলে যাওয়ার সময় ফুলরেণু গুহ তার ডক্টরেটের জন্য প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলেন। প্যারিসে থাকাকালীন তিনি ভারতীয় ছাত্রদের সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হন । তার স্বামীর সঙ্গে এই সময়কার বিখ্যাত পত্রালাপে বেরিয়ে আসে তার ফরাসি রাজনীতির জ্ঞান এবং ফরাসি উপনিবেশবাদের সাথে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের তুলনা[১০][৯]
তিনি ১৯৩৮ সালের জুন মাসে কলকাতায় ফেরত আসেন এবং ভারতে কর্মরত সাম্যবাদীদের জন্য গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ৩,০০০ টাকা নিয়ে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। [১০][৯]
১৯৪০ এর দশকের গোড়ার দিকে গুহরা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দান করেন এবং বীরেশকে কারাবরণ করতে হয় । ১৯৪১-৪৩-এর বাংলার দুর্ভিক্ষ চলাকালে তিনি এই বিপর্যয়কে রুদ্ধ করতে সহায়তা করেছিলেন এবং নোয়াখালীর অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধার করতেও সক্ষম হন। [১০][৯]
তিনি বিভিন্ন সীমায় বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারে সহায়তা পরিবেশন করেছেন। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ভারতের মহিলাদের অবস্থা সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত শিশু কল্যাণে ভারতীয় কাউন্সিলেরও প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্য ছিলেন। [১০][৯] তিনি ১৯৬৭ সালের মার্চ থেকে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪ থেকে জুন ১৯৭০ পর্যন্ত আইন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯৪৩ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি আজাদ হিন্দ ত্রাণ কমিটির মহিলা বিভাগের সম্পাদক ছিলেন। তাঁর সহকর্মী কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের মতো তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন যে দেশভাগের পরের সর্বাগ্রবর্তী প্রয়োজন অবশ্যই পুনর্যোজন, পুনর্গঠন, পুনরুজ্জীবন এবং বাস্তুচ্যুতদের বিশেষত নারী ও শিশুদের সহায়তা করা। স্বাধীনতার পরে ফুলরেণু গুহ নিজেকে সম্পূর্ণরূপে দেশ গঠনে নিবেদিত করেছিলেন।
১৯৭৭ সালে, তিনি ভারতের তৃতীয়তম সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, পদ্মভূষণে ভূষিত হন।
১৯৪৫ সালের ১লা জুলাই, তিনি বিখ্যাত ভারতীয় বায়োকেমিস্ট ডাঃ বীরেশচন্দ্র গুহর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ২০০৬ সালে ৯৫ বছর বয়সে মারা যান এবং বিসি গুহা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি ল্যাবের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের সম্পত্তি দান করেছিলেন। [১০][৯]