বাংলায় মারাঠা আক্রমণ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: মারাঠা সাম্রাজ্যের বিজয় অভিযান | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
সুবাহ বাংলা মারাঠা সাম্রাজ্য (পেশোয়া-নিয়ন্ত্রিত)[১][২] (১৭৪৩) |
মারাঠা সাম্রাজ্য আফগান বিদ্রোহী বাহিনী[১] (১৭৪৫–১৭৪৮) | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
আলীবর্দী খান সিরাজউদ্দৌলা গোলাম মুস্তফা খান (১৭৪১–১৭৪৫) মীর জাফর আতাউল্লাহ খান রায় দুর্লভ হাজী আহমদ † জৈনুদ্দিন আহমদ † সৈয়দ আহমদ খান শেখ মাসুম পানিপথী † আব্দুর রসুল খান (১৭৪১–১৭৪৫) সমশের খান (১৭৪১–১৭৪৬) মুসাহিব খান মোহমান্দ † সরদার খান (১৭৪১–১৭৪৬) শেখ আব্দুস সুবহান মির্জা ইসমাইল খাজা আব্দুল হাদী বালাজী রাও পিলাজী যাদব মালহার হোলকার |
রঘুজী ভোঁসলে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খান গোলাম মুস্তফা খান † (১৭৪৫) সমশের খান † (১৭৪৮) সরদার খান † (১৭৪৮) | ||||||
শক্তি | |||||||
১০,০০০+ (১৭৪৭ সালে) ~৪০,০০০–৫০,০০০[৮] (১৭৪৩ সালে) |
৪০,০০০[১] (১৭৪২ সালে) ২৪,০০০[১][২] (১৭৪৫ সালে) ৪৫,০০০+[৯] (১৭৪৭ সালে) | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
৪০০,০০০ মৃত্যু অজ্ঞাত | অজ্ঞাত |
বাংলায় মারাঠা আক্রমণ বলতে মারাঠা সাম্রাজ্য কর্তৃক ১৭৪২ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ নয় বছরব্যাপী বারবার বাংলা আক্রমণ এবং এর ফলে বাংলার নবাবের সঙ্গে মারাঠাদের সংঘর্ষকে বোঝানো হয় (বাংলার জনগণ মারাঠা আক্রমণকে বর্গির হাঙ্গামা হিসেবে নামকরণ করেছিল)। এই সংঘর্ষে মারাঠাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাগপুর রাজ্যের মারাঠা মহারাজা রঘুজী ভোঁসলে ও তার সেনাপতিরা। মারাঠারা ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত পরপর পাঁচ বার বাংলা আক্রমণ করে, কিন্তু বাংলার নবাব আলীবর্দী খান তাদের প্রতিটি আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন[১][৮]। তা সত্ত্বেও মারাঠাদের অবিরত আক্রমণের ফলে বাংলার জনসাধারণ এবং অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এবং শেষ পর্যন্ত ১৭৫১ সালে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলায় মারাঠা আক্রমণের অবসান ঘটে[১]। এই চুক্তির ফলে উড়িষ্যা কার্যত মারাঠাদের হস্তগত হয় এবং আলীবর্দী মারাঠাদের বার্ষিক হারে চৌথ প্রদান করতে রাজি হন[১][৩][১০]।
১৭৪০ সালে বাংলার নবাব সরফরাজ খানকে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করে তার জনৈক তুর্কি কর্মকর্তা আলীবর্দী খান ক্ষমতা দখল করেন। এসময় উড়িষ্যা প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খান। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি ছিলেন সরফরাজ খানের জামাতা। তিনি আলীবর্দীর কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং বিদ্রোহ করেন। কিন্তু ১৭৪১ সালের মার্চে আলীবর্দীর নিকট তিনি যুদ্ধে পরাজিত হন[১]। এরপর দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি মারাঠা সাম্রাজ্যের নাগপুর রাজ্যের শাসনকর্তা প্রথম রঘুজী ভোঁসলেকে বাংলা আক্রমণে উৎসাহিত করেন। এই সুযোগে রঘুজীও কটক, পাটনা ও মুর্শিদাবাদ হস্তগত করার পরিকল্পনা করেন।
১৭৪১ থেকে ১৭৫১ সালের মধ্যে রঘুজী বাংলায় মোট ছয়টি অভিযান চালিয়েছিলেন। এই অভিযানগুলি বাংলার জনগণের নিকট ‘বর্গির হাঙ্গামা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রথম অভিযানটি তিনি চালান ১৭৪১ সালে, দ্বিতীয়টি চালান ১৭৪২ সালে এবং চতুর্থটি চালান ১৭৪৪ সালে। এগুলোতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রঘুজীর সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত। ১৭৪৩ সালের তৃতীয় অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রঘুজী নিজে। ১৭৪৫ সালের পঞ্চম অভিযান ও ১৭৪৯ সালের ষষ্ঠ অভিযানের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রঘুজী, তার পুত্র জানুজী ভোঁসলে এবং মীর হাবিব।
১৭৪১ সালের মার্চে নবাব আলীবর্দী উড়িষ্যার বিদ্রোহী প্রাদেশিক শাসনকর্তা দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খানকে পরাজিত ও বিতাড়িত করেন[১]। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি মারাঠাদের নাগপুর রাজ্যের মহারাজা প্রথম রঘুজী ভোঁসলের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করেন। তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মারাঠারা উড়িষ্যা আক্রমণ করে[১]। মারাঠা সৈন্যরা ১৭৪১ সালের আগস্টে সহজেই রাজধানী কটকসহ উড়িষ্যা দখল করে নেয়[১], কিন্তু একই বছরের ডিসেম্বরে নবাব আলীবর্দী খান উড়িষ্যা পুনর্দখল করে নেন এবং মারাঠাদের বিতাড়িত করেন[১][৩]।
১৭৪২ সালের এপ্রিলে মারাঠা নেতা রঘুজী ভোঁসলের প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্ব একটি বিরাট সৈন্যবাহিনী বাংলা আক্রমণ করে এবং সমগ্র বাংলা জুড়ে লুটপাট চালায়[১][৩][১১]। তীব্র সংঘর্ষের পর বাংলার নবাব আলীবর্দী খান ১৭৪২ সালের এপ্রিলে বর্ধমানের প্রথম যুদ্ধে এবং সেপ্টেম্বরে কাটোয়ার প্রথম যুদ্ধে মারাঠাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেন এবং বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন[১][১২]। বাংলা থেকে বিতাড়িত হয়ে মারাঠারা উড়িষ্যা আক্রমণ করে প্রদেশটি দখল করে নেয়। কিন্তু নবাব আলীবর্দী ১৭৪২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তাদেরকে সেখান থেকেও বিতাড়িত করেন[১]। এরপর পরাজিত মারাঠারা বাংলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়[১][২] এবং সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে।
প্রথম আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ার পরের মাসেই ১৭৪৩ সালের মার্চে রঘুজী আবার বাংলা আক্রমণ করেন[১]। মুঘল সম্রাটের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুযায়ী আরেক মারাঠা নেতা এবং রঘুজীর প্রতিদ্বন্দ্বী পেশোয়া বালাজী বাজী রাও বাংলাকে রক্ষার জন্য অগ্রসর হন[১]। নবাব আলীবর্দীর অনুমতিক্রমে তিনি রঘুজীর বাহিনীকে আক্রমণ করে পরাজিত করেন[১৩] এবং বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন[১][৩]। ১৭৪৩ সালের জুন থেকে ১৭৪৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শান্তিতে অতিবাহিত হয়[২]।
১৭৪৪ সালের মার্চে মারাঠারা আবার বাংলা আক্রমণ করে। রঘুজীর প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর পণ্ডিত এই অভিযানে মারাঠাদের নেতৃত্ব দেন[১][২]। এ অভিযানকালে মারাঠারা সুকৌশলে আলীবর্দীর সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখসমর এড়িয়ে চলে[১]। ফলে যুদ্ধে তাদেরকে পরাজিত করা সম্ভব হয় নি। অবশেষে নবাব ছলনার আশ্রয় নেন, এবং সন্ধি স্বাক্ষরের জন্য ভাস্কর পণ্ডিতসহ ২২ জন মারাঠা নেতাকে আমন্ত্রণ করে এনে তাদেরকে হত্যা করেন[১][২]। এর ফলে বাংলায় মারাঠাদের তৃতীয় আক্রমণও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
১৭৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের আফগান সৈন্যরা বিদ্রোহ করে[১]। এ সুযোগে রঘুজীর নেতৃত্বে চতুর্থ বারের মতো মারাঠারা বাংলা আক্রমণ করে। মারাঠারা একে একে উড়িষ্যা, মেদিনীপুর, বর্ধমান ও বীরভূম দখল করে নেয়[১] এবং বিহারের দিকে অগ্রসর হয়। নবাব আলীবর্দীর তাদের বিহার থেকে বিতাড়িত করেন। এরপর তারা মুর্শিদাবাদ আক্রমণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৭৪৫ সালের ডিসেম্বরে কাটোয়ায় আলীবর্দী তাদের পরাজিত করেন[১৪] এবং ১৭৪৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে তাদের আরো পিছু হটতে বাধ্য করেন। মারাঠারা মেদিনীপুরে আশ্রয় নেয়[১]। ১৭৪৬ সালের অক্টোবরে নবাবের সেনাপতি মীর জাফর মেদিনীপুর পুনরুদ্ধার করেন, কিন্তু পরের মাসেই মারাঠারা আবার মেদিনীপুর দখল করে নেয়[১]। ১৭৪৭ সালের মার্চে বর্ধমানের যুদ্ধে মারাঠারা পরাজিত হয়ে মেদিনীপুরে পশ্চাৎপসরণ করে[১]। এসময় আফগান বিদ্রোহীরা বিহার দখল করে নিলে আলীবর্দীকে তাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে হয়। ১৭৪৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে নবাব বিদ্রোহীদের দমন করেন[১] এবং এরপর বাংলা থেকে মারাঠাদের বিতাড়িত করেন। ১৭৪৯ সালের মে মাসে নবাব কটক পুনরুদ্ধার করেন এবং জুনের মধ্যে মারাঠাদের উড়িষ্যা থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন[১][২]। এর মধ্য দিয়ে বাংলায় চতুর্থ মারাঠা আক্রমণের সমাপ্তি ঘটে।
চতুর্থ বারের মতো পরাজিত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ পরেই ১৭৪৯ সালের জুনে মারাঠারা আবার উড়িষ্যা আক্রমণ করে দখল করে নেয় এবং বাংলায় হানা দিতে থাকে। তীব্র সংঘর্ষের পর নবাব আলীবর্দী মারাঠাদেরকে বাংলা থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন, কিন্তু উড়িষ্যা মারাঠাদের দখলে থেকে যায়[১]। দীর্ঘ নয় বছরব্যাপী বাংলায় হানা দিয়ে মারাঠারা দুর্ভোগ ব্যতীত বিশেষ কিছু লাভ করতে পারে নি। অনুর্বর উড়িষ্যা প্রদেশ তাদের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হয় নি এবং বাংলায় তাদের আক্রমণসমূহ সবসময়ই আলীবর্দীর ক্ষিপ্রতার দরুন ব্যর্থ হয়েছে[২]। ফলে ১৭৫১ সালে রঘুজী সন্ধির প্রস্তাব করেন। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আলীবর্দী শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং ১৭৫১ সালের মে মাসে মারাঠাদের সঙ্গে সন্ধি স্বাক্ষর করেন[১]।
১৭৫১ সালের মে মাসে মীর জাফরের মধ্যস্থতায় নবাব আলীবর্দী রঘুজীর সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন[১]।
সন্ধির শর্তগুলি ছিল নিম্নরূপ:
এই চুক্তি অনুযায়ী উড়িষ্যার ওপর বাংলার নবাবের আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব বজায় ছিল, যদিও প্রকৃতপক্ষে মীর হাবিব স্বাধীনভাবেই উড়িষ্যার শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু ১৭৫২ সালের ২৪ আগস্ট জানুজীর মারাঠা সৈন্যরা মীর হাবিবকে হত্যা করে[১]। এরপর রঘুজী মুসলেহউদ্দিন মুহম্মদ খান নামক তার একজন মুসলিম সভাসদকে উড়িষ্যার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন[১]। ফলে উড়িষ্যার ওপর বাংলার নবাবের নিয়ন্ত্রণ কার্যত লোপ পায়। প্রকৃতপক্ষে উড়িষ্যা মারাঠা সাম্রাজ্যের নাগপুর রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়[১]।
বাংলায় মারাঠা আক্রমণকালে মারাঠা সৈন্যরা বাংলার জনসাধারণের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতন চালায়[১][২]। তারা নির্বিচারে সমগ্র বাংলা জুড়ে লুটতরাজ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল[১]। ১৭৪২ সালের মে মাসে মুর্শিদাবাদ লুণ্ঠনের পর প্রত্যাবর্তনকালে মারাঠা হানাদারেরা পথিমধ্যে অসংখ্য গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় এবং জ্বলন্ত গ্রামসমূহের সারি তাদের পদচিহ্ন হিসেবে থেকে যায়[৩]। ১৭৪২ সালের জুনে মারাঠারা হুগলী দখল করার পর তাদের উপদ্রবে এই অঞ্চলের লোকের দুর্দশা চরমে পৌঁছে। মারাঠারা অসংখ্য সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। ধারণা করা হয়, বাংলার প্রায় ৪,০০,০০০ অধিবাসী মারাঠা আক্রমণকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিল[৩]। বিপুলসংখ্যক নারী মারাঠাদের হাতে ধর্ষিত হয়। ফলে বহু মানুষ তাদের পরিবারের নারীদের সম্মান রক্ষার জন্য তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করেন[২] এবং গঙ্গানদীর পূর্বতীরে চলে গিয়ে গোদাগারী-তে আশ্রয় নেন।
অনিয়মিত মারাঠা আক্রমণ গঙ্গানদীর পূর্ব তীরের অঞ্চলেও নবাবের শাসনের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। যেসব অঞ্চলের ওপর নবাব কর্তৃত্ব হারিয়েছিলেন সেসব অঞ্চলে মারাঠা দলগুলো উদ্দেশ্যহীন ধ্বংসসাধন করে এবং অকথ্য অত্যাচার চালায়। মারাঠা লুণ্ঠনের ভয়ে বণিক এবং তাঁতিরা বীরভূম থেকে পালিয়ে যান[২]। অন্যান্য অঞ্চলে মারাঠা ধ্বংসযজ্ঞে ভয় পেয়ে রেশমি বস্তুসামগ্রী প্রস্তুতকারীরা পালিয়ে যায়। রেশম এবং কাপড়ের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রগুলো পরিত্যক্ত হয়[২], খাদ্যশস্য দুর্লভ হয়ে পড়ে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সব ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। ১৭৪২ সালের সেপ্টেম্বরে কাটোয়ার যুদ্ধে পরাজয়ের পর পলাতক মারাঠা সৈন্যরা মেদিনীপুরে যায়, সেখানকার একটি বিখ্যাত রেশম-পালন কেন্দ্র রাধানগর লুট করে এবং জ্বালিয়ে দেয়[২]। এরকমভাবে দীর্ঘ দশ বছরব্যাপী মারাঠা হানাদারেরা বাংলার জনগণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিল। ১৭৪৩ সালে মারাঠা সাম্রাজ্যের পেশোয়া এবং রঘুজীর প্রতিদ্বন্দ্বী বালাজী মুঘল সম্রাটের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুযায়ী রঘুজীর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করার জন্য বাংলায় প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু লুটতরাজের ব্যাপারে বালাজীর 'রক্ষক' বাহিনী রঘুজীর হানাদার বাহিনীর পিছনে পড়ে থাকে নি[১]। অবশেষে ১৭৫১ সালে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে মারাঠা আক্রমণের সমাপ্তি ঘটলে বাংলার জনগণের দুর্ভোগের অবসান ঘটে[২]।
সেযুগের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিস্থিতি অনুসারে উড়িষ্যা ভোঁসলেদের হাতে আসা তাদের পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক প্রমাণিত হয়েছিল। কারণ এই প্রদেশ ছিল ব্রিটিশ ভারতের উত্তরে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ও দক্ষিণে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির মধ্যবর্তী। রঘুজীর উত্তরসূরিরা অবশ্য এই অবস্থানগত সুবিধা ভোগ করতে ব্যর্থ হন। কারণ তারা পেশোয়ার সঙ্গে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধেই সময় ও শক্তি ক্ষয় করেন। মাধোজী ভোঁসলে যখন নাগপুরের শাসক, তখন নানা ফোড়নবিশ ভারতে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে চার রাজ্যের যৌথ বাহিনী গঠনের প্রস্তাব জানান। এই বাহিনী উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ও বিহারের দীর্ঘদিনের বকেয়া চৌথ কর আদায়ের জন্য বাংলা আক্রমণ। কিন্তু মাধোজীর সমর্থনের অভাবে এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয় নি।
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)