বহুকারণজনিত রোগ বা জটিল রোগ বলতে সেই সব রোগকে বোঝায় যেগুলি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটিমাত্র বংশাণুর কারণে নয়, বরং সম্ভবত একাধিক বংশাণুগত কারণ ও পরিবেশগত কারণের সম্মিলিত ক্রিয়ায় আবির্ভূত হয়।[১] অর্থাৎ বংশাণুগত রোগপ্রবণতার সাথে পরিবেশের প্রভাবের আন্তঃক্রিয়ার ফলে এইসব রোগ ঘটে ও এদের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। পরিবেশগত কারণের মধ্যে খাদ্যাভ্যাস, জীবনচর্যা, বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ, মানসিক ও শারীরিক চাপ, ইত্যাদি অন্তুর্ভুক্ত।
তবে বাস্তব জীবনে রোগ সৃষ্টিকারী বংশাণুগত উপাংশটির গঠন-কাঠামো বর্ণনা করতে "বহুকারণজনিত" ও "বহুবংশাণুজনিত" (পলিজেনিক) - এই দুইটি পরিভাষাই সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।[২] বহুকারণজনিত রোগগুলিকে প্রায় একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু এগুলি কোনও নির্দিষ্ট বংশগত উত্তরাধিকারের বিন্যাস প্রদর্শন করে না। এই রোগগুলি অধ্যয়ন ও এগুলির চিকিৎসা দুরূহ, কেননা এগুলির সাথে সম্পর্কিত নির্দিষ্ট কারণগুলি এখনও সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায় নি। বহুকারণজনিত রোগের কিছু উদাহরণ হল ভগ্নমনস্কতা, মধুমেহ বা বহুমুত্র রোগ (টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলিটাস), হাঁপানি, বিষণ্ণতা, হৃদবেষ্ট ধমনীর রোগ (করোনারি হার্ট ডিজিজ) ও অন্যান্য হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, আলৎসহাইমারের রোগ, অতিস্থূলতা, মৃগীরোগ, থাইরয়েড গ্রন্থির অতিসক্রিয়তা, খুশকি, কৃশপদ এবং কয়েক ধরনের ক্যানসার (কর্কটরোগ)।
বহুকারণ সীমা প্রতিমানটিতে (Multifactorial threshold model)[৩] ধরে নেয়া হয় যে বহুকারণজনিত বৈশিষ্ট্যগুলির বংশাণুগত ত্রুটিগুলি সাধারণত সমগ্র জনসমষ্টিতে বিন্যস্ত থাকে। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন জনসমষ্টিতে ভিন্ন ভিন্ন সীমা থাকতে পারে, যেমন কোনও নির্দিষ্ট রোগের প্রাদুর্ভাব পুরুষ ও স্ত্রীদের মধ্যে ভিন্ন হতে পারে (যেমন পাইলোরিক স্টেনোসিস রোগের ক্ষেত্রে)। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণতার বিন্যাস একই হলেও সীমা ভিন্ন। উলটো দিকে সীমা একই হলেও ঝুঁকিপূর্ণতা বিন্যাস ভিন্ন হতে পারে। এভাবে রোগীর প্রথম মাত্রার আত্মীয়দের জন্য অধোস্থ ঝুঁকি ব্যাখ্যা করা সম্ভব।