ফ্রিডরিখ রাৎজেল | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৯ আগস্ট ১৯০৪ | (বয়স ৫৯)
জাতীয়তা | জার্মান |
শিক্ষা | হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় জেনা বিশ্ববিদ্যালয় হাম্বোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বার্লিন |
পরিচিতির কারণ | লেবেনস্রাম ধারণা |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | ভূগোল নৃকুলবিদ্যা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন | চার্লস ডারউইন আর্নস্ট হেকেল |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন | এলেন চার্চিল সেম্পেল |
ফ্রিডরিখ রাৎজেল (ইংরাজী: Friedrich Ratzel) (আগস্ট ৩০, ১৮৪৪ - আগস্ট ৯, ১৯০৪) ছিলেন একজন জার্মান ভূগোলবিদ এবং নৃকুলবিদ। তিনি উল্লেখযোগ্য প্রথম লেবেনস্রাম ("লিভিং স্পেস") শব্দটি ব্যবহার করার জন্য। পরবর্তীকালে এই অর্থেই ব্যহৃত হয় ন্যাশনাল সোসালিস্ট (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক) শব্দ।
রাৎজেলের বাবা ছিলেন বাডেনের গ্র্যান্ড ডিউকের গৃহকর্মী প্রধান। ফ্রিডরিখ কার্লসরুহের হাই স্কুলে ছয় বছর পড়াশোনা করার আগে ১৫ বছর বয়সে এক ওষুধ প্রস্তুতকারীর শিক্ষানবিশ ছিলেন। ১৮৬৩ সালে তিনি সুইজারল্যান্ড-এর লেক অফ জুরিখ-এ র্যাপার্সউইল-এ চলে যান। সেখানে তিনি ক্লাসিক্স অধ্যয়ন শুরু করেন। রুর অঞ্চলের ক্রেফেল্ড-এর কাছে মোয়ার্স-এ পরবর্তী এক বছর (১৮৬৫-১৮৬৬) তিনি ওষুধ বিক্রেতার কাজ করেন। তারপর তিনি কার্লসরুহের উচ্চ বিদ্যালয়ে অল্প সময়ের জন্য অতিবাহিত করে ১৮৬৮ সালে জেনা এবং বার্লিন-এর হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়-এ প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থী রূপে প্রবেশ করেন। ১৮৬৯ সালে তিনি প্রাণিবিদ্যা অধ্যয়ন করেন এবং প্রকাশ করেন ডারউইন-এর উপর সেইন আন্ড ওয়েরডেন ডার অর্গানিঞ্চেন রচনাটি।
পঠনপাঠন শেষ হওয়ার পর রাৎজেল ভ্রমণকালে নিজেকে জীববিদ থেকে ভূগোলবিদে রূপান্তরিত করে ফেলেন। তিনি ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে ক্ষেত্র সমীক্ষা শুরু করেন এবং তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে চিঠি লেখা শুরু করেন। এই চিঠি গুলির মাধ্যমে শুরু হয় কলিনশ্চে জেইতাং (“কোলোন জার্ণাল”)-এ ভ্রমণ সাংবাদিকতা। এর ফলে তাঁর ভ্রমণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। অভিযানকারী হিসাবে রাৎজেলের উথ্থান ঘটে। তাঁর অভিযানগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁর ১৮৭৪-১৮৭৫ সালের উত্তর আমেরিকা, কিউবা এবং মেক্সিকো ভ্রমণ। এই ভ্রমণ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি আমেরিকায় বিশেষ করে মধ্য-পশ্চিম ও উত্তর আমেরিকার অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীগুলিতে জার্মান বংশোদ্ভূত লোকদের প্রভাব নিয়ে অধ্যয়ন করছিলেন।
তিনি ১৮৭৬ সালে তাঁর ভ্রমণ সম্পর্কিত একটি লিখিত বিবরণ তৈরি করেছিলেন স্ট্যাডে-অন্ড কুলচারবিল্ডার ওস নর্ডামেরিকা (উত্তর আমেরিকার শহর ও সংস্কৃতির প্রোফাইল)। এটি সাংস্কৃতিক ভূগোল-এর ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়েছিল। রাৎজেলের মতে, শহরগুলিই মানুষকে অধ্যয়ন করার জন্য সর্বোত্তম স্থান। কারণ শহরগুলিতে জীবন "মিশ্রিত, সংকুচিত এবং ত্বরান্বিত" হয় এবং তারা "মানুষের বৃহত্তম, সর্বোত্তম, সবচেয়ে সাধারণ দিকগুলি" সামনে নিয়ে আসে। রাৎজেলকে নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন, রিচমন্ড, চার্লসটন, নিউ অরলিন্স এবং সান ফ্রান্সিসকো শহরে ভ্রমণ করতে হয়েছিল।
১৮৭৫ সালে ফিরে আসার পরে রাৎজেল মিউনিখ-এর টেকনিক্যাল হাইস্কুলে ভূগোলের লেকচারার হয়েছিলেন। ১৮৭৬ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং তারপরে ১৮৮০ সালে পুরো অধ্যাপকের পদে উন্নীত হন। মিউনিখে থাকাকালীন রাৎজেল বেশ কয়েকটি বই প্রস্তুত করেন এবং সেগুলি একাডেমিক হিসাবে তাঁকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৮৮৬ সালে, তিনি লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়-এর নিয়োগপত্র গ্রহণ করেন। তাঁর বক্তৃতাগুলিতে ব্যাপকভাবে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিশেষ করে থাকতেন প্রভাবশালী আমেরিকান ভূগোলবিদ এলেন চার্চিল সেম্পল।
রাৎজেল ১৮৮২ এবং ১৮৯১ সালে তাঁর দুটি খন্ডের অ্যানথ্রোপোজিওগ্রাফি গ্রন্থে মানব ভূগোল-এর ভিত্তি রচনা করেছিলেন। এই কাজটি তাঁর অনেক শিক্ষার্থী ভুল ব্যাখ্যা করেন। এর ফলে বেশ কিছু পরিবেশ পরিণামবাদী তৈরি হয়েছিলেন। তিনি ভৌগোলিক বিষয় সম্পর্কিত তাঁর কাজ পলিটিসচে জিওগ্র্যাফি (রাজনৈতিক ভূগোল) ১৮৯৭ সালে প্রকাশ করেন।এই কাজের মাধ্যমেই রাৎজেল তাঁর লেবেনস্রাম এবং সামাজিক ডারউইনবাদ ধারণাগুলির প্রবর্তন করেন এবং সে বিষয়ে অবদান রাখেন। তাঁর তিন খণ্ডের রচনা দ্য হিস্ট্রি অফ ম্যানকাইন্ড[১] ১৮৯৬ সালে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এতে ১১০০ এরও বেশি চমৎকার খোদাই এবং উল্লেখযোগ্য ক্রোমোলিথোগ্রাফির সমন্বয় সাধন করা হয়।
রাৎজেল ১৯৯৪ সালের ৯ আগস্ট জার্মানির আমারল্যান্ড-এ তাঁর আকস্মিক মৃত্যু পর্যন্ত লাইপজিগে কাজ চালিয়ে যান। বহুমুখী একাডেমিক আগ্রহের একজন পণ্ডিত রাৎজেল ছিলেন একজন কট্টর জার্মান। ১৮৭০ সালে ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধের সূত্রপাতের সময় তিনি প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং যুদ্ধের সময় দু'বার আহত হয়েছিলেন।
ডারউইন এবং প্রাণীবিজ্ঞানী আর্নেস্ট হেনরিখ হেকেল সহ চিন্তাবিদদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যে বায়োজিওগ্রাফি সম্পর্কিত নিবন্ধ লেবেনস্রাম '(১৯০১) প্রবন্ধটিও রয়েছে। এটি মৌলিকভাবে জিওপলিটিক্স-এর জার্মান সংস্করণ জিওপলিটিক।
রাৎজেলের লেখাগুলি ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধ-এর পরে জার্মান শিল্পবাদ-এর বৃদ্ধি এবং পরবর্তীকালে বাজার-এর সন্ধানের সাথে মিলিত হয়ে ব্রিটেন-এর সাথে প্রতিযোগিতায় নিয়ে আসে (জার্মানকে)। সাম্রাজ্য বিস্তার-এর ন্যায্য যৌক্তিকতা হিসাবে তাঁর লেখাগুলিকে তখন স্বাগত জানানো হয়। আমেরিকান জিওস্ট্র্যটেজিস্ট আলফ্রেড থায়ার মাহান দ্বারা প্রভাবিত রাৎজেল জার্মান নৌ-নাগালের জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে লিখেছিলেন এবং একমত হয়েছিলেন যে সমুদ্রের শক্তিই স্বাবলম্বী। কারণ বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত লাভটি আসবে জমির শক্তির বিপরীতে সামুদ্রিক বাণিজ্য থেকেই।
তাঁর লেবেনস্রাম-এর প্রাথমিক ধারণাটি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয় বরং তা ছিল আধ্যাত্মিক এবং বর্ণবাদী জাতীয়তাবাদী সম্প্রসারণ।
রাৎজেল যে বইটির জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত তা হ'ল অ্যানথ্রোপোজিওগ্রাফি। বইটি ১৮৭২ এবং ১৮৯৯ এর মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছিল। এই অবিস্মরণীয় কাজটির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে আছে লোকের জীবনধারা (স্টাইল) এবং জীবনের উপর বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্যের প্রভাব বিষয়ে।