ব্যক্তিগত তথ্য | |
---|---|
আসল নাম | ফ্যানি বুলক |
প্রধান পেশা | পর্বতারোহী |
জন্ম | ৮ জানুয়ারি, ১৮৫৯ উস্টার, ম্যাসাচুসেট্স, মাররকিন যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | জানুয়ারি ২২, ১৯২৫ কান, ফ্রান্স | (বয়স ৬৬)
জাতীয়তা | মার্কিন |
পেশাগত তথ্য | |
উল্লেখযোগ্য আরোহণ | স্কোরো লা গ্ল্যাসিয়ের কোজার গাঞ্জ চোগো লুংগ্মা হিমবাহ পিরামিড পিক নূন কুন পিনাকল পিক হিস্পার হিমবাহ বিয়াফো হিমবাহ সিয়াচেন হিমবাহ ইন্দিরা কোল |
বিখ্যাত জুটি | উইলিয়াম হান্টার কোলম্যান |
পরিবার | |
দম্পতি | উইলিয়াম হান্টার কোলম্যান |
সন্তান | র্যাচেল এবং সিগফ্রায়েড |
ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান (/ˈwɒrkˌmæn/; ৮ জানুয়ারী, ১৮৫৯ - জানুয়ারি ২২, ১৯২৫) মার্কিন ভূগোলবিদ, মানচিত্রাঙ্কনবিদ, পর্যটক, ভ্রমণ লেখক, এবং পর্বতারোহী, তিনি প্রথম পেশাদার মহিলা পর্বতারোহী; যার মাঝে হিমালয় পর্বতমালা উল্লেখযোগ্য।; তিনি শুধুমাত্র অন্বেষণ করেন নি বরং তার অভিযাত্রার কাহিনীগুলো লিখেছেন। তিনি একজন নারী হিসেবে বেশ কিছু উচ্চতা আরোহণের রেকর্ড তৈরি করেছেন। স্বামীর সাথে আটটি ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশ করেছেন, এবং একজন নারী অধিকার ও নারীর ভোটাধিকার প্রবক্তা ছিলেন।
ধনী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করার কারণে ওয়ার্কম্যান নারীদের জন্য সেই সময় উপলব্ধ সবচেয়ে ভালো বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং ইউরোপ ভ্রমণ করেন। উইলিয়াম হান্টার সাথে বিয়ে করার পর তার এই সুযোগগুলো আরও বৃদ্ধি পায়, এবং নিউ হ্যাম্প্শায়ার এ থাকাকালীন সময় পর্বত আরোহণ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেন। স্বামীর সাথে ওয়ার্কম্যান বিশ্ব ভ্রমণ করেন। তারা তাদের ধন-সম্পদ ও সংযোগকে পুঁজি করে ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়া ভ্রমণ করতে সক্ষম হন। তারা দুই সন্তানের অধিকারি হলেও ফ্যানি সাধারণ মায়েদের মত ছিলেন না; তারা তাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয় এবং নার্সদের হাতে ছেড়েদেন, ওয়ার্কম্যান নিজেকে একজন নতুন নারী হিসেবে দেখতেন যে যেকোন পুরুষের সমকক্ষ। ওয়ার্কম্যানরা তাদের ভ্রমণ শুরু করেন সাইকেলে চড়ে। সাইকেলে করেই তারা সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, আলজেরিয়া ও ভারত ভ্রমণ করেন। তারা হাজার হাজার মাইল সাইকেলে ভ্রমণ করেন, যেখানেই তারা আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন সেখানে বিশ্রাম নিয়েছেন। তারা প্রতিটি ভ্রমণ সম্পর্কে বই লিখেছিলেন এবং ফ্যানি ভ্রমণের সময় বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা নারীদের জীবন সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তাদের সাইকেল সফর সম্পর্কিত বইগুলো পর্বতারোহণ সম্পর্কিত বই অপেক্ষা অধিক জনপ্রিয়তা পায়।
সাইকেলে করে ভারত ভ্রমণের সময় তারা পশ্চিম হিমালয় এবং কারাকোরাম অঞ্চল এড়িয়ে যান। এই অনাবিষ্কৃত অঞ্চলটিতে পরবর্তী ১৪ বছর তারা বার বার ফিরে এসেছিলেন। আধুনিক আরোহণ সরঞ্জাম না থাকা সত্ত্বেও ওয়ার্কম্যানেরা বিভিন্ন হিমবাহ অন্বেষণ এবং বেশকিছু পর্বতের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। ঘটনাচক্রে, এসময় তারা ২৩,০০০ ফুট (৭,০০০ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত পিনাকল পিক এ পৌঁছান, যা সেই সময় নারী উচ্চতা আরোহণের রেকর্ড। তারা বেশ কয়েক বছর অভিযান চালানোর জন্য প্রস্তুত থাকলেও স্থানীয় মজুরদের সাথে ভালো সম্পর্কে রাখতে ব্যর্থ হন। মার্কিন ধনী এবং সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত পরিবার থেকে আসার কারণে তারা স্থানীয় মজুরদের অবস্থা বুঝতে অক্ষম হন এবং নির্ভরযোগ্য কুলিদের সাথে মধ্যস্ততা করতে ব্যর্থ হন।
হিমালয় ভ্রমণের পর ওয়ার্কম্যানেরা তাদের ভ্রমণ সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। তারা বিভিন্ন সুশীল সমাজে নিমন্ত্রণ পেতে থাকেন; ফ্যানি ওয়ার্কম্যান প্রথম মার্কিন মহিলা যিনি সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিতে এবং রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটিতে দ্বিতীয় নারী বক্তা হিসেবে বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি ইউরোপীয় আরোহণ এবং ভৌগোলিক সমাজ থেকে অনেক সম্মানসূচক পদক লাভ করেন এবং সেই সময় অন্যতম একজন আরোহণকারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। একজন নারী পুরুষের সমকক্ষভাবে পর্বত আরোহণ করতে সক্ষম তা তিনি প্রদর্শন করেন এবং পর্বত আরোহণে লিঙ্গবৈষম্য ভাঙ্গতে সহায়তা করেন।
১৮৫৯ সালের ৪ জানুয়ারি উস্টার, ম্যাসাচুসেট্স এর এক ধনী ও অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফ্যানি। তিন সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। তার মাতা অ্যালভিরা হ্যাজার্ড এবং পিতা আলেকজান্ডার এইচ বুলক, ব্যবসায়ী এবং রিপাবলিকান ম্যাসাচুসেটস গভর্নর[১][২][৩] ছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্যানি গভর্নেস দ্বারা শিক্ষালাভ করলেও পরবর্তীতে নিউ ইয়র্ক শহরের মিস গ্রাহামের ফিনিশিং স্কুল পড়াশোনা করেন, এরপর কিছু সময় প্যারিস এবং ড্রেসডেন এ অতিবাহীত করেন।[৪]
ওয়ার্কম্যান সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত রচনায় থমাস পলি উল্লেখ করেছেন, "ফ্যানি তার সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ধনী জীবনকে বাঁধা হিসেবে দেখত।"[১] এই সময়ে ফ্যানির লেখা খুব কম গল্পই খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু এগুলোতে অ্যাডভেঞ্চারের প্রতি তার যে ভালোবাসা তা প্রকাশ পায়।[১] বিশেষ করে, "একটি অবকাশ পর্ব", নামক কাহিনীতে তিনি সুন্দর এবং অভিজাত এক ইংরেজ মেয়ে বর্ণনা দিয়েছেন যে কিনা সমাজের কাছে অবজ্ঞার। সেই মেয়ে গ্রিন্ডেলওয়াল্ড এ পালিয়ে যায়, একজন চমৎকার পর্বতারোহী হয়ে উঠে এবং মার্কিন এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। এই গল্পে ফ্যানির নিজস্ব জীবন অনেকটা ফুটে উঠে: ভ্রমণে উদগ্র আকাঙ্ক্ষা, পাহাড়ের প্রতি প্রেম, এবং নারী অধিকার সম্পর্কে তার অঙ্গীকার।[৫] ১৮৮৬ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় যুদ্ধ নিয়ে নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনে একটি ছোট গল্প প্রকাশ করেন, যেখানে "এক শেতাঙ্গ নারীর বন্দী এবং উদ্ধার" এর কাহিনী বর্ণিত হয়; এক সমালোচক কাহিনী সম্পর্কে বলেন "কাহিনীটি খুব স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সম্মোহক ভাবে লেখা হয়েছে।"[৬]
১৮৭৯ সালে, ফ্যানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিরে আসেন এবং ১৬ জুন, ১৮৮২ সালে উইলিয়াম হান্টার ওয়ার্কম্যানকে বিয়ে করেন। উইলিয়াম ফ্যানি অপেক্ষা ১২ বছরের বড় ছিল। তিনিও একটি ধনী এবং শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইয়েল এ পড়াশোনা করেন এবং হার্ভার্ড থেকে চিকিৎসা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[৭][৮] ১৮৮৪ সালে[৯] তাদের র্যাচেল নামে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
বিয়ের পর উইলিয়াম এর দ্বারা আরোহণ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেন ফ্যানি,[৪] এবং একসঙ্গে তারা নিউ হ্যাম্পশায়ার হোয়াইট পর্বতমালায় অনেক গ্রীষ্মকাল অতিবাহিত করেন; এখানে তিনি বেশ কয়েকবার মাউন্ট ওয়াশিংটন (৬,২৯৩ ফুট বা ১,৯১৮ মিটার) এর চূড়ায় আরোহণ করেন।[৩][১০] অন্য নারীদের সঙ্গে একসঙ্গে উত্তর যুক্তরাষ্ট্র আরোহণের মাধ্যমে ফ্যানি তার ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। হোয়াইট মাউন্টেনের মার্কিন আরোহণ ক্লাবগুলো সেই সময় মহিলা সদস্য গ্রহণ করত এবং মহিলাদেরকে পর্বত আরোহণে উৎসাহ প্রদান করত। তারা মার্কিন মহিলাদেরকে এক নতুন দৃষ্টিতে জীবনকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছিল, যারা একাধারে ঘরোয়া এবং ক্রীড়াবিদ, আর ওয়ার্কম্যান নতুন এই ছবিকে উদ্যমের সাথে গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৮৬ সালের পরে নিউ ইংল্যান্ড এমনও দেখা গেছে যে হাইকিং অভিযানে নারীরা কখনও কখনও পুরুষদেরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।[১১] তবে ফ্যানি এবং তার স্বামী উভয়েই জীবন-যাপনে উস্টারের প্রাদেশিক প্রকৃতি অপছন্দ করত এবং ইউরোপে বসবাস করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। ফ্যানি এবং উইলিয়াম উভয়েরই পিতার মৃত্যুর পর তারা প্রচুর সম্পদের মালিক হয়ে উঠে এবং দম্পতি প্রথম ইউরোপ অভিযান, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ও জার্মানি সফরে বের হন।[৭]
১৮৮৯ সালে উইলিয়ামের স্বাস্থ্যের কথা উদ্ধৃত করে ওয়ার্কম্যান পরিবার জার্মানিতে স্থানান্তরিত হন।[৭] ড্রেসডেনে পৌঁছানোর কয়েকদিনের মধ্যে দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান, সিগফ্রায়েড, জন্মগ্রহণ করে।[৭] চিরাচরিত স্ত্রী এবং মায়ের ভূমিকার বদলে ফ্যানি একজন লেখক এবং অভিযাত্রী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন।[১২] তিনি ১৮০০ সালে নারীর যে রূপ ছিল তা উপেক্ষা করে এক প্রাণবন্ত জীবন অতিবাহিত করে।[১৩] একজন নারীবাদী হিসেবে ফ্যানি পুরুষ সমকক্ষ নারী ধারণায় নিজেকে একজন উদাহরণ হিসেবে মনে করতেন এবং নতুন নারী তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন।[১৩] তাছাড়া, মিলার তার নারী অভিযাত্রী সম্পর্কিত বইয়ে উল্লেখ করেছেন, যেহেতু সেই সময় আদর্শ পরিবার বলতে বড় পরিবার বুঝাতো এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তথ্য সহজলভ্য ছিল না সেহেতু উইলিয়ামের চিকিৎসা জ্ঞান অসামান্য ছিল।[১৪] দীর্ঘ অভিযানে যাবার পূর্বে ওয়ার্কম্যান তাদের সন্তানদেরকে নার্সের কাছে রেখে যেত।[১৫] ১৯৮৩ সালে একই সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিগফ্রায়েড। পলির মতে সিগফ্রায়েড মৃত্যুর পর ফ্যানি বাইসাইকেল ভ্রমণের মাধ্যমে "এক ভিন্ন পরিচয়ের জন্য আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যান, যা তাকে চিরাচরিত স্ত্রী এবং মায়ের পরিচয় এবং দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিবে এবং তার নিজের ইচ্ছা এবং উচ্চাভিলাষ মেটাতে সক্ষম হবে।"[১৬] তারা কারাকোরাম[১৭] ভ্রমণে ব্যস্ত থাকায় ১৯১১ সালে স্যার আলেকজান্ডার ম্যাকরবার্ট এর সাথে মেয়ের বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হন।[১৮]
স্বামী-স্ত্রী একত্রে বিশ্ব ভ্রমণ করেন এবং আটটি ভ্রমণ কাহিনী রচনা করেন যেখানে তারা তাদের ভ্রমণ অঞ্চলগুলোর মানুষ, শিল্প, এবং স্থাপত্য সম্পর্কে বর্ণনা করেন। ভ্রমণ কাহিনী সাহিত্য ধারায় তাদের অবদান সম্পর্কে তারা অবগত ছিলেন, কারণ তারা অন্য লেখকদের লেখা সম্পর্কে নিজেদের লেখায় মতামত প্রকাশ করেছেন।[১৯] পর্বতারোহণ সম্পর্কিত তাদের রচনাগুলোতে দূরবর্তী এবং জনবিরল অধ্যুষিত অঞ্চলের সংস্কৃতি সম্পর্কে অল্প আলোচনা করা হয়েছে; তারা তাদের সাধারণ পাঠকদের জন্য সূর্যাস্তের রূপ সম্পর্কে যেমন আবেগময় রচনা লিখেছেন তেমনি হিমবাহ এর মত ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত রচনা করেছেন তাদের বৈজ্ঞানিক পাঠককুলের জন্য।[২০] ফ্যানি এবং উইলিয়াম রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির মত প্রভাবশালী সংগঠনকে আগ্রহী করে তোলার জন্য তাদের লেখা বৈজ্ঞানিক উপাদান যোগ করেন; ফ্যানি বিশ্বাস করতেন বৈজ্ঞানিক তথ্য তাকে আরোহণ সম্প্রদায়ের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে, কিন্তু এর ফলে সাধারণ পাঠকদের হারান তারা।[২১] সাধারণভাবে, তাদের সাইকেলে ভ্রমণ কাহিনীগুলো পর্বতারোহণ কাহিনী তুলনায় পাঠকদের মধ্যে অধিক জনপ্রিয়তা পায়।[২২] এই ভ্রমণ কাহিনীর অধিকাংশ ফ্যানি নিজে লিখেছেন, এবং যেখানেই ভ্রমণ করেছেন সেখানকার নারীদের দুর্দশার উপর ব্যাপকভাবে মন্তব্য করেছেন।[১২][২৩]
ওয়ার্কম্যানদের ভ্রমণ সম্পর্কে এনসাইক্লোপিডিয়ায় স্টেফানি টিঙ্গলি লিখেছেন, তিনি (ফ্যানি) সমাজে নারীদের যে নিচু অবস্থান এবং যে কষ্ট করতে দেখছেন তার লেখায় সে সম্পর্কে একটি উহ্য নারীবাদী সমালোচনা ফুটে উঠেছে।[২৪] একজন শক্তিশালী-উদ্যমী, নারী অধিকার সমর্থক হিসেবে, ওয়ার্কম্যান তাদের ভ্রমণের মাধ্যমে তার (ফ্যানি) নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং নারীরা যে অবিচারের সম্মুখীন হচ্ছে তা সুস্পষ্ট ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।[২৩] তবে, তাদের ভ্রমণ বইগুলো উত্তম ব্যক্তি বহুবচন বা তৃতীয় ব্যক্তি একবচনে লেখা হয়েছে বিধায় এই মতামত বা কণ্ঠ ঠিক কার, উইলিয়াম না ফ্যানির তা নির্ধারণ করা কঠিন।[২৪] ওয়ার্কম্যানদের লেখায় উপনিবেশবাদ এর প্রভাব লক্ষ করা যায়, তারা যে সকল মানুষের সাথে মিশেছে বা দেখেছে তাদের সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে, "অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক, আদিম বা এমনকি মনুষ্য নয়" বলে উল্লেখ করেছেন।[২৪] তবে, মাঝে মাঝে নিজেদের সমকক্ষ মানুষের সাথেও যে তাদের পরিচয় হয়েছে তা উল্লেখ করার মধ্যে দিয়ে নিজেদের গোঁড়ামির ব্যাপারে যে তারা সচেতন তা উল্লেখ করেছেন।[২৪]
১৮৮৩ এবং ১৮৯৩ সালের মধ্যে তারা সাইকেলে সুইজারল্যান্ড, ফ্র্যান্স এবং ইতালি ভ্রমণ করেন। ১৮৯১ সাল, ফ্যানি মন্ট ব্ল্যাঙ্ক আরোহণ করেন। ফ্যানি প্রথম নারী যিনি মন্ট ব্ল্যাঙ্ক এ আরোহণ করেছেন।[২৫] তিনি প্রথম নারী যিনি জাংফ্রো এবং ম্যাটারহর্ন আরোহণ করেছিলেন; তার পথপ্রদর্শক পিটার টগওয়েল্ডার, যিনি এডওয়ার্ড হোয়াইম্পার এর সাথে প্রথম পর্বত আরোহণ করেন।[৪] ১৮৯৩ সালে, দম্পতি ইউরোপের বাইরে অন্বেষণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আলজেরিয়া, ইন্দোচীন, এবং ভারত পথে রওয়ানা দেন।[২৩] এই লম্বা সফরগুলোর মূলে ছিলেন ফ্যানি।[৯]
পরবর্তীতে, তারা তাদের ভ্রমণ নিয়ে লেখেন, 'স্কেচেস অ্যাহুইল ইন মডার্ন আইবেরীয়'।[৯] বইয়ে তারা স্পেন সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, গ্রাম্য, খেয়ালী, এবং মনোরম"।[২৬] আলজেরিয়ার স্মৃতিকথা লেখার সময় ফ্যানি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং গ্রামাঞ্চলের রমণীয়তার উপর বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন, এবং শহুরে সুবিধাগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। তবে, তিনি আলজেরিয়ার সমাজে নারীদের নির্যাতন ও অবহেলার কথা বিশেষ ভাবে তুলে ধরেন।[২৬]
ওয়ার্কম্যানদের ভারত, বার্মা, সিংহল এবং জাভা ভ্রমণ প্রায় আড়াই বছর ধরে চলে, শুরু হয়েছিল ১৮৯৭ সালের নভেম্বরে এবং তারা প্রায় ১৪০০০ মাইল (২৩,০০০ কিমি) ভ্রমণ করেন। এই সময় ফ্যানির বয়স ছিল ৩৮ বছর আর উইলিয়ামের ৫০। তারা বাইসাইকেলে চেপে ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে উত্তরে হিমালয় পর্যন্ত প্রায় ৪০০০ মাইল (৬,৪০০ কিমি) ভ্রমণ করেন। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেন সহজে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করার জন্য তারা বেশিরভাগ সময় রেলওয়ের কাছে প্রধান রাস্তায় ভ্রমণ করেন, এবং অন্য কোন বাসস্থান না পাওয়া গেলে অনেক সময় রেলওয়ের বিশ্রাম/অপেক্ষা কক্ষে ঘুমাতে বাধ্য হয়েছেন। তারা চা, চিনি, বিস্কুট, পনির, টিনে মাংস, পানি, বালিশ, কম্বল, লেখার তৈজসপত্র, চিকিৎসা এবং মেরামতের যন্ত্রপাতির মত হালকা এবং ন্যূনতম সরবরাহ বহন করতেন।[২৭] উত্তরাঞ্চলে পৌঁছালে তারা তাদের বাইসাইকেল রেখে ১৪,০০০ ফুট (৪,৩০০ মিটার) থেকে ১৮,০০০ ফুট (৫,৫০০ মিটার) এর মধ্যে আরোহণ করেন।[২৭][২৮] কাজটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল। প্রায় সময় খাবার ও পানির অভাব, ঝাঁকে ঝাঁকে মশার সাথে তাদেরকে মোকাবিলা করতে হয়েছিল। প্রতি দিন ৪০ বার সাইকেলের চাকা ঠিক করতে হয়েছে, তারে ঘুমাতে হয়েছে ইঁদুরে-ভরা রুমে।[২৯] ভ্রমণের পরে ফ্যানি ওয়ার্কম্যানের লেখা বইয়ে সমসাময়িক স্থানীয় সংস্কৃতির বদলে প্রাচীন স্থাপত্য সম্পর্কে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।[২৮] মিসেস ওয়ার্কম্যান তার "মাই এশিয়াটিক ওয়ান্ডারিংস" এ ভারত সম্পর্কে বলেন, "আমি মনোরম দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে সাইকেলে চালিয়েছি, উড়িষ্যার তাল ও বটগাছ, তেরাই সবুজ ও লাল রংয়ের ঢাল ... কিন্তু আমি এমন একটি দেশে সাইকেল চালায়নি যার ক্রমাগত ১২০০ মাইল সুন্দর।"[৩০] সেই সময় যেকোনো পশ্চিমাদের চাইতে ভারত সম্পর্কে ঐতিহাসিক জ্ঞান ওয়ার্কম্যানদের অস্বাভাবিক পরিমাণ বেশি ছিল এবং তারা ভ্রমণ শুরুর পূর্বেই জাকাতা, মহাভারত ও রামায়ণ পাঠ করেছিলেন। তারা এই ধরনের মহাকাব্য রচনা করেছে সেই সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন এবং প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে শেখার যতটা আগ্রহী ছিলেন ততটা তৎকালীন ভারতীয় মানুষের সঙ্গে আলাপচারীতায় ছিলেন না।[২৯]
১৮৯৮ সালের গ্রীষ্মে, ভারতের গরম থেকে অব্যাহতি পাওয়ার লক্ষ্যে ওয়ার্কম্যান দম্পতি পশ্চিম হিমালয় এবং কারাকোরাম ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরে, তারা সিকিম এ অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা এলাকা ঘুরে দেখবেন বলে ভেবেছিলেন, সবশেষে পূবে ভুটান সীমান্তবর্তী পাহাড়গুলো ভ্রমণ করবেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এবং বিরূপ আবহাওয়া তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি করে।[৩১] তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় কুলিদের নিয়ে। তারা ৪৫ জন কুলি ঠিক করেছিলেন, তাদের পর্বত ভ্রমণে মৌলিক চাহিদাগুলো মিটিয়ে ছিলেন, কিন্তু ধনী আমেরিকানরা এসেছে এই খবর গ্রামে ছড়িয়ে পরলে মূল্য আকাশচুম্বী হতে শুরু করে। অভিযান শুরু করতে করতে ৩ অক্টোবর হয়ে পরে এবং চারিদিকে শীতের আমেজ দেখা দেয়।[৩১] ভ্রমণ কাহিনীতে ওয়ার্কম্যানেরা তাদের ভাড়া করা কুলিদের দ্বারা কাজ করানো কঠিন বলে অনুযোগ করেছেন[২৮] এবং প্রতিদিন পাঁচ মাইলের (৮ কিমি) বেশি হাটতে অস্বীকার করে।[৩১] তাদের যাত্রা তিন দিনের মাথায় তুষার দেখা দিলে কুলিরা বিদ্রোহ করে; তারা এই রকম ঠাণ্ডা অবস্থার মধ্যে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং পুরো দলকে দার্জিলিং ফিরে যেতে বাধ্য করে।[২৮]
পুরো সময়টাই কুলিদেরকে নিয়ে নানা ঝামেলার সম্মুখীন হয় ওয়ার্কম্যান দম্পতি। এত লম্বা সফরে চালাতে যে প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র তাদের একার পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না এবং স্থানীয় কুলিদের উপর মাল পরিবহনের জন্য তাদেরকে নির্ভর করতে হয়েছে। তাদেরকে মামারি তাঁবু, আইডার স্লিপিং ব্যাগ, ক্যামেরা সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, এবং যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য পরিবহন করার প্রয়োজন পরে।[৩২][৩৩] কুলিরা পুরো অভিযান সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন।[৩৩] স্থানীয়রা কদাচিৎ পাহাড়ের আরোহণ করত এবং একজন মহিলার কাছ থেকে নির্দেশ শুনতে অভ্যস্ত ছিল না, যা ফ্যানির অবস্থানকে কঠিন করে তুলেছিল।[৩৩] ওয়ার্কম্যান দম্পতি যথেষ্ট মুরুব্বিয়ানা এবং স্বেচ্ছাচারপূর্ণতার সঙ্গে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে। কেনেথ ম্যাসন তার ১৯৫৫ সালে লিখিত হিমালয় পর্বতারোহণ ইতিহাসে বলেন, "ওয়ার্কম্যানেরা তাদের যাত্রায়, নিজেদের দোষের শিকার হয়েছিল। তারা খুব অধর্য্য ছিলেন এবং কুলিদের মন-মানসিকতা বোঝার চেষ্টাও খুব একটা করে নি বিধায় তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু বের করে নিতে ব্যর্থ হয়।"[৩৪] তাদের সবকটি অভিযানেই কুলি সমস্যা লক্ষ করা গেছে, মিলারের মতে, "যে সকল দরিদ্র ও প্রত্যন্ত গ্রামে তারা একদল লোক নিয়ে হাজির হয়ে যে সেবা এবং প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র তারা দাবী করেছেন সেই সকল স্থানীয় জনগণের প্রতি সহানুভূতি বা মনের অবস্থা বোঝার মত সাধারণ-জ্ঞানও ওয়ার্কম্যানদের মধ্যে ছিল না।"[৩৫] মিলার তার বইতে এর কারণ হিসেবে বলেছেন, আমেরিকান হওয়ার কারণে ব্রিটিশ অভিযাত্রীদের মত বর্ণ বা শ্রেণী সম্পর্কিত ধারণা তাদের মধ্যে ছিল না: "ওয়ার্কম্যানেরা, অন্যান্য আমেরিকানদের মত, সকল শক্তি নিয়ে ঢুকে পরে, এবং তারা তাদের বিরাট শক্তির মাধ্যমে সব বাধা অতিক্রম করবে বলে মনে করে। ভারতীয়দের প্রতি তাদের অনুভূতিহীন, অযোগ্য আচরণের কারণে ব্রিটিশদের দ্বারা সমালোচিত হয়।"[৩৬]
প্রথমবার হিমালয় ভ্রমণের পর, এই পর্বত আরোহণ এবং পর্বতারোহণের ব্যাপারে ভীষণভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। ১৪ বছরের ব্যবধানে তারা প্রায় অনাবিষ্কৃত এবং মানচীত্রহীন এলাকায় ৮ বার ভ্রমণ করেন।[৯][৩৭] তারা ভ্রমণ করেছেন এমন এক সময় যখন আধুনিক হালকা সরঞ্জাম, শুকনো খাবার, প্রখর সূর্যতাপ প্রতিরোধক প্রলেপ, বা বেতার সুবিধা ছিল না। প্রতিটি অভিযানেই, তারা অন্বেষণ, জরীপ চালিয়েছেন, এবং ছবি তুলেছেন, পরিণামে তাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন এবং এবং মানচিত্র তৈরি করা হয়।[৩৭] ওয়ার্কম্যান দম্পতি ভাগা ভাগি করে দায়িত্ব পালন করতেন; এক বছর ফ্যানি তাদের যাত্রার সরবরাহ সংগঠিত করতেন এবং উইলিয়াম বৈজ্ঞানিক প্রকল্পে কাজ করতেন তো পরের বছর ভূমিকার বিপরীত করতেন।[৩৮]
প্রথম হিমালয় ভ্রমণ এবং কুলি সমস্যা সম্মুখীন হওয়ার পর ওয়ার্কম্যানেরা ম্যাথিস জুরব্রিগেনকে ভাড়া নেন, সেই সময়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং সেরা পর্বতারোহণ পথপ্রদর্শক।[৩৯] ১৮৯৯ সালে, ৫০ জন স্থানীয় কুলি ও জুরব্রিগেনকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ার্কম্যান দম্পতি কারাকোরামে অবস্থিত বিয়াফো হিমবাহ অভিযানে বের হন, কিন্তু বিপজ্জনক চিড় এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে তারা স্কোরো লা গ্ল্যাসিয়ার এর আশপাশের পূর্বে আরোহণ করা হয়নি এমন চূড়াগুলোর দিকে অগ্রসর হতে বাধ্য হন। তারা ১৮,৬০০ ফুট (৫,৭০০ মিটার) উঁচু এমন একটি চূড়ায় পৌঁছান এবং তাদের ছেলের নামানুসারে রাখেন সিগফ্রিডহর্ন। ফ্যানি সেই সময় নারী সর্বোচ্চ উচ্চতা আরোহণকারীর রেকর্ড সৃষ্টি করেন।[৯][৪০] পরবর্তীতে তারা ১৭,০০০ ফুট (৫,২০০ মিটার) উচ্চতায় তাঁবু স্থাপন করেন এবং ১৯,৪৫০ ফুট (৫,৯৩০ মিটার) উচ্চতার আরেকটি চূড়ায় আরোহণ করেন, এর নামকরণ করেন মাউন্ট বুলক ওয়ার্কম্যান।[৪১][৪২] সেখান থেকে দেখা যায় এমন একটি দূরবর্তী পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য সম্পর্কে ভ্রমণ কাহিনীতে মন্তব্য করেছেন: তারা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত কে২ দেখছিলেন। ফ্যানি ওয়ার্কম্যান হয়তো প্রথম নারী যিনি কে২ দেখছেন।[৪৩] অবশেষে, তারা কোসার গাঞ্জ (২০,৯৯৭ ফুট বা ৬,৪০০ মিটার) আরোহণ করেন, এবং ফ্যানিকে তার তৃতীয় ধারাবাহিক উচ্চতা রেকর্ড স্থাপনে সহায়তা করে।[৪৪] এই পর্বতে আরোহণের আরোহণের কাজটি খুব কঠিন ছিল: তাদেরকে নতুন কুলি ভাড়া করতে হয়, নতুন একটি বেজ ক্যাম্প স্থাপন, এবং প্রায় ১৮,০০০ ফুট (৫,৫০০ মিটার) উপরে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে। সকাল বেলায় তারা প্রচণ্ড বাতাসের ধাক্কা সহ্য করে ১,২০০ ফুট (৩৭০ মিটার) উঁচু প্রাচীর টপকাতে হয়। চূড়া উৎরাইয়ের সময় ফ্যানির আঙ্গুল এতটাই অসাড় হয়ে পরে তিনি তার বরফ কুঠারটি ধরে রাখতে পারছিলেন না এবং একজন কুলি এই সময় তাদেরকে ছেড়ে চলে যায়। এই সময় বাইরের তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট [-১২ ° সে:] এবং তাদের উচ্চতা ২১,০০০ ফুট ছিল।[৪২] ফ্যানি, "ধীর, নিরলস, এবং নির্ভীক" পর্বতারোহী ছিলেন।[৪২] বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পর্বত আরোহণ, যখন পিটন বা ক্যারাবিনার মত বিশেষ সরঞ্জাম তার কাছে ছিল না। পলির মতে, "তার দুর্দমনীয় অধ্যবসায় এবং অলটিচিউড সিকনেস মুক্ত হওয়ায়" ফ্যানি এত উচ্চতায় আরোহণ করতে পেরেছিলেন।[৪২]
ফ্যানি তার ভ্রমণ কাহিনী স্কটিশ জিওগ্রাফিকাল ম্যাগাজিন এ প্রকাশ করেন।[৪৫] ইন দা আইস ওয়ার্ল্ড অভ দি হিমালয়াস ভ্রমণ কাহিনীতে ফ্যানি বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, বিশেষ করে তার নিজের আবিষ্কৃত ব্যারোমিটার যন্ত্র সাধারণ ব্যারোমিটার অপেক্ষা উন্নত বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পণ্ডিত সমালোচকরা এতে প্রভাবিত হয় নি এবং তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।[৪৬] অপরপক্ষে, জনপ্রিয় সমালোচনাকারীরা অবশ্য কাহিনীগুলো আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছেন, এবং শেষ করেছেন এই বলে, "আমাদের বলতে কোন দ্বিধা নেই যে ডঃ এবং মিসেস ওয়ার্কম্যান সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ কাহিনী রচনা করেছেন।"[১৯]
১৯০২ সালে ওয়ার্কম্যান দম্পতি হিমালয়ে ফিরে আসেন এবং প্রথম পশ্চিমা অভিযাত্রী যারা [[আরান্দুতে শুরু হওয়া চোগো লুংমা গ্ল্যাসিয়ার অন্বেষণ করেন।[৩৪][৪৪] তারা ৮০ জন কুলি ভাড়া করেন এবং সাথে ৪ টন জিনিসপত্র নেন। কিন্তু অবিরাম-বরফ পড়ার এবং ৬০-ঘণ্টার অধিক ঝড়ের কারণে তাদের অনুসন্ধানের স্থান সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।[৪৭] ১৯০৩ সালে পথপ্রদর্শক সাইপ্রিয়েন স্যাভয়কের সাথে হেটে হোহ লুম্বা গ্ল্যাসিয়ার পৌঁছান। তারা কাছাকাছি একটি পর্বতে আরোহণের চেষ্টা করেন যার নাম তারা পিরামিড পিক (পরবর্তীতে স্প্যান্টিক-সসবান পর্বমালার আওতায় এর নাম স্প্যান্টিক এ পরিবর্তন করা হয়) রাখেন। প্রথম রাতে তারা ১৬,২০০ ফুট (৪,৯০০ মি), এবং দ্বিতীয় রাতে তারা ১৮,৬০০ ফুট (৫,৭০০ মি) তাঁবু গাড়েন। তৃতীয় রাতে একজন অসুস্থ কুলি তাদেরকে ২০,০০০ ফুট (৬,১০০ মিটার) এর বদলে ১৯,৩৫৫ ফুট (৫,৮৯৯ মিটার) তাঁবু গাড়তে বাধ্য করে এবং শেষ পর্যন্ত তারা তাকে (কুলিকে) পিছনে ছেড়ে যান। তারা ২২,৫৬৭ ফুট (৬,৮৭৮ মিটার) উচ্চতার শিখায় আরোহণ করেন এবং ফ্যানি নতুন একটি উচ্চতার রেকর্ড সৃষ্টি করেন। উইলিয়াম এবং একজন কুলি অভিযানের মূল লক্ষ্য সুঁইয়ের মত পেঁচানো একটি শিখার দিকে আরোহণ শুরু করেন। কিন্তু উচ্চতা অসুস্থ ভালো মত ধরার পূর্বে তারা নিরাপদ উচ্চতায় নেমে আসতে পারবেন না বুঝতে পেরে তিনি শিখরে আরোহণের প্রয়াস কয়েকশ ফুট বাকি থাকতেই বাদ দেন।[৪৮]
অভিযান থেকে ফিরে আসার পর ওয়ার্কম্যান দম্পতি সারা ইউরোপ জুড়ে বক্তৃতা দেন। ফ্যানি প্রয়োজন অনুযায়ী ইংরেজি, জার্মান বা ফরাসি ভাষায় তার বক্তব্য প্রদান করে। ফ্রান্সের লিওন এ অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে মিলনায়তনে ১০০০ জন শ্রোতা ভিড় করে এবং ৭০০ এরও বেশি শ্রোতাকে ফিরে যেতে হয়।[৪৯] ১৯০৫ সালে ফ্যানি রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটিতে দ্বিতীয় নারী বক্তব্য প্রদানকারী হিসেবে স্থান করে নেন. (প্রথম নারী বক্তব্য প্রদান ইসাবেলা বার্ড বিশপ, তিনি ১৮৯৭ সালের মে মাসে বক্তব্য পেশ করেন)।[৪৪][৫০] তার বক্তব্যের খবর টাইমস এ উল্লেখ করা হয়েছিল।[৫১]
১৯০৬ সালে ওয়ার্কম্যান দম্পতি কাশ্মীর এ ফিরে আসেন, এবং প্রথম পশ্চিমা অভিযাত্রী যারা নূন কুন স্তূপ-পর্বত ভ্রমণ করেন। এই অভিযাত্রার জন্য, দম্পতি আল্পস থেকে ছয়জন ইতালীয় কুলি, ২০০ স্থানীয় কুলি ভাড়া করেন। পথ প্রদর্শক হিসেবে স্যাভয় যোগ দেন।[২১] তারা ১৭,৬৫৭ ফুট (৫,৩৮২ মিটার) থেকে ২১,০০০ ফুট (৬,৪০০ মিটার) পর্যন্ত চারটি শিবির তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শ্রমিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, ওয়ার্কম্যানেরা যে কোনও পূর্ববর্তী পর্বতারোহীদের চাইতে অধিক উচ্চতায় রাত্রি যাপন করেন —২০,২৭৮ ফুট (৬,১৮১ মিটার) নুন কুনে জেড ১ উপরে - যাকে তারা "ক্যাম্প আমেরিকা" বলে উল্লেখ করেছেন।[৫২][৫৩]
এই অভিযাত্রায় দম্পতিদ্বয় যে মানচিত্র তৈরি করেছিলেন তার মান খুব খারাপ ছিল। ম্যাসনের মতে, দম্পতিটির গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দিক সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল না, যার অর্থ তাদের পরিমাপ সঠিক ছিল না এবং ভারতীয় সার্ভ বিভাগ এর জন্য অব্যবহারযোগ্য ছিল।[৫৪]
২০,২৭৮ ফুট (৬,১৮১ মিটার), ১৯০৬ সালে ৪৭ বছর বয়সে, ফ্যানি পিনাকল পিকে আরোহণ করেন (২২,৭৩৫ ফুট অথবা ৬,৯৩০ মিটার) (তার হিসেবে ২৩,২৬৩ ফুট বা ৭,০৯১ মিটার), পশ্চিম হিমালয় এর নূন কুন স্তূপপর্বতের একটি সম্পূরক শিখর। এটা তার সর্বশ্রেষ্ঠ পর্বতারোহণ কৃতিত্ব। আইজারম্যান, উইভার এবং মোলেনার এর মতে, "তিনি যে পর্বতে আরোহণ করেছেন, কোন ধরনের আধুনিক সরঞ্জাম সুবিধা ছাড়াই এবং বৃহদায়তনের স্কার্ট এর দ্বারা ভারাক্রান্ত, যা তার ক্ষমতা এবং মোকাবেলা করার ক্ষমতাকে প্রকাশ করে"।[৫৫] ফ্যানির উচ্চতা আরোহণের রেকর্ডটি ১৯৩৪ সালে হেতি ধ্রাইরেনফার্থ সিয়া কাংরি সি (২৩,৮৬১ ফুট বা ৭,২৭৩ মিটার) আরোহণের মাধ্যমে ভংগ হয়।[৫৫] ফ্যানি এবং উইলিয়াম দুইজনেই বিশ্বাস করতেন যে তারা ২৩,০০০ -ফুট (৭,০০০ মিটার) এর উপরে আরোহণ করেছেন, এর ফলে তারা নিজেদেরকে উচ্চতায় আরোহণের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ মনে করতেন।[২১]
ওয়ার্কম্যান অন্য আরোহণকারী, বিশেষ করে অ্যানি স্মিথ পেক এর কাছ থেকে পিনাকল পিকে আরোহণের রেকর্ডটি সর্বস্ব দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করতেন। ১৯০৮ সালে পেরুর হুয়াসকারান আরোহণের মাধ্যমে পেক একটি নতুন উচ্চতা রেকর্ড স্থাপন করেছেন বলে দাবী জানান, তার ধারণা ছিল এর উচ্চতা ২৩,০০০ -ফুট (৭,০০০ মিটার)। তবে, এই চূড়ার উচ্চতা এবং দূরত্ব অতিরঞ্জিত করে জানানো হয় এবং পরিমাপের কোন উপায় তার কাছে ছিল না।[৫৬] ওয়ার্কম্যান এতটাই প্রতিযোগী মনোভাবের ছিলেন যে তিনি ১৩,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে জিওগ্রাফিক আর্মির একদল ফরাসী জরিপকারী পর্বতটির উচ্চতা পরিমাপের জন্য নিয়োগ দান করেন। পর্বতটির সঠিক উচ্চতা ছিল ২২,২০৫ ফুট (৬,৭৬৮ মিটার)।[৯][৫৭] পলির মতে, "পরিহাসের বিষয়, নিজেকে একজন পুরুষের সমকক্ষ প্রমাণ করার যে সংকল্প তার মাঝে ছিল তা চরম অহংকারে পরিণত হয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে তিনি তাকে অতিক্রম করছে এমন আরেকজন মার্কিন মহিলার উপর আক্রমণ করেন।[১২] নিজেকে একজন শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে পরিচিত এবং তার অর্জনগুলো যেন প্রমাণ করতে পারেন সে জন্য সতর্কতার সাথে সকল হিসাব নিকাশ সংরক্ষণ করতেন। পলি তার উপসংহারে বলেন, "এই পুরুষ সমাজে ফ্যানি ওয়ার্কম্যান কখনও যদি নারীবাদী জেদের জন্য স্বীকৃতি পায় তবে তা হবে তা উচ্চতা আরোহণের চাইতে তথ্য সংরক্ষণের যে জেদ তার জন্য।[১২]
১৯০৮ সালে ওয়ার্কম্যান কারাকোরাম ফিরে আসেন এবং ৩৮-মাইল লম্বা (৬১ কিলোমিটার) হাঞ্জা নগর অঞ্চলে অবস্থিত হিস্পার হিমবাহ অভিযানে বের হন। তারা হিস্পার পাস (১৭,৫০০ ফিট বা ৫,৩০০ মিটার) দিয়ে গিলগিত থেকে নাগির এবং ৩৭-মাইল লম্বা (৬০ কিলোমিটার) বিয়াফো হিমবাহ থেকে আস্কোলে।[৩৪] তাদের সর্বমোট হিমবাহ পারাপার হওয়াটাও একটি রেকর্ড ছিল, এবং ফ্যানি প্রথম নারী অভিযাত্রী যিনি হিমালয় হিমবাহের মত বৃহৎ হিমবাহ অতিক্রম করেছে।[৫৭] তারা প্রথমবারের মত পার্শ্ববর্তী অন্যান্য হিমবাহ অতিক্রম করেন এবং ইতালিয় কুলিদের সাহায্যে যে মানচিত্র তৈরি করে যা প্রথমবারের মত এই অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করতে সহায়তা করে।[৫৮] তারা শরীরের উপর অতি উচ্চতার প্রভাব, হিমবাহ এবং বরফ শৃঙ্গ বিষয়ে অধ্যয়ন, এবং আবহাওয়া পরিমাপ অ্যানেরয়েড ব্যারোমিটার এবং স্ফুটনাঙ্ক থার্মোমিটার ব্যবহার করে উচ্চতার তথ্য গ্রহণ করেছিলেন।[৫৯]
১৯১১ এবং ১৯১২ সালে ম্যাশারব্রুম এলাকার বালতিস্তান এর ৪৫ মাইল লম্বার সিয়াচেন হিমবাহ এবং রোজ হিমবাহ অভিযাত্রা ওয়ার্কম্যানের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব ছিল। কারণ সেই সময় এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত এবং দীর্ঘতম সাবপোলার হিমবাহ হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই সময় হিমবাহটিতে পৌঁছান সবচেয়ে কঠিন ছিল বিধায় এটি নিয়ে গবেষণাও কম হয়েছিল।[৫৫] ওয়ার্কম্যানেরা প্রায় দুই মাস যাবত ৪৫-মাইল লম্বা হিমবাহটিতে অনুসন্ধান চালান, বেশ কয়েকটি পাহাড়ে আরোহণ করেন, এবং এলাকার মানচিত্র তৈরি করেন। পুরো সময়টাতেই তারা ১৫,০০০ ফুট (৪,৬০০ মিটার) উচ্চতায় অবস্থান করেন। সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গটিতে আরোহণ করেন এবং এর নামকরণ করেন ইন্দিরা কোল হিসেবে।[৬০] এই অভিযানে, তাদের এক জন ইতালীয় পথপ্রদর্শক একটি ফাটলের মধ্যে পড়ে মারা গেলেও ভাগ্যবান ফ্যানি বেঁচে যান। এই ঘটনায় অন্যরা খুব ভয় পেয়ে গেলেও অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বলবত রাখে।[৬১] ফ্যানি তাদেরকে সিয়া লা গিরিপথ (১৮,৭০০ ফুট বা ৫,৭০০ মিটার) এবং কাবেরী হিমবাহ এর একটি অনাবিষ্কৃত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে সিয়াচেন হিমবাহের মাথার কাছে নিয়ে আসেন। এই অভিযান এবং পরবর্তীতে যে কাহিনী তিনি রচনা করেন তা তার সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে বিবেচিত।[৬২] তিনি তার টু সামারস ইন দা আইস-ওয়াইল্ডস অভ ইস্টার্ন কারাকোরাম বইতে তার ভ্রমণ সম্পর্কে লিখেছেন, তিনি এই অভিযান সংগঠিত এবং পরিচালনা করেন: "ডঃ হান্টার ওয়ার্কম্যান এইবারও আমার সঙ্গী ছিলেন, আমরা একত্রে রসদ সংগ্রহ এবং চিত্রগ্রাহক এবং হিমবাহবীদ এর দায়িত্বে থাকলেও এই অভিযানের নেতা ছিলাম আমি, এবং আমার প্রচেষ্টার উপর, অনেকাংশে সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করছিল।"[৬৩] একবার ২১,০০০ ফুট (৬,৪০০ মিটার) মালভূমিতে ফ্যানি "মহিলাদের জন্য ভোট" পত্রিকার জন্য একটি ছবি তার স্বামীকে দিয়ে উঠান যা কিংবদন্তি ছবি হিসেবে স্থান করে নেয়।[৯][৬৪] তারা এবার গ্রান্ট পিটারকিন এবং সুর্জন সিং এর মত আলপাইন প্রশিক্ষিত পথপ্রদর্শক এবং সমীক্ষাকারী সাথে নেন,[৬৫] যেন তাদের তৈরিকৃত সিয়াচেন হিমবাহ এর মানচিত্রটি অনেক বছরের জন্য অপরিবর্তনীয় থাকে।[৬৬]
১৯০৮-১২ সালের পরে দম্পতিটি তাদের অভিযান বন্ধ করে দেন এবং লেখা-লেখি এবং বক্তব্য প্রদান করতে শুরু করেন। প্রধানত ২০১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর সূত্রপাত হওয়ার কারণে।[৬৭] ফ্যানি ওয়ার্কম্যান প্রথম মার্কিন নারী যিনি প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা প্রদান করে। তিনি প্রথম মহিলা যিনি রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির সদস্য হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তার রচিত কাহিনীতে বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপস্থিতি তাকে এই সৌভাগ্য অর্জনে সহায়তা করেছিল।[১২] তিনি ১০টি ইউরোপীয় ভৌগোলিক সমাজের কাছ থেকে সম্মান সূচক পদক লাভ করেন এবং পরিশেষে আমেরিকার আলপাইন ক্লাব, রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি, ক্লাব আলপিনো ইতালিয়ানো, জার্মান এবং অস্ট্রীয় আলপাইন ক্লাব, এবং ক্লাব আলপাইন ফ্রান্স এর সদস্য নির্বাচিত হন।[৯] তিনি এই সাফল্যে খুব গর্বিত ছিলেন এবং তালিকাটি তার বইয়ের শিরোনাম পাতায় উল্লেখ করতেন।[৩৭]
১৯১৭ সালে ফ্যানি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ অসুস্থতার পর ১৯২৫ সালে ফ্রান্সের কান এ মারা যান। প্রাথমিকভাবে তার ছাই ম্যাসাচুসেটস এ সমাহিত করা হয়েছিল, পরবর্তীতে তা ওরসেসটার ম্যাসাচুসেটসের পল্লী সমাধিক্ষেত্রে তার স্বামীর পাশে সমাহিত করা হয়েছে। তাদের স্মৃতিস্তম্ভে লেখা রয়েছে "অগ্রজ হিমালয় অভিযাত্রী"। তিনি তার উইলে ১২৫,০০০ মার্কিন ডলার র্যাডক্লিফ, ওয়েলেসলি, স্মিথ এবং ব্রায়ান মর কলেজের নামে রেখে যান।[২][৯][৬৭][৬৮][৬৯] নারী অধিকার উন্নয়ন এবং তার নারী-পুরুষ সমান এই বিশ্বাস নিয়ে কাজ করার জন্য এই অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ হয়েছিল।[৭০]
গ্রন্থাগার সংরক্ষণ সম্পর্কে ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান |
By ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান |
---|