বনকালিম Great Mormon | |
---|---|
ডানা বন্ধ অবস্থায় | |
ডানা খোলা অবস্থায় | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Lepidoptera |
পরিবার: | Papilionidae |
গণ: | Papilio |
প্রজাতি: | P. memnon |
দ্বিপদী নাম | |
Papilio memnon Linnaeus, 1758 | |
Subspecies | |
| |
প্রতিশব্দ | |
Princeps memnon |
বনকালিম[১] (বৈজ্ঞানিক নাম: Papilio memnon (Linnaeus) যার শরীর এবং ডানা কালো বর্ণের এবং ডানার অপর পিঠে নীলচে ধূসর ধুলোট প্রলেপ দেখা যায়। এরা বড় আকারের প্রজাপতি এবং ‘প্যাপিলিওনিডি’ পরিবারের এবং 'প্যাপিলিওনিনি' উপগোত্রের সদস্য।
প্রসারিত অবস্থায় বনকালিমের ডানার আকার ১২০-১৫০ মিলিমিটার দৈর্ঘের হয়।[২]
ভারতে প্রাপ্ত বনকালিম এর উপপ্রজাতি হল-[৩]
অ্যানট্র্যাম লিখেছেন[৪] এদের উত্তর-পশ্চিম এবং মধ্য ভারত বাদ দিয়ে সারা ভারতে এদের পাওয়া যায়। এছাড়া নেপাল, মায়ানমার, তাইল্যান্ড, লাওস,চিন, জাপান[৫] ইত্যাদি স্থানে অর্থাৎ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ন অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।
প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-
স্ত্রী বনকালিমের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। পুরুষ বনকালিমও একাধিক রূপের অধিকারি তবে তার সংখ্যা স্ত্রীর রূপবৈচিত্র্যের তুলনায় কম। উইন্টার-ব্লাইদ পুরুষ বনকালিমের চারটে আলাদা রূপ এবং স্ত্রী প্রজাপতির ন’টি আলাদা রূপের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে স্ত্রী এবং পুরুষের কয়েকটি রূপ সাদৃশ্য হওয়ার লিঙ্গ নির্বিশেষে মোট রূপ এর সংখ্যা ৯’টি। তবে সবকটি রূপ সর্বত্র পাওয়া যায় না। পশ্চিমবঙ্গে অ্যাজিনর এবং পলিম্নেস্টরয়ডেস – স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়কেই এই দুটো রূপে পাওয়া যায়। সিকিমে স্ত্রী বনকালিমের আরও দুটো রূপ পাওয়া যায়- অ্যালকানর এবং বাটলেরিয়ানাস।[৬][৭][৮] অ্যাজিনর রূপটিকে টিপিক্যাল অথবা প্রতিনিধিস্থানীয় বলে ধরা হয়।
অ্যাজিনর রূপে স্ত্রী এবং পুরুষ বনকালিমের পিছনের ডানায় লেজ থাকে না।
পুরুষ বনকালিমের ডানার ওপর-পিঠ নীলচে কালো বর্ণের। শিরার ফাঁকে ফাঁকে ফ্যাকাশে নীলচে ধুলোট আঁজি থাকে। সামনের ডানার পক্ষমূলের কাছে সিঁদুরে লাল দাগ দেখা যায় তবে অনেক সময় এই লাল রঙ দেখা যায় না। নিচের ডানার পিঠ সামনের ডানার ওপর পিঠের মতো, ফ্যাকাশে নীলচে ধুলোট আঁজিগুলি তুলনায় চওড়া। পিছনের ডানায় শিরার মাঝের অঞ্চল অথবা ইন্টারস্পেস কালো বর্ণের। উভয় ডানার পক্ষমূলে সিঁদুরে লাল ছোপ থাকে। ভূমিকোনে লালচে ছোপ এর উপর কালো বিন্দু থাকে। ১ এবং ২ নং শিরার মধ্যবর্তী অঞ্চলে বিন্দুগুলি স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। ৩ এবং ৪ নং শিরামধ্য লাল রঙ ফ্যাকাশে হয়ে কালো বিন্দুগুলি ক্রমশ ডানার মূল জমিতে মিশে গেছে।[৯]
স্ত্রী বনকালিমের ওপর পিঠ সামনের ডানার পক্ষমূল ঘেঁষে কক্ষের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ সিঁদুর লাল বর্ণের। ডানার বাকি অংশ কালচে ধূসর তবে শিরা এবং শিরাগুলির মাঝামাঝি অংশগুলি কালো। পিছনের ডানায় পক্ষমূলের দিকে অর্ধেক অংশ কালো এবং এই কালো অংশের শেষ প্রান্তে কিছু নীলচে আঁজি আছে। বাকি অর্ধেক ডানা সাদা বর্ণের। পার্শবপ্রান্তের কাছে এই সাদা অংশের উপর লম্বাটে কালো ছোপ দেখা যায়। ১ থেকে ৩ নং শিরামধ্য অঞ্চলের এই কালো ছোপ গুলিকে ঘিরে লাল রঙের অংশ দেখা যায়।[১]
পলিম্নেস্টরয়ডেস রূপে স্ত্রী এবং পুরুষ বনকালিমের পিছনের ডানায় লেজ থাকে না।
স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়কে এই রূপে পাওয়া যায়। এই রূপটির সাথে ব্লু মরমন প্রজাপতির সাদৃশ্য আছে। উইন্টার-ব্লাইদ লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গে বনকালিম এবং ব্লু মরমনকে অনেক সময় একই এলাকায় উড়তে দেখা যায়। তার অনুমান এই সব অঞ্চলে সম্ভবত এদের মধ্য আন্তঃপ্রজননও ঘটে। সিকিমের অনুচ্চ এলাকায় এই ধরনের আন্তঃপ্রজননের সম্ভবনা কথা উল্লেখ করেছেন পিটার স্মেটাচেকও[১০] । ওখানে এই দুই প্রজাতির মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যযুক্ত বিভিন্ন নমুনা পাওয়া গেছে।[১১][১২]
পুরুষ বনকালিমের ওপর পিঠে কালচে রঙের ওপর মাঝ আঁচলে আকাশি টানা দেখা যায়।[১]
এই রূপটি কেবলমাত্র স্ত্রী বনকালিম প্রজাপতির মধ্যে দেখা যায়। এই রূপটির লেজ থাকে না। সামনের ডানা পুরুষ বনকালিমের অ্যাজিনর রূপটির মতো দেখতে তবে পক্ষমূলে কক্ষের লাল অঞ্চলটিও উপস্থিত। তবে পক্ষমূলের বাকি অংশ সামনের এবং পিছনের ডানা কালো বর্ণের। শিরাগুলি কালচে বর্ণের এবং শিরামধ্য তঞ্চলগুলি অর্থাৎ ইন্টারস্পেস নীলচে ধূসর আভা দেখা যায়। এই নীলচে ধূসর অঞ্চলের মধ্যে একটা কালো পটি অথবা ব্যন্ড দেখা যায়। ডানার ভূমিপ্রান্তের দিকে নীলচে ধূসর অঞ্চলগুলি ক্রমশ বেশি চওড়া হয়ে কালো পটির সাথে মিশেছে। সামনের ডানার রঙ পিছনের ডানার তুলনায় হালকা।
পিছনের ডানা কালো বর্ণের তাতে গাঢ় নীলচে ধুলোট আঁজি দেখা যায়। ভূমিকোনে একটা লাল রঙে ঘেরা কালো ছোপ থাকে। সেখান থেকে একটা নীলচে সাদা দাগ ভূমিপ্রান্ত বরাবর সমান্তরাল রেখা থাকে যা ১নং শিরা মধ্য পর্যন্ত বিস্তৃত।
মিনা হরিবল লিখেছেন, সিকিমে অ্যালকানর এবং বাটলেরিয়ানাস; স্ত্রী প্রজাপতির এই দুটি রূপ খুব দুর্লভ।[১৩]
এরা মাঝারি গতিতে এবং ওপর-নীচ দিকে অর্থাৎ ওয়েভ প্যাটার্ন এ ওড়ে। সাধারনত ৬-১২ ফুট উচ্চতায় গাছের মাথায় ওড়াওড়ি করতে দেখা যায়। বনকালিমদের ফুলের প্রতি আসক্তি দেখা যায়। প্রায়শই অনেক্ষন ধরে এরা ফুলের মধু পান করতে থাকে। মাঝে মাঝেই পাতার ওপর বসে ডানা ছড়িয়ে বিশ্রাম নেয় এবং রৌদ্র পোহায়। পুরুষ বনকালিমদের ভেজা মাটিতে অথবা হাতির বিষ্ঠাতে [১৪] জলপান করতে দেখা যায়।[১৫]
শূককীট সবুজ বর্ণের। পরিনত শূককীটের পাশের দিকে চুনের মতো সাদা দাগ দেখা যায়। কালিম এর শূককীটের সাথে সাদৃশ্য আছে। তবে শূককীট বড় আকারের হয়।
এই শূককীট বিভিন্ন ধরনের লেবু গাছের পাতা যেমন- পাতিলেবু Citrus limon, কমলালেবু Citrus sinensis, জাম্বুরা Citrus grandis,Paramignya scandens ইত্যাদির রসালো অংশ আহার করে।[১৬]