ফ্রিৎস জুইকি | |
---|---|
জন্ম | ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৮ |
মৃত্যু | ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ পাসাদেনা, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৭৫)
নাগরিকত্ব | সুইস |
মাতৃশিক্ষায়তন | সুইস ফেডারেল পলিটেকনিক |
পরিচিতির কারণ | তমোপদার্থ, অতিনবতারা, ছায়াপথ, মহাকর্ষীয় লেন্স, নিউট্রন তারা |
পুরস্কার | স্বাধীনতায় রাষ্ট্রপতি পদক (১৯৪৯) রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির স্বর্ণ পদক (১৯৭২) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | জ্যোতির্বিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | পিটার ডেবাই এবং পল শেরের |
ফ্রিৎস জুইকি (জার্মান: Fritz Zwicky; জার্মান: [ˈtsvɪki]; ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৮ - ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪) ছিলেন একজন সুইস জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে কাজ করেছেন, এবং তাত্ত্বিক ও পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিদ্যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।[১] জুইকিই প্রথম ১৯৩৩ সালে ভিরিয়াল উপপাদ্য ব্যবহার করে তমোপদার্থ (ডার্ক ম্যাটার) এর অস্তিত্বের পর্যবেক্ষণমূলক আভাস দিয়েছিলেন। তিনি একে "dunkle (kalte) Materie" নামে অভিহিত করেছিলেন।[২][৩]
ফ্রিৎস জুইকির জন্ম ভার্না, বুলগেরিয়াতে, ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। তার পিতা, ফ্রিডোলিন (জন্ম ১৮৬৮), ছিলেন বুলগেরিয়ান শহরের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং তিনি ভার্নাতে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও কাজ করেছিলেন (১৯০৮-১৯৩৩)।[৪] তার মাতা, ফ্রানজিস্কা ভ্রাচেক (জন্ম ১৮৭১), ছিলেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের একজন জাতিগত চেক। জুইকি পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে ফ্রিটজ ছিলেন সবচেয়ে বড়: রুডলফ নামে তার একটি ছোট ভাই এবং লিওনি নামে একটি বোন ছিল। ফ্রিটজের মা ১৯২৭ সালে ভার্নাতে মারা যান। ফ্রিডোলিন ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বুলগেরিয়ায় থেকেছেন এবং কাজ করেছেন, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর পর তিনি সুইজারল্যান্ডে ফিরে আসেন।[৫]
১৯০৪ সালে, ছয় বছর বয়সে, জুইকিকে সুইজারল্যান্ডের গ্লারাসে অবস্থিত তার পৈত্রিক নিবাসে দাদা-দাদীর কাছে বাণিজ্য বিষয়ে পড়াশুনা করবার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়।[৬] অবশ্য পরবর্তীতে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে তার আগ্রহ জন্ম নেয়। তিনি জুরিখ এ অবস্থিত সুইস ফেডেরাল পলিটেকনিকে (বর্তমান নাম ETH জুরিখ) গণিত ও ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞান এ উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।
১৯২৫ সালে রকফেলার ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ পেয়ে ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে রবার্ট মিকিলান-এর সাথে গবেষণার কাজ করবার জন্য জুইকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন।[৬] রবার্ট ওপেনহেইমার এবং জুইকির অফিস ছিল একই করিডরের দুই প্রান্তে।[৬]
জুইকি ছিলেন এমন একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী যার হাত ধরে এমন অসংখ্য বিশ্বতত্ত্ব-এর জন্ম এবং বিকাশ ঘটে যা একুশ শতকের শুরুর দিকে মহাবিশ্বকে বুঝবার ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব রেখেছে। জুইকি এবং তার সহকর্মী ওয়াল্টার বাডা ১৯৩৪ সালে "সুপারনোভা" বা (অতিনবতারা) শব্দটি ব্যবহার করে নিউট্রন তারা[৭], সেই সাথে মহাজাগতিক রশ্মির[৮][৯] অস্তিত্বেরও প্রথম আভাস দেন। পরবর্তী ৫২ বছরে তিনি ১২০টি সুপারনোভা আবিষ্কার করেন, যা ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি রেকর্ড ছিল।[১০] জুইকিই ১৯৩৩ সালে ভিরিয়াল উপপাদ্য ব্যবহার করে তমোপদার্থ (ইংরেজি- Dark Matter) এর প্রথম পর্যবেক্ষণমূলক আভাস দিয়েছিলেন। তিনি একে "dunkle (kalte) Materie" নামে অভিহিত করেন।[২][১১] এমনকি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত তার বিখ্যাত গবেষণাপত্রে[১২] তিনি মহাকর্ষীয় লেন্সিং এর মাধ্যমে ছায়াপথের মতো বড় আকৃতির ভর নির্ণয়ের সম্ভাবনাও ব্যক্ত করেন।
১৯৪২ সালে জুইকি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সিটিটিউট টেকনোলজিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি অ্যারোজেট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (১৯৪৩-১৯৬১) একজন গবেষণা পরিচালক/পরামর্শদাতা হিসেবে এবং মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরি এবং পালোমার অবজারভেটরির স্টাফ সদস্য হিসেবে তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন। তিনি প্রথম দিকের কিছু জেট ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন এবং ৫০টিরও বেশি পেটেন্ট ধারণ করেছিলেন অনেকগুলো জেট প্রপালশনের। তিনি আন্ডারওয়াটার জেট আবিষ্কার করেন।[১৩][১৪]
১৯৩২ সালের এপ্রিল মাসে জুইকি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট সিনেটর এগবার্ট গেটস এর কন্যা ডরোথি ভার্নন গেটসকে (১৯০৪-১৯৯১) বিয়ে করেন। ১৯৩০ এর দশকের বিশ্বব্যাপী মহামন্দার সময় পালোমার অবজারভেটরি উন্নয়নে ডরোথি বিশেষ আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। ১৯৪১ সালে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।[১৫]
১৯৪৭ সালে জুইকি সুইজারল্যান্ডের আনা মার্গারিথা জার্চারকে বিয়ে করেন। তাদের তিন কন্যাসন্তান - মার্গ্রিট, ফ্রানজিস্কা এবং বারবারিনা। গ্লারাসের প্রাদেশিক লাইব্রেরি (Landesbibliothek Glarus) তালিকাভুক্ত জুইকি মিউজিয়ামে জুইকির অনেক কাগজপত্র এবং বৈজ্ঞানিক কাজ প্রদর্শিত রয়েছে। তিনি 8 ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ সালে পাসাডেনা, ক্যালিফোর্নিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁকে মলিস, সুইজারল্যান্ডে সমাহিত করা হয়।
২৩ জানুয়ারি, ১৯৭৩তে প্রতিষ্ঠিত ফ্রিৎস জুইকি ফাউন্ডেশন (Fritz Zwicky Stiftung) জুইকির ভূসম্পত্তি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে, যা গ্লারাসের প্রাদেশিক লাইব্রেরি (Landesbibliothek Glarus) এর তালিকাভুক্ত এবং সংরক্ষিত প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি ফাউন্ডেশনটি অ্যান এক্সট্রাঅর্ডিনারি অ্যাসট্রোফিজিস্ট শিরোনামে জুইকির একটি জীবনী প্রকাশ করেছে। (দেখুন Acta Morphologica Generalis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে)।