বদরের যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মুসলিমের-কুরাইশ যুদ্ধ অংশ | |||||||
![]() সিয়ার-ই নবী গ্রন্থের চিত্রিত হামজা ও আলি কর্তৃক মুসলিম বাহিনীকে নেতৃত্ব দান | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
মদিনার মুসলিম | মক্কার কুরাইশ | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
মুহাম্মাদ আলি ইবনে আবি তালিব | আবু সুফিয়ান ইবনে হার্ব | ||||||
শক্তি | |||||||
১৫০০ জন যোদ্ধা এবং ১০ জন ঘোড়সওয়ার যোদ্ধা[২] | ২০০০ পদাতিক এবং ৫০ ঘোড়সওয়ার যোদ্ধা[২] |
বদরে তৃতীয়বারের মতো মুহাম্মদ যে অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেটিকে বদর আল-মাওয়াইদের অভিযান বলা হয়। আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে, এই ঘটনাটি ৬২৫ সালের অক্টোবর মাসের। [৩] যদিও প্রাথমিক সূত্রে বেশ কিছু বিকল্প তারিখ পাওয়া যায়। [৪]
মুসলিম পণ্ডিত সাফিউর রহমান আল মুবারকপুরীর মতে, উহুদ যুদ্ধের এক বছর পর এই অভিযানটি হয়েছিল। মুসলমানদের জন্য সময় এসে গিয়েছিল এটা জানান দেয়ার জন্য যে, মুশরিকদের সাথে তুলনায় কোন দল বেঁচে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত।
আক্রমণটি মুসলমানদের তাদের সামরিক খ্যাতি, তাদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল এবং উহুদের যুদ্ধে পরাজয়ের পর সমগ্র আরবে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান সক্ষম হয়েছিল। এই ঘটনা সম্পর্কে আয়াত ৩:১৭৩-১৭৬ ও সহিহ বুখারি হাদিস সংগ্রহে উল্লেখ করা হয়েছে। [৫][৬]
উইলিয়াম মুর-এর মতে, দুটি বিরোধী শক্তি বদরে আবার মিলিত হয়েছিল, এবং সেই বছর একটি বড় খরা হয়েছিল। মক্কার বাহিনীর নেতা আবু সুফিয়ান সেই মৈসুমে যুদ্ধ করতে চাননি, এবং যুদ্ধকে অন্যের দিকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাই আবু সুফিয়ান একটি নিরপেক্ষ গোত্রের নুয়াম নামের একজনকে বলেছিলেন যে মুহাম্মদকে আটকানোর জন্য মক্কার বাহিনীর অতিরঞ্জিত রকমের একটি বিবরণ দিতে। নুয়ামের অতিরঞ্জিত বর্ননা শুনে কিছু মুসলমান ভয় পেয়েছিলেন এবং যুদ্ধের প্রতি ঝোঁক কমে গিয়েছিল। মুহাম্মদ, এই কাপুরুষতা প্রত্যাখ্যান করেন এবং শপথ ঘোষণা করেন যে তিনি বদরে যাবেন, যদিও তাকে একাই যেতে হয়। তার সাহসী ঘোষণা অন্যদের আত্নবিশ্বাস এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল যে, তিনি বরং আরও দ্বিগুন পরিমাণ সৈন্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আর্-রাহীকুল মাখতূম সীরাতগ্রন্থ অনুসারে, মুহাম্মদ বদর যুদ্ধে ১৫০০ জন সাধারন যোদ্ধা এবং ১০ জন অশ্বারোহী নিয়ে গিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে রাওহাকে মুহাম্মদের অনুপস্থিতিতে মদীনার শাষনভার দেয়া হয়েছিল। বদরে পৌঁছে মুসলমানরা সেখানে মুশরিকদের আসার অপেক্ষায় রইল। [২]
আবু সুফিয়ানের বাহিনীতে ছিল ২০০০ পদাতিক এবং ৫০ জন অশ্বারোহী। তারা মক্কা থেকে কিছু দূরে মার আয- জাহরানে পৌঁছে মিজান্না নামক একটি জলের স্থানে শিবির স্থাপন করে । আসন্ন যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে অনিচ্ছুক, নিরুৎসাহিত এবং অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে, আবু সুফিয়ান তার লোকদের দিকে ফিরে আসেন এবং তার লোকদের যুদ্ধে যেতে নিরুৎসাহিত করার জন্য কাপুরুষতা-ভিত্তিক, তুচ্ছ অজুহাত শুরু করেন, বলেন:
"হে কুরাইশ গোত্র! তোমাদের অবস্থার উন্নতি আর কিছুই হবে না শুধুমাত্র একটি ফলদায়ক বছর - যে বছর তোমাদের পশুপাখিরা গাছপালা ও ঝোপে খায় এবং তোমাদেরকে পান করার জন্য দুধ দেয়৷ এবং আমি দেখতে পাচ্ছি যে এটি একটি বৃষ্টিহীন বছর, তাই আমি এখন ফিরছি, এবং আমি আপনাকে আমার সাথে ফিরে আসার পরামর্শ দিচ্ছি।" ইবনে হিশাম ২/২০৯ [২]
তার সৈন্যবাহিনীও একই ভয় এবং আশংকার মধ্যে আবিষ্ট ছিল, কারণ তারা সামান্যতম দ্বিধা ছাড়াই তাকে সহজেই মেনে নিয়েছিল।
বদরে মুসলমান বাহিনী শত্রুর জন্য আট দিন অবস্থান করেছিল। তারা পণ্য বিক্রি করে এবং এর থেকে দ্বিগুণ মূল্য উপার্জন করে তাদের থাকার সুযোগ নিয়েছে। যখন মুশরিকরা যুদ্ধে অস্বীকৃতি জানায়, তখন ক্ষমতার ভারসাম্য মুসলমানদের পক্ষে চলে গেল। তারা এইভাবে তাদের সামরিক খ্যাতি ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করে এবং গোটা আরবে তাদের উপস্থিতিকে জানান দেয়।[২]