প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অংশ | |
তারিখ | ২৪ - ২৬ শে ডিসেম্বর ১৯১৪ |
---|---|
অবস্থান | ইউরোপ |
অংশগ্রহণকারী | অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি তৃতীয় ফরাসী প্রজাতন্ত্র জার্মান সাম্রাজ্য রাশিয়ান সাম্রাজ্য যুক্তরাজ্যের সৈন্যসমূহ |
ফলাফল | ইউরোপজুড়ে অঘোষিত যুদ্ধবিরতি
|
বড়দিনের যুদ্ধবিরতি (জার্মান: ওয়াইনাখস্ফ্রিদেন; ফরাসি: ত্রেভ দে ন্যুয়েল) হলো ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বড়দিন উপলক্ষে পশ্চিম রণাঙ্গনে সংঘটিত একটি অনুমোদনহীন যুদ্ধবিরতি, যেদিনটিতে যুদ্ধরত মিত্রশক্তি (মূলত ফরাসি এবং ব্রিটিশ) এবং কেন্দ্রীয় শক্তির জার্মান সৈন্যরা তাদের ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং যুদ্ধের ময়দানে পরিখা অতিক্রম করে একে অন্যের সাথে শুভেচ্ছা, খাবার এবং উপহার বিনিময় করে। এই দিনটিতে এমনকি বন্দি বিনিময়, একইসাথে বড়দিনের ক্যারল-সঙ্গীত গাওয়া এবং যৌথ উদ্যোগে উভয়পক্ষের মৃত সৈন্যদের শেষকৃত্যও সম্পন্ন হয়। এই দিনটির সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতিটি ছিল, যুদ্ধের ময়দানে উভয়পক্ষের সৈন্যদের ফুটবল খেলা। যদিও যুদ্ধবিরতির এই চিত্র যুদ্ধের বাকি ময়দানগুলোতে একইরকম ছিল না। অনেক সেক্টরে সেই দিনেও যুদ্ধ হয়েছিল। তথাপি অন্য অনেক সেক্টরে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি না করলেও সেই দিনে উভয় পক্ষের সৈনিকদের মৃতদেহ সংগ্রহে একটি সম্মিলিত উদ্যোগ গৃহীত হয়েছিল।
এর পরবর্তী বছরের বড়দিনেও যুদ্ধবিরতি আয়োজন করা হয়েছিলো, কিন্তু ঊর্ধ্বতনদের কড়া আদেশ থাকায় সেই যুদ্ধবিরতি ১৯১৪ সালের বড়দিনের যুদ্ধবিরতির মতো আড়ম্বর সর্বস্ব ছিল না। কিন্তু ১৯১৬ সালের বড়দিনে সৈনিকরা আর কোন যুদ্ধবিরতির আয়োজন করে নি। কেননা সোম এবং ভেরডানের যুদ্ধে ও সেই যুদ্ধসমূহে রাসায়নিক গ্যাসের প্রয়োগ সৈনিকদের মধ্যে তিক্ততা এনে দিয়েছিলো।
সেক্টরভেদে বড়দিনের যুদ্ধবিরতির চিত্রে ভিন্নতা দেখা গেলেও এটি সর্বোপরি যুদ্ধের আক্রমণাত্মক আচরণ কমিয়ে এনে শত্রুপক্ষের সৈনিকদের একে অন্যের সাথে কথোপকথন, সিগেরেট বিনিময়ের মতো ক্রমবর্ধমান সৌভ্রাত্র মনোভাব এনে দিয়েছিলো। এমনকি যুদ্ধের অনেক সেক্টরে সেইদিনে সৈন্যরা যুদ্ধের সীমারেখার মাঝপথে গিয়ে আহত সৈন্যদের চিকিৎসা প্রদান এবং মৃত সৈনিকদের দেহ নিয়ে আসলেও, যুদ্ধের অপর প্রান্তের সৈন্যরা কোন গুলি চালায় নি এবং উভয়পক্ষের মধ্যে সৈনিকদের মধ্যে সেই দিনে এক ধরনের অব্যক্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে দেখা গিয়েছিলো। এই যুদ্ধবিরতির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো দিনের আলোতে যুদ্ধরত উভয় শত্রপক্ষের সৈনিকদের একে অন্যের সাথে মিলিত হওয়া - যেটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো হিংসাত্মক সশস্ত্র লড়াইয়ের সময় শান্তি ও মানবিকতার উদাহরণ হিসেবে মানব ইতিহাসে টিকে আছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথম পঞ্চম মাসে অর্থাৎ ১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম দিককার সময়ের মার্নের যুদ্ধে জার্মান সেনাবাহিনী বেলজিয়াম হয়ে ফ্রান্স আক্রমণের সময় ব্রিটিশ আর ফরাসি সৈন্যদের তাড়া খেয়ে পশ্চাদপসরণ করে এবং এন উপত্যকায় আশ্রয় গ্রহণ করে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। পরবর্তী এনের যুদ্ধে মিত্রশক্তি জার্মানদের পশ্চাদপসরণ বাধ্য করাতে অসমর্থ হয় এবং শীঘ্রই এই লড়াই অধঃপতিত হয়ে অচলাবস্থায় রূপ নেয়। যুদ্ধে কোন পক্ষই সেই সময় নিজেদের অবস্থান পরিত্যাগে রাজি নয়; বরং অচলাবস্থার সময় নিজেদের পরিখাগুলোকে তারা আরো শক্তিশালী করে তুলছিলো। এন উপত্যকার উত্তরে, ডানপার্শ্বের জার্মান সৈন্যদের অবস্থানে কোন নির্ধারিত সীমানা ছিল না। ফলশ্রুতিতে উভয়পক্ষই নিজেদের মতো ঐ অনির্ধারিত সীমানাটি দখলে নিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিছু মাস যুদ্ধ হওয়ার পর মিত্রশক্তির ব্রিটিশ সৈন্যদের সেখান থেকে অপসারণ করে ফ্রান্সের এন থেকে উত্তরের বেলজিয়ামের ফ্লান্দের্স - এ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও যুদ্ধ অচলাবস্থায় রূপ নেয়। নভেম্বরের দিকে উত্তর সাগর হতে সুইস সীমান্তের দিকে উভয়পক্ষের সৈন্যরা তাদের নিজ নিজ অবস্থান পাকাপোক্ত করে।[১]
১৯১৪ সালের বড়দিন কে কেন্দ্র করে একাধিক শান্তি প্রচেষ্টার উদ্যোগ গৃহীত হয়। যার মধ্যে একটি ছিল বড়দিনের প্রাক্কালে ১০১ জন সদস্য বিশিষ্ট কিছু ব্রিটিশ নারী-ভোটাধিকার আন্দোলনকারী নারীদের কর্তৃক জার্মান এবং অস্ট্রিয়ান মহিলাদের কাছে উন্মুক্ত বড়দিনের পত্র প্রেরণ।[২][৩] এছাড়াও পোপ বেনেডিক্ট পঞ্চদশ ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরের ৭ তারিখ যুদ্ধরত দেশসমূহের সরকারদের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।[৪] আহ্বানে পোপ বলেছিলেন, "যে রাতে (বড়দিনের রাতে) দেবদূতেরা গান গায়, সেই রাতে বন্দুকের গুলির আওয়াজকেও নিঃশব্দ করা যায়"। কিন্তু তার এই প্রচেষ্টা শেষতক প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো।[৫] This attempt was officially rebuffed.[৬]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Victory For Human Kindness
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি