ফ্রাঙ্কলিন | |
---|---|
তাসমানিয়ায় ফ্রাঙ্কলিন নদীর মোহনার অবস্থান | |
ব্যুৎপত্তি | Sir John Franklin |
অবস্থান | |
দেশ | অস্ট্রেলিয়া |
রাজ্য | তাসমানিয়া |
অঞ্চল | মধ্য পার্বত্যভূমি, পশ্চিম তাসমানিয়া |
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য | |
উৎস | মাউন্ট হিউগেল |
• অবস্থান | ফ্রাঙ্কলিন-গর্ডন বন্য নদী জাতীয় উদ্যান |
• স্থানাঙ্ক | ৪২°১৮′৪৮″ দক্ষিণ ১৪৬°১২′৫৬″ পূর্ব / ৪২.৩১৩৩৩° দক্ষিণ ১৪৬.২১৫৫৬° পূর্ব |
• উচ্চতা | ৯৫১ মিটার (৩,১২০ ফুট) |
মোহনা | গর্ডন নদী |
• স্থানাঙ্ক | ৪২°৩৫′২৭″ দক্ষিণ ১৪৫°৪৪′২৪″ পূর্ব / ৪২.৫৯০৮৩° দক্ষিণ ১৪৫.৭৪০০০° পূর্ব |
• উচ্চতা | ১১ মিটার (৩৬ ফুট) |
দৈর্ঘ্য | ১২৯ কিলোমিটার (৮০ মাইল) |
অববাহিকার বৈশিষ্ট্য | |
নদী ব্যবস্থা | গর্ডন নদী |
উপনদী | |
• বামে | সারপ্রাইজ নদী, লডন নদী, জেন নদী |
• ডানে | কলিংউড নদী, লুকান নদী, অ্যান্ড্রু নদী |
জলাধার | আন্ডাইন হ্রদ; ডিক্সন হ্রদ |
[১] |
ফ্রাঙ্কলিন নদী অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রধান বহুবর্ষজীবী নদী (সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে এমন), যা অস্ট্রেলিয়ার মধ্য পার্বত্যভূমি ও তাসমানিয়ার পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। নদীটি তাসমানীয় বন্যভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য অঞ্চলের মধ্য-উত্তরে ফ্রাঙ্কলিন-গর্ডন বন্য নদী জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। এর উৎস মধ্য পার্বত্যভূমির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এবং এটি পশ্চিম উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয়।
নদীটি তাসমানিয়ার গভর্নর স্যার জন ফ্রাঙ্কলিনের সম্মানে নামকরণ করা হয়েছে যিনি পরবর্তীতে উত্তর-পশ্চিম সমুদ্রপথ খুঁজতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
নদীটি মধ্য পার্বত্যভূমির পশ্চিম অঞ্চলে ডারওয়েন্ট ব্রিজের পশ্চিমে হিউগেল পর্বতের নিচ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। এরপর প্রত্যন্ত অঞ্চল ও পর্বতশ্রেণীর মধ্য দিয়ে সাধারণত পশ্চিম ও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে গর্ডন নদীর সাথে মেশে। উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীটি সারপ্রাইজ, কলিংউড, লুসান, লডন, অ্যান্ড্রু এবং জেন নদীসহ ষোলটি উপনদীর সাথে মিলিত হয়। ফ্রাঙ্কলিনের অগ্রভাগ দুটি জলাধার: আনডাইন হ্রদ ও ডিক্সন হ্রদ দ্বারা বিভক্ত। নদীটির শুরুর অংশে লায়েল হাইওয়ে অতিক্রম করেছে। কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক দল এখানে প্রাক-ইউরোপীয় ক্রিয়াকলাপ চিহ্নিত করেছে। উনিশ শতকে অভিযাত্রীরা ফ্রেঞ্চম্যান্স ক্যাপে পৌঁছাতে ফ্রাঙ্কলিন নদীর অগ্রভাগে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, লোকজন নদীর নিম্নভাগের তীরে প্রধানত পাইন গাছ কাটার জন্য আসত।[২][৩]
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দুঃসাহসী অভিযাত্রীরা নদীর কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো জয় করতে চেয়েছিল। শ্যুটিং দ্য ফ্র্যাঙ্কলিন: আর্লি ক্যানোয়িং অন তাসমানিয়া'স ওয়াইল্ড রিভার্স নামক বইটি ১৯৫০ এর দশকের এমনই তিনটি অভিযাত্রার কাহিনী তুলে ধরেছে।[৪]
পূর্ববর্তী ভ্রমণকারীদের সময় নদীর মাত্র কয়েকটি স্থানের নামকরণ করা হয়েছিল। বব ব্রাউন নদীতে তার প্রাথমিক যাত্রার সময়, কিছু জায়গার জন্য নাম জমা দিয়েছিলেন। এর আগে এবং পরে অভিযাত্রীরা নদীর অনেকগুলি বাঁক এবং র্যাপিডের নাম যুক্ত করেছে:
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে ফ্রাঙ্কলিন নদী সংরক্ষণ আন্দোলন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশবাদী আন্দোলন। এর কল্যাণে গর্ডন-ফ্রাঙ্কলিন নদীতে প্রস্তাবিত বিতর্কিত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাতিল হয়।
১৯৭৮ সালে তাসমানীয় জলবিদ্যুৎ কমিশন গর্ডন নদীতে বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দেয়, এই নদীটিই কিছুটা দূরে ফ্রাঙ্কলিন নদীতে মেশে। প্রাথমিকভাবে ২টি বাঁধ নির্মাণের কথা ছিল। মূলত তাসমানিয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু নদী ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হওয়ায়, অনেকে এর বিরোধিতা করেন। বিষয়টি জাতীয় পর্যায়েও তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ফ্রেজারের নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি বাঁধ নির্মাণের পক্ষে এবং বিরোধী দল বব হকের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি বিপক্ষে ছিল।
১৯৮০ এর দশকে, ফ্রাঙ্কলিন নদী তখনকার অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম সংরক্ষণ আন্দোলনের সমার্থক হয়ে ওঠে। ১৯৮০ সালের জুনে অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে প্রায় ১০,০০০ মানুষের সমাবেশে বাঁধ নির্মাণ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।[৫] ১৯৮৩ সালের নির্বাচনে এর ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। লিবারেল পার্টিকে হারিয়ে বব হকের লেবার পার্টি জয়ী হয় এবং প্রতিশ্রুতি অনুসারে তিনি ফ্রাঙ্কলিনে বাঁধ নির্মাণ বন্ধের প্রচেষ্টা করেন। অবশেষে ফেডারেল সরকার ও তাসমানিয়া রাজ্য সরকারের আইনি লড়াইয়ে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে ফেডারেল সরকার জয়ী হয় এবং বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করা হয়।[৬] এই আন্দোলন ফ্রাঙ্কলিনের উপর বাঁধ দিয়ে হাইড্রো তাসমানিয়ার প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ পরিকল্পনাকে আটকাতে লড়াই করে।
বাঁধের উপর নিবদ্ধ দৃষ্টি এবং প্রান্তরের অভিজ্ঞতার বিষয়গুলি মানুষকে নদীর যথাযথ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে নদীটির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। ফ্রাঙ্কলিন নদীতে একটি ডুবে যাওয়ার ঘটনার কারণে নদীর ব্যবহারকারীদের জন্য কঠোর গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছিল। নদী তীরবর্তী এলাকা সম্পর্কে পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক জ্ঞানসম্পন্ন লেখক রিচার্ড ফ্ল্যানাগানের লেখা "ডেথ অফ এ রিভার গাইড" নদীতে ডুবে যাওয়া সম্পর্কিত একটি কাল্পনিক উপন্যাস।[৭]