বক্সাইট এক ধরনের পাললিক শিলা যেখানে অ্যাালুমিনিয়ামের পরিমাণ থাকে সবচেয়ে বেশি। অ্যাালুমিনিয়াম এবং গ্যালিয়ামের প্রধান উৎস হল বক্সাইট। এটি অ্যাালুমিনিয়ামের কিছু খনিজ নিয়ে গঠিত। এগুলো হল গিবসাইট (Al(OH)3), বোয়ামাইট (γ-AlO(OH)) এবং ডিয়াস্পোর (α-AlO(OH)) যা আয়রন অক্সাইড (FeO(OH)) এবং হেমাটাইটের (Fe2O3) সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এছাড়াও বক্সাইটে থাকে অ্যালুমিনিয়ামের কাঁদা-মাটি কাওলিনাইট (Al2Si2O5(OH)), কম পরিমাণে অ্যানাটেজ ও ইলমেনাইট (FeTiO3 or FeO.TiO2)।[১]
১৮২১ সালে ফরাসী ভূতাত্ত্বিক পিয়েরে বারথিয়ের ফ্রান্সের লেস বক্স রাজ্যের একটি গ্রামে বক্সাইট আবিষ্কার করেন।[২]
বক্সাইট কীভাবে তৈরি হয় তা নিয়ে অনেক মতানৈক্য থাকলেও ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এ নিয়ে কোন ঐকমত্য ছিল না।[৩]
১৯৫১ সালে ভাদাজ বক্সাইটের কার্স্ট আকরিক (কার্বোনেট বক্সাইট) থেকে লেটারিটিক বক্সাইট আলাদা করেন।[৩]
ইউরোপ, গায়ানা এবং জ্যামাইকাতে কার্বোনেট শিলা (লাইমস্টোণ এবং ডোলোমাইট) প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়।
লেটারিটীক বক্সাইট গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশসমূহে পাওয়া যায়। এই ধরনের বক্সাইট গ্রানাইট, নেইস, বাসাল্ট, সায়েনাইট এবং শেল জাতীয় শিলার লেটারিটাইজেশনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় কাওলিনাইট গলে যায় এবং গিবসাইট তলানিতে জমা হয়। ভূমির ফেরুগিনিয়াস স্তরে সবচেয়ে অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ বক্সাইট পাওয়া যায়। লেটারিটীক বক্সাইটে থাকা অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পুরোটাই গিবসাইট।
সাম্প্রতিককালে, জ্যামাইকার মাটি পরীক্ষা করে দেখা যায় এ মাটিতে ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। এর থেকে ধারণা করা যায়, মধ্য আমেরিকাতে ক্রমাগত হতে থাকা অগ্নেয়গিরির অগ্লুতপাতের ফলে জ্যামাইকাতে বক্সাইট সৃষ্টি হয়েছে।
বক্সাইট উৎপাদনে সবচেয়ে প্রথম অবস্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। এরপরে আছে চিন।[৪] ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়ামকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা গেলে বিশ্বে সঞ্চিত বক্সাইটের মেয়াদকাল আরো বাড়বে।
পদ তালিকা | দেশ | উৎপাদন | মজুদ |
---|---|---|---|
১ | অস্ট্রেলিয়া | ৮৬৪০০ | ৬০০০০০০ |
২ | চিন | ৭৯০০০ | ১০০০০০০ |
৩ | গায়েনা | ৫৭০০০ | ৭৪০০০০০ |
৪ | ব্রাজিল | ২৯০০০ | ২৬০০০০০ |
৫ | ভারত | ২৩০০০ | ৬৬০০০০ |
৬ | ইন্দোনেশিয়া | ১১০০০ | ১২০০০০০ |
৭ | জ্যামাইকা | ১০১০০ | ২০০০০০০ |
8 | রাশিয়া | ৫৬৫০ | ৫০০০০০ |
৯ | কাজাখিস্তান | ৫০০০[৫] | ১৬০০০০[৫] |
১০ | ভিয়েতনাম | ৪১০০ | ৩৭০০০০০ |
১১ | সৌদি আরব | ৩৮৯০ | ২০০০০০ |
১২ | গ্রীস | ১৮০০[৫] | ২৫০০০০[৫] |
১৩ | গায়ানা | ১৭০০[৫] | ৮৫০০০০[৫] |
অন্যান্য দেশ | ৯০০০ | ৩৭৪০০০০ | |
পুরো বিশ্ব | ৩২৭০০০ | ৩০০০০০০০ |
২০১০ সালে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী গুয়েন তান ডাং ঘোষণা দেন, তার দেশে মজুদকৃত বক্সাইটের পরিমাণ ১১ ট্রিলিওন কেজি। এটিই বিশ্বের যেকোন দেশে সবচেয়ে বেশি মজুদকৃত বক্সাইটের পরিমাণ।[৬]
বক্সাইট মাটির গভীরে থাকেনা। খুব একটা ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই একে খনন করে ওপরে তোলা যায়। শুষ্ক বক্সাইটকে প্রথমে অ্যালুমিনায় রূপান্তর করা হয়। এরপর ইলেক্ট্রোলাইসিসের মাধ্যমে অ্যালুমিনা থেকে অ্যালুমিনিয়াম পাওয়া যায়।[৭] ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বক্সাইটকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ ধাতববিদ্যামূলক, ক্ষয়কারী, সিমেন্ট, রাসায়নিক এবং রিফ্র্যাক্টরি।
এক্ষেত্রে বক্সাইটের আকরিককে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের সাথে একটি পাত্রে ১৫০ থেকে ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩০০ থেকে ৩৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় তাপ দেয়া হয়। এই তাপমাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম, সোডিয়াম অ্যালুমিনেট হিসেবে দ্রবীভূত হয়। এটাকে বলা হয় বেয়ার প্রসেস। বক্সাইটে অ্যালুমিনিয়ামের খনিজ হিসেবে থাকে গিবসাইট (Al(OH)3), বোহেমাইট (AlOOH) অথবা ডিয়াস্পোর (AlOOH)। ভিবিন্ন পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এদের থেকে অ্যালুমিনিয়ামকে আলাদা করা হয়। আলাদা করার পর উপজাত পদার্থ হিসেবে থাকে আয়রন অক্সাইড, সিলিকা, ক্যালসিয়া, টাইটানিয়া এবং অ্যালুমিনা।
গ্যালিয়াম অনেক বিরল একটি ধাতু। আর এর প্রধান উৎস হল বক্সাইট।[৮]
বেয়ার প্রসেসে বক্সাইট থেকে অ্যালুমিনা আলাদা করা হয়। এসময় সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের সাথে গ্যালিয়াম উপজাত হিসেবে তৈরি হয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এই গ্যালিয়ামকে আলাদা করা যায়। আয়ন এক্সচেঞ্জ রেসিনের মাধ্যমে বর্তমানে তা আলাদা করা হয়।[৯] কতটুকু গ্যালিয়াম পাওয়া যাবে তা বক্সাইট আকরিকের ওপর নির্ভর করে। ৫০ পিপিএম বক্সাইট থেকে ১৫ শতাংশ গ্যালিয়ামকে আলাদা করা সম্ভব।[৯] বাকিটুকু লালচে উপজাত দ্রব্য এবং অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইডের স্রোতের সাথে বের হয়ে যায়।[১০]