ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস (তিব্বতি: ཕོ་ལྷ་ནས་བསོད་ནམས་སྟོབས་རྒྱས, ওয়াইলি: pho lha nas bsod nams stobs rgyas), (১৬৮৯ – ১২ই মার্চ, ১৭৪৭) তিব্বতের একজন রাজপ্রতিনিধি ছিলেন। ১৭২৮ থেকে ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে তিনি প্রকৃতপক্ষে মধ্য তিব্বতের শাসক ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ রাজনীতিক ও অভিজ্ঞ সেনানায়ক ছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ল্হাজাং খানের শাসনকাল, মঙ্গোল আক্রমণ ও গৃহযুদ্ধের পর তিনি অশান্ত তিব্বতে প্রায় দুই দশকের একটি সংগঠিত সরকার তৈরী করে শান্তি ফিরিয়ে আনেন।
ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাসের পিতা পে-মা-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: pe ma rgyal po) একজন অভিজ্ঞ সৈনিক ছিলেন, যিনি ১৬৭৯ থেকে ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে লাদাখ, ভুটান ও নেপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার মাতার নাম ছিল স্গ্রোল-মা-বু-খ্রিদ (ওয়াইলি: sgröl ma bu khrid)। তার পিতামহ আ-গ্সুম (ওয়াইলি: a gsum) কোশোত মোঙ্গোল নেতা দলাই খানের অধীনে কাজ করায় ফো-ল্হা নামক স্থানে জমিদারী লাভ করেন। শৈশবাবস্থায় ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস এই স্থানে বড় হয়ে ওঠেন।[১]
১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে বিবাহের পর ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস লাসা যাত্রা করে কোশোত মঙ্গোল নেতা ল্হাজাং খানের শাসনাধীনে অর্থমন্ত্রকে কাজ করেন। কয়েক বছর পরে তিনি বিচারকের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভুটানের বিরুদ্ধে একটি সফল সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্জুঙ্গার মঙ্গোল সেনাবাহিনী তিব্বত আক্রমণ করলে তিনি লাসা শহরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব নেন। যুদ্ধে ল্হাজাং খানের মৃত্যু হলে তার সমর্থক হিসেবে পরিচিত ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাসকে লাসা শহরের রাস্তায় উলঙ্গ অবস্থায় ঘোরানো হয় ও গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীকালে স্তাগ-র্ত্সে-পা-ল্হা-র্গ্যাল-রাব-ব্র্তান (ওয়াইলি: stag rtse pa lha rgyal rab brtan) নামক এক রাজপ্রতিনিধির সাহায্যে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দে চিং সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী তিব্বত আক্রমণ করে দ্জুঙ্গার মঙ্গোল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।[১]
তিব্বত শাসনের উদ্দেশ্যে চিং সম্রাট সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক নিয়োগ করেন। তিব্বত শাসনের উদ্দেশ্যে খাং-ছেন-নাস-ব্সোদ-নাম্স-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: khang chen nas bsod nams rgyal po), ঙ্গা-ফোদ-র্দো-র্জে-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: nga phod rdo rje rgyal po), লুম-পা-বা-ব্ক্রা-শিস-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: lum pa ba bkra shis rgyal po), স্ব্যার-রা-বা-ব্লো-গ্রোস-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: sbyar ra ba blo gros rgyal po,) এবং ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস এই পাঁচজন তিব্বতী অভিজাতের ওপর সমস্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। সপ্তম দলাই লামার পিতা ব্সোদ-নাম্স-দার-র্গ্যাস (ওয়াইলি: bsod nams dar rgyas) এই ক্ষমতার কেন্দ্রে সামিল হয়ে পড়েন। ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দে ঙ্গা-ফোদ-র্দো-র্জে-র্গ্যাল-পো, লুম-পা-বা-ব্ক্রা-শিস-র্গ্যাল-পো, স্ব্যার-রা-বা-ব্লো-গ্রোস-র্গ্যাল-পো এই তিন অভিজাত ব্সোদ-নাম্স-দার-র্গ্যাসের সাথে মিলিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে খাং-ছেন-নাস-ব্সোদ-নাম্স-র্গ্যাল-পোকে সপরিবারে হত্যা করেন।[২] এই সময় ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস লাসা শহরে না থাকায় তারা তার বিরুদ্ধে তিনশত সৈন্যের এক সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন, কিন্তু এই অভিযান ব্যর্থ হয়। ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস চিং সাম্রাজ্যের সাহায্য চেয়ে পাঠান। ছয় মাস ধরে যুদ্ধের পর ঙ্গা-ফোদ-র্দো-র্জে-র্গ্যাল-পো পরাজিত হন। ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস এরপর ৯০০০ সৈন্যের নেতৃত্ব দিয়ে লাসা অধিকার করেন ও পোতালা প্রাসাদ অবরোধ করেন। ১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জুলাই তিনি তার বিপক্ষদের বন্দী করেন ও ৪ঠা সেপ্টেম্বর চিং সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী লাসা প্রবেশ করলে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে।[১]
গৃহযুদ্ধের অবসান হলে চিং সম্রাট ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাসকে মধ্য তিব্বতের শাসনভারের দায়িত্ব প্রদান করেন। তার অধীনে স্রিদ-গ্চোদ-ত্শে-ব্রতান (ওয়াইলি: srid gcod tshe brtan) এবং ত্শে-রিং-দ্বাং-র্গ্যাল (ওয়াইলি: tshe ring dbang rgyal) নামক দুই মন্ত্রী প্রশাসনিক কাজে তাকে সাহায্য করতেন। এছাড়াও চিং সম্রাট সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন দুইজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক বা আম্বান। ক্ষমতা লাভের পর ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস সপ্তম দলাই লামাকে লাসা থেকে নির্বাসিত করে খাম্স অঞ্চলের পূর্বপ্রান্তে ম্গার-থার (ওয়াইলি: mgar thar) নামক এক নব্য প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধবিহারে পাঠিয়ে দেন, কারণ গৃহযুদ্ধে সপ্তম দলাই লামার পিতা ব্সোদ-নাম্স-দার-র্গ্যাস চিং বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন।[২] ১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস বস্তুতপক্ষে একজন স্বাধীন শাসক হিসেবে রাজত্ব করেন। তার শাসনকাল ছিল শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল। তার পনেরো হাজার পদাতিক সৈন্য ও দশ হাজার অশ্বারোহী বাহিনী তিব্বতের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছিল। তার শাসনকালে অশ্চিম থেকে পূর্ব তিব্বত পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সংগঠিত ডাকব্যবস্থা গড়ে ওঠে।[১]
|তারিখ=
(সাহায্য)
পূর্বসূরী খাং-ছেন-নাস-ব্সোদ-নাম্স-র্গ্যাল-পো |
ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি |
উত্তরসূরী 'গ্যুর-মেদ-র্নাম-র্গ্যাল |