ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি Frédéric Joliot-Curie | |
---|---|
জন্ম | ১৯ মার্চ, ১৯০০ |
মৃত্যু | ১৪ আগস্ট ১৯৫৮ প্যারিস, ফ্রান্স | (বয়স ৫৮)
জাতীয়তা | ফরাসী |
মাতৃশিক্ষায়তন | একোল সুপারিয়ার দ্য ফিজিক এট দ্য চিমি ইন্ডাস্ট্রিলেজ দ্য লা ভিলে দ্য প্যারিস |
পরিচিতির কারণ | পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা |
পুরস্কার | রসায়নে নোবেল পুরস্কার (১৯৩৫) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থবিদ্যা |
জঁ ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি (ফরাসি : [fʁe.de.ʁik ʒɔ.ljo ky.ʁi]; জন্ম: ১৯ মার্চ, ১৯০০ - মৃত্যু: ১৪ আগস্ট, ১৯৫৮) ছিলেন বিখ্যাত ফরাসী পদার্থবিশারদ। তিনি এবং তার স্ত্রী ইরেন জোলিও-ক্যুরি যৌথভাবে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিস্কারের ফলে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ক্যুরি দম্পতির এ সাফল্যে অদ্যাবধি সফলতম নোবেল বিজয়ী পরিবারে আসীন রয়েছে।[১] জন্মকালীন সময়ে তার নাম ছিল জঁ ফ্রেদেরিক জোলিও।
ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণকারী জোলিও একোলে সুপারিয়ার দ্য ফিজিক এট দ্য চিমি ইন্ডাস্ট্রিলেজ দ্য লা ভিলে দ্য প্যারিস থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।[২] এরপর ১৯২৫ সালে রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে বিখ্যাত মহিলা বিজ্ঞানী মেরি ক্যুরি'র সহকারী হিসেবে কাজ করেন। একপর্যায়ে জোলিও তার কন্যা ইরেন ক্যুরিকে ভালবেসে ফেলেন। ৪ অক্টোবর, ১৯২৬ সালে প্যারিসে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। উভয়েই তাদের গোত্র নাম পরিবর্তন করে জোলিও-ক্যুরি রাখেন। দ্বিতীয় ব্যাকালরেট ডিপ্লোমাধারী জোলিও তেজস্ক্রিয় উপাদানের উপর অভিসন্দর্ভ রচনা করে ডি.এসসি লাভ করেন।
এ দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের এগারো মাস পর হেলেন এবং ১৯৩২ সালে পিঁয়েরে জন্মগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে - হেলেন খ্যাতনামা পদার্থবিদ এবং পিঁয়েরে জীববিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।[৩]
জোলিও তার জীবনের শেষদিকে অরসেতে পরমাণু পদার্থবিদ্যা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। সেখানেই তার সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষালাভ করেন।
প্যারিস বিজ্ঞান অনুষদে প্রভাষক থাকাকালীন তিনি স্ত্রীর সাথে পরমাণুর গঠন সম্পর্কীয় গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফলাফলস্বরূপ ১৯৩২ সালে জেমস চ্যাডউইক কর্তৃক নিউট্রন আবিস্কৃত হয়। ১৯৩৫ সালে জোলিও-ক্যুরি দম্পতি রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিস্কারের দরুন তাদের এ মূল্যায়ন করা হয়। এরফলে স্বল্পকালীন সময়ের জন্যে বোরন, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়াম সহযোগে আলফা উপাদান থেকে রেডিওআইসোটোপ তৈরী করা সম্ভবপর।
১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই নাজি আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে জোলিও-ক্যুরি নিজস্ব নথিপত্র সংরক্ষণ করতে সমর্থ হন। ঐ নথিপত্রগুলো পরবর্তীকালে হ্যান্স ভন হেলবেন এবং লিউ কোয়ারস্কি'র মাধ্যমে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন। ফ্রান্স দখলের ফলে তিনি ফরাসী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্রিয় সদস্যরূপে ন্যাশনাল ফ্রন্টে যোগ দেন। কলিন্স এবং লাপিঁয়েরে তাদের ইজ প্যারিস বার্নিং? গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আগস্ট, ১৯৪৪ সালে ফরাসী উত্থানের সময় তিনি পুলিশের পুণর্গঠন ও অধিকারিত্ব অর্জনে ভিয়াচেস্লাভ মলোতভের সম্মানে ককটেল পার্টির আয়োজন করেছেন যা জার্মান ট্যাঙ্ক মোকাবেলায় অধিকতর উপযোগী ও সক্ষমতা প্রদর্শন করবে। ঐ সময়ে যুদ্ধের অনেকগুলো কীর্তির মধ্যে এটি ছিল একটি।
ফরাসী বিজ্ঞান একাডেমীসহ চিকিৎসা একাডেমীর সদস্য ছিলেন তিনি। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কর্তৃক প্রবর্তিত লেজিওঁ দনর এর কমান্ডার শ্রেণীতে সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও, বিশ্ব শান্তি পরিষদের সভাপতি থাকা অবস্থায় ১৯৫১ সালে স্ট্যালিন শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।
বুলগেরিয়ার সোফিয়ায় মেট্রো স্টেশনের নামকরণ জোলিও-ক্যুরি মেট্রো স্টেশন রাখা হয়েছে। এছাড়াও, কানাডার মন্ট্রিলে রাস্তার নামকরণ তার নামে করা হয়েছে।
১৯৫৮ সালে জোলিও মৃত্যুবরণ করলে তার সম্মানার্থে বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাদের প্রবর্তিত শান্তি পদকের নাম পরিবর্তিত করে ১৯৫৯ সালে জোলিও-ক্যুরি পুরস্কার রাখে।[৪] এ পদকটি রূপার তৈরী কিন্তু বিশ্ব শান্তি পরিষদের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বর্ণপদক।