ফ্রাই অটো | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ফ্রাই পল অটো ৩১ মে ১৯২৫ জিগমার, জার্মানি |
মৃত্যু | ৯ মার্চ ২০১৫ ওয়ার্মব্রন, ঞ্জার্মানি | (বয়স ৮৯)
জাতীয়তা | জার্মান |
ফ্রাই অটো (জার্মান ভাষায়: Frei Otto) (মে ৩১, ১৯২৫ - মার্চ ৯, ২০১৫) একজন জার্মান স্থপতি এবং কাঠামো প্রকৌশলী। তিনি তার স্থাপনায় হালকা ও কম ওজন বিশিষ্ট কাঠামো ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। বিশেষ করে প্রসার্য কাঠামো (Tensile structure) ও ঝিল্লী কাঠামো (Membrane structure) তৈরি ও ব্যবহারে অটো উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য নির্মাণ করা মিউনিখ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে অটো এধরনের কাঠামো ব্যবহার করেছেন। অটোর প্রাপ্ত বিভিন্ন পুরস্কারের মধ্যে রিবা রয়াল গোল্ড মেডাল এবং প্রিট্জকার পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
অটো জার্মানির জিগমারে জন্মগ্রহণ করেন তবে বড় হয়েছেন বার্লিনে। তিনি বার্লিনে স্থাপত্য বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। এরপরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণের সময় থাকার জন্য তাবু বানাতে গিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন।[১] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অটো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপত্য বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পড়েলেখা করেন। এরপরে তিনি বিভিন্ন খ্যাতিমান স্থপতিদের সাথে সাক্ষাতের জন্য বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণে তিনি এনরিখ মেন্ডেলসন, মিজ ফ্যান দিয়া রুহা, রিচার্ড নয়ট্রা এবং ফ্র্যাঙ্ক লয়েড রাইটের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
অটো ১৯৫২ সালে জার্মানিতে ব্যক্তিগতভাবে স্থাপত্য পেশা শুরু করেন। জার্মানির কাসেল-এ ফেডারেল গার্ডেন এক্সপোজিশনে অটোর নকশায় নির্মিত প্যাভিলিয়নটি প্রথমবারের মত মানুষের দৃষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়। ১৯৫৪ সালে অটো টেনজাইল স্ট্রাকচার বা প্রসারণযোগ্য কাঠামো বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।[১] অটো হালকা ওজনবিশিষ্ট প্রসারণীয় ও মেমব্রেন কাঠামো বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। কাঠামো প্রকৌশল ও পুরকৌশলের এসম্পর্কিত বিষয়ে অটো বিভিন্ন নতুন ধারণার প্রবর্তন করেছেন। ১৯৬৪ সালে স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অটো ইন্সটিটিউট ফর লাইটওয়েট স্ট্রাকচার প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা থেকে অবসর নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই ইন্সটিটিউটের প্রধান ছিলেন। তার করা উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক উপলক্ষে মিউনিখে নির্মিত অলিম্পিক স্টেডিয়াম এবং ১৯৬৭ সালের মন্ট্রিয়ল এক্সপোতে ওয়েস্ট জার্মান প্যাভিলিয়ন।[২]
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অটো স্থপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে স্থপতি মাহমুদ বোদো রাশ মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেন। এক্সপো ২০০০-এ জাপানি স্থপতি শিগেরু বানের সাথে অটো জাপানী প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেন। এই প্যাভিলিয়নটি সম্পূর্ণভাবে কাগজের তৈরি। মাহমুদ রাশের সাথে অটো এই এক্সপোতে ভেনেজুয়েলার প্যাভিলিয়ন নকশা করেন। সেপ্টেম্বর ১১-এর হামলার স্মরণে অটো নিউ ইয়র্কের ঐ জায়গাটিকে পানিবেষ্টিত করে এর চারপাশে গাছের সারি স্থাপনের চিন্তা করেন। তার চিন্তায় আরো ছিল ঐ জায়গার পার্কে একটি বিশ্বমানচিত্র স্থাপন যাতে কোন মুহূর্তে বিশ্বে যেসব দেশে যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে, সেসব দেশের মানচিত্রে ক্রমাগত আলো জ্বলবে এবং যুদ্ধে নিহত মানুষের সংখ্যা একটি বোর্ডে প্রদর্শন করা হবে।[৩]
অটো ২০১৫ সালের ৯ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। তার প্রিটজকার পুরস্কার পাওয়ার খবর ২৩ মার্চ ঘোষণা করার কথা ছিল, কিন্তু ৯ মার্চ মৃত্যুর কারণে তার পরের দিন ১০ মার্চ পুরস্কার কমিটি ঘোষণাটি করে।[৪][৫] অবশ্য এর অনেক আগেই প্রিটজকার পুরস্কার কমিটির নির্বাহী পরিচালক মার্থা থর্ন অটোকে এই কথা জানিয়েছিলেন। তার জবাবে অটো বলেছিলেন, “আমি এই পুরস্কার পাওয়ার মত তেমন কিছুই করিনি। পুরস্কার জয় করা আমার জীবনের লক্ষ্য নয়। আমি দরিদ্র মানুষদের সাহায্যার্থে কাজ করি, কিন্তু তারপরও পুরস্কার প্রাপ্তি নিয় আমি যা বলতে চাই – আমি খুব খুশি।“[৫]
ফ্রাই অটো-এর নকশাকৃত ভবন ও স্থাপনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:[৫]
১৯৭৪ – থমাস জেফারসন মেডাল ইন আর্কিটেকচার[৬] ১৯৮০ – ইউনিভার্সিটি অফ বাথ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী[৭] ১৯৯৬/৯৭ – ওলফ প্রাইজ ইন আর্কিটেকচার[৭] ২০০৫ – রয়াল ইন্সটিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস কর্তৃক প্রদত্ত রয়াল গোল্ড মেডাল ফর আর্কিটেকচার[৮] ২০০৬ – প্রিমিয়াম ইম্পেরিয়াল ইন আর্কিটেকচার[২] ২০১৫ – প্রিট্জকার আর্কিটেকচার পুরস্কার[৪][৫]