এটি ছিল মূলত কৃষিপ্রধান জেলা। একে পশ্চিমবঙ্গের শস্য ভান্ডার বলা হতো। জেলার বৃহত্তম শহর বর্ধমান। ধান এ জেলার প্রধান ফসল। এ ছাড়া পাট, পেঁয়াজ, আলু, আখ ইত্যাদি হয়। বর্ধমান জেলা আসানসোল কয়লাখনির জন্য প্রসিদ্ধ এবং দুর্গাপুরে আছে লৌহ-ইস্পাত কারখানা। জেলা সদর বর্ধমান থেকে অল্প দূরে কাঞ্চন নগর ছুরি, কাচির জন্য প্রসিদ্ধ। ধাত্রিগ্রাম তাঁতের কাপড়ের জন্য প্রসিদ্ধ।
বর্ধমানের ইতিহাস শুরু খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ সন তথা মেসোলিথিক বা প্রস্তর যুগের অন্তিম সময়। Burdwan নামটি সংস্কৃত বর্ধমান থেকে ইংরেজ কর্তৃক প্রদত্ত। মার্কন্ডেয় পুরাণে বর্ধমানের উল্লেখ আছে। গলসি থানা সংলগ্ন "মল্লসরুল" গ্রামে প্রাপ্ত ষষ্ঠ শতকের একটি তাম্রলিপিতে প্রথম নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। নামের মূল নিয়ে দুটি মত রয়েছে। প্রথম মতানুযায়ী, নামটি ২৪ তম জৈন তীর্থাঙ্কর বা বর্ধমানস্বামী'র নামানুসারে প্রণীত হয়েছে। জৈন কল্পসূত্রাণুসারে, মহাবীর কিছুসময় অস্তিকগ্রামে কাটিয়েছিলেন, যা পরে বর্ধমান নামে পরিচিত হয়।অন্যমতানুযায়ী, বর্ধমানা অর্থ সম্পন্ন কেন্দ্র। গাঙ্গেয় উপত্যকায় আর্য সভ্যতার বিকাশের সময়ে, উন্নতি এবং সম্পনতার প্রতীক হিসেবে স্থানটি পরিচিত ছিল। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সুবাকে উনিশটি সরকারে ভাগ করেন। আইন-ই-আকবরী অনুযায়ী বর্ধমান জেলার সঙ্গে সম্পর্কিত যে তিনটি সরকারের নাম পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি শরিফাবাদ। শরিফ শব্দের অর্থ সম্ভ্রান্ত। সেই অর্থে এলাকাটি ছিল অপেক্ষাকৃত সম্ভ্রান্ত অঞ্চল। পরে বর্ধমানের নাম হয় শরিফাবাদ। সেই সময় বীরভূমের দক্ষিণাংশ, মুর্শিবাদ জেলার কান্দি আর বর্ধমান জেলার মধ্য অংশ জুড়ে এর সীমানা ছিল। রাজা তিলকচাঁদ ছিলেন বর্ধমানের প্রথম মহারাজধিরাজ। তাদের বংশের অন্যতম রাজারা হলেন প্রতাপচাঁদ ও মহতাবচাঁদ। ব্রিটিশ আমলে রানী বেনদেয়ী তার দেওয়ান বনবিহারীর পুত্র বিজনবিহারীকে দত্তক নিয়ে বিজয়চাঁদ নাম দিয়ে বর্ধমানের সিংহাসনে বসান।
রাসবিহারী বসু, (১৮৮৬ – ১৯৪৫) ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা। তিনি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত তাঁর পৈতৃক গ্রাগম সুবলদহে জন্মগ্রহণ করেন।
ভবদেব ভট্ট-১০ শতকের শেষে বা ১১ শতকের শুরুতে গুসকরার কাছে সিদ্ধল গ্রামে জন্ম (মতান্তরে মঙ্গলকোটের শীতল গ্রামে)।
রাসবিহারী ঘোষ (২৩ ডিসেম্বর ১৮৪৫ – ২৮ ফেব্রূয়ারি ১৯২১), ভারতীয় রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সমাজকর্মী এবং সমাজসেবী। জন্ম পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের খণ্ডঘোষ গ্রামে।
বটুকেশ্বর দত্ত (১৯১০- ১৯৬৫), বাঙালি ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী এবং ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা।
বিজয়কুমার ভট্টাচার্য (১৮৯৫-১৯৯৩)-গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাকে ঢ়ারের গান্ধী বলা হয়। খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়াড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
অমল দত্ত (৪ মে ১৯৩০-২০ জুলাই ২০১৬)- বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল খেলোয়ার, কোচ এবং ফুটবল ম্যানেজার। খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়াড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ /শৈলেন ঘোষ- শিশু সাহিত্যিক ও নাট্যকার শৈলেন ঘোষ খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়াড়ি গ্রামে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন। নেহরু ফেলোসিপ,সঙ্গীত একাডেমি পুটস্কার,মৌচাক পুরস্কার,বিদ্যাসাগর পুরস্কার এবং জাতীয় পুরস্কারে তিনি সন্মানিত হয়েছেন।
সুপ্রভা সরকার (২৫ সেপ্টেম্বর ১৯১৯- ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ - অবিস্মরণীয় নজরুল গীতিকার কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
নিরুপম সেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিল্প মন্ত্রী ছিলেন। অবিভক্ত বর্ধমান জেলা, রাজ্য ও দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রথম সারির নেতৃত্ব ছিলেন নিরুপম সেন।