বন উজাড়, বনভূমি উজাড় বা বন নিধন বলতে বন বা অরণ্য পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালাকে কেটে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলাকে বোঝায়। বিভিন্ন কারণে বন উজাড় করা হয়: গাছপালা বা উদ্ভূত কাঠকয়লা পণ্য হিসাবে বিক্রয় হতে পারে বা মানুষের ব্যবহারে লাগতে পারে, পরিষ্কার হবার পরে পশু চারণভুমি, বিভিন্ন প্রকার চাষবাষ এবং মানুষের বাসস্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যথেষ্ট বৃক্ষরোপণ বা বনায়ন না করে বন উজাড়ের ফলে বাসস্থানের ক্ষতি, জৈব বিন্যাসের ক্ষতি ও অনুর্বরতা সৃষ্টি হয়েছে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিবেশগত জৈব পৃথকীকরণের ওপর এর মন্দ প্রভাব পড়েছে। সাধারণত বন ধ্বংস হয়ে যাওয়া এলাকাগুলিতে খুব বেশি ভূমিক্ষয় হয় এবং এগুলি খুব তাড়াতাড়ি পতিত জমিতে পরিণত হয়।
বনের অন্তর্নিহিত মূল্য সম্পর্কে অজ্ঞতা বা উপেক্ষা, যথার্থ মূল্যায়ন পদ্ধতির অভাব, শিথিল বন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং উপযুক্ত পরিবেশ আইনের অভাব- এসবই বৃহদায়তনে বন উজাড়ের অন্যতম কারণ। বহু দেশেই বন উজাড় একটি চলতি সমস্যা, যার থেকে প্রাণীর অবলুপ্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, মরুকরণ এবং স্থানীয় জনপদ উচ্ছেদের মত সমস্যার জন্ম হয়। তবে যে সমস্ত দেশের মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অন্তত ৪,৬০০ মার্কিন ডলার তাদের ক্ষেত্রে বন উজাড়ের হার বৃদ্ধি রোধ হয়েছে।[১][২]
বন উজাড়ের মূল কারণগুলির মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি,[৩][৪] সম্পদ ও ক্ষমতার অসম বণ্টন,[৫] জনসংখ্যা বৃদ্ধি,[৬] জনস্ফীতি[৭][৮] এবং নগরায়ন ইত্যাদি অন্যতম।[৯]] বিশ্বায়নকে প্রায়ই বন উজাড়ের অন্যতম মূল কারণ বলে মনে করা হয়[১০][১১] যদিও এমন উদাহরণও রয়েছে যেখানে (শ্রম, পুঁজি, পণ্য এবং উন্নত চিন্তাধারার গতি প্রবাহ ত্বরান্বিত হওয়ার ফলে) স্থানীয়ভাবে বন পুনরুদ্ধারে বিশ্বায়ন-এর প্রভাব রয়েছে।[১২]
২০০২ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) জানায় "স্থানভেদে জনসংখ্যার ভূমিকা নির্ণায়ক থেকে নগণ্য পর্যন্ত হতে পারে," এবং বন উজাড়, "জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ, আর্থিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত অচলাবস্থার মিলিত ফল"।[৬]
ইংরেজ পরিবেশবিদ নর্মান মেয়ারসের মতে মোট বন উজাড়ের ৫% হয় বিভিন্ন গবাদি পশু লালন-পালনের ফলে, ১৯% হয় ভারী মাত্রায় কাঠ কাটার ফলে, ২২% হয় পামগাছের চাষ বৃদ্ধির ফলে, ও ৫৪% হয় "কাটো ও পোড়াও" ("স্ল্যাশ অ্যান্ড বার্ন"; যে পদ্ধতিতে সবুজ বন কেটে ও পুড়িয়ে ফেলে চাষের জন্য জমি তৈরী করা হয়) পদ্ধতিতে কৃষিকাজের ফলে। টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে বন সংরক্ষণের চেয়ে বন পরিবর্তনকে বেশি লাভজনক করে তোলা বন পরিমণ্ডলের অবনতির মূল কারণ।[১৩] বন-সংক্রান্ত বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডের কোনও তৈরি বাজার না থাকায় বনাঞ্চলগুলির মালিক ও অন্যান্য বননির্ভর গোষ্ঠীগুলির কাছে তাদের উন্নয়নের জন্য তার কোনও আপাত আর্থিক মূল্য প্রতিভাত হয় না।[১৩]উন্নয়নশীল দেশগুলির মতে বনায়ন সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধাগুলি, যেমন কার্বন-হ্রাস ও জৈববৈচিত্রের ভান্ডার বৃদ্ধি, মূলত উন্নত বিত্তশালী দেশগুলি ভোগ করে এবং এইসব সুবিধা উৎপাদনের সঠিক মূল্য মেটানো হয় না। উন্নয়নশীল দেশগুলি এও মনে করে যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মত কিছু উন্নত দেশ অতীতে বহুল পরিমাণে বন উজাড় করে প্রচুর লাভবান হযেছে কিন্তু বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এই সব সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা অনৈতিক: বিত্তশালীদের সৃষ্ট সমস্যার প্রভাব দরিদ্রদের ওপর কখনোই চাপানো উচিত নয়।[১৪]
বিশ্বব্যাপী বন উজাড় বৃদ্ধির ওপর শিল্পের প্রয়োজনে গাছ কাটার কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে কিনা সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা একমত নন। একইভাবে, দারিদ্রই গাছ কাটার মূল কারণ কিনা সে ব্যাপারেও কোনও ঐকমত্য নেই। অনেকের মতে অর্থ উপার্জনের বিকল্প ব্যবস্থার অভাব দরিদ্র মানুষের বন উজাড় করার প্রবণতা বাড়ায়, আবার অন্যেরা মনে করেন এই কাজে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও শ্রমের ব্যয়ভার বহন করা দরিদ্র মানুষের পক্ষে অসম্ভব। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বন উজাড় বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। একটি বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে যে মাত্র ৮%-এর ক্ষেত্রে উচ্চ উর্বরতা-শক্তির কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ক্রান্তীয় বন উজাড়ের কারণ।
↑Kauppi, P. E.; Ausubel, J. H.; Fang, J.; Mather, A. S.; Sedjo, R. A.; Waggoner, P. E. (২০০৬)। "Returning forests analyzed with the forest identity"। Proceedings of the National Academy of Sciences। 103: 17574। ডিওআই:10.1073/pnas.0608343103।
↑"WRM Bulletin Number 74"। World Rainforest Movement। সেপ্টেম্বর ২০০৩। ৪ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১০।
↑"Global Deforestation"। Global Change Curriculum। University of Michigan Global Change Program। জানুয়ারি ৪, ২০০৬। ১৫ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১০।
↑ কখAlain Marcoux (আগস্ট ২০০০)। "Population and deforestation"। SD Dimensions। Sustainable Development Department, Food and Agriculture Organization of the United Nations (FAO)। ২৮ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১০।
↑"The Double Edge of Globalization"। YaleGlobal Online। Yale University Press। জুন ২০০৭। ১০ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১০।
↑Susanna B. Hecht, Susan Kandel, Ileana Gomes, Nelson Cuellar and Herman Rosa (২০০৬)। "Globalization, Forest Resurgence, and Environmental Politics in El Salvador"(পিডিএফ)। World Development Vol. 34, No. 2। পৃষ্ঠা 308–323। ২৯ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১০।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (link)
BBC 2005 TV series on the history of geological factors shaping human history (name?)
A Natural History of Europe - 2005 co-production including BBC and ZDF
Whitney, Gordon G. (1996). From Coastal Wilderness to Fruited Plain : A History of Environmental Change in Temperate North America from 1500 to the Present. Cambridge University Press. আইএসবিএন০-৫২১-৫৭৬৫৮-X
Williams, Michael. (2003). Deforesting the Earth. University of Chicago Press, Chicago. আইএসবিএন০-২২৬-৮৯৯২৬-৮
Parry, J. (2003). Tree choppers become tree planters. Appropriate Technology, 30(4), 38-39. Retrieved November 22, 2006, from ABI/INFORM Global database. (Document ID: 538367341).
Hillstrom, K & Hillstrom, C. (2003). Africa and the Middle east. A continental Overview of Environmental Issues. Santabarbara, CA: ABC CLIO.
Williams, M. (2006). Deforesting the earth: From prehistory to global crisis: An Abridgment. Chicago: The university of Chicago Press.
Mccann. J.C. (1990). A Great Agrarian cycle? Productivity in Highland Ethiopia, 1900 To 1987. Journal of Interdisciplinary History, xx: 3,389-416. Retrieved November 18, 2006, from JSTOR database.