বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | |
---|---|
![]() বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | |
জন্ম | [১] কাঁঠালপাড়া গ্রাম, নৈহাটি, উত্তর চব্বিশ পরগণা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত[২] | ২৬ জুন ১৮৩৮ অর্থাৎ ১৩ আষাঢ় ১২৪৫ বঙ্গাব্দ
মৃত্যু | ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত | (বয়স ৫৫) অর্থাৎ ২৬ চৈত্র ১৩০০ বঙ্গাব্দ
পেশা |
|
সময়কাল | ঊনবিংশ শতাব্দী |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | আনন্দমঠ, দুর্গেশনন্দিনী, রাজসিংহ, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল, ইন্দিরা, কমলাকান্তের দপ্তর |
দাম্পত্যসঙ্গী | রাজলক্ষ্মী দেবী |
স্বাক্ষর | ![]() |
ওয়েবসাইট | |
বঙ্কিম রচনাবলী |
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ – ৮ এপ্রিল ১৮৯৪)[৩] ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকে প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়।[৪] তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে, সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাঁকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়।[৫] এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত।[১]
বঙ্কিমচন্দ্র রচিত আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।[৬][৭]
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তারিখ ২৬ জুন, ১৮৩৮। চট্টোপাধ্যায়দের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বঙ্কিমচন্দ্রের পূর্বপুরুষ রামজীবন চট্টোপাধ্যায় কাঁঠালপাড়ার রঘুদেব ঘোষালের কন্যাকে বিবাহ করেন৷ রামজীবনের পুত্র তথা বঙ্কিমচন্দ্রের প্রপিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পেয়ে কাঁঠালপাড়ায় আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন।[৮] রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমচন্দ্র,মাতা দুর্গাসুন্দরী দেবী,বঙ্কিমের পূর্বে তার আরও দুই পুত্রের জন্ম হয় – শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমের জন্মকালে তিনি সদ্য অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন।
জন্মের পর ছয় বছর বঙ্কিমচন্দ্র কাঁঠালপাড়াতেই অতিবাহিত করেন। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। শিশু বয়সেই তার অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। বঙ্কিমের কনিষ্ঠ সহোদর পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “শুনিয়াছি বঙ্কিমচন্দ্র একদিনে বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করিয়াছিলেন।”[৯][১০] যদিও গ্রামের পাঠশালায় বঙ্কিম কোনওদিনই যান নি। পাঠশালার গুরুমশাই রামপ্রাণ সরকার বাড়িতে তার গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা থেকে মনে হয় তিনি রামপ্রাণের শিক্ষা থেকে বিশেষ উপকৃত হন নি।[১১] তিনি লিখেছেন, “সৌভাগ্যক্রমে আমরা আট দশ মাসে এই মহাত্মার হস্ত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া মেদিনীপুর গেলাম।” [১২]
১৮৪৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে আনীত হলে, সেখানেই তার প্রকৃত শিক্ষার সূচনা হয়। মেদিনীপুরের ইংরেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনৈক এফ টিডের পরামর্শে যাদবচন্দ্র শিশু বঙ্কিমকে তার স্কুলে ভর্তি করে দেন। এখানেও বঙ্কিম অল্পকালের মধ্যেই নিজ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। পূর্ণচন্দ্রের রচনা থেকে জানা যায়, বার্ষিক পরীক্ষার ফলে সন্তুষ্ট হয়ে টিড সাহেব বঙ্কিমকে ডবল প্রমোশন দিতে উদ্যত হলে যাদবচন্দ্রের হস্তক্ষেপে তিনি নিরস্ত হন।[৯][১৩] ১৮৪৭ সালে টিড ঢাকায় বদলি হয়ে গেলে সিনক্লেয়ার তার স্থলাভিষিক্ত হন; তার কাছেও বঙ্কিম প্রায় দেড় বছর ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেন।
১৮৪৯ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পুনরায় কাঁঠালপাড়ায় ফিরে আসেন। এইসময় কাঁঠালপাড়ার শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে বঙ্কিম বাংলা ও সংস্কৃতের পাঠ নেন। বঙ্কিমচন্দ্র খুব ভালো আবৃত্তিকারও ছিলেন। সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জন নামক সংবাদপত্রে প্রকাশিত বহু কবিতা তিনি এই বয়সেই কণ্ঠস্থ করে ফেলেন। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর বিরচিত বিদ্যাসুন্দর কাব্য থেকে বিদ্যার রূপবর্ণন ও জয়দেব প্রণীত গীতগোবিন্দম্ কাব্য থেকে ধীরে সমীরে যমুনাতীরে কবিতাদুটি তিনি প্রায়শই আবৃত্তি করতেন। এছাড়াও পণ্ডিত হলধর তর্কচূড়ামণির কাছে এই সময় তিনি মহাভারত শ্রবণ করতেন। হলধরই তাকে শিক্ষা দেন - “শ্রীকৃষ্ণ আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ চরিত্র”। এই শিক্ষা তার পরবর্তী জীবনে রচিত নানা রচনাতে প্রতিফলিত হয়েছিল।[১৪]
কিছুকাল পরে ১৮৪৯ সালে হুগলি কলেজে (অধুনা হুগলী মহসিন কলেজ) ভর্তি হন। এখানে তিনি সাত বছর পড়াশোনা করেন। হুগলি কলেজ পড়াকালীন ১৮৫৩ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরেই সংবাদ প্রভাকরে কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কুড়ি টাকা পুরস্কার লাভ করেন। হুগলি কলেজ অধ্যয়নকালেই বঙ্কিমচন্দ্র কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য-পদ্য রচনা আরম্ভ করেন। পরবর্তীকালে তার বহু রচনা এই দুই কাগজে প্রকাশিত হয়। হুগলি কলেজ ১৮৫৬ সালে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সব বিষয়ে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তিনি দুই বছরের জন্য কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরই তিনি হুগলি কলেজ ছেড়ে আইন পড়বার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫৭ সালে জানুয়ারী মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রবর্তন করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরের বছর ১৮৫৯ সালে প্রথমবারের মতো বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু।[১৫]
তার বাবার মতো তিনিও সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টার পদে। সারা জীবন তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যান। স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে দুটি খেতাবে ভূষিত করে - ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব। তবে সরকারি কর্মকর্তা নয় বরং লেখক এবং বাঙলা তথা ভারতের নবজাগরণের অন্যতম মুখ হিসেবেই তিনি অধিক প্রখ্যাত।
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম বিয়ে হয় ১৮৪৯ সালে, তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১১ বছর; নারায়ণপুর গ্রামের মোহিনী নাম্নী এক পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকার সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু চাকুরি জীবনের শুরুতে যশোর অবস্থান কালে ১৮৫৯ সালে এ পত্নীর মৃত্যু হয়। অতঃপর ১৮৬০ সালের জুন মাসে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী বংশের কন্যা রাজলক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।[১৬]
তার কর্মজীবনের সংক্ষেপিত তালিকা:
শেষ জীবনে তার স্বাস্থ্য অতোটা ভালো ছিল না। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে তার বহুমূত্র রোগ বেশ বেড়ে যায়। এই রোগেই অবশেষে তার মৃত্যু হয়, এপ্রিল ৮, ১৮৯৪ (বাংলা ২৬ চৈত্র ১৩০০ সাল)।
বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। দুর্গেশনন্দিনী ছিলো প্রথম সার্থক বাংলা উপন্যাস যেটা বাংলা সাহিত্যের দ্বার উন্মোচন করেছিলো। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছিলেন এবং এর মধ্যে একটি ইংরেজি ভাষার উপন্যাস ছিলো। বঙ্কিমচন্দ্রই বাংলা ভাষাকে প্রথম সত্যিকারের মর্যাদা দিয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট আসলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। তৎকালীন সময়ের প্রথা ও সংস্কার আন্দোলন, হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থান, হিন্দু ধর্মের রক্ষণশীলতা, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সংঘাত, প্রগতিশীল ভাবধারার অভাব, সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রাধান্য প্রভৃতি হল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আর্থসামাজিক পটভূমিকা এবং এই পটভূমিকাই বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট।[১] তার রচনা 'বঙ্কিমী শৈলী' বা 'বঙ্কিমী রীতি' নামে পরিচিত।[১৮]
উপন্যাস
(ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয় ও রাধারানী ত্রয়ী সংগ্রহ) (দেবী চৌধুরানী, আনন্দমঠ, সীতারাম ত্রয়ী উপন্যাস)
|
প্রবন্ধ গ্রন্থ
|
বিবিধ
(কিছু কবিতা, এবং ললিতা ও মানস) |
সম্পাদিত গ্রন্থাবলী
|
১৫. সাহিত্যপাঠ, পৃষ্ঠা নং- ১৫ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ-দ্বাদশ ও আলিম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত)