ফ্রেডরিক উইন্সলো টেইলর | |
---|---|
জন্ম | Frederick Winslow Taylor ২০ মার্চ ১৮৫6 |
মৃত্যু | ২১ মার্চ ১৯১৫ | (বয়স ৫৯)
মৃত্যুর কারণ | ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস |
সমাধি | পেনসিলভ্যানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র |
জাতীয়তা | মার্কিন |
পেশা | ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ |
পরিচিতির কারণ | বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক |
আদি নিবাস | জার্মান টাউন, ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভ্যানিয়া |
দাম্পত্য সঙ্গী | লুইস এম. স্পুনার |
পিতা-মাতা | ফ্রাংকলিন টেইলর এমিলি টেইলর |
ফ্রেডরিক উইন্সলো টেইলর (ইংরেজি: Frederick Winslow Taylor; জন্ম: ২০ মার্চ, ১৮৫৬ - মৃত্যু: ২১ মার্চ, ১৯১৫)[১][২] একজন মার্কিন যন্ত্র প্রকৌশলী যিনি সারা জীবন শিল্পোৎপাদনে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে গেছেন।[৩] তাঁকে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়।[৪][৫]
১৮৭৫ সালে তিনি বিভিন্ন কোম্পানিতে নমুনা তৈরি ও লেদ চালানোর কাজে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতেন। ১৮৭৮ সালে টেইলর মিডভেল ষ্টীল কোম্পানীতে সাধারণ একজন মেকানিক হিসেবে যোগ দেন এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সে পড়াশুনার মাধ্যমে প্রকৌশলী ডিগ্রী লাভের পর কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী পদে উন্নীত হন। পরবর্তীতে একটি কাগজের আঁশ তৈরির কারখানায় সাধারণ ব্যবস্থাপক হিসেবে তিন বছর কাজ করেছিলেন। এরপর তিনি চাকুরি ছেড়ে ব্যবস্থাপনায় পরামর্শদাতা হিসেবে স্বাধীন ব্যবসায়ে লিপ্ত হন।
ফ্রেডরিক উইন্সলো টেইলর ১৮৫৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহরে একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। টেইলরের পিতা ফ্র্যাংকলিন টেইলর ছিলেন একজন প্রিন্সটন শিক্ষিত আইনজীবী।[৬] টেইলরের মাতা মিলি অ্যানেট টেইলর ছিলেন একজন প্রদীপ্ত মৃত্যুদণ্ডবিলোপপন্থী এবং লুক্রেশিয়া মট এর সহকর্মীকে ছিলেন। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন টেইলর শিক্ষা জীবনে আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও চোখের সমস্যা জনিত কারণে তার পক্ষে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। ফলে ১৮৭৫ সালে একটি খুদ্র নির্মাণ শিল্পে তিনি 'শিক্ষানবিশ নকশা প্রণেতা' হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৮৭৮ সালে তিনি 'মিডভেল ষ্টীল কোম্পানিতে' একজন যন্ত্র চালক হিসেবে যোগদান করেন। একই সঙ্গে নৈশকালীন পড়াশোনা করে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন লাভ করেন।
অসাধরন প্রতিভার অধিকারী টেইলর কার্যক্ষেত্রে স্বীয় কর্মদক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার বলে কর্মনায়ক বা ফোরম্যান থেকে শুরু করে নানা পরে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং অবশেষে তিনি ১৮৮৪ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে মিডভেল ষ্টীল কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলীর পদ অলঙ্কৃত করেন। ফ্রেডরিক উইন্সলো টেইলর সাধারণ শিক্ষানবিশ থেকে মিডভেল ষ্টীল কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত বিভিন্ন পদে দীর্ঘ দু'যুগ ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। এ কোম্পানিতে কাজ করার সময় তার কাছে শিল্প প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের সমস্যা ধরা পড়ে।
বিশেষ করে শ্রমিকরা তাদের উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় সামান্যই উৎপাদন করে বলে তার নিকট প্রতিয়মান হয়। তিনি এ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পর তা সমধানের পন্থা কী হতে পারে এ নিয়ে দীর্ঘ দু'দশক বিভিন্ন গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। তিনি বৈজ্ঞানিক উপায়ে তথ্য অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করে করগুলো রীতি-নীতি ও তত্ত্ব উদ্ভাবন করে শিল্প ক্ষেত্রে বা কল-কারখানায় প্রয়োগ করেন। এভাবেই তিনি তার গবেষণা কর্মের ফলাফলে একটি স্বতন্ত্র দর্শনে পরিণত করেন, যা বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা (Scientific Management) নামে পরিচিত লাভ করে। ১৮৯০ সালে তিনি মিডভেল ষ্টীল কোম্পানি থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং ১৮৯৮ সালে বেথেলহেম ষ্টীল কোম্পানিতে যোগদান করেন। তাছাড়া টেইলর ১৯০০ সাল পর্যন্ত কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ১৯০১ সালে ৪৫ বছর বয়সে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন এবং জীবনের বাকি সময়টা বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বের উদ্ভাবনসহ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ধারণার উন্নয়নে পরিপূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেন। টেইলর ১৯০৬ সাল থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত 'American Society of Mechanical Engineers' -এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৫ সালে কীর্তিমান ব্যবস্থাপনা পণ্ডিত এফ. ডব্লিউ. টেইলর মৃত্যুবরণ করেন।[৭][৮]
টেইলর তার গবেষণার মধ্য দিয়ে কর্মক্ষেত্রে পদ্ধতিগত উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা (productivity) বৃদ্ধির কথা বলার পাশাপাশি মানব সম্পদের (human resource) সঠিক ব্যবহারের ওপরও গুরুত্বরোপ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বস্তুগত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মূলে রয়েছে মানবিক প্রচেষ্টার (effort) সফল প্রয়োগ। তিনি আরও লক্ষ করেন যে, মানুষের প্রচেষ্টা বাড়লে সম্পদও (wealth) বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর এইজন্যই তিনি কর্মক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বরোপ করেন। তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানের ‘বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা’ ঐ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মীদের মানসিক বিপ্লবের (mental revolution) সঙ্গে জড়িত। আর এটি হলো কর্মীদের কাজের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি এবং কর্মকর্তাদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। এই তিন বিষয়ে নেতিবাচকতা কারখানায় অনুচ্চ উৎপাদনশীলতা কারণ। এভাবেই নতুন চিন্তাচেতনা ও পদ্ধতিগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে টেইলরের ব্যবস্থাপনার নীতি ও পদ্ধতি শুধু সমকালীন সময়েই নয়; বর্তমানকাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জগতে এক নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে। এসকল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রবর্তনের জন্য এফ. ডব্লিউ. টেইলরকে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়।
ব্যবস্থাপনার গতানুগতিক পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সকল দিকে দক্ষতা অর্জন করাই হলো বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা। ১৯১২ সালে টেইলর এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, 'শীঘ্রই অথবা অদূর ভবিষ্যতে গতানুগতিক পদ্ধতির স্থলে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও পদ্ধতির ব্যবহার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।' ব্যবস্থাপনায় এফ. ডব্লিউ. টেইলর ১৯১১ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'Principles of Scientific Management' -এ বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার কতিপয় নীতি বা আদর্শ তুলে ধরেন,[১০] যা নিম্নরূপ-
১. গতানুগতিক হাতুড়ে পদ্ধতির পরিবর্তে প্রতিটি কাজে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার;
২. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কর্মী নির্বাচন, প্রশিক্ষন দান ও তাদের উন্নয়ন;
৩. ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের মধ্যে সউহার্দ্য সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা;
৪. ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের মধ্যে ও কর্তব্যের সুষ্ঠ বণ্টন;
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার নীতি সংবলিত এ গ্রন্থ প্রকাশের পরই আমেরিকাতে এটি ব্যাপক সাড়া জাগায়। পরবর্তীতে অধিকাংশ কারখানা ব্যবস্থাপকগণ টেইলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার নীতি তাদের কারখানায় প্রয়োগ করা শুরু করেন।[১১] টেইলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে 'ফ্রাঙ্ক লিলিয়ান' গিলব্রেথ দম্পতি, হ্যারিন্টেন ইমারসল, হেনরি লরেন্স গ্যান্ট, কার্ল বার্থ প্রমুথ ব্যবস্থাপনা পণ্ডিতগণ তাকে সহয়তার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রবক্তা লেনিন-সহ অনেকেই সামরিক সংগঠনে টেইলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।[১২]
টেইলর তার বাস্তব অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও গবেষণাকর্মের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থাপনা কর্ম সম্পাদনের বিভিন্ন সহায়ক উপাদান বা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা ব্যবস্থাপনা কাজকে অধিক কর্মক্ষম ও ফলদায়ক করতে সমর্থ হয়েছে। এর মধ্যে নিম্নোক্ত পদ্ধতি ও উপাদানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ-
|
|
টেইলর তার গবেষণার পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ব্যবসস্থাপনার ধারণাকে জনসাধারণ্যে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
টেইলর ৪২টি কৃতিস্বত্ব বা পেটেন্ট রচনা করেন।[১৬]
|প্রথমাংশ1=
এর |শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
|প্রথমাংশ1=
এর |শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য)