বরগুনা | |
---|---|
জেলা | |
বাংলাদেশে বরগুনা জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৯′৩″ উত্তর ৯০°৭′৩৫″ পূর্ব / ২২.১৫০৮৩° উত্তর ৯০.১২৬৩৯° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | বরিশাল বিভাগ |
সরকার | |
• জেলা প্রশাসক | রফিকুল ইসলাম |
আয়তন | |
• মোট | ১,৮৩১.৩১ বর্গকিমি (৭০৭.০৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৮,৯২,৭৮১ |
• জনঘনত্ব | ৪৯০/বর্গকিমি (১,৩০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৪.০৬% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ১০ ০৪ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
বরগুনা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর-এর আঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা। ১৯৮৪ সালে পটুয়াখালী জেলার ৬টি উপজেলা নিয়ে বরগুনা জেলার যাত্রা শুরু হয়।
বরগুনা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা। এর উত্তরে ঝালকাঠি জেলা, বরিশাল জেলা, পিরোজপুর জেলা ও পটুয়াখালী জেলা, দক্ষিণে পটুয়াখালী জেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে পটুয়াখালী জেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর জেলা ও বাগেরহাট জেলা। জেলা সদরে বরগুনা শহর। একটি পৌরসভা। ৯ ওয়ার্ড ও ১৮ মহল্লা ও বেতাগী উপজেলা।
১৯৬৯ সালে বরগুনা পটুয়াখালী জেলার অধীনে একটি মহকুমা হয় ।১৫ ফাল্গুন ১৩৮৯ বঙ্গাব্দে (১৯৮৪ সাল) দেশের প্রায় সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হলে বরগুনা জেলায় পরিণত হয়।
বরগুনা নামের ইতিহাসের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য না পাওয়া গেলেও জানা যায় যে, উত্তরাঞ্চলের কাঠ ব্যবসায়ীরা এতদ্ঞ্চলে কাঠ নিতে এসে খরস্রোতা খাকদোন নদী অতিক্রম করতে গিয়ে অনুকূল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য এখানে অপেক্ষা করত বলে এ স্থানের নাম বড় গোনা। কারো মতে আবার স্রোতের বিপরীতে গুন(দড়ি) টেনে নৌকা অতিক্রম করতে হতো বলে এ স্থানের নাম বরগুনা । কেউ কেউ বলেন, বরগুনা নামক কোন প্রতাপশালী রাখাইন অধিবাসীর নামানুসারে বরগুনা । আবার কারো মতে বরগুনা নামক কোন এক বাওয়ালীর নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ করা হয় বরগুনা ।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরগুনা জেলার মোট জনসংখ্যা ৮,৯২,৭৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪,৩৭,৪১৩ জন এবং মহিলা ৪,৫৫,৩৬৮ জন। মোট পরিবার ২,১৫,৮৪২টি।[২]
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরগুনা জেলার সাক্ষরতার হার ৫৪.০৬%।[২]
বরগুনা শহরটি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি আবাসস্থল। বরগুনা জিলা স্কুল শহরটির প্রাচীনতম স্কুল যা ১৯২৭ সালে জনাব রমজান আলী আকন কর্তৃক বরগুনা মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় ( এম.ই. স্কুল ) হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।[৩]
উল্লেখযোগ্য স্কুল ও কলেজগুলির মধ্যে রয়েছে বরগুনা সরকারী কলেজ, বরগুনা সরকারী মহিলা কলেজ, বরগুনা জিলা স্কুল,গার্লস হাই স্কুল, ফুলঝুড়ি স্কুল এন্ড কলেজ, গৌরিচন্না নবাব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইটবাড়িয়া কদমতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়,কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমী, নলী চরক গাছিয়া এতিম মঞ্জিল সিনিয়র মাদ্রাসা, বরগুনা দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা, ছোটলবনগোলা হাজারবিঘা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইত্যাদির পাশাপাশি শহরে দুটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, একটি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি প্রযুক্তি স্কুল এবং কলেজ এবং একটি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমটি বরিশালের মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়।[৪]
বরগুনা জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর।এখানকার উৎপাদিত প্রধান শস্য ধান, চিনাবাদাম,সরিষা,সূর্যমুখী ও বিভিন্ন ধরনের ডাল।এছাড়াও বরগুনার কয়েকটি উপজেলায় তরমুজের ফলন ভালো হয়।একসময় পাট চাষ হত, কিন্তু তা এ অঞ্চলে অর্থকারী ফসল হিসেবে জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলে। উপকূলবর্তী জেলা হওয়ায় বরগুনা জেলার অনেকেই জেলের কাজ করে।এছাড়াও বরগুনা জেলার কাঠমিস্ত্রীরা নৌকা সহ উপকূলীয় মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদনে বেশ জনপ্রিয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগরিত ভাস্কর্য "অগ্নিঝরা একাত্তর "বরগুনা জেলার পৌর শহরের টাউন হল চত্বরে অবস্থিত।যার ফলশ্রুতিতে টাউন হলের নতুন নামকরণ করা হয়েছে স্বাধীনতা স্কয়ার।ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন প্রখ্যাত ভাস্কর মৃণাল হক।[৫] "বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর" ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর এটি উন্মোচন করা হয়।
এক সময়ে সমৃদ্ধ উপকূলীয় অঞ্চলে ছিল মাঠ ভরা ধান, নদী-সাগরে মাছ, গরু-মহিষের দুধ, তাঁতের শাড়ি, ঘানির তৈল, মাড়াই কলে আখের গুড়সহ বিচিত্র প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ভরপুর ছিল এই অঞ্চল। সৌভাগ্য ছিল ঘরে ঘরে। তবে অভাব অভিযোগ না থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী ছিল নিত্যসঙ্গী। অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ছিল লোক সংস্কৃতিরচর্চা। আর এই লোক সংস্কৃতির বিষয়বস্ত্ত ছিল সুখ-সমৃদ্ধি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কেন্দ্র করে। লোক সংগীতে এলাকার মানুষের সহজ-সরল প্রকৃতি এবং আদর আপ্যায়নের চিত্রও ফুটে ওঠে। যেমন : একটি গান :
"মোগো মেজাজ নাহি গরম, ব্যাবাক্কে মিল্লা কয়,
মোগো মেজাজ নাহি করা, হগলড্ডি মিল্লা কয়
আদর আস্তিক ভালই জানি, কতা হেইডা মিত্যা নয় ।"
এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ গান - "হয়লা" যা বিয়ের সময় গাওয়া হয়। তাছাড়াও - কীর্তন, জারিগান, সারিগান, কবিগান, লোকগাঁথা, লোকনাট্য উল্লেখযোগ্য।
এ জেলার মানুষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে নাট্য ও সাংস্কৃতিক চর্চাও করে থাকে । নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য রয়েছে : উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, খেলাঘর, গ্রাম থিয়েটার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, লোক সংগীত শিল্পী গোষ্ঠী , রবীন্দ্র সংগীত পরিষদ, নজরুল সংগীত পরিষদ ইত্যাদি। এ সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কর্মসূচি এ দিকে যেমন বিনোদনমূলক, অন্যদিকে মানবিক মূল্যবোধ ও দেশাত্ববোধ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
বরগুনা জেলার দক্ষিণ অঞ্চলে মঙ্গলিয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে রাখাইন সংস্কৃতির মিশ্রণ সমৃদ্ধ করেছেএ অঞ্চলের সংস্কৃতিকে । রাখাইনদের নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থায় রয়েছে বৈচিত্রময় কুঠির শিল্প, কৃষি কাজ, শূকরসহ পশু পালন । একই সাথে সামাজিক অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে জলক্রীড়া, ফানুস ছোড়া, পিঠা উৎসব । রাখাইনদের অন্যতম অনুষ্ঠান বাঘ শিকার, প্রেমময় নৃত্যানুষ্ঠান কিন্নর নাচ, রাক্ষস নাচ, বানর নাচ ইত্যাদি।তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে -গৌতম বৌদ্ধের জন্ম বার্ষিকী পালন, মাঘী পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা, রাস উৎসব ইত্যাদি ।
বরগুনা জেলা নারিকেল ও সুপারির জন্য বিখ্যাত।এছাড়াও বরগুনার বিখ্যাত খাবার -চুইয়া পিঠা, চ্যাবা পিঠা, মুইট্টা পিঠা, আল্লান, বিসকি, তালের মোরব্বা, শিরনি, নাড়িকেলের সুরুয়া, চালের রুটি, ইলিশ মাছ, মিষ্টি।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
|}