ফ্রাঙ্ক ড্রেক | |
---|---|
জন্ম | ২৮ মে, ১৯৩০ |
জাতীয়তা | মার্কিন |
নাগরিকত্ব | যুক্তরাষ্ট্র |
পরিচিতির কারণ | জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী |
ড. ফ্রাঙ্ক ড্রেক (জন্ম ২৮ মে ১৯৩০) একজন মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী। তিনি একটি বিখ্যাত সূত্র প্রতিপাদন করেন যা ড্রেকের সূত্র নামে খ্যাত। এছাড়াও সেটি (SETI; বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার অনুসন্ধান) প্রকল্পের পত্তনের জন্যও তিনি সুবিদিত।
ড্রেক যখন শিকাগোতে পড়াশোনা করতেন তখনই তিনি ইলেক্ট্রনিক্স এবং রসায়নের প্রতি বিশেষ আগ্রহী হয়ে পড়েন। তিনি পরবর্তীতে বলেছেন যে ৮ বছর বয়সেই তিনি প্রথম মহাবিশ্বের অন্য কোন স্থানে প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু সমসাময়িক ধর্মীয় মতবাদের প্রাধান্যের কারণে তিনি কখনই তা তার পরিবার বা অন্য কারো সাথে আলোচনা করতেন না।
রট্সি (ROTC) ইলেকট্রনিক্স বৃত্তি নিয়ে তিনি কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সেখানেই তার জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে। ১৯৫১ সালে তিনি অটো স্ট্রুভে-র একটি বক্তৃতা শুনে বহির্জাগতিক প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে আরও আশাবাদী হয়ে উঠেন। কলেজ পাশের পর তিনি স্বল্প সময়ের জন্য ইউএসএস আলবেনি নামক কোম্পানিতে ইলেক্ট্রনিক্স কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকেন। এরপর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা শুরু করেন।
ড্রেক পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রীন ব্যাঙ্কে অবস্থিত ন্যাশনাল রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরিতে (এনআরএও) বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু সবসময়ই আর চান্তা ছিল বহির্জাগতিক প্রাণ নিয়ে। এরপর তিনি নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। এসময় তিনি কয়েকটি যুগান্তকারী পরিমাপের গোড়াপত্তন করেন যা Jovian আয়নমন্ডল এবং magnetosphere এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
১৯৬০ সালে ড্রেক ওজমা প্রকল্প নামে বহার্জাগতিক বু্ধিমত্তার অনুসন্ধানের জন্য প্রথম বেতার প্রকল্প পরিচালনা করেন। এটি অবশ্যই সত্য যে সেদান হাজার তারার অসংখ্য সংকেতের মাঝেও বুদ্ধিমান প্রাণী কর্তৃক প্রেরিত কোনরকম সংকেতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি তবে এর মাধ্যমেই বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। এটি স্বীকার করতে বাধা নেই যে ভিনগ্রহে প্রাণের ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট নিদর্শন নেই কিন্তু ফ্রাঙ্ক ড্রেক বিশ্বাস করেন যে যে ভবিষ্যতে অবশ্যই বহির্জাগতিক সভ্যতা হতে প্রেরিত অর্থবহ সংকেতের সন্ধান পৃথিবীর মানুষ লাভ করবে; হতে পারে সে সংকেত অত্যন্ত ক্ষীণ।
১৯৬১ সালে ফ্রাঙ্ক ড্রেক জে. পিটার পিয়ারম্যানের (যিনি ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর মহাকাশ বিজ্ঞান বোর্ডের একজন কর্মকর্তা ছিলেন) সহযোগিতায় এনআরএও-তে সেটি বিষয়ক প্রথম কর্মশালার আয়োজন করেন। মাত্র এক ডজনের মত বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায়ই ড্রেক তার বিখ্যাত ড্রেকের সূত্রের প্রস্তাবনা পেশ করেন। ড্রেকের সূত্র মূলত পরস্পর সম্পর্কিত কিছু রাশির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় যার মাধ্যমে আমরা বহির্জাগতিক সভ্যতার সংখ্যা (N) নিরুপণের একটি সম্ভাব্য উপায় খুঁজে পাই। একই সাথে এটির মাধ্যমে এধরনের সভ্যতার সংখ্যা নিরুপণে আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলোরও পরিচয় পাওয়া যায় যার প্রধান কারণ হল অপর্যাপ্ত উপাত্ত। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে বহির্জাগতিক সভ্যতার সংখ্যা ধরা যায় ১ থেকে ১,০০০,০০০ এর মধ্যে। এই ব্যাপ্তির সাথে সম্পর্কিত দার্শনিক ভাষ্য বা প্রশ্নের কথা সবারই জানা: এই মহাবিশ্বে আমরা কি একটি বিশেষ এবং অনন্য মহাজাগতিক সৃষ্টি নাকি এই মহাবিশ্ব প্রাণে প্রাণে ভরপুর। এসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে যাচ্ছে সেটি।
১৯৬০ এর দশকে ড্রেক আরেসিবো মানমন্দিরে বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার উপযোগী সকল যন্ত্রপাতি সন্নিবেশ করায় নেতৃত্ব দেন। পরে ১৯৭৪ এবং ১৯৯৬ সালে এর আরো বেশ কিছু উন্নয়নমূলক পরিবর্তন সাধিত হয়। একজন গবেষক হিসেবে ড্রেক তার প্রাথমিক সময়গুলোতে পালসার (স্পন্দক) নিয়ে গবেষণায় ব্যাস্ত ছিলেন। সেসময় তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রেনমি অ্যান্ড আয়নোস্ফিয়ার সেন্টারের (এনএআইসি- আরেসিবোর পূর্বনাম) পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
১৯৭২ সালে ড্রেক কার্ল সাগানের সাথে যৌথভাবে পায়োনিয়ার প্লাক-এর নকশা করেন যা ছিল মহাশূণ্যে প্রেরিত প্রথম গাঠনিক বার্তা। এটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছিলো যেন বহির্জগতের কোন সভ্যতা তা বুঝতে পারে। পরবর্তীথে ড্রেক ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড সৃষ্টিতেও উপদেষ্টা ও পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ড্রেক ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর একজন সদস্য এবং একসময় (১৯৮৯-৯২) তিনি এর ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের অন্তর্গত পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বোর্ডের প্রধান ছিলেন। তিনি একসময় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ দি প্যাসিফিক-এর সভাপতিও ছিলেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন এবং একই সাথে আরেসিবো মানমন্দিরের পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে তিনি সেটির পর্যায়ভুক্ত ফোনিক্স প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন।
এছাড়াও সান্তা ক্রুজে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনা করেন এবং সেখানে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিভাগের ডীন ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের নরউডে নরউড উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থিত ড্রেক প্ল্যানেটারিয়ামটি তার নামানুসারে স্থাপন করা হয়েছে।